ভাগ্য মেনে নিয়েছেন ইমরুল রানা আব্বাস
আসলে সব দেশেই এ রকম দু-একজন খেলোয়াড় থাকে, যারা সারা জীবন এভাবেই খেলে যায় |
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ৮ বছর কাটিয়ে দিলেন ইমরুল কায়েস। এখনো তাঁকে ওভার-নির্দিষ্ট ক্রিকেটের বাংলাদেশ দলে জায়গা পেতে লড়াই করতে হয়। একসময় টেস্ট দলেও নিয়মিত ছিলেন না। গত দুই বছরে অবশ্য থিতু হয়েছেন এই সংস্করণে। এনামুল হক চোটে পড়ায় হঠাৎই ডাক পেয়েছিলেন গত বিশ্বকাপে। ৩ ম্যাচে ৯ রান করার পর আবারও ব্রাত্য হয়ে পড়েন ওয়ানডে দলে। গত বছর দেশের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয় ইমরুল দেখেছেন দূর থেকেই। গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ৭৬ ও ৭৩ রানের দুটি ইনিংস খেললেও খুব একটা কাজে দেয়নি তা। বাংলাদেশ এর পর যে আর ওয়ানডেই খেলেনি। খেলেছে শুধুই টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতে যিনি প্রায় থাকেন পেছনের পাতায়, তাঁর পক্ষে টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাওয়া তো আরও কঠিন! কিন্তু ইমরুল চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন। দারুণ খেলেছেন সর্বশেষ বিপিএলে। চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে ১২ ম্যাচে ৩১২ রান করে কুমার সাঙ্গাকারার পরেই হয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান এটিই। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ইমরুলকে থাকতে হয়েছে ‘স্ট্যান্ডবাই’ হয়ে। কাল দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যখন কথা হলো, বেশ ক্লান্তই দেখাল ইমরুলকে। মাত্রই অনুশীলন করে এসেছেন, ক্লান্ত থাকবেন স্বাভাবিক। তবে বারবার নিজেকে ‘প্রমাণ’ করতে করতে বোধ হয় আরও বেশি ক্লান্ত ইমরুল, ‘প্রতিটি দলে এ রকম দু-একজন খেলোয়াড় থাকে, যারা ভাগ্যের ছোঁয়া খুব একটা পায় না। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। আসলে কিছু খেলোয়াড় থাকে যাদের শুধু প্রমাণ করেই যেতে হয়! এখনো একটা সিরিজ খারাপ খেললেই আমাকে আবার প্রমাণ করে দলে ঢুকতে হবে।’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিং নিষিদ্ধ হওয়া আরাফাত সানি-তাসকিন আহমেদ ভারত থেকে ফিরে আসার পর একটা সুযোগ তৈরি হলেও ইমরুলের ডাক পড়েনি। একে অবশ্য ‘নিয়তি’ হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন বাঁহাতি ওপেনার, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছে আমার চেয়ে ভালো কাউকে নিতে। আসলে সব দেশেই এ রকম দু-একজন খেলোয়াড় থাকে, যারা সারা জীবন এভাবেই খেলে যায়। একসময় খুব হতাশ হতাম। এখন আর হই না। এটা আমার নিয়তি, মেনে নিয়েছি। দেখেন ঢাকা লিগে প্রতি মৌসুমেই রান করি, কিন্তু প্রতিটি দল শেষ দিকে নেয় আমাকে।’ বারবার হোঁচট খেতে থাকা ইমরুলের মধ্যে পা হড়কানোর ভয় আর কাজ করে না, ‘কত বছর ক্রিকেট খেলব পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সেই পরিকল্পনা আমার আছে। কে কী বলল তা নিয়ে চিন্তিত নই। যত দিন খেলব ভালো করার চেষ্টা করব। ভালো করলে সেটাই হবে আমার তৃপ্তি।’ ‘আইকন’ খেলোয়াড় হিসেবে ইমরুল এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন ব্রাদার্সের হয়ে। এবারের লিগেও নিশ্চয়ই চাইবেন নিজের ‘তৃপ্তি’টা ধরে রাখতে।
No comments