সিলেটের শিফার ডিভোর্স ও বিয়ে by ওয়েছ খছরু
প্রবাসী
মজির উদ্দিনকে ডিভোর্স দেয়ার দিনই ড্রাইভার খালেদের সঙ্গে বিয়ের এফিডেভিট
সম্পাদন করেন সিলেটের ফারজানা আক্তার শিফা। এক সন্তানকে বাড়ি রেখে আরেক
সন্তানকে নিয়ে প্রেমিক খালেদের সঙ্গে অজানায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। আর
পালিয়ে যাওয়ার ৬ দিনের মাথায় ১৫ই জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর
ওয়ার্ডের কাজী আশরাফুল আলমের কাছে দুই লাখ টাকা কাবিনে খালেদকে বিয়ে করেন।
অথচ ১৭ই জুন উদ্ধারের পর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে শিফা দাবি করেছেন, খালেদ
তাকে অপহরণ করেছে। আপাতত শিফার বক্তব্যের সূত্রেই এগুচ্ছে এ মামলার
তদন্তকাজ- এমনটি জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু শিফা ও খালেদের প্রেমের ঘটনাবলী ও
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরেই তারা একে অপরের
প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। আর এ নিয়ে প্রবাসী মজির, ড্রাইভার খালেদ ও শিফা
এই ৩ জনের পরিবারের মধ্যে ঘটে নানা ঘটনা। শিফা তার প্রেমিক খালেদের হাত
ধরে পালিয়েছেন ৯ই জুন। এর আগে খালেদ ও শিফার প্রেম-মিলনের খবরাখবর জানাজানি
হলে এক মাস পিতার বাড়ি ছিলেন শিফা। কারণ, খালেদের সঙ্গে প্রেমের খবর
জানাজানি হওয়ার পর নিজের স্ক্যান্ডালের কারণে স্বামীর বাড়ি থাকা দায় হয়ে
পড়েছিল তার। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদের আগে তার পিতা মজুর মিয়া
প্রবাসী মজির উদ্দিনের পরিবারের ডাকে সাড়া দিতেন। ট্রিপ দিতে গাড়ি নিয়ে
ছুটে আসতেন তিনি। তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই ছিলেন মজুর মিয়া। এই
সুবাদে প্রবাসী মজির উদ্দিনের পরিবারের পারিবারিক গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব
পায় খালেদ। প্রথম প্রথম মজিরউদ্দিন যখন প্রবাস থেকে দেশে আসতেন তখনই কেবল
ডাক পেতেন খালেদ। আর এই সুযোগে মজিরউদ্দিনের স্ত্রী শিফার নজরে পড়েন তিনি।
এই ভাবে দুই সন্তানের জননী ফারজানা আক্তার শিফার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে
উঠে খালেদের। তবে, পরিবারের কেউ এটি জানতেন না। এমনকি মজিরউদ্দিনও কখনও এ
বিষয়টি টের পাননি। শিফা ও খালেদের মধ্যে যে ভাল বুঝাপড়া ছিল সেটি বুঝা গেলো
গত বছরের প্রথম দিকে। ওই সময় সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন মজির উদ্দিন।
তিনি দেশে আসার পর শিফা অনেকটা জোর করে খালেদের পরিবারের সঙ্গে তাদের
ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দেন। এমনকি খালেদের মায়ের সঙ্গে মজিরের মাকে ‘ধর্মের বোন’
বানানো হয়। এর ফলে দুটি পরিবার সামাজিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে দুই
মাস ছুটি কাটিয়ে মজির উদ্দিন প্রবাসে চলে যাওয়ার পর খালেদ অনেকটা সহজেই
যাতায়াত শুরু করে শিফার ঘরে। পুরুষবিহীন পরিবারে রাতের পর রাত কাটিয়েছে
খালেদ। এই সুযোগই তাকে করে দিয়েছে শিফা। প্রথম প্রথম বৃদ্ধ শাশুড়ির নজরে
পড়ে পুত্রবধূ শিফার কীর্তি। এ সময় শাশুড়ি খালেদের কবল থেকে শিফাকে মুক্ত
করতে চেষ্টা করেন। দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে শিফাকে এই পথ থেকে ফিরে আসার
জন্য বারবার অনুরোধ করেন তিনি। এমনকি খালেদের মা ও শিফার পরিবারের কাছেও
গোপনে এই বিষয়গুলো জানানো হয়। এ অবস্থায় শিফা ও খালেদ এলাকায় আরও খোলামেলা
হয়ে ওঠে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খালেদ প্রেমিকা শিফাকে নিয়ে সিলেটে চলে
