জাপাকে আলোচনায় রাখতেই এরশাদ–রওশন বিরোধ by সেলিম জাহিদ
জাতীয়
পার্টিতে (জাপা) এরশাদ-রওশনের দৃশ্যমান বিরোধ অনেকটাই কৌশলগত। দুই পক্ষের
কেউই সরকারকে চটাতে চায় না; বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই জাপাকে
আলোচনায় জিইয়ে রাখতে চায় তারা। এ জন্যই কিছুদিন পরপর দলের সাংসদদের
মন্ত্রিসভা ছাড়ার আলোচনা তোলা হয় বলে দলটির দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র থেকে
জানা গেছে।
সর্বশেষ কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং মহাসচিব বদল নিয়ে দলের ভেতর সৃষ্ট অস্থিরতাও শেষমেশ সরকারে থাকা না-থাকার আলোচনায় গিয়ে ঠেকেছে। যদিও এরশাদ নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পদে বহাল আছেন। বলছেন, বিশেষ দূত বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সম্মান দিয়েছেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া তিনি এ পদ ছাড়বেন না।
জাপায় সাম্প্রতিক বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা যে পরিকল্পিত, ঠিক তা নয়। তবে এটা ঠিক যে, ম্যাডাম (রওশন) এরশাদ সাহেবের পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিছু লোক পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। তিনি (রওশন) চট করে মুখ খোলেন না। এটা তাঁর স্বভাব। তাই বলে এটা সাজানো খেলা বলা যাবে না।’
কিছুদিন পরপর মন্ত্রিসভা ছাড়ার আওয়াজ তোলা, মহাসচিব পদে দুই বছরে দুই দফা রদবদল এবং সর্বশেষ এরশাদ ছোট ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও রওশনপন্থীদের বিপরীতমুখী তৎপরতা—এসবের পেছনে উভয় পক্ষের নেতাদের ছোট ছোট নানা স্বার্থ কাজ করছে। তবে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাসহ মোটা দাগের নীতিগত কিছু বিষয়ে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে বোঝাপড়া আছে বলেও উভয় পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, সরকারও এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। কারণ, গত কিছুদিন জাপা যেভাবে গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে, তাতে বিএনপি আলোচনা থেকে কিছুটা আড়ালে চলে গেছে।
গত রোববার জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সরকার অস্থিতিশীল হয় এমন কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নেবেন না। তাঁরা চান, সরকার বাকি তিন বছর ক্ষমতায় থাকুক। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা মত দিয়েছেন যে জাপার সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তবে, এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান সময়মতো পদক্ষেপ নেবেন।
জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সঙ্গে কথা বলেই এরশাদ গত ১৭ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। আর মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরান তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে। মহাসচিব পদে হঠাৎ পরিবর্তন এবং কো-চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রওশন প্রশ্ন তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা মেনে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা চাচ্ছিলেন দলকে এরশাদের প্রভাবমুক্ত করতে। এ লক্ষ্যে তাঁরা রওশনকে সামনে রেখে দলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা দলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কবজায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে এরশাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়, যা তিনি রওশনকে বোঝাতে সক্ষম হন। যার কারণে দলের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচন এবং মহাসচিব বদলের প্রক্রিয়া নিয়ে রওশন প্রশ্ন তুললেও এর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শক্ত কোনো অবস্থান নেননি। বরং দুই কূল রক্ষার মতো ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়ে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পাল্টা ঘোষণাও নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জি এম কাদের গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে কো-চেয়ারম্যান করার আগে এরশাদ সাহেব ভাবির (রওশন) সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। আমার সঙ্গেও উনার (রওশন) কথা হয়েছে। এখন দু-তিনজন লোক উনাকে নানাভাবে উত্তেজিত করছেন। তাঁকে বোঝাচ্ছেন, তিনি কো-চেয়ারম্যান না হলে জিরো হয়ে যাবেন।’
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরশাদ-রওশন ৬০ বছর ধরে সংসার করছেন। এত কিছুর পরও তাঁদের সংসার ভাঙেনি। তাঁরা এক আছেন। এখন কেউ যদি তাঁদের নিয়ে খেলেন, তাঁরাই বিপদে পড়বেন। আমি কোনো দলাদলিতে নেই।’
এদিকে দলের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সরকার ছাড়ার বিষয়ে গত কয়েক দিন কিছুটা নমনীয় এরশাদ। এরই মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে জি এম কাদেরসহ দলের আরও তিনজনকে মন্ত্রী করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব করেছেন এরশাদ। এ বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি কথাটি শুনে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন বোগাস কথা। আর আমার পক্ষে মন্ত্রী হওয়া এখন বিশ্রী ব্যাপার হবে।’
রওশনপন্থী নেতাদের একটি সূত্র জানায়, রওশন এরশাদের কৌশলী ভূমিকায় তাঁর অনুসারীদের অনেকে অস্বস্তিতে পড়েছেন। এখন তাঁরা রওশনকে এড়িয়ে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়া, মহাসচিব পদ থেকে সম্প্রতি বাদ পড়া জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মন্ত্রী করার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এরশাদ ও রওশনের বাইরে জাপায় আরেকটি পক্ষ তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জাপার পাঁচজন প্রভাবশালী সাংসদ এ চিন্তা-চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানায়।
