ভয়কে জয় করা বাংলা নববর্ষ by সোহরাব হাসান
বাংলাদেশের মানুষ আবারও প্রমাণ করলেন তাঁরা পারেন। এদের মধ্যে যেমন বাঙালি ছিলেন, তেমনি ছিলেন অ-বাংলাভাষী মানুষও। ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী ও বিদেশি। অনেক প্রবাসী শুধু নববর্ষ উদ্যাপন করতেই বাংলাদেশে আসেন, যেমন আসেন ঈদ বা দুর্গোৎসবে। ভয়কে জয় করেই বৃহস্পতিবার সর্বস্তরের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষকে বরণ করলেন। দেশের কোথাও কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। রমনার বটমূলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরের আবাহনী সংগীতের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকায় যে নববর্ষের আয়োজন শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় প্রতিটি শহরে ও জনপদে। এ ছিল লাখো-কোটি মানুষের প্রাণের মেলা। আনন্দের উৎসব। বাংলা নববর্ষ কেবল বছরের হিসেব নিকেশ নয়। তারও চেয়ে বেশি কিছু। এ উৎসব মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরি কবে। এবারে কড়াকড়ির কারণে ভোরে রমনার বটমূলে যেতে মানুষকে একাধিক নিরাপত্তাব্যূহ পার হতে হয়েছে, হাঁটতে হয়েছে অনেকটা পথ; কিন্তু কারও মুখে ক্লান্তি দেখিনি। সবাই হাসি মুখে তা মেনে নিয়েছেন। কেননা তাঁরা জানেন, নববর্ষ যেমন ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির উৎসব তেমনি এক শ্রেণির অন্ধকারের জীব এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জঙ্গিবাদী হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে। ২০০১ সালের এই নববর্ষের দিনে রমনার বটমূলে হামলা চালিয়ে নয়জন মানুষ হত্যা করেছে তারা । বারবার বখাটেদের দ্বারা মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। এবারেও সেই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর দোসরেরা পয়লা বৈশাখ পালনকে নাজায়েজ বলে ফতোয়া জারি করেছিল। কত বড় ধৃষ্টতা!
এ অবস্থায় সরকার নববর্ষ উদ্যাপনকে নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বাড়াবাড়ি হলেও সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল, যা কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হলো ভুভুজেলা ও মুখোশ ব্যবহার করা যাবে না। ভুভুজেলা ঠিক আছে। এটি বিরক্তিকর। কিন্তু মুখোশ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেন? গত দেড় যুগে জঙ্গিগোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীরা যত হামলা চালিয়েছে, তার একটিতেও মুখোশ ব্যবহার করেনি। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশের সঙ্গে সেই মুখোশধারীদের এক করে দেখারও সুযোগ নেই। জঙ্গিগোষ্ঠী প্রকাশ্যেই হামলা করে, তাদের মুখোশটা শরীরে থাকে না; থাকে মনে। তারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিলেও তারা সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত। তারপরও বাংলা নববর্ষ কোনো অঘটন ছাড়া শেষ হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের, যাঁরা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে বিভিন্ন উৎসবে, মেলায় যোগ দিয়েছেন। আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন।
ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূল অভিমুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ঢল দেখেছি। ঢল ছিল সারা শহরে। কারও চেহারায় ভয় বা উদ্বেগের ছাপ নেই। নিরাপত্তা রক্ষীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের ঢোকার ব্যবস্থা করছেন। বটমূলে প্রবেশের সময় অস্থায়ী পুলিশ বক্সে থেকে বোতলভর্তি পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। সামনের ফলকে লেখা ছিল, ‘নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য।’ এবারের নববর্ষে অন্ধকারের জীবেরা গর্তে লুকিয়েছে। মানুষের শুভবুদ্ধি ও শুভচেতনার জয় হয়েছে। সরকার যে পাঁচটার পর উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা বলেছিল, সেটিও মানুষ মেনে নিয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রাণের উচ্ছ্বাস বন্ধ ছিল না। নববর্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ও প্রাণকল্লোল, তা কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে থামানো যায় না। এ কারণেই দেখা গেছে, অনুষ্ঠান না থাকলেও সন্ধ্যার পরও ঢাকার সড়কে, পার্কে, মায়দানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ভিড়। নারী, পুরুষ, তরুণ ও শিশু সবাই মেতেছে বর্ষবরণের উৎসব। আবার অনেকে বাড়ির আঙিনায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
