ইতিহাসও ছিল মেসিদের প্রতিপক্ষ

অ্যাটলেটিকোর পাশাপাশি ইতিহাসও কী চ্যাম্পিয়নস
লিগ থেকে খালি হাতে ফেরাল মেসিদের?
মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগের কথা। বার্সেলোনা কেন আরও একবার মৌসুমের তিনটি শিরোপাই জিতবে না, সেটিই ছিল আলোচনায়। কিন্তু তিন সপ্তাহের মধ্যেই কেমন যেন সব কিছু বদলে গেল। বার্সেলোনার ট্রেবলের আশা এখন হাওয়া। টানা দুটি ম্যাচ হেরে ‘পর্বত-প্রমাণ’ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার সুবিধা এখন নেমে এসেছে ‘টিলা’ সমান দূরত্বে। কে জানে, আর একটি ম্যাচে হোঁচট খেলেই লিগ জয়ের আশাতেও বড় ধাক্কা লাগতে পারে।  লিগে ধাক্কা লাগতে পারে, চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা কাল লেগেই গেল বার্সার গায়ে। ভিসেন্তে ক্যালদেরনে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ২-০ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা।  কেন এমন হলো, কী হলে কী হতে পারত—কাঁটাছেড়া চলছে এসব নিয়েই। বার্সেলোনা সমর্থকদের হতাশা, ক্রোধ সবকিছুর মধ্যে হয়তো সান্ত্বনার বাণী হয়ে আসতে পারে এই তথ্যটি—এমনটা হয়তো হওয়ার কথাই ছিল। ইতিহাসই বলছে, এবারও বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যই ছিল। ১৯৯২ সালে নতুন নামে, নতুন রূপে পথচলা শুরুর পর থেকে যে কখনো কোনো একটি ক্লাবকে টানা দুবার আপন করে নেয়নি চ্যাম্পিয়নস লিগ। সব ইতিহাসেরই শুরু থাকে, শেষও থাকে। কোনো না কোনো সময় হয়তো এই ইতিহাসও ভাঙা হয়ে যাবে। তবে মৌসুমের শুরু থেকে সব সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকা বার্সার পক্ষে সেটি সম্ভব হলো না, এই যা। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তিও কাল ম্যাচের পর এটিকেই কারণ হিসেবে তুলে এনেছিলেন। আগের মৌসুমের শিরোপাজয়ীদের প্রতি চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘অভিশাপ’কেই বার্সার হারের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন ইতালিয়ান কোচ। অভিশাপই তো! ১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ থেকে নাম বদলে চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণ করা হলো, ফরম্যাটটা বদলে দেওয়া হলো। ব্যাস, নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল ক্লাবগুলোর ভাগ্যও। সেখানেই সমাধি হয়ে গেল কোনো ক্লাবের ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন।  অথচ পরিবর্তনের আগের ইতিহাসটা দেখুন। ১৯৫৫ সাল থেকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস ক্লাব কাপ (সংক্ষেপে ইউরোপিয়ান কাপ) নামে শুরু হয়েছিল ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতা। সে বছর শিরোপা জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তখন থেকেই শুরু ষাটের দশকের রিয়ালের ইউরোপ দাপিয়ে বেড়ানো। টানা পাঁচবার ইউরোপিয়ান কাপ গেছে ‘লস ব্লাঙ্কো’দের ঘরে।  রিয়ালের হাত থেকে ব্যাটনটা সরাসরি চলে যায় ইউসেবিওর বেনফিকার কাছে। ১৯৬০ ও ১৯৬১—টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপ জেতে পর্তুগালের ক্লাবটি। এরপর টানা দুবার বা এর বেশি ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছে আরও ৬টি ক্লাব। ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে এই কীর্তি ইন্টার মিলানের, ১৯৭১ থেকে টানা তিনবার ইয়োহান ক্রুইফের আয়াক্সের।  ক্রুইফের পর ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মান কিংবদন্তি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬—টানা তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ জেতালেন বায়ার্ন মিউনিখকে। সত্তরের দশকের ইউরোপ মাতানো লিভারপুলও স্বর্ণযুগটাকে আলোকিত করে রেখেছে ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে টানা দুবার শিরোপাটি জিতে। লিভারপুলের পর টানা দুবার জেতে ইংল্যান্ডের আরও একটি ক্লাব—নটিংহ্যাম ফরেস্ট। কিংবদন্তি কোচ ব্রায়ান ক্লফ ও তাঁর সহকারী পিটার টেলরের অধীনে অবিশ্বাস্য সাফল্য পাওয়া নটিংহ্যাম ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালের ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিল। এরপর শুধু আর একটি ক্লাবই এমন অর্জনের ভাগ নিতে পেরেছে—এসি মিলান। আরিগো সাচ্চির অধীনে ইতালিয়ান পরাশক্তিরা ইউরোপ সেরা হয় ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে। ইতিহাসের পাঠ ওখানেই শেষ। এরপর আর কখনো কোনো ক্লাবের সৌভাগ্য হয়নি ইউরোপে টানা দুবার রাজত্ব করার। এই মৌসুমে বার্সেলোনার তেমন কিছু করার সম্ভাবনা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। কিন্তু দিয়েগো সিমিওনে এবং তাঁর শিষ্যদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কাছেই বার্সেলোনার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।  ইতিহাস আরও একবার অলক্ষ্যে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল কোনো ক্লাবের টানা দুবার শিরোপা জয়ের স্বপ্নে। কেউ কী আদৌ খুলতে পারবে এই গেরো? তা জানতে অন্তত দুই মৌসুম অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.