লরি থামিয়ে খাবার আদায় হাতির
ভারতের
ঝাড়গ্রামের বালিভাসায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে সার সার লরি।
ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতাগামী সব্জিবাহী ছোট লরিটির চালক সত্যেন্দ্র সিংহ
ভেবেছিলেন বুঝি যানজটে আটকে পড়েছেন। ততক্ষণে লরির জানালা গলিয়ে সত্যেন্দ্রর
গালে আদর করতে শুরু করেছে একটি শুঁড়! জানালার বাইরে হাতি দেখে রীতিমতো
ঘামতে শুরু করেন সত্যেন্দ্র ও খালাসি জীবন রাম। ঘটনাচক্রে, চালকের কেবিনে
এক ব্যাগ সব্জি ছিল। সেটি দিয়ে রেহাই পান ওই লরির চালক ও খালাসি। বুধবার
বিকেলে এভাবেই ঝাড়গ্রামের বালিভাসায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পর পর লরি থামিয়ে
খাবার আদায় করল একটি রেসিডেন্ট হাতি। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর,
বুধবার বিকেলে রাধেশ্যামপুরের জঙ্গল থেকে আচমকা মাঝারি উচ্চতার দাঁতালটি
বালিভাসা এলাকায় জাতীয় সড়কে উঠে পড়ে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাতিটি একের পর এক
লরি থামিয়ে শুঁড়ে ঘ্রাণ নিয়ে পরীক্ষা করতে থাকে। সব্জি ও ফলবোঝাই লরিগুলির
চালকের কেবিনে শুঁড় ঢুকিয়ে খাবার খোঁজে হাতিটি। ঘাটশিলাগামী আম ও কাঁঠালের
ঝুড়ি ভর্তি পিক আপ ভ্যানের চালক অবধেশ কুমার বলেন, “হাতিটি স্টিয়ারিংয়ের
মধ্যে শুঁড় গলিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত দু’টো কাঁঠাল দেওয়ার পর অবশ্য হাতিটি পথ
ছেড়ে দেয়।” হাতির এই দস্যিপনায় খবর পেয়ে ছুটে আসেন মানিকপাড়ার ফরেস্ট
রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথ। ততক্ষণে গোটা পনেরো লরি থেকে তোলা আদায় সেরে
ফেলেছিল হাতিটি। হাতির এমন কাণ্ডকারখানা মোবাইল বন্দি করতে থাকেন পথ চলতি
উৎসাহীরা। লোধাশুলিগামী একটি গাড়ির আরোহীরা হাতিটিকে দেখে মুড়ির প্যাকেট
এগিয়ে দেন। মহানন্দে শুঁড় দিয়ে মুড়ির ঠোঙা পেটে চালান করার পর গাড়িটিকে
ছেড়ে দিয়ে পরের লরিগুলিতে খানাতল্লাশি শুরু করে দাঁতালটি। এরপর সন্ধ্যার
মুখে হাতিটি বালিভাসায় জাতীয় সড়কের ধারে একটি খাবার হোটেলে শুঁড় গলিয়ে
জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করে দেয়। হাতির অবরোধে প্রায় আধ ঘন্টা জাতীয় সড়কে
যানবাহন চলাচল থমকে যায়। সন্ধ্যায় বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে হাতিটি রাস্তার অপর
প্রান্তে খাসজঙ্গলে ঢুকে পড়ে। রাতে ফের জাতীয় সড়ক পার হয়ে হাতিটি
মানিকপাড়া বাজারে তাণ্ডব চালায়। সর্ডিহা ও চাড়দা গ্রামে দু’টি গুদামের দরজা
ভেঙে বেশ কিছুটা চালও খেয়ে নেয় হাতিটি। খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন,
“এখন মাঠে ফসল নেই। সেই কারণেই ধান ও সব্জি খাওয়ায় অভ্যস্ত রেসিডেন্ট
হাতিরা বিকল্প পথে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করছে। হাতিগুলিকে নিরাপদ দূরত্বে
সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।” অন্যদিকে, বুধবার বিকেলে আরও দু’টি রেসিডেন্ট দাঁতাল
সাঁকরাইল ব্লকের মানিকঝাঁটিয়া, বেলেবেড়া, নাইকানশোল গ্রামে হানা দিয়ে
খাবারের খোঁজে বেশ কয়েকটি মাটির বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে
জাতীয় সড়ক লাগোয়া বেলতলার জঙ্গলে দু’টি রেসিডেন্ট দাঁতাল দেখে এলাকায়
চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া এলাকাতেও দু’টি রেসিডেন্ট হাতি
উত্পাত শুরু করেছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।– ওয়েবসাইট।
No comments