পাবনার বিএনপি রাজনীতি: ‘প্রকৃত বিএনপি’ বনাম ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’ by সরোয়ার মোর্শেদ
পাবনা জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ।
অভ্যন্তরীণ বিরোধে দুই পক্ষ সক্রিয় থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে কোনো পক্ষকে
সেভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায় না। একটি পক্ষ নিজেদের ‘প্রকৃত’ বিএনপি বলছে।
কেননা, কেন্দ্র থেকে তাদের কমিটি করা হয়েছে। অপর অংশটির দাবি, কেন্দ্রের
কমিটি স্বার্থবাদীদের নিয়ে করা। দলের প্রতি যাঁদের ‘ভালোবাসা’ আছে, তাঁদের
নিয়ে তারা করেছে ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’।
দলের জেলা কার্যালয় তিন বছর ধরে ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’র নিয়ন্ত্রণে। ‘প্রকৃত বিএনপি’র অফিস চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বাড়িতে।
বিএনপির সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে যা পাওয়া গেল তা হলো, গত তিন বছরে ‘প্রকৃত বিএনপি’ আর ‘বিএনপি রক্ষাকারীরা’ বিরোধ মিটিয়ে একটি সচল কমিটি করতে পারেনি। দুই অংশ আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। ফলে জাতীয় কর্মসূচিতে জেলার কোথাও প্রভাব ফেলতে পারেনি দলটি। বরং ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে সংগঠন।
২০০৯ সালের জুন মাসে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৭১ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান স্থান পাননি এই কমিটিতে। তিন বছর পর ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি কে এস মাহমুদকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণ কমিটি করা হয়। বাদ পড়া কামরুল হাসানসহ কয়েকজন ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ‘পাবনা জেলা বিএনপি রক্ষা কমিটি’ নামে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে সভাপতি হন সর্বশেষ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরদার ও সাধারণ সম্পাদক হন কামরুল হাসান। এরপর থেকে আলাদাভাবে চলতে থাকে দলীয় কর্মকাণ্ড। জেলা থেকে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা পর্যায়ে।
বিএনপির উভয় পক্ষের একাধিক নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই জেলায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা শক্ত হয়। ২০০০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর দুর্বল হতে থাকে বিএনপি। এখন জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। মূলত কামরুল হাসানের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কারণেই জেলায় বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত।
পাবনা শহরে দলের মূল কার্যালয় ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’র দখলে আছে। সেখানে যেতে পারছেন না ‘প্রকৃত বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শহরের দিলালপুর মহল্লায় শিমুল বিশ্বাসের একটি বাড়ি দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এক অংশ সকালে মিছিল-মিটিং করলে অপর অংশ করছে বিকেলে। বিগত আন্দোলন-কর্মসূচিও এভাবেই পালন করেছে তারা। টানা হরতাল-অবরোধে বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মসূচি পালন ছাড়া মাঠে ছিল না বিএনপি।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি রক্ষা কমিটি নামে কোনো কমিটির অস্তিত্ব নেই। বিএনপিকে রক্ষার দায়িত্ব একমাত্র দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার। নামকাওয়াস্তে একটি কমিটি গঠন করলেই দলকে ভালোবাসা হয় না। তিনি বলেন, খুব শিগগির দলের অঙ্গসংগঠনগুলো ও বিএনপির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। নতুন কমিটি গঠনের মধ্যমে ছোটখাটো যা সমস্যা আছে, তা সমাধান হয়ে যাবে।
বিএনপি রক্ষা কমিটির নেতা কামরুল হাসানের অভিযোগ, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত লোকজন নিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করেছিল। ফলে অনেক পরীক্ষিত নেতা-কর্মী দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। এসব নেতা-কর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এবং তাঁদের সংগঠিত রাখতেই বিএনপি রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
দলের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন, তাঁদের বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপিকে জানানো হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রই নেবে।
দল সম্পর্কে জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মূল্যায়ন হলো, বিএনপির দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অঙ্গসংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তা দায়ী। প্রায় ১০ বছর ধরে জেলা যুবদল, কৃষক দল, তাঁতী দল ও জাসাসের কমিটি করা হয় না। তিন বছর আগে ছাত্রদলের একটি আংশিক কমিটি করা হয়েছে। বিরোধের কারণে সেটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। জেলার ফরিদপুর, সাঁথিয়া, সুজানগর, ভাঙ্গুড়া ও আটঘরিয়ায় কোনো কর্মসূচি নেই। আংশিকভাবে ঈশ্বরদী, বেড়া ও চাটমোহরে কিছু কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
তবে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণে ও অধিকাংশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় আমরা তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। পুরো জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা করা হয়েছে।’
