সাঈদ অপহরণ ও খুনের নেতৃত্বে সোর্স গেদা মিয়া by ওয়েছ খছরু
পুলিশি
রিমান্ডে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্কুলছাত্র সাঈদ হত্যার আসামি পুলিশের
সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়া। পরিকল্পনা, অপহরণ, হত্যা, মুক্তিপণ দাবি-
সবকিছুতেই সরাসরি জড়িত ছিল সে। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হবে। সাঈদ হত্যা
মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালও উত্তাল ছিল সিলেট
নগরী। এই দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা।
তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, আলোচিত এ ঘটনায় এ পর্যন্ত যে দুইজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা ঘটনার মূল হোতা হিসেবে র্যাবের কথিত সোর্স গেদাকেই চিহ্নিত করেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পুলিশি হেফাজতে থাকা গেদা চারদিন পর অবশেষে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। এমনকি গ্রেপ্তারের পর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদেও সে ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। আলোচিত সোর্স গেদার চালাকিতে খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই হতভম্ব। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার পরদিনই পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান ও সোমবার ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু গেদা কোনভাবেই ঘটনা স্বীকার করতে চায় না। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
নগরীর জিন্দাবাজারের একটি রেস্তরাঁয় বসে অপহরণের পরিকল্পনা হয়েছিলো। এ সময় গেদা ও মাছুম উপস্থিত ছিলো। খুনের সময়ও গেদা ও মাছুম সরাসরি ছিল। আদালতে দেয়া রাকিব ও এবাদুরের স্বীকারোক্তি থেকে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাছুম পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ গ্রেপ্তার হয়েও গেদা সবকিছু বলছে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই ফয়েজ আহমদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গেদা পরিকল্পনা, অপহরণ, হত্যা, মুক্তিপণ দাবি সব কিছুতেই সরাসরি জড়িত ছিল। কিন্তু গত চারদিন সে এসব ব্যাপারে মুখ খুলেনি। গতকাল পুলিশের কাছে কিছুটা মুখ খুলেছে। ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। যদি সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তাহলে তার রিমান্ড চাওয়া হবে না। নতুবা তার রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
পুলিশ ও র্যাবের কথিত সোর্স গেদা মিয়া নিজেই আইন সম্পর্কে অবগত। এ কারণে সে শুরু থেকেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে নিজেকে আড়াল করার অপচেষ্টা চালায়। এদিকে, আদালতে দেয়া ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের ও পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের জবানবন্দি থেকে স্পষ্ট বুঝা গেছে, পরিকল্পনা, অপহরণ, খুন ও মুক্তিপণ দাবি চারটিতেই গেদা ও মাছুম সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। এমনকি অপহরণের সময় গেদা কৌশলে সাঈদকে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। নিজে মোটরসাইকেল ড্রাইভ করেছিল। আর ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মাছুম তার মুখ চেপে ধরেছিলো। প্রথমে সাঈদকে নিয়ে গেদার বাসায় যাওয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যের বাসায় নেয়া হয়। সিলেটে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ করে থেমে থাকেনি ঘাতকরা। মোবাইল ফোনে তারা সাঈদের মামাতো ভাই সৌরভ ও আবু মুসাকেও অপহরণ করা হবে বলে এসএমএস পাঠিয়ে হুমকি দেয়।
সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন বলেন, বুধবার সাঈদ অপহৃত হওয়ার পর অপহরণকারীরা তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শুক্রবার অপহরণকারীদের একজন ফোনে জানায় তার মা অসুস্থ, টাকার প্রয়োজন। ২ লাখ টাকা পেলেই তারা সাঈদকে ছেড়ে দেবে। টাকা নিয়ে তারা পর্যায়ক্রমে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, আম্বরখানাস্থ চায়না মার্কেটে, বাদাঘাট এবং সর্বশেষ ওসমানী বিমানবন্দর সংলগ্ন বাইশটিলায় যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর অপহরণকারীরা ফোনে জানায়, পুলিশকে অবগত করায় তারা সাঈদকে খুন করে ফেলবে। পরে শনিবার সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানায়, মুক্তিপণের টাকা না পেলে তারা তার ছেলে সৌরভ ও ভাতিজা আবু মুসাকেও অপহরণ করবে।
