পরিবেশ-প্রতিবেশ ও দেশ-বিদেশ by ড. নুরজাহান সরকার
আমরা
প্রায় সব সময় ‘বিদেশ’ শব্দটা ব্যবহার করে থাকি এবং এই বিদেশ বলতে আমরা
কখনোই আমাদের মতো কোনো অনুন্নত বা তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশের কথা বুঝাই না।
আমরা বিদেশ বলতে বুঝাতে চাই ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স,
জার্মানি- এসব দেশ। আমরা পড়াশোনার জন্য এসব দেশে যাই, ব্যবসা-বাণিজ্য
প্রভৃতি বহু কারণে এমনকি চিরতরে থেকে যাওয়ার জন্যও যাই। এসব দেশের
জীবনব্যবস্থার প্রতি আমাদের যেমন আগ্রহের শেষ নেই, তেমনই ওইসব দেশে নিজের
অবস্থান দেখতে আনন্দের শেষ নেই। নিজের অবচেতন মনে ওইসব দেশের জীবনব্যবস্থায়
নিজেকে উন্নীত করতে গিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদের পক্ষে যা কিছু সম্ভব, তা
আমরা করেও ফেলেছি। যেমন আমাদের ঘরবাড়ির ডিজাইন, টাইলসের ফ্লোর, টয়লেট
ব্যবস্থার উন্নয়ন, ইলেকট্রিক ও গ্যাস-ব্যবস্থা। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীপর্যায়ে
চিন্তার চাপের ফলে গ্যাস ও ইলেকট্রিসিটি ছাড়াও আমাদের সুউচ্চ অট্টালিকায়
লিফটের ব্যবস্থাও হয়েছে। এসব বিষয়ে অবশ্য মূল কারণ প্রয়োজনের চাপ এবং সে
পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও সহযোগিতা করেছে। এমনকি বসবাসের জন্য যে ঘরবাড়ি আমরা
তৈরি করছি, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চিমা আদলেই। যেমন আমাদের দেশ উষ্ণ
অঞ্চলে বিধায় আমরা প্রচুর ঘাম ও ধুলার কারণে প্রতিদিন অনেক কাপড়-চোপড় ধুতে
বাধ্য এবং এগুলো শুকানোর জন্য প্রয়োজন একটি লম্বা খোলা বারান্দা। আমরা সে
বারান্দার অস্তিত্ব মুছে ফেলে পশ্চিমা আদলে এক-দুই টুকরো জায়গা রাখছি
ভেন্টিলেশনের জন্য। যাই হোক, আমরা বাসস্থানের দিক থেকে অতি আধুনিক এবং
প্রায় সব রকম সুবিধা তৈরি করতে পেরেছি অথচ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য
কোনো সবুজের গুরুত্বের ধার ধারিনি এবং এর পরিণতি সম্বন্ধেও ভাবিনি। সারা
দিনের কাজের শেষে রাস্তার জ্যাম, ধুলা, ভাঙা রাস্তার নিয়মনীতি-বহির্ভূত
বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে অ্যাক্সিডেন্টের কবল পার হয়ে যখন ঘরে ফিরি, তখন
মনে হয় নতুন জীবন পেলাম। এভাবে প্রতিদিন একটি করে নতুন জীবন পাওয়া মন্দ
নয়, বরং বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার।
এসব কিছু লেখার উদ্দেশ্য হলো এটা বোঝানো যে, এ দেশের সামর্থ্যবান মানুষ নিজ নিজ উন্নয়ন সাধন করেছে এবং বাসস্থানের দিক থেকে ত্রুটি-বিচ্যুতিহীন না হলেও প্রায় বিদেশ অর্থাৎ উন্নত দেশের মতোই। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল খাদ্য সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান যে আসবে, তা কিন্তু কেউই কখনো ভাবেনি। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা, প্রায় ১৬ কোটি এবং তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। এ রকম প্রকট সমস্যারই যখন সমাধান হলো তখন অন্যান্য সমস্যাও মিটে যাওয়ার কথা; কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যেসব সমস্যা জনগণ নিজে সমাধান করার সামর্থ্য রাখে তা সমাধান হবে। আর যেসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর, তা যে দলেরই হোক, তার সমাধান হয়তো এ দেশবাসী কখনো দেখবে না। অথচ ওইসব সুযোগ-সুবিধার জন্য দেশবাসী যথাযথ কর প্রদান করে আসছে। টাকা ব্যাংকে রাখলে এর লভ্যাংশ থেকে কর কাটা হয়, অর্থ সম্পদের কর তো অবশ্যই কাটা হয়। আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কেনাকাটা যা করা হোক না কেন, কর কাটা হচ্ছে, এমনকি এক হালি লেবুর ওপরও ক্রেতা কর বা ট্যাক্স দিতে বাধ্য। এত কিছুর পরেও সে পাচ্ছে না জীবনের বা সম্পদের নিরাপত্তা, পাচ্ছে না যাতায়াতের সহজ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার প্রতিশ্রুতি। কেন? এর জবাব প্রতিনিয়ত প্রতিজন খুঁজছে।
‘বিদেশ’ বলতে যেসব দেশের কথা উল্লেখ করেছি সেসব দেশের প্রশাসকদের কারো কোনো সেকেন্ড হোম অন্য আর একটি দেশে আছে বলে তেমন শোনা যায় না; শোনা যায় না তাদের অন্য কোনো দেশে ব্যাংক ব্যালেন্সের কথা। তারা কখনো জনগণের ট্যাক্সের টাকা নিজেদের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার জন্য ব্যয় করেছেন বলে জানা যায় না। তাদের আয়-ব্যয়, সম্পদ বৈভব নিজেদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্য দিকে, আমাদের দেশ থেকে এসব চলে যায়। প্রবাহ ওইসব ‘বিদেশে’। এর শেষ কোথায়? বলা হয়ে থাকে আমাদের দেশ থেকে ‘ব্রেন ড্রেন’ হচ্ছে ওই বিদেশে কিন্তু ওই বিদেশগুলো থেকে তা হচ্ছে না। কেন? সম্পদ অর্থ বৈভবের ড্রেনের কথাও শোনা যায় না। কারণটা কী?
দেশবাসীর মাথায় অনেক ‘কেন’। দেখা যায় নদী, খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে, খাস জমিগুলো দখল হয়েছে। পাবলিক পার্কগুলো, পাড়ার খেলার মাঠগুলো, এলাকার পুকুরগুলো দখল হয়ে গেছে। কিন্তু কেন? এসব দখলদার কারা তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব কি কারো নেই? দায়িত্ব যার বা যাদের তিনি বা তারা কেন নীরব? কেন দেখেও দেখছেন না?
ক’দিন আগে শুনলাম, রাতের গভীরে ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকের পাড় একটু একটু করে কে বা কারা ভরাট করছে। এটা কী করে সম্ভব? কর্তৃপক্ষ চাইলে কি এসব রোধ করতে পারে না? দুর্মুখেরা বলে থাকে সমস্যার আবর্তে জনতাকে ঘূর্ণায়মান রেখে রক্ষণের পরিবর্তে ভক্ষণ সহজ হয়, তাই এ উদাসীনতা।
বন বিভাগের বড় বাবুদের ইঙ্গিত ছাড়া নাকি বন উজাড় হয় না। উল্লিখিত বিদেশগুলোতে দেশের ৩০-৪০% বনাঞ্চল। তারপরও তারা জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কায় ভীত। ইদানীং জার্মানি ঘুরে যা দেখলাম, তারা বাড়ির বারান্দায় বড় বড় বাথটাবের মতো টাবে গাছগাছড়া লাগিয়ে বাসস্থানের জন্য অক্সিজেন তৈরি করছে। গাছগাছড়ায় ভর্তি প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদ। দু-তিনটি বিল্ডিংয়ের মাঝে রক্ষা করছে সবুজ, কমপক্ষে ১০-১২টা বড় গাছ, কিছু ঝোপ ও ঘাস দিয়ে। তাদের প্রতিটি এলাকায় বেশ বড় পাবলিক পার্ক সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিনোদন ও খেলার জন্য যেখানে নিরাপত্তার অভাব নেই। আমাদের তেমনটি না হলেও বর্তমানের ৭-৮ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে তো অবশ্যই ছিল। আজ এ অবস্থা কেন? কেন?
