সিরিয়া শান্তি আলোচনা ও বিদ্রোহীদের আবদার! by মাইক হুইটনি
জাতিসংঘের
উদ্যোগে জেনেভায় সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনা শুরুর আগে সিরিয়ার বিদ্রোহী
প্রধান বিরোধী দল ঘোষণা করেছে, আলোচনা চলাকালে তাদের অবস্থানের ওপর রাশিয়া
বিমান হামলা চালালে বৈঠক বর্জন করবে তারা। এ মন্তব্যের অগ্র-পশ্চাৎ
রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণে যেতে চাই না। তার বদলে পাঠকদের বোঝার সুবিধার
জন্য বলব, কল্পনা করুন যুক্তরাষ্ট্রে ক্র্যাক্পট নামে এক সশস্ত্র
জঙ্গিগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে সম্প্রতি। এ ক্র্যাক্পটদের নেতা হলেন আম্মন
বান্ডি। ঘটনাচক্রে একদিন এই বান্ডি তার জঙ্গি সহযোদ্ধাদের নিয়ে দখল করল
পূর্ব অরিগনের রাষ্ট্রীয় বন। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে এফবিআই মোতায়েন করা
হল তাদের আস্তানার কাছাকাছি। কিন্তু দীর্ঘদিন আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পরও
সুবিধা করতে না পেরে শান্তি প্রস্তাব পাঠাল জাতিসংঘের মাধ্যমে। কিন্তু
বান্ডি উত্তর দিল, ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার প্রতিনিধি বসতে
পারে যদি আস্তানার চারপাশ থেকে এফবিআই সদস্যের সরিয়ে নেয়া হয়। এখানে
জাতিসংঘ চায়, পূর্ব অরিগনের ওই বনে আপৎকালীন অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব
প্রতিষ্ঠিত হোক। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ক্ষমতা হারাতে হবে ১৮ মাস
পর এবং এর মধ্যে নতুন করে লেখা হবে পূর্ব অরিগনের সংবিধান, যেখানে
প্রতিফলিত হবে বান্ডি ও তার অকর্মার দলের অতি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক ও
ধর্মীয় মতাদর্শ।
এবার পাঠকদের কাছে প্রশ্ন, এতক্ষণ আমি যে কথাগুলো বললাম সেগুলো কি আপনার কাছে যুক্তিপূর্ণ-বিবেচনাপ্রসূত মনে হচ্ছে? অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিদ্রোহীদের নিয়ে জেনেভায় চলতে থাকা সিরিয়া বিষয়ক ওই শান্তি আলোচনার লক্ষ্য ও পথ এমনই অদ্ভুত-বেখাপ্পা। ক্রেমলিন কেন এমন প্রহেলিকাকে পাত্তা দেবে? এটা তো তাদের কাছে কৌতুক মাত্র।
আরেকটি জিজ্ঞাসা, বিশ্বে এমন কোনো দেশ আছে কি যে আরেকটি দেশের নির্বাচিত সরকার সরিয়ে ফেলা, নগর দখল, বেসামরিক ব্যক্তিদের খুন, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে রাখতে জঙ্গিগোষ্ঠীদের মদদ ও উসকানি দেয়? একটিও নেই। তবু পরিহাস, প্রেসিডেন্ট ওবামার সহকর্মীরা মনে করেন, তাদের প্রস্তাব সিরিয়ার নাগরিকদের কাছে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সেখানকার অনাগরিক অধিবাসীদের (উল্লেখ্য, সিরিয়ায় অবস্থানকারী সিংহভাগ ‘বিদ্রোহী’ হয় বিদেশী নাগরিক নয়তো জিহাদি) জন্য চমৎকার কর্মপন্থা। অবশ্য শেষোক্ত প্রেক্ষাপটে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো ওয়াশিংটনের মনোবাঞ্ছার সঙ্গে মিলতে হবে। লক্ষণীয়, সিরীয় বিদ্রোহী ও মার্কিনিদের মনোভাবের অমিল নেই এক্ষেত্রে। ফলে শুরু থেকেই ওয়াশিংটনের একান্তভাবে একক উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরানো। লাভ? আছে বৈকি। বৃহৎ পশ্চিমা তেল কোম্পানির ক্ষেত্র ও পাইপলাইনের করিডোর রয়েছে সিরিয়াজুড়ে। নতুন ঘাঁটি বসিয়ে সেগুলোর সুরক্ষা প্রদান একেবারে প্রথম দিন থেকেই ছিল আমেরিকানদের গেমপ্ল্যান। প্রধানত সেজন্যই ওবামা প্রশাসন ভোঁতা করে দিতে চায় রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী আক্রমণের ধার; এমনকি কর্মটা যদি কোনো অর্থহীন সমঝোতার মাধ্যমে কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, তাও সই। সিরিয়ার প্রেক্ষাপটে সম্ভবত এ সুযোগ তৈরির চেষ্টা চলছে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার নেপথ্যে। সামনে শান্তি আলোচনা রেখে পেছনে চেষ্টা চলছে যেন যুদ্ধবিরতির সুযোগে মার্কিন সমর্থিত জঙ্গিরা নিজেদের পুনর্গঠিত করতে পারে এবং অধিক প্রস্তুত হয়ে পরবর্তী সুবিধামতো সময়ে বাশার বাহিনীর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