পাবনা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, হরতাল-অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচি পালনের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়। এতে জেলা বিএনপির শীর্ষ ৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
দলের জেলা কার্যালয় তিন বছর ধরে ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’র নিয়ন্ত্রণে। ‘প্রকৃত বিএনপি’র অফিস চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বাড়িতে।
বিএনপির সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে যা পাওয়া গেল তা হলো, গত তিন বছরে ‘প্রকৃত বিএনপি’ আর ‘বিএনপি রক্ষাকারীরা’ বিরোধ মিটিয়ে একটি সচল কমিটি করতে পারেনি। দুই অংশ আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। ফলে জাতীয় কর্মসূচিতে জেলার কোথাও প্রভাব ফেলতে পারেনি দলটি। বরং ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে সংগঠন।
২০০৯ সালের জুন মাসে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৭১ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান স্থান পাননি এই কমিটিতে। তিন বছর পর ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি কে এস মাহমুদকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণ কমিটি করা হয়। বাদ পড়া কামরুল হাসানসহ কয়েকজন ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ‘পাবনা জেলা বিএনপি রক্ষা কমিটি’ নামে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে সভাপতি হন সর্বশেষ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরদার ও সাধারণ সম্পাদক হন কামরুল হাসান। এরপর থেকে আলাদাভাবে চলতে থাকে দলীয় কর্মকাণ্ড। জেলা থেকে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা পর্যায়ে।
বিএনপির উভয় পক্ষের একাধিক নেতা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপরই জেলায় বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা শক্ত হয়। ২০০০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর দুর্বল হতে থাকে বিএনপি। এখন জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। মূলত কামরুল হাসানের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কারণেই জেলায় বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত।
পাবনা শহরে দলের মূল কার্যালয় ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’র দখলে আছে। সেখানে যেতে পারছেন না ‘প্রকৃত বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শহরের দিলালপুর মহল্লায় শিমুল বিশ্বাসের একটি বাড়ি দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এক অংশ সকালে মিছিল-মিটিং করলে অপর অংশ করছে বিকেলে। বিগত আন্দোলন-কর্মসূচিও এভাবেই পালন করেছে তারা। টানা হরতাল-অবরোধে বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মসূচি পালন ছাড়া মাঠে ছিল না বিএনপি।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি রক্ষা কমিটি নামে কোনো কমিটির অস্তিত্ব নেই। বিএনপিকে রক্ষার দায়িত্ব একমাত্র দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার। নামকাওয়াস্তে একটি কমিটি গঠন করলেই দলকে ভালোবাসা হয় না। তিনি বলেন, খুব শিগগির দলের অঙ্গসংগঠনগুলো ও বিএনপির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। নতুন কমিটি গঠনের মধ্যমে ছোটখাটো যা সমস্যা আছে, তা সমাধান হয়ে যাবে।
বিএনপি রক্ষা কমিটির নেতা কামরুল হাসানের অভিযোগ, একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত লোকজন নিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করেছিল। ফলে অনেক পরীক্ষিত নেতা-কর্মী দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। এসব নেতা-কর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এবং তাঁদের সংগঠিত রাখতেই বিএনপি রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
দলের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন, তাঁদের বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপিকে জানানো হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রই নেবে।
দল সম্পর্কে জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মূল্যায়ন হলো, বিএনপির দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অঙ্গসংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তা দায়ী। প্রায় ১০ বছর ধরে জেলা যুবদল, কৃষক দল, তাঁতী দল ও জাসাসের কমিটি করা হয় না। তিন বছর আগে ছাত্রদলের একটি আংশিক কমিটি করা হয়েছে। বিরোধের কারণে সেটিও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। জেলার ফরিদপুর, সাঁথিয়া, সুজানগর, ভাঙ্গুড়া ও আটঘরিয়ায় কোনো কর্মসূচি নেই। আংশিকভাবে ঈশ্বরদী, বেড়া ও চাটমোহরে কিছু কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
তবে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের দমন-পীড়ন নীতির কারণে ও অধিকাংশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় আমরা তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। পুরো জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা করা হয়েছে।’
পাবনা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, হরতাল-অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচি পালনের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়। এতে জেলা বিএনপির শীর্ষ ৫০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
No comments