মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে ফেলে দেয়া হয় সাগরে -আল জাজিরার রিপোর্ট
নির্যাতন,
ধর্ষণ, দুর্নীতি, মুক্তিপণ দাবি- কয়েক দশক ধরে অভিবাসীরা এমন ভয়ঙ্কর
অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। পরোক্ষভাবে এতে আশকারাও দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানব পাচার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি সূত্র এমনটিই
বলেছে। পাচারের শিকার বাংলাদেশী বা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে দাবি করা হয়
মুক্তিপণ। তা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ফেলে দেয়া হয় সমুদ্রে। এ খবর দিয়েছে
অনলাইন আল জাজিরা। প্রত্যেক বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার
থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। সেখান
থেকেই মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে যাত্রার উপায় খুঁজে তারা। এ মানুষগুলোই
পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর কবলে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে বেশি। পাচারকারীদের এক দালাল
মুনিরুল (ছদ্মনাম) আল জাজিরাকে বলেন, যে কোন যাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশের
স্থানীয় পুলিশকে আমাদের অর্থ দিতে হয়। ৫৯ বছর বয়সী মনিরুল জানান, ১৯৯০-এর
দশকের শুরুর দিকে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে কক্সবাজারে পাড়ি
জমান। এরপর তিনি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমান। মালয়েশিয়ায় নির্মাণ শ্রমিক
হিসেবে ৮ বছর কাজ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। মালয়েশিয়ায় ক্লান্তিকর ও
বিপজ্জনক কাজ করে তিনি খুশি ছিলেন না। সে সময় শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনার
দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত তার ওপর নির্যাতন করতো। মনিরুল মালয়েশিয়া
থেকে ফেরত এলেও, তার একমাত্র ছেলে এখনও মালয়েশিয়ায় থাকে। সেখানে ট্যাক্সি
চালিয়ে জীবন নির্বাহ করে সে। এরই মধ্যে মনিরুল কক্সবাজারে পাচারকারীদের
দালাল বনে যায়। তার ভাষ্য, এতে সহজে টাকা বানানো যায়। আমরা কাউকে মালয়েশিয়া
নিয়ে যেতে পারলে সাধারণত ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে পাই। এখান থেকে ২০ হাজার
টাকা আমার ভাগে জোটে। মনিরুল জানায়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ প্রভাবশালী
রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘুষ দিয়ে থাকে পাচারকারীরা। আমরা যদি তাদের টাকা না
দিই, তাহলে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। কক্সবাজারের উপকূলে বসবাস করে,
এমন প্রত্যেকে জানে যে, পুলিশ আমাদের সাহায্য করে। যদি আমরা তাদের টাকা না
দিই, তাহলে তারা আমাদের গ্রেপ্তার করবে। শুধু পুলিশ নয়, সীমান্তরক্ষী
বাহিনীকেও টাকা দিতে হয়। আল জাজিরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান
খান কামালের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে। কিন্তু তার কাছ থেকে কোন সাড়া
পাওয়া যায়নি বলে বলা হয় রিপোর্টে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)
কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান জানান,
কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত চর্চার প্রচলন রয়েছে বলে তার
জানা নেই। তার ভাষ্য, আমি এ ধরনের কথা এই প্রথম শুনেছি। পাচারকারীদের কাছ
থেকে আমাদের কর্মকর্তারা অর্থ নিচ্ছে, এমন প্রমাণ পাওয়া মাত্রই আমরা তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে গণকবরের
সন্ধান পাওয়ার পর থেকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভিবাসী সংকট ছিল বিশ্বব্যাপী
গণমাধ্যমগুলোর এ বছরের শিরোনাম। জাতিসংঘের মতে, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে
প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীকে নৌকায় করে পাচার করা হয়েছে। এর
মধ্যে প্রায় ৩০০ জন সাগরপথেই মারা গেছেন। যারা নৌকায় উঠেছিলেন, তারা
জানতেনই না, থাইল্যান্ডে নামলেই আরও প্রায় ২ হাজার ডলার মুক্তিপণ হিসেবে
