সু চির গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা by মাসুমুর রহমান খলিলী
মিয়ানমারে
বহুলপ্রতিক্ষীত গণতান্ত্রিক সরকারের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। নবনির্বাচিত
সংসদের নিম্ন কক্ষের প্রথম অধিবেশন ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। এই সংসদে
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নিজ দল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি)
নেতৃত্ব দিচ্ছেন অং সান সু চি। সাংবিধানিক বাধা থাকায় সু চি সরকারের
নির্বাহী প্রধান প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। তবে সংসদের উচ্চ ও নিম্ন এই
উভয় কক্ষে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তিনি অর্জন করেছেন, তাতে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস
প্রেসিডেন্টসহ সব পদে তার মনোনীত ব্যক্তিই জয়ী হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে দুই
সংসদেরই স্পিকার মনোনীত করেছেন তিনি।
এর মধ্যে মিয়ানমারে প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এনএলডির একজন সিনিয়র নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু নারী নেত্রী টিন মার অং অথবা অশীতিপর সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল অব: উ থিন ওকে প্রেসিডেন্ট পদে সু চি মনোনয়ন দিতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল থান শোয়ের মেয়াদ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। ফলে ফেব্রুয়ারিতে সম্পন্ন হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
একসময় ধারণা করা হয়েছিল, অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট পদে এমন এক জেনারেলকে বসাবেন, যার ব্যাপারে সেনাবাহিনী এবং বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলও একমত হবে। কিন্তু নির্বাচনে এনএলডি যে ধরনের আশাতীত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, তাতে সে ধরনের কোনো সমঝোতার প্রত্যাশা আর করা হচ্ছে না। তবে অং সান সু চি ’৯০-এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কামনা করছেন না বলে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছেন সতর্কভাবে।
এর মধ্যে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্টের সাথে তিনি বৈঠক করেছেন। সংবিধান সংশোধনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার থাকলেও সে পথে দ্রুত তিনি এগোতে চাচ্ছেন না। রাষ্ট্র পরিচালনা ও পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন না, যাতে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখলের মতো পদক্ষেপ নিয়ে বসে। প্রেসিডেন্ট থান শোয়ে অবশ্য সিনহুয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করেছেন।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট হলেন নির্বাহী প্রধান। দু’জন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকেন তাকে সহায়তা করতে। মন্ত্রি পরিষদ প্রেসিডেন্ট গঠন করেন, কিন্তু এই মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেতে হয় সংসদে। ফলে ধারণা করা যায়, প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট সু চি তার দল থেকেই নির্বাচন করবেন। অন্য একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট পছন্দ করার বিষয় তিনি সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর মতো একটি পদ সৃষ্টির বিষয় একসময় বিবেচনা করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী এতে সম্মত হলে একটি সংশোধনী করে সু চিকে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত করার একটি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা যদি নাও হয় তবুও যত দিন বর্তমান সংসদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে তত দিন রাষ্ট্র পরিচালনায় সু চির ভূমিকা থাকবে মুখ্য। ইতোমধ্যে তার অবস্থান রাষ্ট্রের সবার ওপরে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন সু চি নিজে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণসহ সংবিধানে যে ক’টি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া হয়েছে, তাতে কোনো ব্যত্যয় সু চি সম্ভবত করবেন না। তবে বছর দুয়েক সরকার পরিচালনা করতে পারলে অনেক কিছুই এনএলডি এবং সু চির নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। তখন তিনি বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব আরো সংহত করার চেষ্টা করতে পারেন।
এ কথা ঠিক যে, সু চির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ওপর যথাসম্ভব তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদারীকরণের চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়া। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ সতর্ক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। তিনি পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের জন্য তার দেশের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারবেন। তবে শক্তিমান প্রতিবেশী চীনকে তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। নির্বাচনের আগেই সপ্তাহব্যাপী চীন সফরে গিয়ে বেইজিংকে এ ব্যাপারে সু চি আশ্বস্ত করেছেন।
সু চির পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারের কাঠামো শক্তিমান করার ব্যাপারে জোর দেবে বেশি। ইতোমধ্যে সময় নিয়ে দেশটির অর্থনীতি, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের যে কর্মসূচি কার্যকর করা শুরু হয়েছে, তার সাথে মিয়ানমারের সামরিক-বেসামরিক আমলা ও শক্তিমান ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বাস্তবতা সু চি অস্বীকার করবেন না। সংসদের উভয় কক্ষে তাদের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকায় যেকোনো সাংবিধানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তাদের সাথে সমঝোতায় আসতে হবে। এ জন্য ৮৯ বছর বয়স হওয়ার পরও জেনারেল উ থিন ওকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এমনকি সাবেক স্পিকার শোয়ে মানকেও প্রেসিডেন্ট করা হতে পারে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, যিনি বিদায়ী সরকারি দল ইউএসডিপি থেকে এক প্রকার ছিটকে পড়েছিলেন নির্বাচনের আগমুহূর্তে।
