এমআরপি বিড়ম্বনা শঙ্কায় প্রবাসীরা
নভেম্বরের
মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়া নিয়ে
চিন্তিত সরকার। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে অনুষ্ঠিত এক
উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের
মধ্যে এমআরপি দেয়া নিয়ে নিজেদের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন।
পাশাপাশি এসব সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নভেম্বরের মধ্যে পাসপোর্ট
দেয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আগামী নভেম্বরের মধ্যে মেশিন
রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দিতে না পারলে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা
অবৈধ হয়ে যাবেন। আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২৪শে নভেম্বরের আগেই
প্রবাসীদের হাতে এমআরপি পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন
করে পর্যালোচনা এবং সমন্বয় করার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চপর্যায়ের
জাতীয় কমিটি করে দিয়েছেন। এ কমিটিতে রয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক
কর্মসংস্থানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন,
বর্তমানে সারা বিশ্বে ১৬০টি দেশে প্রায় ৯১ লাখ বাংলাদেশী অবস্থান করছেন।
তবে যেখানে অল্প সংখ্যক লোক রয়েছে সেখানে তেমন কোন সমস্যা নেই। সমস্যা
হচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যেখানে বেশি
সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে। এসব দেশে অবস্থানরতদের এমআরপি দেয়া চ্যালেঞ্জের
ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, ইতিমধ্যে ৬০ লাখ
প্রবাসীর এমআরপি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি আছে ৩০-৩৫ লাখের মতো। এজন্য
নির্ধারিত সময়ে এমআরপি সরবরাহ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রতি সপ্তাহে সভা করা হচ্ছে। আগামী ২৯
তারিখে এ সংক্রান্ত আরও একটি মিটিং রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে আগামী
এক সপ্তাহ পরে প্রতিদিন ৫ হাজার লোকের রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এভাবে কাজ
করতে পারলে দেশটিতে অবস্থানরত ২২-২৩ লাখ লোকের এমআরপি নির্ধারিত সময়ের আগেই
দেয়া সম্ভব হবে। মন্ত্রী বলেন, একই ধরনের সমস্যা সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
সেখানেও আমরা সমস্ত পদ্ধতি রি-ইনফোর্স করছি এবং যে কোম্পানি সেখানে আউট
সোর্সিংয়ের কাজ দিয়েছে তারাও গুরুত্ব অনুধাবন করছে। তারা তাদের ক্যাপাসিটি
দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়াবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ জানান, সৌদি আরব ছাড়া
বাকি দেশগুলোতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে
এমআরপি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাসপোর্ট
করার দায়িত্ব ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু সরকার তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সহযোগিতা
করছে। জন্মনিবন্ধন নিয়ে জটিলতাও দূর করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি
বলেন, যে যেখানে আছে সেখান থেকেই এ সেবা পাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,
সরকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার আর কোন
কারণ নেই। লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশী প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, সেখানে যারা অবস্থান করছেন পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের বলা হয়েছে। অহেতুক ঘর থেকে বের না হওয়ারও
নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কি
করতে হবে সে ব্যাপারে সময়মতো নির্দেশনা দেয়া হবে। অবস্থা বুঝে ফেরত আনার
সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সব সময় অন্তত ৭ দিনের জন্য শুকনা খাবার এবং পানি রাখার
পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে অপহৃতদের ব্যাপারে এখনও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে
তিনি জানান। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশী
রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শহিদুল হকের প্রশংসা করে বলেন, তিনি যথেষ্ট
সাহসিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, লিবিয়াতে যতগুলো দূতাবাস
আছে সবাই জার্ভাতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। বাংলাদেশ দূতাবাস এখনও আছে।
রাষ্ট্রদূত তাদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান। এ ছাড়া
আর কোন তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
No comments