বড় বাবুদের হাতে পড়ে দেশ বড়ই কাবু। অথচ বড় বাবুরা বড়ই বাকপটু। অন্য দিকে বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখে তিনবেলার খাবার তুলে দিলো যারা অর্থাৎ কৃষকসমাজ, তারা অসহায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ৫৪টি নদীতে বাঁধ তৈরি করে। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে দেশটাকে প্রায় মরুভূমি বানানোর ব্যবস্থা করেছে, বিলুপ্তির তালিকায় ফেলেছে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী; সেখানে কৃষকেরা এই বৈরী পরিবেশে প্রতিজনের মুখে খাদ্য তুলে দিতে পেরেছে! দেশের প্রকট সমস্যার সমাধান যখন হয়েছে তখন অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে একদিন। শুধু অপেক্ষা, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ সে দিন হয়তো আমাদের দেশের বিত্তবানরাও দেশেই থাকবেন। এ দেশ থেকে বিদেশে ব্রেন ড্রেনও হবে না। এ দিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের মুখোমুখি বিশ্বের করণীয় সম্পর্কে সম্মেলন প্যারিসে হয়ে গেল। ১.৫ থেকে ২.০ ডিগ্রির নিচের রাখার প্রচেষ্টার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১২ দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কর্মকাণ্ডে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা তেমন নিশ্চিত না করেই সম্মেলন শেষ; তার একটি সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়, তা হলো ওই সম্মেলনে স্বাক্ষরকারী সব ক’টি দেশকেই বায়ুর উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী। অবশ্য এ একপ্রকার উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। তারপরও প্রতিজনকে ভাবতে হবে নিজের ভালো। অন্তত প্রতিজন নিদেনপক্ষে একটি গাছ রোপণ করবে।
এসব কিছু লেখার উদ্দেশ্য হলো এটা বোঝানো যে, এ দেশের সামর্থ্যবান মানুষ নিজ নিজ উন্নয়ন সাধন করেছে এবং বাসস্থানের দিক থেকে ত্রুটি-বিচ্যুতিহীন না হলেও প্রায় বিদেশ অর্থাৎ উন্নত দেশের মতোই। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল খাদ্য সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান যে আসবে, তা কিন্তু কেউই কখনো ভাবেনি। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা, প্রায় ১৬ কোটি এবং তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। এ রকম প্রকট সমস্যারই যখন সমাধান হলো তখন অন্যান্য সমস্যাও মিটে যাওয়ার কথা; কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যেসব সমস্যা জনগণ নিজে সমাধান করার সামর্থ্য রাখে তা সমাধান হবে। আর যেসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর, তা যে দলেরই হোক, তার সমাধান হয়তো এ দেশবাসী কখনো দেখবে না। অথচ ওইসব সুযোগ-সুবিধার জন্য দেশবাসী যথাযথ কর প্রদান করে আসছে। টাকা ব্যাংকে রাখলে এর লভ্যাংশ থেকে কর কাটা হয়, অর্থ সম্পদের কর তো অবশ্যই কাটা হয়। আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কেনাকাটা যা করা হোক না কেন, কর কাটা হচ্ছে, এমনকি এক হালি লেবুর ওপরও ক্রেতা কর বা ট্যাক্স দিতে বাধ্য। এত কিছুর পরেও সে পাচ্ছে না জীবনের বা সম্পদের নিরাপত্তা, পাচ্ছে না যাতায়াতের সহজ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার প্রতিশ্রুতি। কেন? এর জবাব প্রতিনিয়ত প্রতিজন খুঁজছে।
‘বিদেশ’ বলতে যেসব দেশের কথা উল্লেখ করেছি সেসব দেশের প্রশাসকদের কারো কোনো সেকেন্ড হোম অন্য আর একটি দেশে আছে বলে তেমন শোনা যায় না; শোনা যায় না তাদের অন্য কোনো দেশে ব্যাংক ব্যালেন্সের কথা। তারা কখনো জনগণের ট্যাক্সের টাকা নিজেদের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার জন্য ব্যয় করেছেন বলে জানা যায় না। তাদের আয়-ব্যয়, সম্পদ বৈভব নিজেদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্য দিকে, আমাদের দেশ থেকে এসব চলে যায়। প্রবাহ ওইসব ‘বিদেশে’। এর শেষ কোথায়? বলা হয়ে থাকে আমাদের দেশ থেকে ‘ব্রেন ড্রেন’ হচ্ছে ওই বিদেশে কিন্তু ওই বিদেশগুলো থেকে তা হচ্ছে না। কেন? সম্পদ অর্থ বৈভবের ড্রেনের কথাও শোনা যায় না। কারণটা কী?
