এক বছরেও অধরা রয়ে গেল ঘাতকরা
কুমিল্লায়
কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তি আজ।
ঘাতকরা অধরাই রয়ে গেল। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার তদন্তে
দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যায়নি এবং এখনও রহস্যের জট খোলেনি। এ ঘটনার পর
একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করা হলেও দীর্ঘ এ সময়ে হত্যা রহস্যের
কিনারা হয়নি। ঘাতকরা ছিল তনুর পরিচিতই। তবুও অদৃশ্য কারণে সবই এখন অচেনা।
ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তদন্তকারী সংস্থার
ধীরগতি দেখে তনুর বাবা-মা ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে রোববার তনুর মা, বাবা, ভাইসহ স্বজনরা তার কবর জিয়ারত করেছে। আজ তনুর
নিজ গ্রাম মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে পালিত হবে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এ
উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল
থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা ধর্ষণের পর
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তনুকে। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট
বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে
কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১
এপ্রিলে মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। গত বছরের মে’তে
সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু
পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল
বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু দু’দফায় ডাক্তারদের তৈরি করা ময়নাতদন্ত
প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে
দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি। এদিকে দীর্ঘ ১ বছরেও তনু
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা,
সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি
ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে
ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে
তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে
হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তনুর মা আনোয়ারা বেগম রোববার মুঠোফোনে জানান,
দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়, তাদের সাজাও
হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় বড় বড় রাঘববোয়ালের ফাঁসির রায় হল, অথচ
তনুর খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, তদন্তকারী সংস্থার
রহস্যজনক কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ। ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি
জানাচ্ছি। এ বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ
সুপার জালাল উদ্দিন জানান, সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
No comments