তবে জি এম কাদের কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘এটুকু জানি যে জাতীয় পার্টিকে বেহাত করার একটা তৎপরতা আছে। তাঁরা তাঁকে (রওশন) ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।’
সর্বশেষ কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং মহাসচিব বদল নিয়ে দলের ভেতর সৃষ্ট অস্থিরতাও শেষমেশ সরকারে থাকা না-থাকার আলোচনায় গিয়ে ঠেকেছে। যদিও এরশাদ নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পদে বহাল আছেন। বলছেন, বিশেষ দূত বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সম্মান দিয়েছেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া তিনি এ পদ ছাড়বেন না।
জাপায় সাম্প্রতিক বিরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা যে পরিকল্পিত, ঠিক তা নয়। তবে এটা ঠিক যে, ম্যাডাম (রওশন) এরশাদ সাহেবের পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিছু লোক পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। তিনি (রওশন) চট করে মুখ খোলেন না। এটা তাঁর স্বভাব। তাই বলে এটা সাজানো খেলা বলা যাবে না।’
কিছুদিন পরপর মন্ত্রিসভা ছাড়ার আওয়াজ তোলা, মহাসচিব পদে দুই বছরে দুই দফা রদবদল এবং সর্বশেষ এরশাদ ছোট ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও রওশনপন্থীদের বিপরীতমুখী তৎপরতা—এসবের পেছনে উভয় পক্ষের নেতাদের ছোট ছোট নানা স্বার্থ কাজ করছে। তবে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাসহ মোটা দাগের নীতিগত কিছু বিষয়ে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে বোঝাপড়া আছে বলেও উভয় পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, সরকারও এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। কারণ, গত কিছুদিন জাপা যেভাবে গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে, তাতে বিএনপি আলোচনা থেকে কিছুটা আড়ালে চলে গেছে।
গত রোববার জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সরকার অস্থিতিশীল হয় এমন কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নেবেন না। তাঁরা চান, সরকার বাকি তিন বছর ক্ষমতায় থাকুক। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা মত দিয়েছেন যে জাপার সাংসদদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তবে, এ বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান সময়মতো পদক্ষেপ নেবেন।
জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সঙ্গে কথা বলেই এরশাদ গত ১৭ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। আর মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরান তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে। মহাসচিব পদে হঠাৎ পরিবর্তন এবং কো-চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রওশন প্রশ্ন তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা মেনে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা চাচ্ছিলেন দলকে এরশাদের প্রভাবমুক্ত করতে। এ লক্ষ্যে তাঁরা রওশনকে সামনে রেখে দলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা দলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কবজায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে এরশাদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়, যা তিনি রওশনকে বোঝাতে সক্ষম হন। যার কারণে দলের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচন এবং মহাসচিব বদলের প্রক্রিয়া নিয়ে রওশন প্রশ্ন তুললেও এর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শক্ত কোনো অবস্থান নেননি। বরং দুই কূল রক্ষার মতো ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়ে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পাল্টা ঘোষণাও নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জি এম কাদের গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে কো-চেয়ারম্যান করার আগে এরশাদ সাহেব ভাবির (রওশন) সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। আমার সঙ্গেও উনার (রওশন) কথা হয়েছে। এখন দু-তিনজন লোক উনাকে নানাভাবে উত্তেজিত করছেন। তাঁকে বোঝাচ্ছেন, তিনি কো-চেয়ারম্যান না হলে জিরো হয়ে যাবেন।’
জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরশাদ-রওশন ৬০ বছর ধরে সংসার করছেন। এত কিছুর পরও তাঁদের সংসার ভাঙেনি। তাঁরা এক আছেন। এখন কেউ যদি তাঁদের নিয়ে খেলেন, তাঁরাই বিপদে পড়বেন। আমি কোনো দলাদলিতে নেই।’
এদিকে দলের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সরকার ছাড়ার বিষয়ে গত কয়েক দিন কিছুটা নমনীয় এরশাদ। এরই মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে জি এম কাদেরসহ দলের আরও তিনজনকে মন্ত্রী করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব করেছেন এরশাদ। এ বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি কথাটি শুনে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন বোগাস কথা। আর আমার পক্ষে মন্ত্রী হওয়া এখন বিশ্রী ব্যাপার হবে।’
রওশনপন্থী নেতাদের একটি সূত্র জানায়, রওশন এরশাদের কৌশলী ভূমিকায় তাঁর অনুসারীদের অনেকে অস্বস্তিতে পড়েছেন। এখন তাঁরা রওশনকে এড়িয়ে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়া, মহাসচিব পদ থেকে সম্প্রতি বাদ পড়া জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মন্ত্রী করার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এরশাদ ও রওশনের বাইরে জাপায় আরেকটি পক্ষ তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জাপার পাঁচজন প্রভাবশালী সাংসদ এ চিন্তা-চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানায়।
তবে জি এম কাদের কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘এটুকু জানি যে জাতীয় পার্টিকে বেহাত করার একটা তৎপরতা আছে। তাঁরা তাঁকে (রওশন) ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।’
No comments