জীবনের বাঁক নেওয়ার গল্প by সাঈদা ইসলাম
তিন মাস আগেও মেঘরানীর জীবন ছিল স্বপ্নহীন। চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড় আর পাহাড়তলীর দোকানে দোকানে কিংবা পথচারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তাঁর জীবন চলত। এখন ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে সম্মানজনক জীবন গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর তিনি।
শোনা যাক মেঘরানীর জীবনের বাঁক নেওয়ার গল্পটা। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) নগরের হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য একটি মতবিনিময় সভা করে। সে সভায় তাঁদের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই সভায় তাঁরা সরকারি চাকরির দাবি তোলেন। কম বেতন আর অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি চাকরিতে তেমন কেউই আগ্রহী ছিলেন না। ওই সভায় মেঘরানীও ছিলেন।
অসম্মানজনক জীবনের ভারে ক্লান্ত মেঘরানী চাইছিলেন মর্যাদাপূর্ণ কোনো কাজ করতে। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন, চাকরি নয়, তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করবেন। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই মাস আগে যোগাযোগ করলেন তিনি। তাঁরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। পুলিশের সহায়তায় অলংকার মোড়ে তিনি পেলেন নিজের স্বপ্নের দোকান। দুই সপ্তাহ আগে দোকানটি চালুও করেছেন। অলংকার মোড় এলাকার পুলিশ বক্স-সংলগ্ন ফুটপাতের পাশের ঝকঝকে-তকতকে, নতুন টিন দিয়ে বানানো পাকা মেঝের দোকানটি তাঁর। ভেতরে এক জোড়া টেবিল। চা-বিস্কুট, রুটি, কলাসহ নানা খাবার তাঁর দোকানে।
গতকাল বিকেলে মেঘরানীর দোকানে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। দোকান সামলানোর কাজে তখন তাঁকে সহায়তা করছিলেন দূর সম্পর্কের এক ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অপমানের জীবন আর ভালো লাগছিল না। সে কারণে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবনের বাকি সময়টা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। এই এলাকায় প্রায় ৩১ বছর ধরে আছি। সবাই আমাকে চেনে। একসময় যাঁরা আমাকে সহায়তা করেছেন, এখন তাঁদের ডেকে ডেকে দোকানে খাওয়াতে চাই।’
মেঘরানী যখন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ওই দোকানে চা খেতে আসেন পাশের একটি বাস কাউন্টারের কর্মী কামরুল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘উনাকে (মেঘরানী) আমরা অনেক আগে থেকে চিনি, নানি নামে ডাকি। নানি এখন দোকানদারি শুরু করেছেন। আমরা সবাই এতে খুশি।’
চট্টগ্রামে প্রায় চার শ হিজড়া রয়েছেন। তাঁরাও মেঘরানীর মতো নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান কি না, এ প্রশ্নে মেঘরানী বলেন, ‘আমি তো চাই, ওরাও নিজের পায়ে দাঁড়াক। কেউ কেউ আমাকে উৎসাহ দিয়েছে, আবার অনেকে নানা কথাও (নেতিবাচক) বলেছে। দেখা যাক।’ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি তাঁর একটি দাবিও রয়েছে। কেউ যাতে তাঁকে উৎখাত না করে, সে জন্য সিএমপির কাছ থেকে একটি সাইনবোর্ড চান তিনি।
চট্টগ্রামে হিজড়াদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘নোঙর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’। পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী এ এস এম জামাল উদ্দিন। তবে হিজড়াদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, হিজড়া সমাজে বেশ কয়েকজন গুরু বা নেতা রয়েছেন। এঁরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান। অনেকে এঁদের চাপে অন্য কাজে গিয়েও তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পুলিশ প্রশাসনের উচিত হবে এঁদেরও উদ্বুদ্ধ করে কাজে নিয়ে আসা। তাহলে বাকিরাও উৎসাহিত হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল জলিল মণ্ডলের আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে মেঘরানীকে দোকান করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাঁদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হলো। যাঁরা চাকরি চাইবেন, তাঁদের চাকরি পেতে সহায়তা করা হবে। আর যাঁরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য ফান্ড তৈরি করে সহায়তা করা হবে। আশা করব, সমাজের অন্যরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া তাঁদের সব সময় তদারকির মধ্যে রাখা হবে।’
