‘ভুবন মাঝির’ টানে এই শহরে
সময়টা সত্তরের শেষ দিকে। গ্রামের ছেলে নহির কলেজে পড়তে আসে কুষ্টিয়া শহরে। একেবারে সাদাসিধে জীবন তার। খানিকটা ভিতুও। গান-বাজনা, থিয়েটার আর ভালোবাসার মানুষ ফরিদাকে ঘিরেই তার গণ্ডি। একসময় সেই শান্ত ছেলেটিই হয়ে ওঠে যোদ্ধা। হাতে নেয় অস্ত্র। আর নহিরের মনে দ্রোহের আগুন জ্বালায় ফরিদা, যে নারী প্রিয়জনকে আঁচলে না বেঁধে ঠেলে দেয় যুদ্ধের ময়দানে। এমন কাহিনির চিত্রায়ণ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ভুবন মাঝিতে। ১৯৭১–এর সঙ্গে এই চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছে ২০১৩ সালও। এ যেন দুই যুদ্ধের আখ্যান। সরকারি অনুদানে নির্মিত ছবিটির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন ফাখরুল আবেদীন খান। ছবিটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মুক্তি পাচ্ছে ৩ মার্চ। তবে চট্টগ্রামের দর্শকেরা দেখতে পাবেন ৬ মার্চ থেকে। নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ১১ মার্চ পর্যন্ত ছবির প্রদর্শনী চলবে। প্রতিদিন থাকবে চারটি প্রদর্শনী। ছবির প্রচারে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আসে ভুবন মাঝির দল। এই দলে ছিলেন ছবির পরিচালক ফাখরুল আবেদীন খান, অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষ ও মাজনুন মিজান। তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোমুখি হন তরুণদের। আহ্বান জানান হলে গিয়ে ছবি দেখার। এ সময় তরুণদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা। চারুকলা ইনস্টিটিউটে কথা হয় ফাখরুল আবেদীন খানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়েছে। নহিরের ভেতরের মানুষটা একজন নারীর ছোঁয়ায় বেরিয়ে আসে।
নহির হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। এ ছাড়া কাহিনির নানা বাঁক তরুণদের ভালো লাগবে। কারণ তরুণ-তরুণীদের ঘিরেই গল্প। গানগুলো খুব ভালো হয়েছে। এ জন্য তরুণ-তরুণীদের এই ছবি দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ িতনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে এসে ভালো সাড়া পেয়েছেন। আশা করছেন ছবিটি দেখতে সবাই হলে যাবেন। চলচ্চিত্রে নহিরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ফরিদা চরিত্রটি করেছেন অপর্ণা ঘোষ। মৃত্তিকার মায়া, সুতপার ঠিকানা ও মেঘমল্লার—তিন চলচ্চিত্রে নতুনরূপে অর্পণা। মৃত্তিকার মায়ার জন্য পেয়েছেন সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০১৩)। এবারও কী চরিত্রে নতুন কিছু? অপর্ণার উত্তর, ‘চরিত্রে পরিবর্তন আছে। আলাদারূপে দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা সত্য ঘটনার গল্প, যা দর্শকদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে দ্রুত যুক্ত করবে। সেই ফরিদাও এখনো বেঁচে আছেন।’ তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা এত দিন মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছি একভাবে। ঢাকাসহ কয়েকটি শহর কিংবা রণাঙ্গনের চিত্র। কিন্তু একাত্তরের ২৫ মার্চ সেই রাতে কুষ্টিয়া শহরে একটি বাড়িতে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। একেবারে সাদামাটা জীবনের মানুষগুলো কীভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তা দেখা যাবে।’ ছবির নমুনা খণ্ড চিত্রে (ট্রেলার) দেখা যায়, একজন নারী ভালোবাসার মানুষটিকে যুদ্ধে যেতে প্রেরণা জোগান। রেললাইনের ওপর বসা তরুণের প্রতি ভালোবাসার মানুষটির আহ্বান, ‘দেশের এমন অবস্থায় বীরেরা যদি এ রকম রেললাইনের ওপর বসে থাকেন, তাহলে চলবে?’ সেই আহ্বানে তরুণের মন বাঁক নেয় যুদ্ধের পথে। এরপর কী হলো? সেই তরুণ কী ফিরে আসবে?
No comments