রাজপথে ছাত্রীর বস্ত্রহরণ
ভারতের
ব্যাঙ্গালুরুতে রাজপথে ২১ বছর বয়সী এক ছাত্রীর বস্ত্রহরণ করা হয়েছে।
নরপিশাচরা তাতেই শান্ত হয় নি প্রহারও করেছে ওই ছাত্রীকে। এ ঘটনায় গভীর
বেদনা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। নির্যাতিত ওই ছাত্রী
তাঞ্জানিয়ার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, রোববার এ
ঘটনার পর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ সন্দেহজনকভাবে আটক করেছে স্থানীয় চার
ব্যক্তিকে। নির্যাতিত ছাত্রী বুধবার স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।
তাদের কাছে সব কিছু সবিস্তারে বলেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে
তাঞ্জানিয়ার সব নাগরিকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সচেতনতা। তাদেরকে আবাসস্থল ও
কলেজে চলাচলের মধ্যে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সপ্তগিরি
হাসপাতাল থেকে ওই নির্যাতিত ছাত্রী বলেছেন, আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তাতে এখন
আমি প্রতিটি ভারতীয়কে দেখে ভীত হয়ে উঠি। তার ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনায়
টুইট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি লিখেছেন, ব্যাঙ্গালুরুতে
তাঞ্জানিয়ার ছাত্রীর সঙ্গে যে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে তা আমাকে গভীরভাবে
বেদনাহত করেছে। এ জন্য তিনি সব বিদেশী ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার
নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। এর আগে ভারতে অবস্থিত তাঞ্জানিয়ার হাই
কমিশন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী
ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানায়। ওদিকে একজন নারীর মর্যাদাহানীর বিরুদ্ধে
ভারতীয় পুলিশের দ-বিধির ৩৫৪ ধারার অধীনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা
নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ। এদিন রাতেই সন্দেহজনকভাবে স্থানীয় চার
ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার রাত সাড়ে সাতটার দিকে
তাঞ্জানিয়ার ওই ছাত্রীর ওপর নৃশংসতা চালানো হয়। তখন তিনি ও তার তিন বন্ধু
মিলে গণপতিনগর ঘুরতে যাচ্ছিলেন। ওদিকে দুই কিলোমিটার দূরে এক সুদানি ছাত্র
গাড়ি চালিয়ে দেয় শাবানা তাজ (৩৫) ও তার স্বামী সানাউল্লাহর ওপর দিয়ে। এতে
সেখানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। তখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঞ্জানিয়ার ওই ছাত্রী।
উত্তেজিত জনতা তার গাড়ি থামিয়ে দেয়। নির্যাতিত ছাত্রী বলেন, আমাদেরকে গাড়ি
থেকে নামানো হলো। আমাদের ঘিরে ধরল বেশ কিছু মানুষ। পাশেই দাঁড়ানো ছিল একজন
পুলিশ। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম কি হয়েছে। তিনি কিছুই বললেন না। আমার এক
বন্ধু এসে বলল হেঁটে যেও না। আর তখনই উত্তেজিত জনতা তাকে প্রহার করা শুরু
করে। তারা আমাকেও ধাক্কা দিয়ে থাকে। আঘাত করে। তখন আমি ছিলাম টি-শার্ট
পরা। তারা তা ধরে টানাটানি শুরু করে। এক পর্যায়ে ছিড়ে ফেলে। তখন আমার শরীরে
কোন কাপড় ছিল না বললেই চলে। আমরা জীবন বাঁচাতে দৌড়াতে থাকি। আমি ও আমার
বন্ধুরা একটি বাস ধরতে সক্ষম হই। কিন্তু বাসের চালক এ অবস্থায় আর বাস
চালাচ্ছিলেন না। বাসের ভিতরকার যাত্রীরা আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের
করে দিলেন। তবে একজন যাত্রী আমাকে তার টি-শার্ট দিলেন। এ অপরাধে তাকেও
প্রহার করা হয়। আমরা একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নিই। ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা
গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন, তারা সপ্তগিরি হাসপাতালে আশ্রয় নিলেও সে
পর্যন্ত পৌঁছে যায় দাঙ্গাবাজরা। তারা তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিতে
থাকে। বলে, যদি আফ্রিকান ছাত্রীকে যদি বের করে না দেয় তাহলে তারা
হাসপাতালে হামলা চালাবে। ওদিকে সুদানি যে ছাত্রী ভারতীয় নারীকে গাড়িচাপা
দিয়ে হত্যা করেছে তার নিন্দা জানিয়েছে আফ্রিকার ছাত্রদের সংগঠন। তারা
বলেছে, এক্ষেত্রে আইনই সঠিক কাজ করবে। তাই বলে নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলা
তা তো মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে তারা তাঞ্জানিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ
করেছে।
No comments