হানিফকে ২০ দিন আগে তুলে নেয়ার দাবি পরিবারের
রাজধানীর
আশকোনা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর হাসপাতালে মারা যাওয়া হানিফ মৃধাকে ২০
দিন আগে তুলে নেয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কাঁচপুর সেতুর কাছ
থেকে তুলে নেয়া হয় বলে তার পরিবার দাবি করেছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। এখনও খোঁজ
নেই তার সঙ্গে থাকা বন্ধু মো. সোহেল হোসেন মন্টুর। হানিফের স্ত্রী কুলসুম
বেগম সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হানিফ চরমোনাই যান। সেখান থেকে ২৭
ফেব্রুয়ারি লঞ্চে ফিরে আসেন। নামেন কাঁচপুর সেতুর কাছে। তাদের আনতে
প্রাইভেটকার নিয়ে যায় চালক জুয়েল। সেখানে গিয়ে জুয়েল দেখতে পান সাত-আটজন
নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে হানিফ ও সোহেলকে হাইয়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আর
কয়েকজন এসে প্রাইভেট কারে উঠে জুয়েলকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালাতে বলে। এরপর তারা
জুয়েলকে মারধর করে পূর্বাচলে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। হানিফের ভাই মো.
হালিম মৃধা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪ মার্চ জিডি করেন। হালিম সাংবাদিকদের বলেন,
বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে র্যাবব-১ এর একটি গাড়ি ও সাদা রঙের একটি হাইয়েস
গাড়ি আমাদের বাসায় আসে। রায়েরবাজার শাহ আলী গলির মুখে র্যাববের গাড়িটি
দাঁড়ায়। আর সাদা গাড়িটি বাড়ির সামনে দাঁড়ায়।
সাদা গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন
হানিফকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ঢোকে। এরপর বাসার লোকজনের সামনে তার স্ত্রী
কুলসুমকে বলে, আপনার স্বামী একটি অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেছে। এরপর হানিফের
ব্র্যাক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেক বই এনে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেকে সই
করিয়ে নেয়। এ বিষয়ে শনিবার র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক
মুফতি মাহমুদ খান যুগান্তরকে বলেছিলেন, ঘটনার পর আশকোনা থেকে হানিফ মৃধা
নামে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে তাকে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে সে অসুস্থবোধ করায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে
তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের বরাদ দিয়ে আমাদের আমতলী প্রতিনিধি
জানান, হানিফ মৃধা বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া গ্রামের সোবাহান মৃধার
বড় ছেলে। বাবাকে সহযোগিতা করতে সে ছোটবেলায় সংসারের হাল ধরে। শুরুতে
এলাকায় রিকশা চালিয়েছে। ১৬ বছর আগে সে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। পরিবার
নিয়ে ঢাকায় এসে হানিফ আবার রিকশা চালানো ও রাস্তার পাশে পুরনো জামাকাপড়
বিক্রির কাজ শুরু করে। বর্তমানে ঢাকায় তার তিনটি যাত্রীবাহী বাস ও
প্রাইভেটকার রয়েছে। রায়েরবাজারে ভাড়া বাসায় থাকত হানিফ। হানিফ মৃধার বাবা
সোবাহান মৃধা যুগান্তরের প্রতিনিধিকে বলেন, হানিফ ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে
ঢাকায় চলে যায়।
এখানে রিকশা চালানোর পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসাও করত। হানিফের
দুই স্ত্রী ও ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে। ঢাকায় যাওয়ার পর ১০ বছর পরিবারের
সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি হানিফ। গত ৬ বছর ধরে মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসা যাওয়া
করত। সোবহান মৃধা বলেন, হানিফ চরমোনাই পীরের মুরিদ ছিল। সর্বশেষ গত ২৫
ফেব্রুয়ারি বরিশালের চরমোনাইয়ে বার্ষিক মাহফিলে ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়।
হানিফকে বাড়ি আসতে বললে সে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে জানিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায়
যাওয়ার কথা বলে। রোববার সকালে যুগান্তরের প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে দেখেন,
সোবাহান মৃধার বাড়িতে ঔৎসুক্য গ্রামবাসীর উপচেপড়া ভিড়। সেখানে হানিফের
প্রথম স্ত্রী লাইলী বেগম তিন সন্তান নিয়ে কান্নাকাটি করছেন। লাইলী বেগম
যুগান্তরকে বলেন, ‘মোর স্বামী মাঝেমধ্যে বাড়ি আইত, হে ধর্মপ্রাণ ছিল।
নামাজ-রোজা নিয়মিত করত।’ তার স্বামী কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে
চাইলে লাইলী বেগম কোনো উত্তর দেননি। আমতলী থানার ওসি শহিদ উল্লাহ জানান,
হানিফ মৃধার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় কোনো মামলা নেই।
No comments