এদিকে আবু সাঈদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কুমারপাড়ায় ঝরনা তরুণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে হাজী শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, সবুজ সংঘ সোনাতুলা এলাকাবাসী, বসুন্ধরা সমাজকল্যাণ সংস্থা, মোহনা সাংস্কৃতিক সংঘ এমসি কলেজ, সুনামগঞ্জ সমিতি, মিতালী আবাসিক এলাকা, এভারগ্রীন সমাজকল্যাণ সংস্থা, রোটারেক্ট ক্লাব এমসি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আবু সাঈদ হত্যারকারীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হলে আর কোন স্কুলছাত্রকে অপহরণ করার সাহস পাবে না অপহরণকারীরা। শিশু আবু সাঈদের কি দোষ ছিল তাকে হত্যা করা হলো? আর যাতে কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কোন স্কুলছাত্র যেন পুলিশের হাতে অপহরণ না হয় সে জন্য পুলিশসহ জড়িতদের অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকরের আহ্বান জানানো হয় মানববন্ধনে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ঝরণা তরুণ সংঘের সভাপতি লায়ন সাজুওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমদ এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমতিয়াজের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. জাকারিয়া মালিক চৌধুরী, হাজী শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজমুল ইসলাম এহিয়া, সহ-সভাপতি শওকত আমীন জাহিদ, সদস্য দোলোয়ার হোসেন, রাজা, ঝরনা তরুণ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন আহমদ, এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি শফিকুর রহমান আলকাস, ফাত্তাহ আহমদ, সংঘের অর্থ সম্পাদক আফছর আহমদ, সহ-অর্থ সম্পাদক হানিফ আহমদ, ক্রীড়া সম্পাদক আলমগীর আহমদ, দপ্তর সম্পাদক কাওছার আহমদ, পাঠাগার সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ, কার্যকরী কমিটির সদস্য মাছুম আহমদ, অলিউর রহমান, আরিফ আহমদ, শাফীন আহমদ, আবেদ আহমদ, তোফায়েল আহমদ, আকতার আহমদ, রুহেল আহমদ, শাহিন আহমদ, মাছুম আহমদ, ফাহাল আহমদ, বাপ্পি আহমদ, শাহ আলম, সোহেল, কবির, সাহিন, সাহান, ইমন, শিমুল আহমদ, লোকমান আহমদ, মিলাদ আহমদ, রিফাত, সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র এজেন্ট ইসমাইল হোসেন, আলমগীর হোসেন, সবুজ সংঘের ইমন, ওলিউর রহমান, লোকমান, গোলাপ, গুলজার, উপদেষ্টা সামছুল ইসলাম নুজাই, এভারগ্রীন সমাজকল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা তারেক আহমদ খান, অনুশীলন একাডেমির পরিচালক শিব্বির তালুকদার, কেমব্রিজ গ্রামার স্কুলের পরিচালক মো. আবুল কালাম, বসুন্ধরা সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সালাউদ্দিন আহমদ মামুন, শিপলু আহমদ, শোয়েব আহমদ, রুবেল ইসলাম, সাঈদ হোসেন, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান সোহান, আশরাফুল ইসলাম, মোবারক হোসেন ফাত্তাহ, ছামন, রুকন, আলমগীর, খোকন, অগ্রগামী স্কুলের মাঈদুল ইসলাম, শাহী ঈদগাহ ব্যবসায়ী সমিতির জুনেদ ওয়াকিক, সুনামগঞ্জ সমিতির মো. আলীকুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, দেলোয়ার, জয়নাল আহমদ, কবীর আহমদ, এখলাছুর রহমান, মো. নান্নু মিয়া প্রমুখ।
বিকালে বৃহত্তর সিলেট গণদাবি পরিষদ (তৃণমূল) কেন্দ্রীয় ও সিলেট জেলা কমিটি নগরীর সুরমা ম্যানশনস্থ সংগঠনের কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ আখলাক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহমদের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট শামীম হাসান চৌধুরী, সহ-সভাপতি আছমা বেগম, মো. ইয়াওর বক্ত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আহমদ সুজন, সদস্য আবুল খায়ের চৌধুরী, আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী, কামরান আহমদ, লাইলী বেগম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদ প্রমুখ। স্কুলছাত্র সাঈদ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ফাঁসির দাবি জানান। বক্তারা দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে ঝরনারপাড় এলাকার বাসিন্দা ও সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র এজেন্ট ইসমাইল হোসেন বলেন, শিশু সাঈদ অপহরণ ও খুনের ঘটনা ভুলতে পারছে না এলাকাবাসী। লাশ উদ্ধারের দিন থেকে ঘরে ঘরে শোকাহত মানুষ। কোন সান্ত্বনার ভাষা নেই কারও কাছে। শোকাতুর মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ। আর এতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকে অনেকটা আতংক বিরাজ করছে এলাকায়। অভিভাবকরা হয়ে পড়ছেন চিন্তিত। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সন্তানদের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না।
তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, আলোচিত এ ঘটনায় এ পর্যন্ত যে দুইজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা ঘটনার মূল হোতা হিসেবে র্যাবের কথিত সোর্স গেদাকেই চিহ্নিত করেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পুলিশি হেফাজতে থাকা গেদা চারদিন পর অবশেষে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। এমনকি গ্রেপ্তারের পর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদেও সে ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। আলোচিত সোর্স গেদার চালাকিতে খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই হতভম্ব। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার পরদিনই পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান ও সোমবার ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু গেদা কোনভাবেই ঘটনা স্বীকার করতে চায় না। এ কারণে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
নগরীর জিন্দাবাজারের একটি রেস্তরাঁয় বসে অপহরণের পরিকল্পনা হয়েছিলো। এ সময় গেদা ও মাছুম উপস্থিত ছিলো। খুনের সময়ও গেদা ও মাছুম সরাসরি ছিল। আদালতে দেয়া রাকিব ও এবাদুরের স্বীকারোক্তি থেকে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাছুম পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ গ্রেপ্তার হয়েও গেদা সবকিছু বলছে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই ফয়েজ আহমদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গেদা পরিকল্পনা, অপহরণ, হত্যা, মুক্তিপণ দাবি সব কিছুতেই সরাসরি জড়িত ছিল। কিন্তু গত চারদিন সে এসব ব্যাপারে মুখ খুলেনি। গতকাল পুলিশের কাছে কিছুটা মুখ খুলেছে। ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। যদি সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তাহলে তার রিমান্ড চাওয়া হবে না। নতুবা তার রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
পুলিশ ও র্যাবের কথিত সোর্স গেদা মিয়া নিজেই আইন সম্পর্কে অবগত। এ কারণে সে শুরু থেকেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে নিজেকে আড়াল করার অপচেষ্টা চালায়। এদিকে, আদালতে দেয়া ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের ও পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের জবানবন্দি থেকে স্পষ্ট বুঝা গেছে, পরিকল্পনা, অপহরণ, খুন ও মুক্তিপণ দাবি চারটিতেই গেদা ও মাছুম সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। এমনকি অপহরণের সময় গেদা কৌশলে সাঈদকে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। নিজে মোটরসাইকেল ড্রাইভ করেছিল। আর ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক মাছুম তার মুখ চেপে ধরেছিলো। প্রথমে সাঈদকে নিয়ে গেদার বাসায় যাওয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যের বাসায় নেয়া হয়। সিলেটে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে অপহরণ করে থেমে থাকেনি ঘাতকরা। মোবাইল ফোনে তারা সাঈদের মামাতো ভাই সৌরভ ও আবু মুসাকেও অপহরণ করা হবে বলে এসএমএস পাঠিয়ে হুমকি দেয়।
সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন বলেন, বুধবার সাঈদ অপহৃত হওয়ার পর অপহরণকারীরা তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শুক্রবার অপহরণকারীদের একজন ফোনে জানায় তার মা অসুস্থ, টাকার প্রয়োজন। ২ লাখ টাকা পেলেই তারা সাঈদকে ছেড়ে দেবে। টাকা নিয়ে তারা পর্যায়ক্রমে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, আম্বরখানাস্থ চায়না মার্কেটে, বাদাঘাট এবং সর্বশেষ ওসমানী বিমানবন্দর সংলগ্ন বাইশটিলায় যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পর অপহরণকারীরা ফোনে জানায়, পুলিশকে অবগত করায় তারা সাঈদকে খুন করে ফেলবে। পরে শনিবার সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানায়, মুক্তিপণের টাকা না পেলে তারা তার ছেলে সৌরভ ও ভাতিজা আবু মুসাকেও অপহরণ করবে।
এদিকে আবু সাঈদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কুমারপাড়ায় ঝরনা তরুণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে হাজী শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, সবুজ সংঘ সোনাতুলা এলাকাবাসী, বসুন্ধরা সমাজকল্যাণ সংস্থা, মোহনা সাংস্কৃতিক সংঘ এমসি কলেজ, সুনামগঞ্জ সমিতি, মিতালী আবাসিক এলাকা, এভারগ্রীন সমাজকল্যাণ সংস্থা, রোটারেক্ট ক্লাব এমসি কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আবু সাঈদ হত্যারকারীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হলে আর কোন স্কুলছাত্রকে অপহরণ করার সাহস পাবে না অপহরণকারীরা। শিশু আবু সাঈদের কি দোষ ছিল তাকে হত্যা করা হলো? আর যাতে কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কোন স্কুলছাত্র যেন পুলিশের হাতে অপহরণ না হয় সে জন্য পুলিশসহ জড়িতদের অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকরের আহ্বান জানানো হয় মানববন্ধনে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ঝরণা তরুণ সংঘের সভাপতি লায়ন সাজুওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন আহমদ এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমতিয়াজের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. জাকারিয়া মালিক চৌধুরী, হাজী শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজমুল ইসলাম এহিয়া, সহ-সভাপতি শওকত আমীন জাহিদ, সদস্য দোলোয়ার হোসেন, রাজা, ঝরনা তরুণ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন আহমদ, এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি শফিকুর রহমান আলকাস, ফাত্তাহ আহমদ, সংঘের অর্থ সম্পাদক আফছর আহমদ, সহ-অর্থ সম্পাদক হানিফ আহমদ, ক্রীড়া সম্পাদক আলমগীর আহমদ, দপ্তর সম্পাদক কাওছার আহমদ, পাঠাগার সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ, কার্যকরী কমিটির সদস্য মাছুম আহমদ, অলিউর রহমান, আরিফ আহমদ, শাফীন আহমদ, আবেদ আহমদ, তোফায়েল আহমদ, আকতার আহমদ, রুহেল আহমদ, শাহিন আহমদ, মাছুম আহমদ, ফাহাল আহমদ, বাপ্পি আহমদ, শাহ আলম, সোহেল, কবির, সাহিন, সাহান, ইমন, শিমুল আহমদ, লোকমান আহমদ, মিলাদ আহমদ, রিফাত, সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র এজেন্ট ইসমাইল হোসেন, আলমগীর হোসেন, সবুজ সংঘের ইমন, ওলিউর রহমান, লোকমান, গোলাপ, গুলজার, উপদেষ্টা সামছুল ইসলাম নুজাই, এভারগ্রীন সমাজকল্যাণ সংস্থার উপদেষ্টা তারেক আহমদ খান, অনুশীলন একাডেমির পরিচালক শিব্বির তালুকদার, কেমব্রিজ গ্রামার স্কুলের পরিচালক মো. আবুল কালাম, বসুন্ধরা সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সালাউদ্দিন আহমদ মামুন, শিপলু আহমদ, শোয়েব আহমদ, রুবেল ইসলাম, সাঈদ হোসেন, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান সোহান, আশরাফুল ইসলাম, মোবারক হোসেন ফাত্তাহ, ছামন, রুকন, আলমগীর, খোকন, অগ্রগামী স্কুলের মাঈদুল ইসলাম, শাহী ঈদগাহ ব্যবসায়ী সমিতির জুনেদ ওয়াকিক, সুনামগঞ্জ সমিতির মো. আলীকুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, দেলোয়ার, জয়নাল আহমদ, কবীর আহমদ, এখলাছুর রহমান, মো. নান্নু মিয়া প্রমুখ।
বিকালে বৃহত্তর সিলেট গণদাবি পরিষদ (তৃণমূল) কেন্দ্রীয় ও সিলেট জেলা কমিটি নগরীর সুরমা ম্যানশনস্থ সংগঠনের কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ আখলাক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহমদের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট শামীম হাসান চৌধুরী, সহ-সভাপতি আছমা বেগম, মো. ইয়াওর বক্ত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আহমদ সুজন, সদস্য আবুল খায়ের চৌধুরী, আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী, কামরান আহমদ, লাইলী বেগম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদ প্রমুখ। স্কুলছাত্র সাঈদ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ফাঁসির দাবি জানান। বক্তারা দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে ঝরনারপাড় এলাকার বাসিন্দা ও সিলেটের প্রাচীনতম সংবাদপত্র এজেন্ট ইসমাইল হোসেন বলেন, শিশু সাঈদ অপহরণ ও খুনের ঘটনা ভুলতে পারছে না এলাকাবাসী। লাশ উদ্ধারের দিন থেকে ঘরে ঘরে শোকাহত মানুষ। কোন সান্ত্বনার ভাষা নেই কারও কাছে। শোকাতুর মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ। আর এতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থেকে অনেকটা আতংক বিরাজ করছে এলাকায়। অভিভাবকরা হয়ে পড়ছেন চিন্তিত। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সন্তানদের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না।
No comments