শিশু শান্তকে ফিরিয়ে দিতে চান মা! by কাজী আনিছ
মায়ের কোলে রবিউলl ফাইল ছবি |
ধরে
নিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিল নয় বছরের শিশু রবিউল ইসলাম শান্তর দুই হাত। দেশে
চিকিৎসা শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা রুকসানা কামার তাকে
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। তার দুই হাতে সংযোজন করা হয় কৃত্রিম হাত। ওই
কর্মকর্তা দেশে ফিরে তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু কিছুদিন পর
পরিবার তাকে নিয়ে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাতে থাকে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে
প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদালত শিশুটির ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা
দেন। এখন শান্তর মা সেই কর্মকর্তার কাছে শান্তকে ফিরিয়ে দিতে চান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা রুকসানা কামার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি রাতে ফোন করে নাসিমা বেগম তাঁর ছেলে শান্তকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শান্তর মা চান, তাঁর ছেলে আবার লেখাপড়া শুরু করুক।’
যোগাযোগ করা হলে নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমি বাসা বাড়িতে কাজ কইরা খাই। আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। শান্তর লেখাপড়া হইতেছে না। তাই তার লেখাপড়ার জন্য ওনার (রুকসানা কামার) কাছে শান্তকে দিমু কইছি।’
পরিবারের সঙ্গে গুলশানের কড়াইল বস্তিতে থাকত শান্ত। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সে নিখোঁজ হয়। কয়েক দিন পর দুই হাত কাটা অবস্থায় কে বা কারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। নাসিমা বেগমের অভিযোগ, শান্তর সৎ বাবা মো. জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন পুলিশেরও ধারণা ছিল, ভিক্ষাবৃত্তি করানোর উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে জাহাঙ্গীর এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা করেন নাসিমা। পুলিশ জাহাঙ্গীরসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ মার্চ ‘এ কেমন নির্মমতা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷
দেশে কিছুদিন চিকিৎসার পর বেশ কয়েকজনের সহায়তায় কর্মকর্তা রুকসানা রবিউলকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রবিউলের শরীরে কৃত্রিম দুটি হাত সংযোজন করা হয়। দেশে ফিরে ফরিদপুরের সদরের বাখুন্ডায় রুকসানার নিজ গ্রামে একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে রবিউলকে ভর্তি করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ মে প্রথম আলোয় এ নিয়ে ‘আমি এখন লিখতে পারি’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। লেখাপড়ার একপর্যায়ে পরিবার শান্তকে নিয়ে যায়। তাকে দিয়ে পরিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করাতে থাকে। এ নিয়ে গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘শিশু রবিউলের এ পরিণতি!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ‘শিশু রবিউলকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে পরিবার’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং আদালতে শান্তর পরিবারকে হাজির করার নির্দেশ দেন। পরে আদালত শান্তকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করেন। এরপর থেকে শান্তকে দিয়ে ভিক্ষা করানো বন্ধ রাখে পরিবার।
ফরিদপুরের বাখুন্ডা গ্রামের ‘শরীফ আবদুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল শান্ত। জানতে চাইলে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিতারা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুকসানা কামার শিশু শান্তকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও আমরা শান্তর লেখাপড়ার বিশেষ যত্ন নিয়েছিলাম। পড়ার দক্ষতাও আস্তে আস্তে বাড়ছিল। কৃত্রিম হাতে সে লেখাও রপ্ত করেছিল। পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম, পরিবার তাকে নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চাই, শান্ত লেখাপড়ার অন্তত সুযোগটা পাক।
শান্তকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ বিষয়ে জানতে চাইলে মা নাসিমা কিছুক্ষণ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আবার কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘এইখানে থাইক্কা শান্তর লেখাপড়া নষ্ট হইয়া গেছে। আমি চাই সে লেখাপড়া করে মাইনষের মতো মানুষ হোক। তয় আমি দশজনরে সাক্ষী রাইখা ছেলেরে দিতে চাই।’