দেশবাসীর মাথায় অনেক ‘কেন’। দেখা যায় নদী, খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে, খাস জমিগুলো দখল হয়েছে। পাবলিক পার্কগুলো, পাড়ার খেলার মাঠগুলো, এলাকার পুকুরগুলো দখল হয়ে গেছে। কিন্তু কেন? এসব দখলদার কারা তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব কি কারো নেই? দায়িত্ব যার বা যাদের তিনি বা তারা কেন নীরব? কেন দেখেও দেখছেন না?
ক’দিন আগে শুনলাম, রাতের গভীরে ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকের পাড় একটু একটু করে কে বা কারা ভরাট করছে। এটা কী করে সম্ভব? কর্তৃপক্ষ চাইলে কি এসব রোধ করতে পারে না? দুর্মুখেরা বলে থাকে সমস্যার আবর্তে জনতাকে ঘূর্ণায়মান রেখে রক্ষণের পরিবর্তে ভক্ষণ সহজ হয়, তাই এ উদাসীনতা।
বন বিভাগের বড় বাবুদের ইঙ্গিত ছাড়া নাকি বন উজাড় হয় না। উল্লিখিত বিদেশগুলোতে দেশের ৩০-৪০% বনাঞ্চল। তারপরও তারা জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কায় ভীত। ইদানীং জার্মানি ঘুরে যা দেখলাম, তারা বাড়ির বারান্দায় বড় বড় বাথটাবের মতো টাবে গাছগাছড়া লাগিয়ে বাসস্থানের জন্য অক্সিজেন তৈরি করছে। গাছগাছড়ায় ভর্তি প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদ। দু-তিনটি বিল্ডিংয়ের মাঝে রক্ষা করছে সবুজ, কমপক্ষে ১০-১২টা বড় গাছ, কিছু ঝোপ ও ঘাস দিয়ে। তাদের প্রতিটি এলাকায় বেশ বড় পাবলিক পার্ক সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিনোদন ও খেলার জন্য যেখানে নিরাপত্তার অভাব নেই। আমাদের তেমনটি না হলেও বর্তমানের ৭-৮ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে তো অবশ্যই ছিল। আজ এ অবস্থা কেন? কেন?
বড় বাবুদের হাতে পড়ে দেশ বড়ই কাবু। অথচ বড় বাবুরা বড়ই বাকপটু। অন্য দিকে বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখে তিনবেলার খাবার তুলে দিলো যারা অর্থাৎ কৃষকসমাজ, তারা অসহায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ৫৪টি নদীতে বাঁধ তৈরি করে। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে দেশটাকে প্রায় মরুভূমি বানানোর ব্যবস্থা করেছে, বিলুপ্তির তালিকায় ফেলেছে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী; সেখানে কৃষকেরা এই বৈরী পরিবেশে প্রতিজনের মুখে খাদ্য তুলে দিতে পেরেছে! দেশের প্রকট সমস্যার সমাধান যখন হয়েছে তখন অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে একদিন। শুধু অপেক্ষা, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ সে দিন হয়তো আমাদের দেশের বিত্তবানরাও দেশেই থাকবেন। এ দেশ থেকে বিদেশে ব্রেন ড্রেনও হবে না। এ দিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের মুখোমুখি বিশ্বের করণীয় সম্পর্কে সম্মেলন প্যারিসে হয়ে গেল। ১.৫ থেকে ২.০ ডিগ্রির নিচের রাখার প্রচেষ্টার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১২ দিন ধরে ব্যাপক আলোচনা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কর্মকাণ্ডে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা তেমন নিশ্চিত না করেই সম্মেলন শেষ; তার একটি সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়, তা হলো ওই সম্মেলনে স্বাক্ষরকারী সব ক’টি দেশকেই বায়ুর উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী। অবশ্য এ একপ্রকার উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। তারপরও প্রতিজনকে ভাবতে হবে নিজের ভালো। অন্তত প্রতিজন নিদেনপক্ষে একটি গাছ রোপণ করবে।
লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments