আমরা মানুষকে সর্বোচ্চ মত প্রকাশের সুযোগ দিতে চাই -মার্ক জাকারবার্গ
আজ
আমরা আমাদের সর্বশেষ ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ
করেছি। একই সঙ্গে হালনাগাদ করেছি আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ড। প্রথম রিপোর্টে
২০১৪ সালের শেষার্ধে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সরকারগুলোর কাছ থেকে পাওয়া অনুরোধের
তালিকা আছে। দ্বিতীয়টিতে রয়েছে, আমাদের কমিউনিটিতে আপনি কি শেয়ার করতে
পারবেন তার নিয়ম আর সীমাবদ্ধতা নিয়ে স্পষ্ট বিবরণ। আমরা সব থেকে কঠিন আর
গুরুত্বপূর্ণ যেসব ইস্যু মোকাবিলা করি তার মধ্যে অন্যতম হলো মুক্ত মতপ্রকাশ
আর সরকারগুলো কিভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে
সেগুলো। কোন কন্টেন্ট আমরা সরিয়ে ফেলি, কোন বিতর্কিত কন্টেন্ট আমরা রেখে
দেই এবং কেন মানুষ তা ন্যায়সঙ্গতভাবেই জানতে চায়। আমাদের কমিউনিটির জন্য
আমি গভীর যত্নসহকারে এবং চিন্তা-ভাবনা করে এটা করার দায়িত্ব বোধ করি।
আমাদের দর্শন ব্যাখ্যা করার জন্য এটা আমার কাছে একটা ভাল সুযোগ। আমাদের
মিশন হলো মানুষকে শেয়ার করার ক্ষমতা দেয়া এবং বিশ্বকে আরও বেশি মুক্ত এবং
সংযুক্ত করা। আপনার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা শেয়ার করতে আপনাকে সুযোগ
দিতেই আমরা রয়েছি- সেটা হতে পারে আপনার পরিবারের ছবি থেকে শুরু করে বিশ্ব
নিয়ে আপনার মতামত।
আমরা বিশ্বাস করি আপনি যত ভালভাবে শেয়ার করতে পারবেন আর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারনে, আমাদের সমাজ ততটাই প্রগতি অর্জন করবে। সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে, আরও বেশি চাকরি আর ব্যবসা সৃষ্টি হচ্ছে আর মানুষের মুল্যবোধ নিয়ে সরকার আরও ভালভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারছে। মানুষ কি শেয়ার করতে পারবে তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে যত জটিল সব প্রশ্ন উঠছে সে প্রেক্ষিতে আমাদের দিক-নিদের্শনামূলক একটামাত্র নীতি রয়েছে। সেটা হলো- আমরা বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ (মোস্ট ভয়েস) দিতে চাই। মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা কোন চূড়ান্ত অবস্থা নয়। এটা এমন বিষয় নয় যে, আপনার মতপ্রকাশের সুযোগ আছে বা আপনার নেই। এটা কালো বা সাদা নয়। আপনার যখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে, আপনার অনেক বেশি মত প্রকাশের সুযোগ আছে। আপনার যখন শেয়ার করার জন্য অপেক্ষাকৃত উন্নত মাধ্যম আছে আপনার আরও বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ আছে। আপনার বাকস্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করতে যখন অপেক্ষাকৃত কম আইন থাকে তখন আপনার অপেক্ষাকৃত বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। নিজেকে প্রকাশের জন্য যখন আপনাকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সহিংসতার ভয়ে বাস করতে না হয় তখন আপনার বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। আরও বেশি মানুষকে আরও বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা প্রতিদিন কাজ করি। এর অর্থ হলো ইন্টারনেট ডট ওআরজি- এর মাধ্যমে বিশ্বের সবাইকে সংযুক্ত করা যেন এখনও সংযোগের বাইরে থাকা দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আপনার মতো যোগাযোগের