পরিশোধ করতে হবে।
কক্সবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ পাচারকারীদের অনেক নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিজেও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে চেয়েছিলেন। মোহাম্মদও মুনিরুলের দাবিকে সমর্থন করে জানালেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ পাচার বাণিজ্য চালাতে দেয়ার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করে। তার মতে, মানব পাচারে জড়িত সিন্ডিকেটটি মূলত তিনটি পৃথক দলের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম দলটি গরিব রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের প্রলুব্ধ করে। মালয়েশিয়ায় বিশাল পরিমাণ আয়ের গল্প শুনিয়ে তাদের সহজেই প্রলুব্ধ করা যায়। এরপর দ্বিতীয় একটি দলের হাতে তুলে দেয়া হয় অভিবাসীদের। এ দলটি মাছ ধরার বিভিন্ন নৌকায় অভিবাসীদের তুলে নেয়। মোহাম্মদ বলেন, অন্তত ৮০-১০০ মানুষকে প্রতিটি ট্রলারে তুলে নেয়া হয়। সমুদ্রযাত্রায় নৌকায় মানুষকে নির্যাতনও করে দ্বিতীয় এ পক্ষ। থাইল্যান্ড বা প্রতিবেশী দেশের উপকূলে নৌকা পৌঁছামাত্রই আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের। তখন তাদের বন্দি হিসেবে আটকে রাখা হয়। নির্যাতন করে দেশে আত্মীয়স্বজনকে ফোন দিতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশে বা মিয়ানমারে দালালের কাছে আত্মীয়স্বজনরা মুক্তিপণ পরিশোধ করলেই কেবল তাদের মালয়েশিয়ার পথে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৯০ সাল থেকেই মালয়েশিয়াই অবৈধ অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্য। কিন্তু সামপ্রতিককালে মালয়েশিয়া যাত্রা হয়ে উঠেছে খুবই কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরণার্থী ও অভিবাসী চলাচল গবেষণা শাখার প্রতিষ্ঠাতা তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০১২ সালে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মানব পাচারকারীদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ, তারা উপলব্ধি করেছিলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা আরও অনেক বেশি অর্থ আয় করতে পারবে। সিদ্দিকী জানান, মানব পাচারকারী ও তাদের দালালরা বাংলাদেশের এমন মানুষকে বেশি টার্গেট করে, যারা জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বেকার বা ভূমিহীন মানুষদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কাজের লোভ দেখিয়ে রাজি করানো হয়। তিনি আরও দাবি করেন, যদি মুক্তিপণ পরিশোধ করতে কোন ভুক্তভোগী বা তার পরিবার ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে স্রেফ সাগরে ফেলে দেয়া হয়। যারা শেষ পর্যন্ত বেঁচে যান, তারা বিভিন্ন বাগান বা মাছ ধরার নৌকায় কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। সেখানে তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রেস্টলেস বিইং জানিয়েছে, সাগরে ও জঙ্গলের বন্দিশিবিরে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নারী-শিশুরা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা তারা নথিভুক্ত করেছেন। রেস্টলেস বিইংয়ের প্রতিষ্ঠাতা মাবরুর আহমেদ বলেন, মালয়, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মাছ ধরার বিভিন্ন নৌকার ব্যাপারে চুক্তি হয়। নৌকার দায়িত্ব মানব পাচারকারীদের হাতেই থাকে। দুই থেকে ছয়জন করে নারীদের কয়েকটি দলকে নৌকায় জোর করে তোলা হয়। সেখানে তাদের বহুদিন বন্দি করে রাখা হয়। রোহিঙ্গারা এ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় স্বেচ্ছায় অংশ নেয়। কেননা, তারা মিয়ানমারেও নির্যাতিত হয়। গণহারে গ্রেপ্তার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত, নিয়মিত নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। মাবরুর আহমেদ বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর উচিত মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করা। যাতে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমপ্রদায় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে।