মিয়ানমারে যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তিনি পূর্ণ মেয়াদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান সম্ভবত থাকবেন না। সু চি সংবিধান থেকে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা ৫৯(এক) অনুচ্ছেদটি বাদ দেয়ার জন্য এক বা দুই বছর সময় নিতে পারেন। এ সময় পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন নবনির্বাচিত ব্যক্তি। এ হিসেবে একজন সাবেক জেনারেলই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও রাষ্ট্র চালানোর মূল চাবিটি থাকবে সু চির হাতে।
mrkmmb@gmail.com
এর মধ্যে মিয়ানমারে প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এনএলডির একজন সিনিয়র নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু নারী নেত্রী টিন মার অং অথবা অশীতিপর সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল অব: উ থিন ওকে প্রেসিডেন্ট পদে সু চি মনোনয়ন দিতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল থান শোয়ের মেয়াদ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। ফলে ফেব্রুয়ারিতে সম্পন্ন হতে পারে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
একসময় ধারণা করা হয়েছিল, অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট পদে এমন এক জেনারেলকে বসাবেন, যার ব্যাপারে সেনাবাহিনী এবং বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলও একমত হবে। কিন্তু নির্বাচনে এনএলডি যে ধরনের আশাতীত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, তাতে সে ধরনের কোনো সমঝোতার প্রত্যাশা আর করা হচ্ছে না। তবে অং সান সু চি ’৯০-এর পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কামনা করছেন না বলে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছেন সতর্কভাবে।
এর মধ্যে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্টের সাথে তিনি বৈঠক করেছেন। সংবিধান সংশোধনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার থাকলেও সে পথে দ্রুত তিনি এগোতে চাচ্ছেন না। রাষ্ট্র পরিচালনা ও পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন না, যাতে সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখলের মতো পদক্ষেপ নিয়ে বসে। প্রেসিডেন্ট থান শোয়ে অবশ্য সিনহুয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করেছেন।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট হলেন নির্বাহী প্রধান। দু’জন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকেন তাকে সহায়তা করতে। মন্ত্রি পরিষদ প্রেসিডেন্ট গঠন করেন, কিন্তু এই মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেতে হয় সংসদে। ফলে ধারণা করা যায়, প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট সু চি তার দল থেকেই নির্বাচন করবেন। অন্য একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট পছন্দ করার বিষয় তিনি সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর মতো একটি পদ সৃষ্টির বিষয় একসময় বিবেচনা করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী এতে সম্মত হলে একটি সংশোধনী করে সু চিকে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত করার একটি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা যদি নাও হয় তবুও যত দিন বর্তমান সংসদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে তত দিন রাষ্ট্র পরিচালনায় সু চির ভূমিকা থাকবে মুখ্য। ইতোমধ্যে তার অবস্থান রাষ্ট্রের সবার ওপরে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন সু চি নিজে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণসহ সংবিধানে যে ক’টি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া হয়েছে, তাতে কোনো ব্যত্যয় সু চি সম্ভবত করবেন না। তবে বছর দুয়েক সরকার পরিচালনা করতে পারলে অনেক কিছুই এনএলডি এবং সু চির নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। তখন তিনি বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব আরো সংহত করার চেষ্টা করতে পারেন।
এ কথা ঠিক যে, সু চির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো রাষ্ট্র পরিচালনার ওপর যথাসম্ভব তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদারীকরণের চলমান সংস্কার কর্মসূচিকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়া। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ সতর্ক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। তিনি পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের জন্য তার দেশের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারবেন। তবে শক্তিমান প্রতিবেশী চীনকে তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। নির্বাচনের আগেই সপ্তাহব্যাপী চীন সফরে গিয়ে বেইজিংকে এ ব্যাপারে সু চি আশ্বস্ত করেছেন।
সু চির পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারের কাঠামো শক্তিমান করার ব্যাপারে জোর দেবে বেশি। ইতোমধ্যে সময় নিয়ে দেশটির অর্থনীতি, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের যে কর্মসূচি কার্যকর করা শুরু হয়েছে, তার সাথে মিয়ানমারের সামরিক-বেসামরিক আমলা ও শক্তিমান ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বাস্তবতা সু চি অস্বীকার করবেন না। সংসদের উভয় কক্ষে তাদের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকায় যেকোনো সাংবিধানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে তাদের সাথে সমঝোতায় আসতে হবে। এ জন্য ৮৯ বছর বয়স হওয়ার পরও জেনারেল উ থিন ওকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এমনকি সাবেক স্পিকার শোয়ে মানকেও প্রেসিডেন্ট করা হতে পারে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, যিনি বিদায়ী সরকারি দল ইউএসডিপি থেকে এক প্রকার ছিটকে পড়েছিলেন নির্বাচনের আগমুহূর্তে।
মিয়ানমারে যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তিনি পূর্ণ মেয়াদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান সম্ভবত থাকবেন না। সু চি সংবিধান থেকে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা ৫৯(এক) অনুচ্ছেদটি বাদ দেয়ার জন্য এক বা দুই বছর সময় নিতে পারেন। এ সময় পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন নবনির্বাচিত ব্যক্তি। এ হিসেবে একজন সাবেক জেনারেলই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও রাষ্ট্র চালানোর মূল চাবিটি থাকবে সু চির হাতে।
mrkmmb@gmail.com
No comments