মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গি নেতার মৃত্যুদণ্ড বহাল
ফাঁসির
রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন
আসামির করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান
বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রোববার
এ আদেশ দেন। হান্নান ছাড়াও আরও দুই জঙ্গি হল, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল
ও দেলোয়ার হোসেন রিপন। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
সাংবাদিকদের বলেন, রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ায় তিন জঙ্গির দণ্ড কার্যকর করতে
জেল কর্তৃপক্ষের কোনো আইনি বাধা নেই। আর যদি তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করে
তা হলে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে
কারা কর্তৃপক্ষ। জেল কোড অনুযায়ী কতদিনের মধ্যে দণ্ড কার্যকর করতে হবে- এমন
প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ৭ দিনের আগে নয়, তবে ২১ দিনের
মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিভিউ পিটিশন
খারিজের রায় অবগত হওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ আসামিদের জিজ্ঞেস করবে
রাষ্ট্রপতির কাছে তারা প্রাণ ভিক্ষা চাইবে কিনা?
প্রাণভিক্ষা চাইলে সে
দরখাস্ত রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর না চাইলে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী
প্রক্রিয়ায় দণ্ড কার্যকর করবে। জেলকোড মেনেই সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের
পর দণ্ড কার্যকরের ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গি হামলায় মুফতি হান্নানের নেতৃত্ব ও ইন্ধন ছিল- এটা
খুবই পরিষ্কার। সম্প্রতি প্রিজন ভ্যানে এবং গত কয়েকদিনে আত্মঘাতী জঙ্গি
হামলা মুফতি হান্নানকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যই। আর সে ব্যাপারে রাষ্ট্র
ইতিমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ৭ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এ
তিন আসামির আপিল খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরে রায় পুনর্বিবেচনা
চেয়ে তারা আবেদন করে। এতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হ্রাস করে আমৃত্যু কারাদণ্ড
দেয়ার আবেদন জানানো হয়। রোববার আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী
নিখিল কুমার সাহা। তিনি বলেন, কনডেম সেলে দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে
আসামিরা। এ বিবেচনায় তাদের সাজা কমানো হোক। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি
বলেন, এখন কারাগারগুলোতে সেই আগের মতো কনডেম সেল নেই। এখনকার কনডেম সেলে
আসামিরা আরাম-আয়েশেই থাকে। পরে আদালত দুটি রিভিউ পিটিশন খারিজ করে আদেশ
দেন। খারিজ আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে
হত্যা করতেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় তিনজন
মারা যান। যাদের একজন ঘটনাস্থলে, বাকি দু’জন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
ফলে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অপরাধ মার্জনা করার কোনো সুযোগ নেই। এ সময়
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল
মুরাদ রেজা উপস্থিত ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর
মাজার জিয়ারতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার
চৌধুরী। দরগাহ প্রাঙ্গণে জুমার নামাজ শেষে ফেরার পথে তাকে লক্ষ্য করে
গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক কামাল
উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া বেশ কয়েকজন হতাহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান ব্রিটিশ
হাইকমিশনার।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের
বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দু’জনকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ওই রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আকারে
হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা খালাস চেয়ে নিয়মিত ও জেল আপিল করে। গত
বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই আপিল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের
নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ নিন্ম আদালতের সাজার রায় বহাল রাখেন। এছাড়া
মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুলাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি ও
মুফতি মইনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিলাহ ওরফে খাজাকে দেয়া
যাবজ্জীবন সাজার রায়ও বহাল রাখেন আদালত। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল
করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা। ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগও তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড
বহাল রাখেন। ১৮ জানুয়ারি রায়ের কপি প্রকাশিত হলে তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে
আবেদন জানায় তারা। এদিকে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার রিভিউ খারিজ
করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার স্বজনরা। জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
জানান, মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ
করেছেন আনোয়ার চৌধুরীর চাচাতো ভাই শাহ রুমী চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা এ
রায়ে খুবই সন্তুষ্ট। আমি আশা করছি দ্রুত এ রায় কার্যকর হবে। ২০০৪ সালের ২১
আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা
চেষ্টাসহ ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার মূল হোতা হিসেবে
মুফতি হান্নানের নাম উঠে আসে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ২০০০
সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা
পুঁতে রাখার ঘটনায় করা মামলারও আসামি মুফতি হান্নান।
No comments