লাপাত্তা মাছুম, সোর্স গেদা ফের রিমান্ডে by ওয়েছ খছরু
নিজেকে
নির্দোষ প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে র্যাবের ‘কথিত সোর্স’ আতাউর
রহমান গেদা মিয়া। স্কুলছাত্র আবু সাঈদের অপহরণ ও খুনের দায় থেকে রক্ষা পেতে
সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। যদিও পুলিশের কাছে বলেছিল-
সে স্বেচ্ছায় সবকিছু স্বীকার করবে। কিন্তু গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হলে
সে কিছুই বলেনি। এ কারণে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গেদা মিয়াকে
তিনদিনের রিমান্ডে দিয়েছেন। আর গেদা মুখ না খোলায় পুলিশ আলোচিত এ অপহরণ ও
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পলাতক থাকা জেলা ওলামা লীগের প্রচার সম্পাদক
মুহিবুল ইসলাম মাছুম ও অজ্ঞাত আর এক ব্যক্তির সন্ধান পাচ্ছে না। পুলিশ
জানিয়েছে, ওই দুইজনের সন্ধান একমাত্র গেদাই দিতে পারে। গত শনিবার রাতে
নগরীর ঝেরঝেরিপাড়াস্থ পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমানের বাসা থেকে অপহৃত
স্কুলছাত্র আবু সাঈদের লাশ উদ্ধারের রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গেদাকে।
গেদাকে গ্রেপ্তারের আগে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর ও জেলা ওলামা লীগের সাধারণ
সম্পাদক রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর এবাদুর ও রাকিব আদালতে
নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সোমবার পুলিশ
গেদাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল। রিমান্ডে আতাউর রহমান
পুলিশের কাছে ঘটনা সম্পর্কে স্বীকার করেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে, ঘটনা স্বীকার করলেও সরাসরি তার সম্পৃক্ততার
বিষয়টি অস্বীকার করেছে। কখনও সে ঘটনার পুরো দায় পুলিশ কনস্টেবলের উপর আবার
কখনও ওলামা লীগের নেতাদের উপর চাপায়। এছাড়া বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান
করে। এদিকে, তিনদিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ
সোর্স গেদা মিয়াকে সিলেটের সিএমএম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন
করে। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আলোচিত এ মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার এসআই ফয়েজ আহমদ জানিয়েছেন, গেদা নিজেকে রক্ষার
চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে আদালতে তার রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আদালত তার
তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গেদা ঘটনা স্বীকার করলেও নিজের সম্পৃক্ততার
বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, গেদাই হচ্ছে মূল ঘটনাকারী। ইতিপূর্বে
পাওয়া দুইজনের বক্তব্য থেকে গেদার নাম পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওলামা
লীগের প্রচার সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম মাছুমও। এবাদুর ও রাকিবের ভাষ্য থেকে
জানা গেছে, ওলামা লীগ নেতা মাছুম অপহরণের সময় সাঈদের মুখ চেপে ধরেছিল।
এছাড়া খুনের সময় মাছুম স্কুলছাত্র সাঈদের হাত ও শরীর ধরে রাখে। মাছুমের মূল
বাড়ি শিবগঞ্জে হলেও তিনি নগরীর কুয়ারপাড়ে বসবাস করতেন। ঘটনার পর থেকে
মাছুম পলাতক রয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ মাছুম সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য পেয়েছে।
এছাড়া খুনের ঘটনার সময় র্যাব’র কথিত সোর্স গেদা মিয়ার সঙ্গে আরও এক অজ্ঞাত
লোক ছিল। গেদা ওই লোকের পরিচয়ও গোপন রাখছে। পুলিশের কাছে একেক সময় একেক
পরিচয় দিচ্ছে। এছাড়া অপহরণের দিন শিশুটিকে গেদার বাসা থেকে কনস্টেবল
এবাদুরের বাসায় নেয়ার পথে যে সিএনজি অটোরিকশাটি ভাড়া করেছিল সে অটোরিকশার
চালককেও খুঁজছে পুলিশ। ওই অটোরিকশাচালকও ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা
গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গেদা মুখ খুললেই ওদের
গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। কারণ গেদাই জানে ওরা কোথায় আছে। সর্বশেষ
গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত গেদার সঙ্গে ওই দু’জনের যোগাযোগ ছিল। এদিকে,
আলোচিত এ অপহরণ ও খুনের ঘটনায় শোক বিরাজ করছে এলাকায়। খুনিদের ফাঁসির
দাবিতেও চলছে আন্দোলন। গতকাল বিকালে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় মানববন্ধন
করেছে স্থানীয় লোকজন। তারা জানান, স্কুলছাত্র সাঈদ অপহরণ ও হত্যার পর থেকে
এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এই ক্ষোভ
কমবে না বলে জানান তারা। নয়াসড়ক পয়েন্টে মানববন্ধন করে নয়াসড়ক ক্রীড়া
সংস্থা ও ব্যবসায়ীবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল
মুহিত জাবেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিমন আহমদ, সংগঠনের সভাপতি মতিউর রহমান
শিমুল, ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, তামিম আহমদ,
সোহেল আহমদ, সালমান আহমদ, অপু আহমদ, তাজু ইসলাম, সুমন মিয়া, তছলিম আহমদ
প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্কুলছাত্র আবু সাঈদের খুনিদের আইনের
আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে। বাকী আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে নতুবা আমরা সিলেটবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর
কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। এদিকে, হাজী শাহ্মীর সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক
সমিতি সিলেট মহানগর শাখা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত
মানববন্ধনে বক্তারা সাঈদ হত্যারকারীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়ে
বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর যাতে কোন মায়ের
বুক খালি না হয়।’ আর কোন শিক্ষার্থী যেন অপহৃত না হয় সে জন্য পুলিশসহ
জড়িতদের অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। আর তাদের ফাঁসি কার্যকর হলে কোন
অপহরণকারী অপহরণ করার সাহস পাবে না। সমিতির সভাপতি জেসমিন সুলতানার
সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফছা আক্তারের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য
দেন, মতিলাল গুপ্ত, নুরুল ইসলাম, নিকেতন দাস, সেলিনা বেগম, সালমা জাহান,
কানিজ আয়েশা, হুছনা বেগম, শঙ্করী কর, শাহনারা বেগম, রোজিনা বেগম, অজিত পাল,
আজাদ মিয়া, শামীম আহমদ, ফয়েজ উদ্দিন, শিখা চৌধুরী, রাশেদ নেওয়াজ, বিমল
দাস, শ্রীবাস রায়, রজত বিশ্বাস, শক্তি মজুমদার, নিলু দাস, সুরমা বেগম,
হালিমা খাতুন, সিদ্দিকা খাতুন, মনোয়ারা মজুমদার, আবদুল মছব্বির, অজয় দে,
তুলি দেবী, মৌসুমী বিশ্বাস, হুসনে আরা সুলতানা, সৈয়দা রেহানা বেগম, সাথী
রানী দে, জান্নাতুন নাহার রুবী, জলি দেব, সন্ধানী রায়, হ্যাপি দেবী,
মনোয়ারা মজুমদার, শহীদুল ইসলাম, শাহীন আহমদ, গণেশ কুমার পাল দিপু, ফখরুল
আলম, মুনমুন, নাজিয়া বেগম, প্রমতেশ দত্ত প্রমুখ।
No comments