সামর্থ্য পেতে পারে। এর অর্থ হলো, ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা গড়ে তোলা যেন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু আপনি সহজে শেয়ার করতে পারেন। এর অর্থ হলো আপনাকে বলপ্রয়োগ আর হয়রানি থেকে রক্ষা করা যেন আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে নিরাপদ বোধ করতে পারেন। আর এর অর্থ হলো আপনাকে সেন্সর আর সীমাবদ্ধ করতে সরকারের অবৈধ অনুরোধগুলো ফিরিয়ে দেয়া। আদর্শ একটি বিশ্বে আমাদের ইচ্ছামতো সবকিছু স্বাধীন ও নিরাপদভাবে প্রকাশ করতে আমরা প্রত্যেকে শক্তিশালী বোধ করবো। বাস্তবে, সেক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ প্রতিটি দেশে আইন রয়েছে যা জননিরাপত্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ রক্ষার্থে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় শেয়ারে নিবারিত করে। কিন্তু তারা যদি এমনটা নাও করতো তারপরও আমাদেরকে প্রকাশ করার জন্য এবং আমাদের ইচ্ছামতো কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো নিখুঁত কোন মাধ্যম এখনও নেই। কাজেই আমরা এরপরও সীমাবদ্ধই থাকতাম। যদি নিখুঁত কোন ব্যব্যস্থা থাকতোও তাহলেও বেশির ভাগ মানুষ সেটা ব্যবহার কতে পারতো না যেহেতু বিশ্ব জনসংখ্যার বেশির ভাগেরই ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এমনকি যে কোন কিছু প্রকাশে আমাদের প্রত্যেকেরই যদি ওই নিখুঁত মাধ্যম, ইন্টারনেট আর আইনি অধিকার থাকতো তারপরও হয়তো মানুষ হয়রানি, সহিংসতা, সন্ত্রাস বা স্রেফ অস্বস্তিকর সামাজিক পরিস্থিতির ভয়ে নিজেদেরকে সেন্সর করতো। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের যে ধরনের মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত তেমনটা হওয়ার আগে আমাদের অনেক কাজ করার আছে। পরবর্তী ৪০০ কোটি মানুষের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের কাজ নিয়ে অতীতে আমি ব্যাপক লেখা লেখি করেছি। অপারেটরদের সঙ্গে যৌথ অংশিদারিত্বে বেসিক ইন্টারনেট সেবা বিনামূল্যে দেয়ার প্রস্তাব থেকে শুরু করে সরাসরি সংযোগ দিতে স্যাটেলাইট ও বিমান নকশা নিয়ে লিখেছি। এছাড়াও আমি আমাদের সকল অ্যাপ এবং সেবা নিয়ে আলোচনা করেছি যা আপনাকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শেয়ার করার ক্ষমতা দেয়- ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) থেকে পাবলিক (সবার জন্য উন্মুক্ত), ঘনিষ্ঠ গ্রুপ থেকে বৃহত পরিসরের কমিউনিট, স্রেফ টেক্সট থেকে সমৃদ্ধ ছবি, ভিডিও আর ছবি পর্যন্ত। আমার এ লেখার বাকি অংশে আমি মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতার ওপরে মনোযোগ দেবো। আমরা নিরাপদ এবং সম্মানজনক একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করি যেখানে আপনি সবসময় থাকতে এবং মতপ্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এ কারণে আমাদের কমিউনিটিজুড়ে বেসিক আইন প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ড রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতার হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের বার্তাগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। একজন ব্যক্তির মতপ্রকাশ হয়তো অনেকের মতপ্রকাশের সুযোগ অন্যায়ভাবে সীমাবদ্ধ করতে পারে এগুলো তার উদাহরণ। এ কারণে, বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আমরা এসব কন্টেন্ট অনুমোদন না দেয়া বেছে নিয়েছি। আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ডের আজকের আপডেটে এসব নীতিমালা নিয়ে আরও বিস্তারিত রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে ফেসবুকে কোন বিষয়গুলো শেয়ার করা গ্রহণযোগ্য নয় সেগুলোর ব্যাখ্যা এবং উদাহরণসমূহ। আমাদের নীতিমালাগুলো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা যেসব ভিন্ন আইনি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে কাজ করি সে বিষয়গুলোতে আমাদের নজর দেয়া প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রকাশে সীমাবদ্ধতা দিয়ে আইন রয়েছে প্রতিটি দেশে। আর এগুলো প্রায়ই সংস্কৃতি ও ইতিহাসের আলোকে আকার পেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ হলোকাস্টের বিষয়টি অস্বীকার করা জার্মানিতে নিষিদ্ধ। কামাল আতাতুর্ককে অবমাননা করে এমন কিছু তুরস্কে অবৈধ। অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্ম অবমাননাকর বিষয়গুলো নিষিদ্ধ। সরকারগুলো মাঝে-মধ্যে তাদের দৃষ্টিতে অবৈধ কন্টেন্ট আমাদেরকে সরিয়ে ফেলতে বলে। কিন্তু সেটা আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ড লঙ্ঘন করে না। আমরা এসব সরকারি আদেশ সংক্রান্ত তথ্য আমাদের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্টে’ সন্নিবেশ করে থাকি। অপ্রয়োজনীয় বা অনধিকার সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে আমাদের কমিউনিটিকে রক্ষা করতে আমরা লড়াই করি। ফেসবুক এটা নতুন ধরনের সেবা। সে কারণে আমাদের এমন কিছু নিয়ম-কানুনের মুখোমুখি হতে হয় যেগুলোর তেমন কোন অতীত দৃষ্টান্ত নেই। আমরা এটা নিশ্চিত করি যে, শুধু আইনি এবং প্রয়োজনীয় সরকারি দাবিতেই আমরা সম্মত হচ্ছি। আমাদেরকে যদি একটি দেশে নিষিদ্ধ কোন কিছু ব্লক করতে হয় তাহলে আমরা সাধারণত সেগুলো বাকি বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা করি যেন শেয়ার করা মতপ্রকাশে সীমাবদ্ধতা কম রাখা যায়। মানুষের শেয়ার করা বিষয়বস্তু কিভাবে সরকারগুলো সীমাবদ্ধ করে আমরা সেটাও প্রকাশ করতে কাজ করি। আর সে কারণেই আমরা ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্ট’ প্রকাশ করি। অনেকে বলেন, মানুষের মতপ্রকাশ সীমাবদ্ধ করার সরকারি আদেশ আমাদের উপেক্ষা করা উচিত। যদি তাতে ওইসব দেশে এ সেবাটা বন্ধ করে দেয়া হয় তারপরও সরাকারি আদেশ উপেক্ষা করা উচিত বলে অনেকে বলে থাকেন। আমি মনে করি না এটা সঠিক। আমি বিশ্বাস করি এসব দেশের লাখ লাখ মানুষ যারা প্রতিদিন বন্ধু-স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য ফেসবুকের ওপর নির্ভর করেন তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যদি আইনি কোন সরকারি আদেশ উপেক্ষা করি আর এরপর আমাদের ব্লক করে দেয়া হয়, তাহলে এত মানুষের কণ্ঠ শব্দহীন হয়ে যাবে। আর তাছাড়া, সরকার যে কন্টেন্ট অবৈধ বলে বিশ্বাস করে তা এমনিতেই ব্লক করা দেয়া হবে। বিষয়টা হলো বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়া। অন্যরা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, ফেসবুক ব্লক হয়ে গেলে স্বল্প মেয়াদে মানুষের মতপ্রকাশের সুযোগ কমে যাবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একটি দেশ তাদের আইন পরিবর্তন করতে পারে। দুঃখজনক হলেও কোন দেশ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার পর সে দেশে মতপ্রকাশ সীমাবদ্ধকরণ আইন পরিবর্তনের নজির তেমন একটা নেই। পক্ষান্তরে, এমন বহু উদাহরণ রয়েছে কিভাবে মানুষকে যোগাযোগ আর শেয়ারের সুযোগ দিলে তা সমাজের উন্নতিতে সহায়ক হয়। বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ করে দিতে আমাদের যে দর্শন তা বিশ্বকে সংযুক্ত করতে আমাদের মিশন থেকে অনুপ্রাণিত, আমাদের ব্যবসা নয়। আজ কয়েকটি দেশে আমরা ব্লকড। আর তারপরও আমাদের ব্যবসা বেশ ভালই চলছে। আরও কিছু দেশে যদি আমাদের ব্লক করে দেয়া হয়, এটা সম্ভবত ততটা ক্ষতি করবে না। যেসব মানুষকে এটা ক্ষতি করবে তা হলো ওই সব দেশের যারা জনগণ রয়েছে তাদের। ওই মানুষদেরই মত প্রকাশের একটি সুযোগ প্রয়োজন। আমাদের দায়িত্ব হলো- যতটা সম্ভব মতপ্রকাশের সুযোগ তাদেরকে করে দেয়া। আমরা বিশ্বজুড়ে যখন ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু করেছি, দেখেছি সংযুক্ত হওয়ার পর মানুষকে বিস্ময়কর সব জিনিস করতে। অনেক বছর পর দূরবর্তী স্বজনদের সঙ্গে মানুষ যোগাযোগ করেছে প্রথমবারের মতো। ছোট ব্যবসা মালিকরা অনলাইনে নতুন ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে। সন্তানপ্রত্যাশী মা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা জীবনকে উন্নততর করে। মুক্ত মতপ্রকাশ নিয়ে ভাবনা প্রলুব্ধ করে বৈকি। সাদা আর কালোর মতো একটা কণ্ঠ থাকা- হয় আপনার এ সুযোগ আছে বা নেই। কিন্তু মানুষকে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি, আমাদের সমাজের বেশির ভাগ বিষয়ের মতোই এমন একটি বিষয় যে লক্ষ্যে আমাদেরকে অবশ্যই ধাপে ধাপে উন্নতি করতে হবে। প্রতিটি ইন্টারনেট সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার করার প্রতিটি সেবা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আইন গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রতিটি মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আমরা তৈরি করি, আবিষ্কার করি, আর বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে লড়াই করি। একদিন আমাদের কমিউনিটি আমাদের মিশন সম্পন্ন করবে। যেটা হলো, সবখানের মানুষেকে শেয়ার করার ক্ষমতা দেয়া আর বিশ্বকে আরও বেশি উন্মুক্ত আর সংযুক্ত (কানেকটেড) করে তোলা।
ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের লেখা থেকে অনূদিত। অনুবাদ করেছেন হাসনাইন মেহেদী
আমরা বিশ্বাস করি আপনি যত ভালভাবে শেয়ার করতে পারবেন আর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারনে, আমাদের সমাজ ততটাই প্রগতি অর্জন করবে। সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে, আরও বেশি চাকরি আর ব্যবসা সৃষ্টি হচ্ছে আর মানুষের মুল্যবোধ নিয়ে সরকার আরও ভালভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারছে। মানুষ কি শেয়ার করতে পারবে তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে যত জটিল সব প্রশ্ন উঠছে সে প্রেক্ষিতে আমাদের দিক-নিদের্শনামূলক একটামাত্র নীতি রয়েছে। সেটা হলো- আমরা বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ (মোস্ট ভয়েস) দিতে চাই। মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা কোন চূড়ান্ত অবস্থা নয়। এটা এমন বিষয় নয় যে, আপনার মতপ্রকাশের সুযোগ আছে বা আপনার নেই। এটা কালো বা সাদা নয়। আপনার যখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে, আপনার অনেক বেশি মত প্রকাশের সুযোগ আছে। আপনার যখন শেয়ার করার জন্য অপেক্ষাকৃত উন্নত মাধ্যম আছে আপনার আরও বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ আছে। আপনার বাকস্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করতে যখন অপেক্ষাকৃত কম আইন থাকে তখন আপনার অপেক্ষাকৃত বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। নিজেকে প্রকাশের জন্য যখন আপনাকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সহিংসতার ভয়ে বাস করতে না হয় তখন আপনার বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে। আরও বেশি মানুষকে আরও বেশি মতপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমরা প্রতিদিন কাজ করি। এর অর্থ হলো ইন্টারনেট ডট ওআরজি- এর মাধ্যমে বিশ্বের সবাইকে সংযুক্ত করা যেন এখনও সংযোগের বাইরে থাকা দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আপনার মতো যোগাযোগের সামর্থ্য পেতে পারে। এর অর্থ হলো, ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা গড়ে তোলা যেন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু আপনি সহজে শেয়ার করতে পারেন। এর অর্থ হলো আপনাকে বলপ্রয়োগ আর হয়রানি থেকে রক্ষা করা যেন আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে নিরাপদ বোধ করতে পারেন। আর এর অর্থ হলো আপনাকে সেন্সর আর সীমাবদ্ধ করতে সরকারের অবৈধ অনুরোধগুলো ফিরিয়ে দেয়া। আদর্শ একটি বিশ্বে আমাদের ইচ্ছামতো সবকিছু স্বাধীন ও নিরাপদভাবে প্রকাশ করতে আমরা প্রত্যেকে শক্তিশালী বোধ করবো। বাস্তবে, সেক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ প্রতিটি দেশে আইন রয়েছে যা জননিরাপত্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ রক্ষার্থে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় শেয়ারে নিবারিত করে। কিন্তু তারা যদি এমনটা নাও করতো তারপরও আমাদেরকে প্রকাশ করার জন্য এবং আমাদের ইচ্ছামতো কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো নিখুঁত কোন মাধ্যম এখনও নেই। কাজেই আমরা এরপরও সীমাবদ্ধই থাকতাম। যদি নিখুঁত কোন ব্যব্যস্থা থাকতোও তাহলেও বেশির ভাগ মানুষ সেটা ব্যবহার কতে পারতো না যেহেতু বিশ্ব জনসংখ্যার বেশির ভাগেরই ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এমনকি যে কোন কিছু প্রকাশে আমাদের প্রত্যেকেরই যদি ওই নিখুঁত মাধ্যম, ইন্টারনেট আর আইনি অধিকার থাকতো তারপরও হয়তো মানুষ হয়রানি, সহিংসতা, সন্ত্রাস বা স্রেফ অস্বস্তিকর সামাজিক পরিস্থিতির ভয়ে নিজেদেরকে সেন্সর করতো। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের যে ধরনের মতপ্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত তেমনটা হওয়ার আগে আমাদের অনেক কাজ করার আছে। পরবর্তী ৪০০ কোটি মানুষের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের কাজ নিয়ে অতীতে আমি ব্যাপক লেখা লেখি করেছি। অপারেটরদের সঙ্গে যৌথ অংশিদারিত্বে বেসিক ইন্টারনেট সেবা বিনামূল্যে দেয়ার প্রস্তাব থেকে শুরু করে সরাসরি সংযোগ দিতে স্যাটেলাইট ও বিমান নকশা নিয়ে লিখেছি। এছাড়াও আমি আমাদের সকল অ্যাপ এবং সেবা নিয়ে আলোচনা করেছি যা আপনাকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শেয়ার করার ক্ষমতা দেয়- ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) থেকে পাবলিক (সবার জন্য উন্মুক্ত), ঘনিষ্ঠ গ্রুপ থেকে বৃহত পরিসরের কমিউনিট, স্রেফ টেক্সট থেকে সমৃদ্ধ ছবি, ভিডিও আর ছবি পর্যন্ত। আমার এ লেখার বাকি অংশে আমি মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতার ওপরে মনোযোগ দেবো। আমরা নিরাপদ এবং সম্মানজনক একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করি যেখানে আপনি সবসময় থাকতে এবং মতপ্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এ কারণে আমাদের কমিউনিটিজুড়ে বেসিক আইন প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ড রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতার হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের বার্তাগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। একজন ব্যক্তির মতপ্রকাশ হয়তো অনেকের মতপ্রকাশের সুযোগ অন্যায়ভাবে সীমাবদ্ধ করতে পারে এগুলো তার উদাহরণ। এ কারণে, বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আমরা এসব কন্টেন্ট অনুমোদন না দেয়া বেছে নিয়েছি। আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ডের আজকের আপডেটে এসব নীতিমালা নিয়ে আরও বিস্তারিত রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে ফেসবুকে কোন বিষয়গুলো শেয়ার করা গ্রহণযোগ্য নয় সেগুলোর ব্যাখ্যা এবং উদাহরণসমূহ। আমাদের নীতিমালাগুলো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা যেসব ভিন্ন আইনি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে কাজ করি সে বিষয়গুলোতে আমাদের নজর দেয়া প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রকাশে সীমাবদ্ধতা দিয়ে আইন রয়েছে প্রতিটি দেশে। আর এগুলো প্রায়ই সংস্কৃতি ও ইতিহাসের আলোকে আকার পেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ হলোকাস্টের বিষয়টি অস্বীকার করা জার্মানিতে নিষিদ্ধ। কামাল আতাতুর্ককে অবমাননা করে এমন কিছু তুরস্কে অবৈধ। অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্ম অবমাননাকর বিষয়গুলো নিষিদ্ধ। সরকারগুলো মাঝে-মধ্যে তাদের দৃষ্টিতে অবৈধ কন্টেন্ট আমাদেরকে সরিয়ে ফেলতে বলে। কিন্তু সেটা আমাদের কমিউনিটি মানদণ্ড লঙ্ঘন করে না। আমরা এসব সরকারি আদেশ সংক্রান্ত তথ্য আমাদের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্টে’ সন্নিবেশ করে থাকি। অপ্রয়োজনীয় বা অনধিকার সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে আমাদের কমিউনিটিকে রক্ষা করতে আমরা লড়াই করি। ফেসবুক এটা নতুন ধরনের সেবা। সে কারণে আমাদের এমন কিছু নিয়ম-কানুনের মুখোমুখি হতে হয় যেগুলোর তেমন কোন অতীত দৃষ্টান্ত নেই। আমরা এটা নিশ্চিত করি যে, শুধু আইনি এবং প্রয়োজনীয় সরকারি দাবিতেই আমরা সম্মত হচ্ছি। আমাদেরকে যদি একটি দেশে নিষিদ্ধ কোন কিছু ব্লক করতে হয় তাহলে আমরা সাধারণত সেগুলো বাকি বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা করি যেন শেয়ার করা মতপ্রকাশে সীমাবদ্ধতা কম রাখা যায়। মানুষের শেয়ার করা বিষয়বস্তু কিভাবে সরকারগুলো সীমাবদ্ধ করে আমরা সেটাও প্রকাশ করতে কাজ করি। আর সে কারণেই আমরা ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্টস রিপোর্ট’ প্রকাশ করি। অনেকে বলেন, মানুষের মতপ্রকাশ সীমাবদ্ধ করার সরকারি আদেশ আমাদের উপেক্ষা করা উচিত। যদি তাতে ওইসব দেশে এ সেবাটা বন্ধ করে দেয়া হয় তারপরও সরাকারি আদেশ উপেক্ষা করা উচিত বলে অনেকে বলে থাকেন। আমি মনে করি না এটা সঠিক। আমি বিশ্বাস করি এসব দেশের লাখ লাখ মানুষ যারা প্রতিদিন বন্ধু-স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য ফেসবুকের ওপর নির্ভর করেন তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যদি আইনি কোন সরকারি আদেশ উপেক্ষা করি আর এরপর আমাদের ব্লক করে দেয়া হয়, তাহলে এত মানুষের কণ্ঠ শব্দহীন হয়ে যাবে। আর তাছাড়া, সরকার যে কন্টেন্ট অবৈধ বলে বিশ্বাস করে তা এমনিতেই ব্লক করা দেয়া হবে। বিষয়টা হলো বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়া। অন্যরা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, ফেসবুক ব্লক হয়ে গেলে স্বল্প মেয়াদে মানুষের মতপ্রকাশের সুযোগ কমে যাবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে একটি দেশ তাদের আইন পরিবর্তন করতে পারে। দুঃখজনক হলেও কোন দেশ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার পর সে দেশে মতপ্রকাশ সীমাবদ্ধকরণ আইন পরিবর্তনের নজির তেমন একটা নেই। পক্ষান্তরে, এমন বহু উদাহরণ রয়েছে কিভাবে মানুষকে যোগাযোগ আর শেয়ারের সুযোগ দিলে তা সমাজের উন্নতিতে সহায়ক হয়। বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ করে দিতে আমাদের যে দর্শন তা বিশ্বকে সংযুক্ত করতে আমাদের মিশন থেকে অনুপ্রাণিত, আমাদের ব্যবসা নয়। আজ কয়েকটি দেশে আমরা ব্লকড। আর তারপরও আমাদের ব্যবসা বেশ ভালই চলছে। আরও কিছু দেশে যদি আমাদের ব্লক করে দেয়া হয়, এটা সম্ভবত ততটা ক্ষতি করবে না। যেসব মানুষকে এটা ক্ষতি করবে তা হলো ওই সব দেশের যারা জনগণ রয়েছে তাদের। ওই মানুষদেরই মত প্রকাশের একটি সুযোগ প্রয়োজন। আমাদের দায়িত্ব হলো- যতটা সম্ভব মতপ্রকাশের সুযোগ তাদেরকে করে দেয়া। আমরা বিশ্বজুড়ে যখন ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু করেছি, দেখেছি সংযুক্ত হওয়ার পর মানুষকে বিস্ময়কর সব জিনিস করতে। অনেক বছর পর দূরবর্তী স্বজনদের সঙ্গে মানুষ যোগাযোগ করেছে প্রথমবারের মতো। ছোট ব্যবসা মালিকরা অনলাইনে নতুন ক্রেতা খুঁজে পেয়েছে। সন্তানপ্রত্যাশী মা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা জীবনকে উন্নততর করে। মুক্ত মতপ্রকাশ নিয়ে ভাবনা প্রলুব্ধ করে বৈকি। সাদা আর কালোর মতো একটা কণ্ঠ থাকা- হয় আপনার এ সুযোগ আছে বা নেই। কিন্তু মানুষকে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি, আমাদের সমাজের বেশির ভাগ বিষয়ের মতোই এমন একটি বিষয় যে লক্ষ্যে আমাদেরকে অবশ্যই ধাপে ধাপে উন্নতি করতে হবে। প্রতিটি ইন্টারনেট সংযোগ গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার করার প্রতিটি সেবা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আইন গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রতিটি মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আমরা তৈরি করি, আবিষ্কার করি, আর বেশির ভাগ মানুষকে সর্বোচ্চ মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে লড়াই করি। একদিন আমাদের কমিউনিটি আমাদের মিশন সম্পন্ন করবে। যেটা হলো, সবখানের মানুষেকে শেয়ার করার ক্ষমতা দেয়া আর বিশ্বকে আরও বেশি উন্মুক্ত আর সংযুক্ত (কানেকটেড) করে তোলা।
ফেসবুকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের লেখা থেকে অনূদিত। অনুবাদ করেছেন হাসনাইন মেহেদী
No comments