এ ছল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চোখে ধরা পড়েছে বলেই মনে হয়। তবু তিনি জেনেভায় দূত পাঠিয়েছেন হয়তো কৌশলগত স্বার্থে। এখন প্রশ্ন হল, মার্কিন মদদপুষ্ট ‘বিদ্রোহীদের’ কি আরও কিছুদিন বাঁচার সুযোগ দেবেন পুতিন? যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন তিনি? বাজি ধরা বোধকরি ঠিক হবে না পশ্চিমা গণমাধ্যমের।
কারণটা বলি। কিছু ঘটনা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নজর এড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার। সে ধরনের একটি বিষয় হল, গত ক’মাসে ধীরে অথচ স্থিতিশীলভাবে এগিয়েছে রুশ নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী (সিরিয়ার আরব আর্মি, ইরানের কুর্দ বাহিনী ও হিজবুল্লাহ)। বলা চলে একাধিক পশ্চিমা বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এরই মধ্যে। মিত্রবাহিনী অগ্রসর হচ্ছে সব ফ্রন্টে। এর বিপরীতে শত্রুর অবস্থান অত্যন্ত নড়বড়ে। তুরস্ক সীমান্তের কাছাকাছি লাটকিয়া প্রদেশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে জিহাদিদের ঘাঁটি ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্ত। সেগুলো মিসমার হয়েছে রুশ বিমানের অব্যাহত বোমাবর্ষণে। এরই মধ্যে কিছু শহর মুক্ত করেছে সিরিয়ান আর্মি। আলেপ্পো হচ্ছে উত্তরে সিরিয়ার সর্ববৃহৎ শহর। বর্তমানে তা বাশারের বিশ্বস্ত বাহিনীর দ্বারা সুরক্ষিত। এরা বন্ধ করে দিয়েছে তুরস্ক থেকে আসা জঙ্গি যোদ্ধাদের সাপ্লাই লাইন। ফলে এ অঞ্চলে সালাফিদের গ্রুপগুলো যেমন- আহরার আল শাম, জুবহাত আল ইসলাম, আইএস, আল কায়দা ইত্যাদি বাধ্য হয়েছে হয় আত্মসমর্পণ নয়তো নত থাকতে। বাশারের প্রতি বিশ্বস্ত ওই যোদ্ধারা চূড়ান্ত বেপরোয়া সংঘর্ষের জন্যও প্রস্তুত বলে ধারণা। এ থেকে বলার অপেক্ষা রাখে না, এ মুহূর্তে সিরিয়া যুদ্ধের গতিবেগ বাশারের অনুকূলে এবং স্পষ্টত বাশার খেলছেন আপার হ্যান্ডে। এ অবস্থায় পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রচারিত ‘ঘোলাটে পরিস্থিতি’ সিরিয়াব্যাপী রুশ নেতৃত্বের নিরাপত্তা কর্মসূচি ভিন্ন কিছুই নয়।
অবশ্য বলব না, বাশারের পথ কণ্টকমুক্ত। বরং তুরস্ক, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্মেলনে আঞ্চলিক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির শংকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে কুর্দি কার্ড খেলতে পারে নিরুপায় রাশিয়া। আবার কুর্দিদের এক হাত দেখে নিতে চাইতে পারেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তখন কিন্তু কুর্দিদের বাঁচাতে আসতেই হবে পুতিনকে। ফলে এখানকার সমীকরণ বেশ জটিল।
