কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু ৮
টানা
বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায়
পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে পাহাড় ও বাড়ির দেয়াল ধসে মারা গেছেন ছয়জন। অপরদিকে
সেন্টমার্টিনে নারিকেল গাছচাপা পড়ে মারা গেছে এক মা ও শিশু। পাহাড় ধসে আহত
হয়েছে আটজন। চকরিয়ায় একজন, রামুতে দুইজন পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে।
বন্যায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে পাহাড় ও বাড়ির দেয়াল ধঘসে মারা গেছে ছয়জন। অপরদিকে
সেন্টমার্টিনে নারিকেল গাছচাপা পড়ে মারা গেছে এক মা ও শিশু। পাহাড় ধসে আহত
হয়েছে আটজন। চকরিয়ায় একজন, রামুতে দুইজন পানিতে ভেসে নিখোঁজ রয়েছে। পাহাড়ি
ঢলের পানিতে জেলার রামু, চকরিয়া, সদর, পেকুয়াসহ আট উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের
দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানি বন্দী হয়েছে অন্তত ১০ লাখ মানুষ।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস জানিয়েছেন, উপজেলার
কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা, কাউয়াখোপ ও জোয়ারিয়া নালা এলাকায় ঢলের পানিতে ভেসে
গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- খতিজা বেগম (৩৫), হালিমা বেগম
(২৭), মোহাম্মদ রিদুয়ান (৬) ও জুনু মিয়া (৬০)। এদের বৃহস্পতিবার বিকেলে
দুইজন ও শুক্রবার সকালে দুইজন পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে
তাদের মৃতুদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কাউয়াখোপ এলাকায় মাটির দেয়াল ধসে আমির
হোসেন (৪০) নামের অপর একজন মারা গেছে। তিনি জানান, রামু উপজেলার আটটি
ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাকখালীনদীর ঢলের তোড়ে রামু সদরের
হাইটুপি বেড়িবাধ ভেঙে গেছে। গত চার দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার
বাঁকখালী, মাতামুহুরিসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান জাফর আলম জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানির
তোড়ে চকরিয়া পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ এবং ৮ নং ওয়ার্ডের কোচপাড়ার
বেড়িবাঁধ ভেঙে মাতামুহুরী নদীর পানিতে পৌরসভার ৫০ ভাগ এলাকা পানিতে প্লাবিত
হয়েছে। এছাড়া চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে
জানিয়েছেন তিনি। সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান,
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে। শুক্রবার সকালে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় অসংখ্য গাছপালা ও ঘরবাড়ি উপড়ে
গেছে। এতে নারিকেল গাছ চাপাপড়ে মারা গেছে এক মা ও শিশু। নিহতরা হলেন
সেন্টমার্টিনের কোনারপাড়ার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও
তাদের শিশু পুত্র মোহাম্মদ জিশান (৪)। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে
সেন্টমার্টিনে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে। এতে বহু গাছপালা, বাড়ি ঘর ও
মসজিদ মাদরাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ো হাওয়ায় নারিকেল গাছচাপা পড়ে মা ও শিশু
মারা যায়। এতে বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু দ্বীপের হাসপাতালে কোনো
ডাক্তার না থাকায় আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সপ্তাহ ধরে ভারি বর্ষণ ও
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায়
খাদ্য সংকটে পড়েছে দ্বীপবাসী। চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান জাফর আলম
জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে চকরিয়া পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ
এবং ৮ নং ওয়ার্ডের কোচপাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে মাতামুহুরী নদীর পানিতে পৌরসভার
৫০ ভাগ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কক্সবাজার সদর উপজেলার
চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ জানান, সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বন্যা
পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। দুপুরে শহরের দক্ষিণ ঘোনারপাড়া এলাকার পাহাড় ধসে
মো. আবছার (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দুই শিশুসহ আহত হয়েছে
ছয়জন। দুপুর আড়াইটার দিকে বসতঘরের উঠোনো খেলা করার সময় আকস্মিকভাবে পাহাড়ের
একাংশ ধসে পড়ে। এতে শিশু আবছারসহ চারজন মাটির নিচে চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়
লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু আবছারকে
মৃত ঘোষণা করে। আহত অপর তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে
কক্সবাজার শহরের ফাতেরঘোনা এবং সাহিত্যিাকা পল্লী এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের
ঘটনায় আরো চারজন আহত হয়েছে। তাদেরকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত
অবস্থায় চিকিৎসাধীনরা হলেন- জয়নাব বেগম, মো. সাগর, আব্দুল মান্নান, শিশু
উম্মে উর্মিলা, শিশু ইছমত আরা ও সাহারা খাতুন। এদিকে কক্সবাজার টেকনাফ মহা
সড়কের লিংকরোড, রামুসহ কয়েকটি পয়েন্টে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায়
২য় দিনের মতো যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন
ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড়ের মাটি ও গাছ সড়কের ওপর ধসে পড়ায় যান
চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অপরদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায়
রামু-মরিচ্যা সড়ক ও রামু-পাবত্য নাইক্যংছড়ি সড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ভারি বৃষ্টিতে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার প্রধান সড়ক,
ঈদগাও কয়েকটি সড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে। বন্ধ আছে কক্সবাজার-মহেশখালী
নৌপথও। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রামু-মরিচ্যা সড়ক ও রামু-পাবত্য
নাইক্যংছড়ি সড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকের ঘর-বাড়ি পাহাড়ি ঢল ও
জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। ভেসে গেছে চিংড়ি ঘেরসহ ফসল।
No comments