যেন ইস্তাম্বুলই ফিরল অ্যানফিল্ডে

পুরো ম্যাচে দলের দ্বাদশ ব্যক্তির মতো সমর্থন দিয়ে
গেছেন দর্শকেরা। ডর্টমুন্ডের সঙ্গে অমন অসাধারণ
জয়ের পর সমর্থকদের এভাবে ধন্যবাদ জানাল লিভারপুল
কী বলবেন একে? নাটক, রূপকথা? দুই দলের কোচের কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই, খেলোয়াড়েরাও আনন্দ-বিস্ময়ের বিপরীতমুখী অনুভূতিতে আচ্ছন্ন। গত পরশু আসলে কী হলো অ্যানফিল্ডে? এক মুহূর্তে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া, তো পরের মুহূর্তে হতাশায় ডুবে যাওয়া। এক মুহূর্তে মনে হতে পারে ‘সব শেষ’, পরের মুহূর্তেই বিজয়ীর অনুভূতি। রোমাঞ্চকর ম্যাচে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছে লিভারপুল, দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে জিতে উঠে গেছে ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে। কিন্তু ফলটাকে একপাশে সরিয়ে রাখুন, পরশু অ্যানফিল্ড যে ধ্রুপদি ফুটবল উপহার দিল, সেটি নিশ্চিতভাবেই রূপকথার অংশ হয়ে থাকবে। লিভারপুলের ইতিহাসের পাতায় খুঁজলে অবশ্য এমন আরও কিছু গল্প পাওয়া যাবে। ২০০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও এসি মিলানের কাছে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ফিরে এসেছিল অলরেডরা, ইস্তাম্বুলে সেদিন বিজয়োৎসব করেছিলেন স্টিভেন জেরার্ডরা। ধারে-ভারে সেই ম্যাচ আর এই ম্যাচের তুলনা করা উচিত হবে না, তবে ম্যাচের আবহে পরশু যেন ‘ইস্তাম্বুল’ই ফিরে এল অ্যানফিল্ডে। ডর্টমুন্ডের মেখিতারিয়ান ও অবামেয়াংয়ের গোলে ৯ মিনিটের মধ্যেই ২-০-তে পিছিয়ে পড়েছিল লিভারপুল। প্রথম লেগে ১-১ গোলের ড্রয়ে পাওয়া ‘অ্যাওয়ে গোলের’ সুবিধা তখন শেষ। লিভারপুলের সামনে চ্যালেঞ্জ, ন্যূনতম ৩ গোল করার। ইস্তাম্বুলের মতো আবারও পিছিয়ে পড়ে ৩ গোল করার চ্যালেঞ্জ। বিরতিতে ইয়ুর্গেন ক্লপ লিভারপুল খেলোয়াড়দের সামনে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন ইস্তাম্বুলের স্মৃতি, ‘আমি ছেলেদের বলছিলাম, আমি সেখানে (ইস্তাম্বুল) ছিলাম না। কিন্তু লিভারপুলের অনেক খেলোয়াড়, যাদের এখন বয়স হয়ে গেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও জিতেছিল। যদিও কঠিন, আমাদের জন্যও এটা নিশ্চিতভাবেই সম্ভব।’ ক্লপের অতীত-বর্তমানের লড়াইয়ে আপাত-অসম্ভবকে কী অসাধারণভাবেই না সম্ভব করল লিভারপুল! ম্যাচটাও ফুটবলের সব রূপ-রস নিয়ে উপস্থিত হলো দ্বিতীয়ার্ধে। ৪৮ মিনিটে অরিগির গোলে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল অ্যানফিল্ড। মিনিট দশেক পর ডর্টমুন্ডের তৃতীয় গোলটি করে তাতে বাদ সাধলেন মার্কো রয়েস। কিন্তু ক্লপের বর্তমান দলকে বেঁধে রাখা গেলে তো! ৩ গোল দরকার ছিল, ৬৬ থেকে ৯২—এই ২৬ মিনিটের মধ্যে কুতিনহো, সাখো ও লভরেনের গোলে নতুন প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল লিভারপুল। ফুটবলীয় দক্ষতা বা কৌশল নয়, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিল দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া আর প্রতিপক্ষের চেয়ে একটু বেশি ঢেলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞায়। দুর্দান্ত উপাখ্যানটিকে শুধুই অনুভূতির আলোকে ব্যাখ্যা করলেন ক্লপ, ‘যখন আমরা গোল করলাম, স্টেডিয়ামে কিছু একটা হচ্ছিল। আপনি সেটা শুধু শুনতে পারছিলেন, অনুভব করতে পারছিলেন, গন্ধও পাচ্ছিলেন।’ কোনো ব্যাখ্যা নেই ডর্টমুন্ড কোচ টমাস টুখেলের কাছেও, ‘যৌক্তিক কিছু হলে আমি ব্যাখ্যা করতে পারতাম। কিন্তু এটা যৌক্তিক কিছু ছিল না। ম্যাচে সমতা আসার পর সম্ভবত আমাদের সমর্থক ছাড়া সবাই বুঝতে পারছিলেন, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।’ এমন ম্যাচের পর যুক্তি খুঁজতে চাওয়া হয়তো অনুচিত। ম্যাচের পর ক্লপের মন্তব্যটাই এই ম্যাচের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছে, ‘শুধু লিভারপুল বা ডর্টমুন্ড নয়, সব সমর্থকই এই ম্যাচের পর বলবে—ফুটবল আসলেই এমন সুন্দর।’ এএফপি।
 এক নজরে
লিভারপুল ৪: ৩ ডর্টমুন্ড
(দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলে
জয়ী লিভারপুল)
সেভিয়া ১ (৫): ২ (৪) বিলবাও
(দুই লেগে ৩-৩ গোলে সমতার
পর টাইব্রেকারে জয়ী সেভিয়া)
ভিয়ারিয়াল ৪: ২ স্পার্তা প্রাগ
(দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলে
জয়ী ভিয়ারিয়াল)
শাখতার ৪: ০ ব্রাগা
(দুই লেগ মিলিয়ে ৬-১ গোলে
জয়ী শাখতার)

No comments

Powered by Blogger.