কথা হল, ওয়াশিংটন যতই দেখাতে চাক বাশার সরে গেলেই তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, কার্যত এর মধ্য দিয়ে সুন্নিস্তান প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারই গভীর হচ্ছে দিনকে দিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্নিস্তানের বিস্তৃতি ঘটবে পূর্ব সিরিয়া থেকে পশ্চিম ইরাক পর্যন্ত। এদিকে পশ্চিমা বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলো চাইছে কাতার থেকে তুরস্ক পর্যন্ত পাইপলাইন সংযুক্তি। এর রাজনৈতিক অর্থনীতি হল, পাইপলাইনটি কার্যকর হলে ইউরো অঞ্চলের প্রাথমিক প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়াকে প্রতিস্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটা তাদের বহুল আলোচিত এশিয়ামুখী সাম্রাজ্যবাদী কৌশলেরই অংশ। আমেরিকানদের লক্ষ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ উৎস দখলপূর্বক সেগুলোকে ডলারের পদানত রাখা। তাদের বিশ্ব শাসনের এ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করেছে পুতিনের রাশিয়া। তবে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সাক্ষ্য দিচ্ছে, খেলাটি সম্পর্কে মোটেই অনবহিত নন পুতিন।
এবার পাঠকদের কাছে প্রশ্ন, এতক্ষণ আমি যে কথাগুলো বললাম সেগুলো কি আপনার কাছে যুক্তিপূর্ণ-বিবেচনাপ্রসূত মনে হচ্ছে? অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিদ্রোহীদের নিয়ে জেনেভায় চলতে থাকা সিরিয়া বিষয়ক ওই শান্তি আলোচনার লক্ষ্য ও পথ এমনই অদ্ভুত-বেখাপ্পা। ক্রেমলিন কেন এমন প্রহেলিকাকে পাত্তা দেবে? এটা তো তাদের কাছে কৌতুক মাত্র।
আরেকটি জিজ্ঞাসা, বিশ্বে এমন কোনো দেশ আছে কি যে আরেকটি দেশের নির্বাচিত সরকার সরিয়ে ফেলা, নগর দখল, বেসামরিক ব্যক্তিদের খুন, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে রাখতে জঙ্গিগোষ্ঠীদের মদদ ও উসকানি দেয়? একটিও নেই। তবু পরিহাস, প্রেসিডেন্ট ওবামার সহকর্মীরা মনে করেন, তাদের প্রস্তাব সিরিয়ার নাগরিকদের কাছে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সেখানকার অনাগরিক অধিবাসীদের (উল্লেখ্য, সিরিয়ায় অবস্থানকারী সিংহভাগ ‘বিদ্রোহী’ হয় বিদেশী নাগরিক নয়তো জিহাদি) জন্য চমৎকার কর্মপন্থা। অবশ্য শেষোক্ত প্রেক্ষাপটে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলো ওয়াশিংটনের মনোবাঞ্ছার সঙ্গে মিলতে হবে। লক্ষণীয়, সিরীয় বিদ্রোহী ও মার্কিনিদের মনোভাবের অমিল নেই এক্ষেত্রে। ফলে শুরু থেকেই ওয়াশিংটনের একান্তভাবে একক উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরানো। লাভ? আছে বৈকি। বৃহৎ পশ্চিমা তেল কোম্পানির ক্ষেত্র ও পাইপলাইনের করিডোর রয়েছে সিরিয়াজুড়ে। নতুন ঘাঁটি বসিয়ে সেগুলোর সুরক্ষা প্রদান একেবারে প্রথম দিন থেকেই ছিল আমেরিকানদের গেমপ্ল্যান। প্রধানত সেজন্যই ওবামা প্রশাসন ভোঁতা করে দিতে চায় রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী আক্রমণের ধার; এমনকি কর্মটা যদি কোনো অর্থহীন সমঝোতার মাধ্যমে কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, তাও সই। সিরিয়ার প্রেক্ষাপটে সম্ভবত এ সুযোগ তৈরির চেষ্টা চলছে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার নেপথ্যে। সামনে শান্তি আলোচনা রেখে পেছনে চেষ্টা চলছে যেন যুদ্ধবিরতির সুযোগে মার্কিন সমর্থিত জঙ্গিরা নিজেদের পুনর্গঠিত করতে পারে এবং অধিক প্রস্তুত হয়ে পরবর্তী সুবিধামতো সময়ে বাশার বাহিনীর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
এ ছল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চোখে ধরা পড়েছে বলেই মনে হয়। তবু তিনি জেনেভায় দূত পাঠিয়েছেন হয়তো কৌশলগত স্বার্থে। এখন প্রশ্ন হল, মার্কিন মদদপুষ্ট ‘বিদ্রোহীদের’ কি আরও কিছুদিন বাঁচার সুযোগ দেবেন পুতিন? যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন তিনি? বাজি ধরা বোধকরি ঠিক হবে না পশ্চিমা গণমাধ্যমের।
