যুগান্তর এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে by হাসান আজিজুল হক
যুগান্তরের কথা বলতে গেলে একটু পেছনের
ইতিহাস টেনেই বলতে হয়। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের
একেবারে প্রথম দিকের কথা। তখন ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে স্বাধীনতার পক্ষে একটি
সশস্ত্র প্রচেষ্টা ছিল সংগ্রামীদের মাঝে। সেই প্রচেষ্টায় অনেক মহৎ ব্যক্তিও
যুক্ত ছিলেন। যারা পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের পাতায় ঋষিতুল্য হয়ে আছেন।
অরবিন্দ ঘোষ থেকে শুরু করে অনেকেই এই সশস্ত্র প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। সেই সময় আলিপুরে বোমা হামলা ও পরে মামলার ঘটনাও ঘটেছিল। স্বাধিকারের
দিকে এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে তখন একটি গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল, যার নাম
যুগান্তর গোষ্ঠী। এই যুগান্তর গোষ্ঠীতে সশস্ত্র বিপ্লবীরা শামিল হয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে এই গোষ্ঠীর একটি মহৎ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কলকাতায় যুগান্তর
নামের একটি প্রগতিশীল পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এটি ছিল উপমহাদেশে
স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় বিপ্লবীদের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের বড়
সেতু।
কলকাতার যুগান্তর স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের মুখপত্র হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কালের পরিক্রমায় কলকাতার যুগান্তর হারিয়ে গেলেও একুশ শতকের সূচনালগ্নে ঢাকা থেকে দৈনিক যুগান্তরের আত্মপ্রকাশ প্রগতিশীল মানুষকে কল্যাণময় রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নে আবারও উদ্বেলিত করে। আমি পাঠক হিসেবে সবসময় কলকাতার যুগান্তরের সঙ্গে ঢাকার যুগান্তরের বৈশিষ্ট্যগত ফারাক খুঁজেছি। দৈনিক যুগান্তরের ক্ষুরধার লেখনীর মাঝে আমি হারিয়ে যাওয়া যুগান্তরকে এখনও খুঁজি। পাঠক হিসেবে যুগান্তর আমাদের ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। যুগান্তরের প্রতি আমার সহনশীল আর সু-অনুভূতির একটুও কমতি পড়েনি এখনও। ১৭ বছরে এসেও আমি যুগান্তরকে মনের কোঠা থেকে হারিয়ে ফেলিনি। জনগণের পক্ষে শক্ত ভূমিকায় অবিচল থাকা যুগান্তর আমাকে আকৃষ্ট করে, এগিয়ে যাওয়ার খোরাক জোগায়।
যুগান্তর যে ধারায় তার পথচলা শুরু করেছিল, সেই ধারাতেই এখনও বহমান- আমার সরল অভিব্যক্তি এটাই। অনেক পত্রিকা জনগণের পক্ষের অঙ্গীকারের আড়ালে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকবলিত হয়ে পড়েছে। জনগণের যৌক্তিক স্বার্থের সঙ্গে অনেক পত্রিকা যখন পক্ষপাতমূলক আচরণে লিপ্ত হয়, তখন তা অনুভূতিপ্রবণ মানুষকে আহত করে। পত্রিকাগুলোর এমন ভূমিকা মানুষকে ক্ষুব্ধ করলেও মোহের জাল ছিঁড়ে পাঠকরা অনেক কারণে বেরোতে পারেন না। পাঠক হিসেবে আমাকে বলতে হচ্ছে, যুগান্তরের মাঝে এখনও জনগণের পক্ষে থেকে তাদের পক্ষে কথা বলার আকাক্সক্ষা আছে। পাঠকের অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার ফারাক মেনে নিলেও যুগান্তর এখনও মানুষের পক্ষেই কথা বলে। এটা আমাকে একটু হলেও আশাবাদী করে।
আরও একটি কথা বলতে হয়। অনেক পত্রিকা শাসকদের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করে। এটা জনগণ কখনোই ভালোভাবে নেয় না। পত্রিকার সঙ্গে পাঠকদের চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্কটি বাস্তবেই খুব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। পত্রিকা যত ভালোভাবে চলুক, যত চাকচিক্য দেখাক, শাসকদের বা বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি আনুকূল্য পাঠকরা ঠিকই বুঝে নিতে পারেন। আমার জানামতে, যুগান্তর এই বলয়ের বাইরেই অবস্থান করে। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা করে। পাঠক হিসেবে এটা আমার ভালো লাগে। তবে খুব আশা করি, যুগান্তর যেন তার নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার বলয়চ্যুত না হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারও বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ না করে। যারা মানুষের কল্যাণ চায় না, যুগান্তরে অন্তত তাদের প্রশংসা দেখতে চান না পাঠকও। যুগান্তর এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে। যুগান্তরের প্রতি, এর সব সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমার অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। (অনুলিখন : হাসান আদিব ও আনু মোস্তফা)
হাসান আজিজুল হক : কথাসাহিত্যিক
কলকাতার যুগান্তর স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের মুখপত্র হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কালের পরিক্রমায় কলকাতার যুগান্তর হারিয়ে গেলেও একুশ শতকের সূচনালগ্নে ঢাকা থেকে দৈনিক যুগান্তরের আত্মপ্রকাশ প্রগতিশীল মানুষকে কল্যাণময় রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নে আবারও উদ্বেলিত করে। আমি পাঠক হিসেবে সবসময় কলকাতার যুগান্তরের সঙ্গে ঢাকার যুগান্তরের বৈশিষ্ট্যগত ফারাক খুঁজেছি। দৈনিক যুগান্তরের ক্ষুরধার লেখনীর মাঝে আমি হারিয়ে যাওয়া যুগান্তরকে এখনও খুঁজি। পাঠক হিসেবে যুগান্তর আমাদের ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। যুগান্তরের প্রতি আমার সহনশীল আর সু-অনুভূতির একটুও কমতি পড়েনি এখনও। ১৭ বছরে এসেও আমি যুগান্তরকে মনের কোঠা থেকে হারিয়ে ফেলিনি। জনগণের পক্ষে শক্ত ভূমিকায় অবিচল থাকা যুগান্তর আমাকে আকৃষ্ট করে, এগিয়ে যাওয়ার খোরাক জোগায়।
যুগান্তর যে ধারায় তার পথচলা শুরু করেছিল, সেই ধারাতেই এখনও বহমান- আমার সরল অভিব্যক্তি এটাই। অনেক পত্রিকা জনগণের পক্ষের অঙ্গীকারের আড়ালে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকবলিত হয়ে পড়েছে। জনগণের যৌক্তিক স্বার্থের সঙ্গে অনেক পত্রিকা যখন পক্ষপাতমূলক আচরণে লিপ্ত হয়, তখন তা অনুভূতিপ্রবণ মানুষকে আহত করে। পত্রিকাগুলোর এমন ভূমিকা মানুষকে ক্ষুব্ধ করলেও মোহের জাল ছিঁড়ে পাঠকরা অনেক কারণে বেরোতে পারেন না। পাঠক হিসেবে আমাকে বলতে হচ্ছে, যুগান্তরের মাঝে এখনও জনগণের পক্ষে থেকে তাদের পক্ষে কথা বলার আকাক্সক্ষা আছে। পাঠকের অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার ফারাক মেনে নিলেও যুগান্তর এখনও মানুষের পক্ষেই কথা বলে। এটা আমাকে একটু হলেও আশাবাদী করে।
আরও একটি কথা বলতে হয়। অনেক পত্রিকা শাসকদের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করে। এটা জনগণ কখনোই ভালোভাবে নেয় না। পত্রিকার সঙ্গে পাঠকদের চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্কটি বাস্তবেই খুব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। পত্রিকা যত ভালোভাবে চলুক, যত চাকচিক্য দেখাক, শাসকদের বা বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি আনুকূল্য পাঠকরা ঠিকই বুঝে নিতে পারেন। আমার জানামতে, যুগান্তর এই বলয়ের বাইরেই অবস্থান করে। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা করে। পাঠক হিসেবে এটা আমার ভালো লাগে। তবে খুব আশা করি, যুগান্তর যেন তার নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার বলয়চ্যুত না হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারও বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ না করে। যারা মানুষের কল্যাণ চায় না, যুগান্তরে অন্তত তাদের প্রশংসা দেখতে চান না পাঠকও। যুগান্তর এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে। যুগান্তরের প্রতি, এর সব সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমার অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। (অনুলিখন : হাসান আদিব ও আনু মোস্তফা)
হাসান আজিজুল হক : কথাসাহিত্যিক
No comments