জানতে চাইলে রুকসানা কামার বলেন, ‘আমি শান্তর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে এখনো রাজি। তবে তার মাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি আদালতের মাধ্যমেই তাকে নিতে চাই। শান্ত অনেক মেধাবী। তার জীবনটা নষ্ট হোক তা চাই না। আমি তাকে সুশিক্ষিত করতে চাই। দীর্ঘদিন আমার কাছে থাকার কারণে তার প্রতি আমার বড্ড মায়াও পড়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা রুকসানা কামার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি রাতে ফোন করে নাসিমা বেগম তাঁর ছেলে শান্তকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শান্তর মা চান, তাঁর ছেলে আবার লেখাপড়া শুরু করুক।’
যোগাযোগ করা হলে নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমি বাসা বাড়িতে কাজ কইরা খাই। আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। শান্তর লেখাপড়া হইতেছে না। তাই তার লেখাপড়ার জন্য ওনার (রুকসানা কামার) কাছে শান্তকে দিমু কইছি।’
পরিবারের সঙ্গে গুলশানের কড়াইল বস্তিতে থাকত শান্ত। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সে নিখোঁজ হয়। কয়েক দিন পর দুই হাত কাটা অবস্থায় কে বা কারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। নাসিমা বেগমের অভিযোগ, শান্তর সৎ বাবা মো. জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন পুলিশেরও ধারণা ছিল, ভিক্ষাবৃত্তি করানোর উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে জাহাঙ্গীর এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা করেন নাসিমা। পুলিশ জাহাঙ্গীরসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ মার্চ ‘এ কেমন নির্মমতা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷
দেশে কিছুদিন চিকিৎসার পর বেশ কয়েকজনের সহায়তায় কর্মকর্তা রুকসানা রবিউলকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রবিউলের শরীরে কৃত্রিম দুটি হাত সংযোজন করা হয়। দেশে ফিরে ফরিদপুরের সদরের বাখুন্ডায় রুকসানার নিজ গ্রামে একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে রবিউলকে ভর্তি করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ মে প্রথম আলোয় এ নিয়ে ‘আমি এখন লিখতে পারি’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। লেখাপড়ার একপর্যায়ে পরিবার শান্তকে নিয়ে যায়। তাকে দিয়ে পরিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করাতে থাকে। এ নিয়ে গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘শিশু রবিউলের এ পরিণতি!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ‘শিশু রবিউলকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে পরিবার’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রিন্ট সংস্করণে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং আদালতে শান্তর পরিবারকে হাজির করার নির্দেশ দেন। পরে আদালত শান্তকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করেন। এরপর থেকে শান্তকে দিয়ে ভিক্ষা করানো বন্ধ রাখে পরিবার।
ফরিদপুরের বাখুন্ডা গ্রামের ‘শরীফ আবদুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল শান্ত। জানতে চাইলে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিতারা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুকসানা কামার শিশু শান্তকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও আমরা শান্তর লেখাপড়ার বিশেষ যত্ন নিয়েছিলাম। পড়ার দক্ষতাও আস্তে আস্তে বাড়ছিল। কৃত্রিম হাতে সে লেখাও রপ্ত করেছিল। পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম, পরিবার তাকে নিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চাই, শান্ত লেখাপড়ার অন্তত সুযোগটা পাক।
শান্তকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ বিষয়ে জানতে চাইলে মা নাসিমা কিছুক্ষণ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আবার কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘এইখানে থাইক্কা শান্তর লেখাপড়া নষ্ট হইয়া গেছে। আমি চাই সে লেখাপড়া করে মাইনষের মতো মানুষ হোক। তয় আমি দশজনরে সাক্ষী রাইখা ছেলেরে দিতে চাই।’
জানতে চাইলে রুকসানা কামার বলেন, ‘আমি শান্তর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে এখনো রাজি। তবে তার মাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি আদালতের মাধ্যমেই তাকে নিতে চাই। শান্ত অনেক মেধাবী। তার জীবনটা নষ্ট হোক তা চাই না। আমি তাকে সুশিক্ষিত করতে চাই। দীর্ঘদিন আমার কাছে থাকার কারণে তার প্রতি আমার বড্ড মায়াও পড়ে গেছে।’
No comments