সাধারণ মানুষ বরাবরই উৎসবপ্রিয়। শত দুঃখ-কষ্ট, অভাব-দারিদ্র্য সত্ত্বেও তারা উৎসবে শামিল হন। কাছের তো বটেই দূরের মানুষকে তারা সেই আনন্দের ভাগ দিতে কার্পণ্য করেন না। যে রাজনীতি বিভেদ ও ঘৃণাকে জাগিয়ে রাখে, তার অবসান ঘটাতে পারলে নববর্ষসহ প্রতিটি উৎসব আরও আনন্দময়, আরও প্রাণবন্ত হবে।
প্রতিটি দিন হোক পয়লা বৈশাখ। প্রতিটি ক্ষণ হোক আনন্দময়।
এ অবস্থায় সরকার নববর্ষ উদ্যাপনকে নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বাড়াবাড়ি হলেও সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল, যা কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হলো ভুভুজেলা ও মুখোশ ব্যবহার করা যাবে না। ভুভুজেলা ঠিক আছে। এটি বিরক্তিকর। কিন্তু মুখোশ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেন? গত দেড় যুগে জঙ্গিগোষ্ঠী ও সন্ত্রাসীরা যত হামলা চালিয়েছে, তার একটিতেও মুখোশ ব্যবহার করেনি। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশের সঙ্গে সেই মুখোশধারীদের এক করে দেখারও সুযোগ নেই। জঙ্গিগোষ্ঠী প্রকাশ্যেই হামলা করে, তাদের মুখোশটা শরীরে থাকে না; থাকে মনে। তারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দিলেও তারা সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত। তারপরও বাংলা নববর্ষ কোনো অঘটন ছাড়া শেষ হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের, যাঁরা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে বিভিন্ন উৎসবে, মেলায় যোগ দিয়েছেন। আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন।
ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূল অভিমুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ঢল দেখেছি। ঢল ছিল সারা শহরে। কারও চেহারায় ভয় বা উদ্বেগের ছাপ নেই। নিরাপত্তা রক্ষীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের ঢোকার ব্যবস্থা করছেন। বটমূলে প্রবেশের সময় অস্থায়ী পুলিশ বক্সে থেকে বোতলভর্তি পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। সামনের ফলকে লেখা ছিল, ‘নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য।’ এবারের নববর্ষে অন্ধকারের জীবেরা গর্তে লুকিয়েছে। মানুষের শুভবুদ্ধি ও শুভচেতনার জয় হয়েছে। সরকার যে পাঁচটার পর উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা বলেছিল, সেটিও মানুষ মেনে নিয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রাণের উচ্ছ্বাস বন্ধ ছিল না। নববর্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ও প্রাণকল্লোল, তা কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে থামানো যায় না। এ কারণেই দেখা গেছে, অনুষ্ঠান না থাকলেও সন্ধ্যার পরও ঢাকার সড়কে, পার্কে, মায়দানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ভিড়। নারী, পুরুষ, তরুণ ও শিশু সবাই মেতেছে বর্ষবরণের উৎসব। আবার অনেকে বাড়ির আঙিনায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
সাধারণ মানুষ বরাবরই উৎসবপ্রিয়। শত দুঃখ-কষ্ট, অভাব-দারিদ্র্য সত্ত্বেও তারা উৎসবে শামিল হন। কাছের তো বটেই দূরের মানুষকে তারা সেই আনন্দের ভাগ দিতে কার্পণ্য করেন না। যে রাজনীতি বিভেদ ও ঘৃণাকে জাগিয়ে রাখে, তার অবসান ঘটাতে পারলে নববর্ষসহ প্রতিটি উৎসব আরও আনন্দময়, আরও প্রাণবন্ত হবে।
প্রতিটি দিন হোক পয়লা বৈশাখ। প্রতিটি ক্ষণ হোক আনন্দময়।
No comments