পরিচালনাগত ঝুঁকিই ব্যাংকের বড় হুমকি
১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা দেশের বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক চলতি মাসেই ২২ বছরে পা রাখছে। ২০১৫ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। তার বিপরীতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির দীর্ঘ যাত্রার সাফল্য, ব্যর্থতাসহ ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন
প্রথম আলো: প্রাইম ব্যাংক ২২ বছরে পা রাখছে। দীর্ঘ এ যাত্রায় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
আহমেদ কামাল খান চৌধুরী: যাত্রার শুরুতে প্রাইম ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল ভোক্তা ঋণ বা কনজ্যুমার লোন। প্রাইম ব্যাংকের যাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশে এ ধরনের ঋণব্যবস্থা ছিল একমাত্র ইসলামী ব্যাংকে। তবে সেটি খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৯৫ সালে প্রাইম ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পর ভোক্তা ঋণ ব্যবস্থাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এ ব্যাংকের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে অন্যান্য ব্যাংক নানা নামে এ ধরনের ঋণ চালু করেছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল করপোরেট বা প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক বা গার্মেন্টস খাতে অর্থায়নে প্রাইম ব্যাংকের বিপুল অংশ গ্রহণ ছিল। পরবর্তী সময়ে যদিও এ কারণে ব্যাংকটিকে কিছুটা ধাক্কাও খেতে হয়েছিল। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্রাইম ব্যাংক অনেক ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে। ২০০৪ সালে প্রাইম ব্যাংকই আন্তর্জাতিক মানের কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করে। এ সফটওয়্যার চালুর ফলে ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কাজটি অনেক সহজ হয়েছিল।
প্রথম আলো: তৈরি পোশাক খাতে অর্থায়নের কারণে ধাক্কা খাওয়ার কথা বলছিলেন। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
আহমেদ কামাল খান: ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। কাছাকাছি সময়ে গার্মেন্টস খাতে কমপ্লায়েন্স ইস্যুটিও সামনে চলে আসে। এ ছাড়া সমসাময়িক সময়ে ঋণনীতির ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ১৮০ দিনের মধ্যে কিস্তি বকেয়া হলে যেসব ঋণকে ‘নিম্নমানের (সাব স্ট্যান্ডার্ড) ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো নীতি পরিবর্তনের ফলে সেসব ঋণ ৯০ দিনে কুঋণে পরিণত হয়। এতে করে তৈরি পোশাক খাতে অনেক নিম্নমানের ঋণও কুঋণে পরিণত হয়ে যায়। এসব কারণে ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গার্মেন্টস খাত সমস্যায় পড়ে। সে কারণে ওই সময়টাতে প্রাইম ব্যাংককে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়েছে। এর মাধ্যমে অবশ্য আমরা কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছে।
প্রথম আলো: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রাইম ব্যাংকের সাফল্যের কথা বলছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগে বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আহমেদ কামাল খান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা তথা ব্যাংক খাত যতটা এগিয়েছে, সেই তুলনায় সাইবার হুমকি বা তথ্যপ্রযুক্তির ঝুঁকিটাকে খুব বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর পুরো ব্যাংক খাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমি আমাদের ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তির দিকটি নিয়ে বলতে পারি। ২০০৪ সালে যখন কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করি, তখনই আমরা ব্যাংকারদের মধ্য থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করেছি। আমাদের ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ রয়েছেন, যাঁরা আইটি ঝুঁকিগুলো নিয়ে কাজ করেন। আমি মনে করি ব্যাংক খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ‘অপারেশনাল ও ডকুমেন্টেশন ঝুঁকি’। আর্থিক ঝুঁকির চেয়েও এটি অনেক বড় ঝুঁকি। কোথায় থেকে কীভাবে কখন এ ঝুঁকি আঘাত হানবে তা কেউই জানি না। তাই আমি মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তি শক্ত না করে কোনো ব্যাংকের আগ্রাসী বা অ্যাগ্রেসিভ ব্যাংকিংয়ে যাওয়া উচিত না। আমাদের ব্যাংকের দিক থেকে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: ব্যাংক খাতে এটাও দেখা গেছে, বাছবিচার ছাড়া অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। এমনও শোনা যায়, একটি খাত বা গুটিকয়েক ব্যবসায়ী কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো খাতই বড় ধরনের সংকটে পড়বে। এটি কেন?
আহমেদ কামাল খান : আমি বলব না, সব ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ ও তদারকিতে ব্যাংকগুলো দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাছবিচার ছাড়াই আগ্রাসী অর্থায়নও করা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে গ্রাহকের ঋণ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিকে অনেক ব্যাংক মিলে অর্থায়ন করেছে। ব্যাংকের সেসব সুবিধা কিছু কিছু ব্যবসায়ী অপব্যবহারও করেছেন। পোশাক খাতে অর্থায়ন করে আমরা যখন ধাক্কা খেলাম, সেখান থেকে কিছু শিক্ষা নিলাম। এভাবে বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। যেমন এখন পোশাক খাতে অর্থায়নের আগে এ খাতে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন মার্চেন্ডাইজারদের দিয়ে ঋণ ঝুঁকি পর্যালোচনা করে দেখি আমরা। কোন কোন খাতে ঋণের অপব্যবহার হতে পারে, সেগুলো আগেই খতিয়ে দেখা হয়। এর বাইরে এখন বড় ধরনের ঋণ বা অর্থায়নের পাশাপাশি এসএমই ও রিটেইল ব্যাংকিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক।
প্রথম আলো: আমরা জানি, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি প্রাইম ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। সেটি সম্পর্কে জানতে চাই?
আহমেদ কামাল খান : প্রাইম ব্যাংক সরাসরি কোনো সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করে না। সিএসআর কার্যক্রমের জন্য আলাদা করে প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। প্রাইম ব্যাংকের বার্ষিক প্রকৃত মুনাফার চার শতাংশ এ ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয় প্রতিবছর। তা দিয়েই সিএসআর কার্যক্রম চলে। সিএসআরের আওতায় বেশ কিছু সাফল্যজনক প্রকল্প রয়েছে। তার একটি প্রাইম ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প। দেশের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অধীনে ঢাকায় দুটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে এ ধরনের বিদ্যালয় করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে আমাদের। এর বাইরে প্রাইম ব্যাংকের অর্থায়নে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও একটি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিএসআর ব্যয়ের বাইরে প্রাইম ব্যাংক আলাদাভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও বড় ধরনের সহায়তা করে চলেছে। প্রাইম ব্যাংকের নিজস্ব একটি ক্রিকেট ক্লাব আছে। পাশাপাশি স্কুল ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে প্রাইম ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়ন করে চলেছে।
প্রথম আলো: প্রাইম ব্যাংক ২২ বছরে পা রাখছে। দীর্ঘ এ যাত্রায় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।
আহমেদ কামাল খান চৌধুরী: যাত্রার শুরুতে প্রাইম ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল ভোক্তা ঋণ বা কনজ্যুমার লোন। প্রাইম ব্যাংকের যাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশে এ ধরনের ঋণব্যবস্থা ছিল একমাত্র ইসলামী ব্যাংকে। তবে সেটি খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৯৫ সালে প্রাইম ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পর ভোক্তা ঋণ ব্যবস্থাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এ ব্যাংকের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে অন্যান্য ব্যাংক নানা নামে এ ধরনের ঋণ চালু করেছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল করপোরেট বা প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক বা গার্মেন্টস খাতে অর্থায়নে প্রাইম ব্যাংকের বিপুল অংশ গ্রহণ ছিল। পরবর্তী সময়ে যদিও এ কারণে ব্যাংকটিকে কিছুটা ধাক্কাও খেতে হয়েছিল। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্রাইম ব্যাংক অনেক ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে। ২০০৪ সালে প্রাইম ব্যাংকই আন্তর্জাতিক মানের কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করে। এ সফটওয়্যার চালুর ফলে ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কাজটি অনেক সহজ হয়েছিল।
প্রথম আলো: তৈরি পোশাক খাতে অর্থায়নের কারণে ধাক্কা খাওয়ার কথা বলছিলেন। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
আহমেদ কামাল খান: ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। কাছাকাছি সময়ে গার্মেন্টস খাতে কমপ্লায়েন্স ইস্যুটিও সামনে চলে আসে। এ ছাড়া সমসাময়িক সময়ে ঋণনীতির ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ১৮০ দিনের মধ্যে কিস্তি বকেয়া হলে যেসব ঋণকে ‘নিম্নমানের (সাব স্ট্যান্ডার্ড) ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো নীতি পরিবর্তনের ফলে সেসব ঋণ ৯০ দিনে কুঋণে পরিণত হয়। এতে করে তৈরি পোশাক খাতে অনেক নিম্নমানের ঋণও কুঋণে পরিণত হয়ে যায়। এসব কারণে ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে গার্মেন্টস খাত সমস্যায় পড়ে। সে কারণে ওই সময়টাতে প্রাইম ব্যাংককে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়েছে। এর মাধ্যমে অবশ্য আমরা কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছে।
প্রথম আলো: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রাইম ব্যাংকের সাফল্যের কথা বলছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগে বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আহমেদ কামাল খান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা তথা ব্যাংক খাত যতটা এগিয়েছে, সেই তুলনায় সাইবার হুমকি বা তথ্যপ্রযুক্তির ঝুঁকিটাকে খুব বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর পুরো ব্যাংক খাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমি আমাদের ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তির দিকটি নিয়ে বলতে পারি। ২০০৪ সালে যখন কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করি, তখনই আমরা ব্যাংকারদের মধ্য থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করেছি। আমাদের ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ রয়েছেন, যাঁরা আইটি ঝুঁকিগুলো নিয়ে কাজ করেন। আমি মনে করি ব্যাংক খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ‘অপারেশনাল ও ডকুমেন্টেশন ঝুঁকি’। আর্থিক ঝুঁকির চেয়েও এটি অনেক বড় ঝুঁকি। কোথায় থেকে কীভাবে কখন এ ঝুঁকি আঘাত হানবে তা কেউই জানি না। তাই আমি মনে করি, তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তি শক্ত না করে কোনো ব্যাংকের আগ্রাসী বা অ্যাগ্রেসিভ ব্যাংকিংয়ে যাওয়া উচিত না। আমাদের ব্যাংকের দিক থেকে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: ব্যাংক খাতে এটাও দেখা গেছে, বাছবিচার ছাড়া অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। এমনও শোনা যায়, একটি খাত বা গুটিকয়েক ব্যবসায়ী কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো খাতই বড় ধরনের সংকটে পড়বে। এটি কেন?
আহমেদ কামাল খান : আমি বলব না, সব ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ ও তদারকিতে ব্যাংকগুলো দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাছবিচার ছাড়াই আগ্রাসী অর্থায়নও করা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে গ্রাহকের ঋণ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিকে অনেক ব্যাংক মিলে অর্থায়ন করেছে। ব্যাংকের সেসব সুবিধা কিছু কিছু ব্যবসায়ী অপব্যবহারও করেছেন। পোশাক খাতে অর্থায়ন করে আমরা যখন ধাক্কা খেলাম, সেখান থেকে কিছু শিক্ষা নিলাম। এভাবে বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। যেমন এখন পোশাক খাতে অর্থায়নের আগে এ খাতে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন মার্চেন্ডাইজারদের দিয়ে ঋণ ঝুঁকি পর্যালোচনা করে দেখি আমরা। কোন কোন খাতে ঋণের অপব্যবহার হতে পারে, সেগুলো আগেই খতিয়ে দেখা হয়। এর বাইরে এখন বড় ধরনের ঋণ বা অর্থায়নের পাশাপাশি এসএমই ও রিটেইল ব্যাংকিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক।
প্রথম আলো: আমরা জানি, ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি প্রাইম ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। সেটি সম্পর্কে জানতে চাই?
আহমেদ কামাল খান : প্রাইম ব্যাংক সরাসরি কোনো সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করে না। সিএসআর কার্যক্রমের জন্য আলাদা করে প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। প্রাইম ব্যাংকের বার্ষিক প্রকৃত মুনাফার চার শতাংশ এ ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয় প্রতিবছর। তা দিয়েই সিএসআর কার্যক্রম চলে। সিএসআরের আওতায় বেশ কিছু সাফল্যজনক প্রকল্প রয়েছে। তার একটি প্রাইম ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প। দেশের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয় প্রকৃত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অধীনে ঢাকায় দুটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে এ ধরনের বিদ্যালয় করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে আমাদের। এর বাইরে প্রাইম ব্যাংকের অর্থায়নে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও একটি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিএসআর ব্যয়ের বাইরে প্রাইম ব্যাংক আলাদাভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও বড় ধরনের সহায়তা করে চলেছে। প্রাইম ব্যাংকের নিজস্ব একটি ক্রিকেট ক্লাব আছে। পাশাপাশি স্কুল ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে প্রাইম ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়ন করে চলেছে।
No comments