আগামী বাজেট হবে অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য আতঙ্ক

নজিবুর রহমান
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, আগামী বাজেট হবে সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা আর অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে বাজেট কাঠামো হচ্ছে। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে গতকাল বুধবার আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। এনবিআর সম্মেলনকক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। পানামা পেপারসে বাংলাদেশি কেউ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। দেশের কল্যাণে যা করার, তা-ই করবে। এদিকে কর দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করেছেন ইআরএফের সদস্যরা। করের ভিত্তি বিস্তৃত করার তাগিদ দেন তাঁরা। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করা, রিটার্ন দাখিলের সময় না বাড়িয়ে সারা বছর নির্ধারণের দাবি জানান তাঁরা। বহুজাতিক কোম্পানির কর এড়ানোর কৌশল সম্পর্কে নজিবুর রহমান বলেন, ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং নিয়ে কাজ হচ্ছে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি নিজেদের শোধরাচ্ছেন, সেই আলামত পাচ্ছি। এ বিষয়ে এনবিআর কঠোর হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়িত হলে দেশে ব্যবসা করার সূচকে অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য পারভেজ ইকবাল জানান, আগামী বছরের জুলাই থেকে নতুন প্রত্যক্ষ কর আইন কার্যকর হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই আইনের খসড়া তৈরি হবে। আইনটির ভাষা হবে বাংলা। এতে আয়কর খাতটি করদাতাদের কাছে আরও সহজবোধ্য হবে। এনবিআর সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগামী জুলাই মাসে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়িত হলে প্রতি মাসে অনলাইনে মূসক বিবরণী জমা ও কর দিতে পারবেন। এমনকি ওই করদাতার মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা কিংবা ই-মেইল করে তাঁকে মূসক বিবরণী জমার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই করদাতা আয়কর হিসেবে কী পরিমাণ অর্থ দিচ্ছেন, তা-ও জানা যাবে। এতে কর ফাঁকি অনেকাংশে কমবে বলে তিনি মনে করেন। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করার দাবি জানান ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম। তিনি আরও বলেন, এনবিআরকে আদায়কারী নয়, সেবাদাতার ভূমিকায় থাকতে হবে। পুলিশের মতো আচরণ না করে জনবান্ধব হতে হবে। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় কর রেয়াত দেওয়ার সময় অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী পড়ছে, সে বিষয়ে সমীক্ষা করা উচিত। কর দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করার সুপারিশ করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, রাঘববোয়াল তথা ক্ষমতাধরদের কর নথি যাচাই-বাছাই করলে কর ফাঁকি ধরা সম্ভব হবে। এতে জনবল কম লাগবে, রাজস্ব আদায় বেশি হবে। জনকল্যাণমূলক, সুষম, অংশীদারত্বমূলক বাজেট প্রণয়নের জন্য প্রতিবছর প্রাক্-বাজেট আলোচনা করে এনবিআর। এসব প্রাক্-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, গবেষকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায় ইআরএফের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনবিআর। এ সভায় সভাপতিত্ব করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

No comments

Powered by Blogger.