শোনা যাক মেঘরানীর জীবনের বাঁক নেওয়ার গল্পটা। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) নগরের হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য একটি মতবিনিময় সভা করে। সে সভায় তাঁদের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই সভায় তাঁরা সরকারি চাকরির দাবি তোলেন। কম বেতন আর অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি চাকরিতে তেমন কেউই আগ্রহী ছিলেন না। ওই সভায় মেঘরানীও ছিলেন।
অসম্মানজনক জীবনের ভারে ক্লান্ত মেঘরানী চাইছিলেন মর্যাদাপূর্ণ কোনো কাজ করতে। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন, চাকরি নয়, তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা করবেন। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই মাস আগে যোগাযোগ করলেন তিনি। তাঁরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। পুলিশের সহায়তায় অলংকার মোড়ে তিনি পেলেন নিজের স্বপ্নের দোকান। দুই সপ্তাহ আগে দোকানটি চালুও করেছেন। অলংকার মোড় এলাকার পুলিশ বক্স-সংলগ্ন ফুটপাতের পাশের ঝকঝকে-তকতকে, নতুন টিন দিয়ে বানানো পাকা মেঝের দোকানটি তাঁর। ভেতরে এক জোড়া টেবিল। চা-বিস্কুট, রুটি, কলাসহ নানা খাবার তাঁর দোকানে।
গতকাল বিকেলে মেঘরানীর দোকানে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। দোকান সামলানোর কাজে তখন তাঁকে সহায়তা করছিলেন দূর সম্পর্কের এক ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অপমানের জীবন আর ভালো লাগছিল না। সে কারণে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবনের বাকি সময়টা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চাই। এই এলাকায় প্রায় ৩১ বছর ধরে আছি। সবাই আমাকে চেনে। একসময় যাঁরা আমাকে সহায়তা করেছেন, এখন তাঁদের ডেকে ডেকে দোকানে খাওয়াতে চাই।’
মেঘরানী যখন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ওই দোকানে চা খেতে আসেন পাশের একটি বাস কাউন্টারের কর্মী কামরুল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘উনাকে (মেঘরানী) আমরা অনেক আগে থেকে চিনি, নানি নামে ডাকি। নানি এখন দোকানদারি শুরু করেছেন। আমরা সবাই এতে খুশি।’
চট্টগ্রামে প্রায় চার শ হিজড়া রয়েছেন। তাঁরাও মেঘরানীর মতো নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান কি না, এ প্রশ্নে মেঘরানী বলেন, ‘আমি তো চাই, ওরাও নিজের পায়ে দাঁড়াক। কেউ কেউ আমাকে উৎসাহ দিয়েছে, আবার অনেকে নানা কথাও (নেতিবাচক) বলেছে। দেখা যাক।’ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি তাঁর একটি দাবিও রয়েছে। কেউ যাতে তাঁকে উৎখাত না করে, সে জন্য সিএমপির কাছ থেকে একটি সাইনবোর্ড চান তিনি।
চট্টগ্রামে হিজড়াদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘নোঙর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’। পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী এ এস এম জামাল উদ্দিন। তবে হিজড়াদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, হিজড়া সমাজে বেশ কয়েকজন গুরু বা নেতা রয়েছেন। এঁরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান। অনেকে এঁদের চাপে অন্য কাজে গিয়েও তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পুলিশ প্রশাসনের উচিত হবে এঁদেরও উদ্বুদ্ধ করে কাজে নিয়ে আসা। তাহলে বাকিরাও উৎসাহিত হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল জলিল মণ্ডলের আনুষ্ঠানিকভাবে দোকানটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে মেঘরানীকে দোকান করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাঁদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হলো। যাঁরা চাকরি চাইবেন, তাঁদের চাকরি পেতে সহায়তা করা হবে। আর যাঁরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য ফান্ড তৈরি করে সহায়তা করা হবে। আশা করব, সমাজের অন্যরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া তাঁদের সব সময় তদারকির মধ্যে রাখা হবে।’
No comments