অবিশ্বাস্য রূপকথার জন্ম লড়াকু যোদ্ধাদের

রোমাঞ্চকর!
এই লোকটা চাকরি করেন না। ফুটবলটা তাঁর কাছে বেঁচে থাকার আশ্রয় অবশ্যই, তবে সেটা মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্যই বেশি। ফুটবল তাঁর প্রশ্বাসে। ফুটবল তাঁর রক্তে। ইয়ুর্গেন ক্লপের সবচেয়ে বড় সার্থকতা বোধ হয় এটাই, শিষ্যদের মধ্যেও তিনি সেই নেশাটা ছড়িয়ে দেন। যে অখ্যাত ডর্টমুন্ডকে একেবারে বদলে দিয়েছিলেন আশ্চর্য জাদুমন্ত্রে, সেই পুরোনো দলকেই কাল হারিয়ে নিয়ে জন্ম নিল নতুন রূপকথা। ফুটবলের সেরা রোমাঞ্চকর ম্যাচগুলোর একটির জন্ম দিয়ে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে লিভারপুল চলে গেল ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে। প্রথম লেগটা ছিল ১-১ গোলে অমীমাংসিত। তবে লিভারপুল অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে। কোথায় কী, কাল ম্যাচের মাত্র ৯ মিনিটে নিজেদের মাঠে ২ গোল খেয়ে ওই অ্যাওয়ে গোলের এগিয়ে থাকার সব হিসাব ভেঙেচুরে পড়তে দেখল অল রেডরা। লিভারপুলের সামনে তখন ৮০ মিনিট, এবং কমপক্ষে তিনটা গোল করতেই হবে—এমন পাহাড় ডিঙানোর প্রায় অসম্ভব একটা সমীকরণ। কিন্তু ওই যে, লোকটার নাম ইয়ুর্গেন ক্লপ। অন্য কোনো দল হলে সেখানেই হাল ছেড়ে ​দিত। কিন্তু লিভারপুল দেয়নি। এমনকি পরে সমীকরণ আরও জটিলতর হয়ে ওঠার পরেও। ৪৮ মিনিটে ওরিগি ১-১ সমতা ফেরালেন। ৫৭ মিনিটেই ডর্টমুন্ড করে ফেলল ৩-১। ম্যাচের ৬৫ মিনিটের কাঁটা ঠিক যখন পেরোল, লিভারপুল তখন এভারেস্ট ডিঙানোর আরও কঠিন এক সমীকরণের সামনে। ২৫ মিনিটে চাই তিন গোল। এবং কী আশ্চর্য, সেখান থেকেই শুরু লিভারপুলের প্রত্যাবর্তনের আশ্চর্য এক রূপকথার। ৬৬ মিনিটে ২-৩ করলেন কুতিনহো। ৭৮ মিনিটে সাখো করলেন ৩-৩। তখনো এক গোল চাই। এক গোল। অ্যানফিল্ড তখন গোলের নেশায় উন্মত্ত। তাদের গর্জন টিভির স্পিকার থেকে আসছে, নাকি সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে সরাসরি? নাহ হচ্ছে না কিছুতেই। ডর্টমুন্ড যে হাল ছেড়ে বসে আছে তা নয়। দুই ​লেগ মিলিয়ে ৪-৪ সমতা। কিন্তু প্রতিপক্ষে মাঠে তিনটা গোল করার সু​বাদে সময়ের মোম একটু করে করে গলে ক্ষয়ে যাচ্ছে, আর সেমিফাইনালে দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে তারাই। ৯০ মিনিটও পেরিয়ে গেল। যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। বক্সের জটলায় কোত্থেকে যেন উদয় হলেন লভরেন। মিলনারের ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেড। এই মৌসুমে একটাই গোল করলেন এই ফুলব্যাক, আর সেই গোলটাই যেন এক মৌসুমে এক শ গোলের চেয়ে মহামূল্য হয়ে গেল! সেমিফাইনালে লিভারপুল! ২০০৫ সালে শুধু ফুটবল নয়, ক্রীড়া ইতিহাসেই অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের রূপকথার জন্ম দিয়েছিল ​ইংলিশ ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এসি মিলানের কাছে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ইস্তাম্বুলে সেবার ট্রফি নিয়ে উৎ​সব করেছিল লিভারপুল। তার সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়ই। তবে কালকের রাত পৃথিবীর সব জীবনযুদ্ধে লড়াই করে করে ক্লান্ত মানুষদেরও প্রেরণার উৎ​স হয়ে থাকবে। এভাবেও ফিরে আসা যায়, এভাবেও ফিরে আসা যায়!

No comments

Powered by Blogger.