আসতো। মার্কেট করতো। পার্কে ঘুরতো। তাদের এসব কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে এলাকাবাসীর
চোখেও। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় এলাকায়। এই অবস্থায় শিফাকে কোন ভাবেই
নিবৃত করা যাচ্ছিল না। খালেদ ও শিফার পরকীয়া হয়ে উঠে বেপরোয়া। পালিয়ে
যাওয়ার প্রায় এক মাস আগের ঘটনা। ওই সময় গ্রামে, হাটে সবখানেই রটে যায় খালেদ
ও শিফার প্রেম কাহিনী। সবখানেই হতে থাকে তাদের নিয়ে আলোচনা। আত্মীয়স্বজনরা
বাদ নেই বিষয়টি মিটমাট করতে। বারবার চেষ্টা করছেন খালেদ ও শিফাকে পৃথক
করতে, কিন্তু তারা পারেননি। তিনটি পরিবারও চেষ্টা চালিয় ব্যর্থ। এই অবস্থায়
এক মাস আগে পিতা আবদুল মান্নানের বাড়ি গোলাপগঞ্জের লক্ষনাবন্দ গ্রামে চলে
যান শিফা। তিনি চলে যাওয়ার পর ওদিকের পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু
করে। তবে, খালেদ বারবারই যেত শিফার পিত্রালয়ে। ওখানে তাদের দেখা সাক্ষাৎ
হয়েছে। এদিকে, নিজের বাড়িতে ঘর বানানোর জন্য শিফার একাউন্টে প্রায় দেড় লাখ
টাকা প্রেরণ করে মজির উদ্দিন। ওই টাকা চৌধুরী বাজারের পুবালী ব্যাংকে আসার
পর ৮ই জুন শিফা পিতার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি মোগলাবাজারের কান্দেবপুর
গ্রামে আসেন। আসার পথে তিনি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে
আসেন। পর দিন ৯ই জুন শিফা তার ছোট ছেলে শাফিকে নিয়ে খালেদের সঙ্গে পালিয়ে
যায়। এদিকে কাগজপত্র পর্যালোচনা করা দেখা গেছে, ফারজানা আক্তার শিফা পালিয়ে
যাওয়ার দিনই সিলেটের আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে প্রবাসী মজির উদ্দিনকে
ডিভোর্স প্রদান করেন। সিলেট জেলা বারের নোটারি পাবলিক অ্যাডভোকেট আনসার
খানের মাধ্যমে দেয়া এফিডেভিটে শিফা উল্লেখ করেন, ‘বিয়ের পর থেকে মজির
উদ্দিনের সঙ্গে আমার মনের মিল হয়নি। সব সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। সাংসারিক
জীবনে আমি খুব অশান্তিতে ছিলাম। এ অবস্থায় তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার
সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চূড়ান্ত বিয়ে বিচ্ছেদ করার
লক্ষ্যে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক এবং তালাকে বাইন প্রদান করে বিয়ে
বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আমি তার জওজিয়ত হতে মুক্ত হলাম।’ এফিডেভিটে সাক্ষী করা হয়
মোগলাবাজার থানার কোনাচর গ্রামের মৃত ওয়াহিদ উল্লাহর পুত্র সিরাজ আলী ও একই
গ্রামের সিরাজউদ্দিনের পুত্র দুলাল মিয়াকে। এফডেভিটের মাধ্যমে তালাক
প্রদানের পর নোটারি পাবলিক অ্যাডভোকেট আনসার খানের মাধ্যমে দেওয়া অপর আরেক
অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়েতে সম্মত হন খালেদ ও শিফা। এতে খালেদ ও শিফা
উল্লেখ করেন, তারা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচিত। সেই সুবাদে তাদের
চেনা জানার কারণে পারস্পরিক ভালবাসায় রূপ নেয়। এ কারণে উভয়ের মধ্যে এই
ভালবাসাকে চিরস্থায়ী ও চিরন্তন ও শাশ্বত করার জন্য আমরা উভয়েই পারস্পরিক
আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’ অ্যাফিডেভিটে তারা
মোহরানা হিসেবে দুই লাখ টাকা উল্লেখ করেন। এফিডেভিটে শিফা আরও উল্লেখ করেন,
‘কোন ধরনের প্রভাব, চাপ, প্রলোভন, প্ররোচনা কিংবা ভয়ভীতি ছাড়াই আমরা নিজের
স্বাধীন ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত মতামতের ভিত্তিতেই উভয়ের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন
হয়।’ ওই এফিডেভিটেও সাক্ষী রাখা হয় সিরাজ আলী ও দুলালকে। ওদিকে, ৯ই জুন
অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের পর গত ১৫ই জুন গাজিপুরের ৮নং ওয়ার্ডের কাজি
আশরাফুল আলম দুই লাখ কাবিনমূলে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেন। ওই কাবিনে কনের
চাচা হিসেবে নুরুল আমীন ও ছেলের চাচা হিসেবে শাহজাহান মিয়ার নাম উল্লেখ করা
হয়।
যেভাবে উদ্ধার হলো শিফা: সিলেটের মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর মোবাইল ট্র্যাকিং শুরু করেন। কিন্তু ট্র্যাকিংয়ে জানা যায় শিফার মোবাইল সিলেটে ও খালেদের মোবাইল লালাবাজারে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে পুলিশ মোগলাবাজারে খালেদের পরিচিতজনদের মোবাইল ট্র্যাকিং শুরু করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই স্বপন কান্তি দাশ জানিয়েছেন, মোবাইল ট্র্যাকিং করতে করতে গাজিপুরের কোনাবাড়ির কাসিমপুর কাগারের লাগোয়া গলিতেই তাদের সন্ধান মিলে। এরপর সিলেট থেকে কোনাবাড়ি পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাদের দুইজনকে বাচ্চাসহ একটি ভাড়াটে ঘর থেকে আটক করা হয়। ওদিকে, খালেদ ও শিফা উদ্ধারের সময় নানা ঘটনা ঘটে কোনাবাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি ঘরে তাদের পাওয়ার পরপরই মামলার বাদী আবদুল মান্নান গিয়ে মেয়ে শিফাকে মারধর করেন। এ সময় শিফা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। পুলিশ ও তার পিতাকে জানায়, খালেদকে সে ভালবাসে। তারা বিয়ে করেছে। খালেদ তার স্বামী। এই কথা শোনার পর মেয়েকে মারধর করেন আবদুল মান্নান। একপর্যায়ে তিনি খালেদকেও মারধর করেন। ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ওই সময় তাদের দুইজনকে গাড়িতে তুলে আনে। এদিকে, শিফার দুই সন্তান আলী আকবর মাহী ও শাহি আহমদ শাফিকে মোগলাবাজার থানা পুলিশের মাধ্যমে মায়ের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা এখন নানার বাড়িতেই আছে।
যেভাবে উদ্ধার হলো শিফা: সিলেটের মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর মোবাইল ট্র্যাকিং শুরু করেন। কিন্তু ট্র্যাকিংয়ে জানা যায় শিফার মোবাইল সিলেটে ও খালেদের মোবাইল লালাবাজারে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে পুলিশ মোগলাবাজারে খালেদের পরিচিতজনদের মোবাইল ট্র্যাকিং শুরু করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই স্বপন কান্তি দাশ জানিয়েছেন, মোবাইল ট্র্যাকিং করতে করতে গাজিপুরের কোনাবাড়ির কাসিমপুর কাগারের লাগোয়া গলিতেই তাদের সন্ধান মিলে। এরপর সিলেট থেকে কোনাবাড়ি পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাদের দুইজনকে বাচ্চাসহ একটি ভাড়াটে ঘর থেকে আটক করা হয়। ওদিকে, খালেদ ও শিফা উদ্ধারের সময় নানা ঘটনা ঘটে কোনাবাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি ঘরে তাদের পাওয়ার পরপরই মামলার বাদী আবদুল মান্নান গিয়ে মেয়ে শিফাকে মারধর করেন। এ সময় শিফা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। পুলিশ ও তার পিতাকে জানায়, খালেদকে সে ভালবাসে। তারা বিয়ে করেছে। খালেদ তার স্বামী। এই কথা শোনার পর মেয়েকে মারধর করেন আবদুল মান্নান। একপর্যায়ে তিনি খালেদকেও মারধর করেন। ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ওই সময় তাদের দুইজনকে গাড়িতে তুলে আনে। এদিকে, শিফার দুই সন্তান আলী আকবর মাহী ও শাহি আহমদ শাফিকে মোগলাবাজার থানা পুলিশের মাধ্যমে মায়ের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা এখন নানার বাড়িতেই আছে।
No comments