মুক্তিযোদ্ধার একজন মুসা

ঢাকার মাঠে এমন আনন্দনৃত্য যেন নিয়মিত।
অদ্ভুত নাচের ভঙ্গিমায় হ্যাটট্রিক উদ্‌যাপন
মুক্তিযোদ্ধার নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড আবু মুসার।
বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ভালো চাকরি করবে। কিন্তু নাইজেরিয়ার আবিজা ইয়োলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর আহমেদ কোলো মুসা ভিনদেশে ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছেন। ফুটবলটা রক্তে বলেই করপোরেট প্রতিষ্ঠানে স্যুট-বুট-টাই পরা ‘এক্সিকিউটিভ’ হননি। এর আগে মিসরে খেলেছেন। এরপর ইরাক হয়ে এবার বাংলাদেশের ক্লাব মুক্তিযোদ্ধায়। বাংলাদেশে আসা অন্য ৮-১০ জন নাইজেরিয়ানের ভিড়ে আলাদাভাবেই নজর কেড়েছেন এই ফরোয়ার্ড। এরই মধ্যে চার ম্যাচে ৫ গোল করেছেন। যদিও তাঁর দাবি, ৬ গোল। তবে একটি গোল রেফারি আত্মঘাতী হিসেবেই দেখিয়েছেন। কাল উত্তর বারিধারাকে ৩-০ গোলে হারানোর ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন মুসা। প্রথম ম্যাচে মুসা গোল পাননি, ওই ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হারে মুক্তিযোদ্ধা। পরের ম্যাচে তাঁর একমাত্র গোলে ব্রাদার্সকে হারায় তাঁর দল। তৃতীয় ম্যাচে তাঁর ২ গোলেই মোহামেডানের বিপক্ষে জয়। কিন্তু রেফারি একটিকে দেখান আত্মঘাতী। কাল তো হ্যাটট্রিকই করে বসলেন। স্বাধীনতা কাপে এর আগে হ্যাটট্রিক করেছেন শেখ জামালের ওয়েডসন আনসেলমে ও শেখ রাসেলের ফিকরু তেফেরা। এই জয়ে ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকায় মুসার কাছে বলের জোগান তেমন যায় না। তবে বল পেলে আসল কাজটা করতে বেশি সময় নেন না। কাল ১৭ মিনিটে তৌহিদুল আলমের চমৎকার ক্রসে হেড করে ১-০ করেন মুসা। ৩২ মিনিটে গোলরক্ষক রাজীবের মাথার ওপর দিয়ে বল তুলে দিয়ে করেন ২-০। ৫৫ মিনিটেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ। তৌহিদুলের শট রাজীবের হাত ফসকে বেরিয়ে এলে ফিরতি বলে মুসার গোল। গত মৌসুমে বাংলাদেশে খেলা এক নাইজেরিয়ান ফুটবলার মুসার খোঁজ দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাকে। এরপর মুসার কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখে ট্রায়ালে নেওয়া হয়। শেখ রাসেলের সঙ্গে প্রাক-মৌসুম প্রীতি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পরই তাঁকে চূড়ান্ত করে মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকায় প্রথম খেলতে এসে রোমাঞ্চিত মুসা, ‘আমি ঢাকার এই ক্লাবে খেলতে পেরে খুবই খুশি।’ মৌসুমে কত গোল করার লক্ষ্য? মুসা শুধু হাসলেন, ‘আল্লাহই জানেন আমি কত গোল করব! তবে আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ ইরাকে নাজাফ ও কারবালায় দুই মৌসুম খেলেছেন, কিন্তু টাকাপয়সা নিয়মিত পেতেন না বলেই বাংলাদেশে এসেছেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফুটবলারদের ঠিকমতো টাকা দিতে চাইত না ওরা।’দেশে স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে রেখে এসেছেন মুসা। কীভাবে তাদের এখানে আনা যায়, সেটাই এখন ভাবছেন। ঢাকায় এসে টুকটাক বাংলা শেখার চেষ্টা করছেন। ‘কেমন আছেন?’ ‘ভালো আছি’—জাতীয় বাক্য বলতে পারেন। পরশু বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করেছেন সতীর্থদের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ খেয়ে। মুক্তিযোদ্ধাকে বড় একটা সাফল্য উপহার দিয়ে ‘বাঙালি মুসা’ হতে চান এই নাইজেরিয়ান। আরামবাগ-রহমতগঞ্জ গোলশূন্য ড্র: টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শেখ রাসেলের কাছে হেরেছিল আরামবাগ। এরপর টানা তিন ম্যাচ ড্র। কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আরামবাগ গোলশূন্য ড্র করেছে রহমতগঞ্জের সঙ্গে। এই ড্রয়ে ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট হলো তাদের। সমান ম্যাচে রহমতগঞ্জের পয়েন্ট ৪। ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোলের মুখ দেখতে পারেনি কোনো ক্লাবই। অবশ্য ৫৮ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত আরামবাগ। মিডফিল্ডার আবদুল্লাহর হেড সেভ করেছেন রহমতগঞ্জের নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার এলিটা বেঞ্জামিন।
আজ স্বাধীনতা কাপের কোনো ম্যাচ নেই।

No comments

Powered by Blogger.