কারণটা বলি। কিছু ঘটনা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নজর এড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার। সে ধরনের একটি বিষয় হল, গত ক’মাসে ধীরে অথচ স্থিতিশীলভাবে এগিয়েছে রুশ নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী (সিরিয়ার আরব আর্মি, ইরানের কুর্দ বাহিনী ও হিজবুল্লাহ)। বলা চলে একাধিক পশ্চিমা বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এরই মধ্যে। মিত্রবাহিনী অগ্রসর হচ্ছে সব ফ্রন্টে। এর বিপরীতে শত্রুর অবস্থান অত্যন্ত নড়বড়ে। তুরস্ক সীমান্তের কাছাকাছি লাটকিয়া প্রদেশে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে জিহাদিদের ঘাঁটি ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্ত। সেগুলো মিসমার হয়েছে রুশ বিমানের অব্যাহত বোমাবর্ষণে। এরই মধ্যে কিছু শহর মুক্ত করেছে সিরিয়ান আর্মি। আলেপ্পো হচ্ছে উত্তরে সিরিয়ার সর্ববৃহৎ শহর। বর্তমানে তা বাশারের বিশ্বস্ত বাহিনীর দ্বারা সুরক্ষিত। এরা বন্ধ করে দিয়েছে তুরস্ক থেকে আসা জঙ্গি যোদ্ধাদের সাপ্লাই লাইন। ফলে এ অঞ্চলে সালাফিদের গ্রুপগুলো যেমন- আহরার আল শাম, জুবহাত আল ইসলাম, আইএস, আল কায়দা ইত্যাদি বাধ্য হয়েছে হয় আত্মসমর্পণ নয়তো নত থাকতে। বাশারের প্রতি বিশ্বস্ত ওই যোদ্ধারা চূড়ান্ত বেপরোয়া সংঘর্ষের জন্যও প্রস্তুত বলে ধারণা। এ থেকে বলার অপেক্ষা রাখে না, এ মুহূর্তে সিরিয়া যুদ্ধের গতিবেগ বাশারের অনুকূলে এবং স্পষ্টত বাশার খেলছেন আপার হ্যান্ডে। এ অবস্থায় পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রচারিত ‘ঘোলাটে পরিস্থিতি’ সিরিয়াব্যাপী রুশ নেতৃত্বের নিরাপত্তা কর্মসূচি ভিন্ন কিছুই নয়।
অবশ্য বলব না, বাশারের পথ কণ্টকমুক্ত। বরং তুরস্ক, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্মেলনে আঞ্চলিক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির শংকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে কুর্দি কার্ড খেলতে পারে নিরুপায় রাশিয়া। আবার কুর্দিদের এক হাত দেখে নিতে চাইতে পারেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তখন কিন্তু কুর্দিদের বাঁচাতে আসতেই হবে পুতিনকে। ফলে এখানকার সমীকরণ বেশ জটিল।
কথা হল, ওয়াশিংটন যতই দেখাতে চাক বাশার সরে গেলেই তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, কার্যত এর মধ্য দিয়ে সুন্নিস্তান প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারই গভীর হচ্ছে দিনকে দিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্নিস্তানের বিস্তৃতি ঘটবে পূর্ব সিরিয়া থেকে পশ্চিম ইরাক পর্যন্ত। এদিকে পশ্চিমা বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলো চাইছে কাতার থেকে তুরস্ক পর্যন্ত পাইপলাইন সংযুক্তি। এর রাজনৈতিক অর্থনীতি হল, পাইপলাইনটি কার্যকর হলে ইউরো অঞ্চলের প্রাথমিক প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়াকে প্রতিস্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটা তাদের বহুল আলোচিত এশিয়ামুখী সাম্রাজ্যবাদী কৌশলেরই অংশ। আমেরিকানদের লক্ষ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ উৎস দখলপূর্বক সেগুলোকে ডলারের পদানত রাখা। তাদের বিশ্ব শাসনের এ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করেছে পুতিনের রাশিয়া। তবে সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সাক্ষ্য দিচ্ছে, খেলাটি সম্পর্কে মোটেই অনবহিত নন পুতিন।
কাউন্টার পাঞ্চ থেকে ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল
মাইক হুইটনি : মার্কিন লেখক, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
মাইক হুইটনি : মার্কিন লেখক, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
No comments