কক্সবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ পাচারকারীদের অনেক নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিজেও মালয়েশিয়ায় ঢুকতে চেয়েছিলেন। মোহাম্মদও মুনিরুলের দাবিকে সমর্থন করে জানালেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ পাচার বাণিজ্য চালাতে দেয়ার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করে। তার মতে, মানব পাচারে জড়িত সিন্ডিকেটটি মূলত তিনটি পৃথক দলের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম দলটি গরিব রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের প্রলুব্ধ করে। মালয়েশিয়ায় বিশাল পরিমাণ আয়ের গল্প শুনিয়ে তাদের সহজেই প্রলুব্ধ করা যায়। এরপর দ্বিতীয় একটি দলের হাতে তুলে দেয়া হয় অভিবাসীদের। এ দলটি মাছ ধরার বিভিন্ন নৌকায় অভিবাসীদের তুলে নেয়। মোহাম্মদ বলেন, অন্তত ৮০-১০০ মানুষকে প্রতিটি ট্রলারে তুলে নেয়া হয়। সমুদ্রযাত্রায় নৌকায় মানুষকে নির্যাতনও করে দ্বিতীয় এ পক্ষ। থাইল্যান্ড বা প্রতিবেশী দেশের উপকূলে নৌকা পৌঁছামাত্রই আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের। তখন তাদের বন্দি হিসেবে আটকে রাখা হয়। নির্যাতন করে দেশে আত্মীয়স্বজনকে ফোন দিতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশে বা মিয়ানমারে দালালের কাছে আত্মীয়স্বজনরা মুক্তিপণ পরিশোধ করলেই কেবল তাদের মালয়েশিয়ার পথে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৯০ সাল থেকেই মালয়েশিয়াই অবৈধ অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্য। কিন্তু সামপ্রতিককালে মালয়েশিয়া যাত্রা হয়ে উঠেছে খুবই কঠিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরণার্থী ও অভিবাসী চলাচল গবেষণা শাখার প্রতিষ্ঠাতা তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০১২ সালে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মানব পাচারকারীদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ, তারা উপলব্ধি করেছিলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা আরও অনেক বেশি অর্থ আয় করতে পারবে। সিদ্দিকী জানান, মানব পাচারকারী ও তাদের দালালরা বাংলাদেশের এমন মানুষকে বেশি টার্গেট করে, যারা জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বেকার বা ভূমিহীন মানুষদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কাজের লোভ দেখিয়ে রাজি করানো হয়। তিনি আরও দাবি করেন, যদি মুক্তিপণ পরিশোধ করতে কোন ভুক্তভোগী বা তার পরিবার ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে স্রেফ সাগরে ফেলে দেয়া হয়। যারা শেষ পর্যন্ত বেঁচে যান, তারা বিভিন্ন বাগান বা মাছ ধরার নৌকায় কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। সেখানে তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রেস্টলেস বিইং জানিয়েছে, সাগরে ও জঙ্গলের বন্দিশিবিরে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নারী-শিশুরা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা তারা নথিভুক্ত করেছেন। রেস্টলেস বিইংয়ের প্রতিষ্ঠাতা মাবরুর আহমেদ বলেন, মালয়, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মাছ ধরার বিভিন্ন নৌকার ব্যাপারে চুক্তি হয়। নৌকার দায়িত্ব মানব পাচারকারীদের হাতেই থাকে। দুই থেকে ছয়জন করে নারীদের কয়েকটি দলকে নৌকায় জোর করে তোলা হয়। সেখানে তাদের বহুদিন বন্দি করে রাখা হয়। রোহিঙ্গারা এ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় স্বেচ্ছায় অংশ নেয়। কেননা, তারা মিয়ানমারেও নির্যাতিত হয়। গণহারে গ্রেপ্তার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত, নিয়মিত নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। মাবরুর আহমেদ বলেন, আসিয়ান দেশগুলোর উচিত মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করা। যাতে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমপ্রদায় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারে।
No comments