তামাক চাষের খেসারত আমাদেরই দিতে হবে by আর কে চৌধুরী
বৃহত্তর
রংপুর জেলায় তামাকের চাষ ব্যাপক আকার ধারণ করছে। ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষার
ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষকরা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি জেনেও তামাক
চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। অপরদিকে দেশী-বিদেশী তামাক বণিকরা চাষীদের ব্যাপক হারে
ঋণ দিয়ে এতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। এমনকি তামাকের অধিক মূল্য দেয়ার লোভ দেখিয়েও
তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিক মুনাফার জন্য
কৃষকরা ধান, পাট, ভুট্টা ও গম আবাদযোগ্য জমিতে নতুন করে তামাকের আবাদ শুরু
করছেন। ফলে প্রতি বছর রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে তামাক চাষ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি
পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক শুধু নেশাজাতীয় পণ্য নয়। এর
ব্যবহারে মানুষের বহুবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্যান্সার,
শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা ধরনের জীবন বিনাশী রোগ সৃষ্টি হয় তামাক
ব্যবহারের ফলে। অনেক ক্ষেত্রে তামাক হেরোইন, ইয়াবা, আফিম প্রভৃতির চেয়েও
মারাত্মক নেশাজাতীয় পণ্য। এর ধোঁয়া ফুসফুস, কিডনি, লিভার প্রভৃতি অকেজো
করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে। শুধু তাই নয়, জীবনীশক্তিসহ যৌনশক্তিও
হ্রাস পায় তামাকের ব্যবহারে। এমনকি অনেকে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে
ফেলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর শুধু ধূমপানের
শিকার হয়ে কোটি কোটি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শুধু বাংলাদেশেই প্রতি
বছর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরও
একশ্রেণীর অপরিণামদর্শী মানুষ ধূমপান করে থাকেন। ফলে কেবল সরাসরি
ধূমপানকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, পরোক্ষ ধূমপানেও অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর
দিকে এগিয়ে যান। বেখেয়াল ধূমপায়ীরা নিজেদের শিশু-সন্তানদেরও মৃত্যুর মুখে
ঠেলে দেন অবহেলায়। উন্নত বিশ্বে যখন ধূমপান বা তামাকের ব্যবহার কঠোরভাবে
নিয়ন্ত্রণে, তখন আমাদের দেশে তা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। সরকারি তরফ থেকে
ঢিলেঢালাভাবে তামাকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বললেই
চলে। রাস্তাঘাটে, বাজার-হাটে তামাক ব্যবহার এখনও চলছেই। তবে যানবাহনে
ধূমপান অনেকাংশে কমে গেছে বলে প্রত্যক্ষ করা যায়। তামাকের ধোঁয়া
সেবনকারীদের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশেরও ক্ষতি করে। নানা রোগজীবাণু ছড়াতে সহায়তা
করে। ধূমপান যেমন ক্ষতিকর, তেমনই ক্ষতিকর জর্দা, গুল, সাদাপাতা প্রভৃতিও।
অপরদিকে যে মাটিতে তামাক চাষ হয়, সে মাটিতে অন্য ফসল ভালো হয় না। এমনকি
আশপাশের জমিও তামাকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তামাকের চাষ ও এর নানাবিধ
ব্যবহারজনিত ক্ষতির কারণগুলো সম্প্রচার মাধ্যম, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট ও
ফেসবুক প্রভৃতিতে ব্যাপকভাবে প্রচার করা উচিত, যাতে মানুষ সচেতন হয়।
দেশী-বিদেশী স্বার্থপর তামাক বণিকদের অসৎ উদ্দেশ্য নস্যাৎ করার জন্য এটা
জরুরি।
সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক, ঢাকা
সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক, ঢাকা
No comments