স্বপ্নের নাম ইরা বিদ্যানিকেতন by শিহাব জিশান
কেউ পড়ছে কেউ বা লিখছে। তাদের যত্ন করে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ইরা বিদ্যানিকেতন এভাবেই এগোচ্ছে স্বপ্নের পথ ধরে l জুয়েল শীল |
২০১১
সালের শেষ দিকের কথা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নগরের প্রবর্তক মোড়ে আড্ডা
জমে উঠত একদল তরুণ-তরুণীর। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখতেন তাঁরা। এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মাঝে শিক্ষার
আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন তাঁরা। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ২০১২ সালের
জানুয়ারির শুরু থেকে তাঁরা নেমে পড়েন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে। তাঁদের সেই
স্বপ্নের ফসল নগরের ষোলশহর এলাকার ইরা বিদ্যানিকেতন। প্রবীর দেবনাথ,
জয়া শর্মা, শুভ বিশ্বাস, জয় পাল ও আরিফ বিন মাসুদ এ পাঁচজন হলেন এই
বিদ্যানিকেতনের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁরা নগরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী। কীভাবে শুরু এই বিদ্যালয়ের? উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রবর্তক
মোড়, দুই নম্বর গেট, ষোলশহর রেলস্টেশন ও মুরাদপুর এলাকায় ২০ জন
সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে শুরু হয় ইরা বিদ্যানিকেতনের কার্যক্রম। দিনটি ছিল
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি। শুরুতে কোনো নাম ছাড়াই ষোলশহর রেলস্টেশনে
পাঠদান করতেন এই তরুণেরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের
সংখ্যা বাড়তে থাকলে পাঠদান কার্যক্রম বড় পরিসরে শুরু হয়। ষোলশহর
আইডব্লিউ কলোনির একটি খোলা জায়গায় নতুন করে শুরু হয় পাঠদান। ২০১২ সালের
১০ এপ্রিল ‘ইরা বিদ্যানিকেতন’ নামে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়। এ
সময় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয় ষোলশহর
আইডব্লিউ কলোনির একটি কাঁচা ঘর। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে ৭০
জন শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন ৪০ জন। কাঁচা ঘরটিতে শিক্ষার্থীর
সংখ্যা সংকুলান না হলে এখনো ঘরের সামনের খোলা জায়গায় পাঠদান করা হয় বলে
জানালেন ইরার স্বেচ্ছাসেবক রনি পাল।
গত শুক্রবার ইরা বিদ্যানিকেতনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে বসে আছে শিক্ষার্থীরা। কেউ পড়ছে, কেউ বা লিখছে, আবার কেউ সুর করে উচ্চারণ করছে বর্ণমালা। স্বেচ্ছাসেবকেরা সবার কাছে গিয়ে গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। ঘরের বাইরের খোলা জায়গায় আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক একদল শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছিলেন।
কীভাবে চলে ইরা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম? জানতে চাইলে ইরার স্বেচ্ছাসেবক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা বাশার বললেন, ‘কোনো শিশু এ বিদ্যালয়ে এলে আমরা তাকে প্রথমে নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। এরপর সপ্তাহের প্রতি রোববার, বুধবার ও শুক্রবার বিকেলে পাঠদানের মাধ্যমে তাদের বিদ্যালয়ের পড়াগুলো বুঝিয়ে দিই।’ এ ছাড়া প্রতি মাসে এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি শিশুদের বিদ্যালয়ের বেতন ও পরীক্ষার ফি প্রদানসহ চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি। এর বাইরে প্রতি বছর সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও ঈদের কাপড় বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও মেডিকেল ক্যাম্প করে থাকে ইরা। এসব খরচ মেটাতে প্রতি মাসে স্বেচ্ছাসেবকেরা ১০০ টাকা করে চাঁদা দেন। মাঝেমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়ান পরিচিতজনেরাও।
আট বছরের শিশু জেসমিন আক্তার। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের কাছে বড় হয় সে। মাত্র তিন বছর আগেও কাগজ কুড়িয়ে দিন কাটত জেসমিনের। এখন বস্তা হাতে কাগজ কুড়াতে যাওয়ার বদলে ব্যাগ কাঁধে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। পূর্ব নাসিরাবাদের জলিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জেসমিন এখন অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ইরার স্বেচ্ছাসেবক স্বপন রুদ্র বলেন, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করে অদ্ভুত আনন্দ। এ আনন্দ পাওয়ার লোভেই আমরা পড়াতে ছুটে যাই। আর এটি যদি দেশ ও দশের কিছুমাত্র উপকারে আসে, সেটা আরও অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা শুধু একটি এলাকা নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে চাই। সবার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে একটি ভ্রাম্যমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
গত শুক্রবার ইরা বিদ্যানিকেতনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে বসে আছে শিক্ষার্থীরা। কেউ পড়ছে, কেউ বা লিখছে, আবার কেউ সুর করে উচ্চারণ করছে বর্ণমালা। স্বেচ্ছাসেবকেরা সবার কাছে গিয়ে গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন। ঘরের বাইরের খোলা জায়গায় আরও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক একদল শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছিলেন।
কীভাবে চলে ইরা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম? জানতে চাইলে ইরার স্বেচ্ছাসেবক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা বাশার বললেন, ‘কোনো শিশু এ বিদ্যালয়ে এলে আমরা তাকে প্রথমে নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। এরপর সপ্তাহের প্রতি রোববার, বুধবার ও শুক্রবার বিকেলে পাঠদানের মাধ্যমে তাদের বিদ্যালয়ের পড়াগুলো বুঝিয়ে দিই।’ এ ছাড়া প্রতি মাসে এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি শিশুদের বিদ্যালয়ের বেতন ও পরীক্ষার ফি প্রদানসহ চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি। এর বাইরে প্রতি বছর সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও ঈদের কাপড় বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও মেডিকেল ক্যাম্প করে থাকে ইরা। এসব খরচ মেটাতে প্রতি মাসে স্বেচ্ছাসেবকেরা ১০০ টাকা করে চাঁদা দেন। মাঝেমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়ান পরিচিতজনেরাও।
আট বছরের শিশু জেসমিন আক্তার। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের কাছে বড় হয় সে। মাত্র তিন বছর আগেও কাগজ কুড়িয়ে দিন কাটত জেসমিনের। এখন বস্তা হাতে কাগজ কুড়াতে যাওয়ার বদলে ব্যাগ কাঁধে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। পূর্ব নাসিরাবাদের জলিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জেসমিন এখন অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ইরার স্বেচ্ছাসেবক স্বপন রুদ্র বলেন, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করে অদ্ভুত আনন্দ। এ আনন্দ পাওয়ার লোভেই আমরা পড়াতে ছুটে যাই। আর এটি যদি দেশ ও দশের কিছুমাত্র উপকারে আসে, সেটা আরও অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা শুধু একটি এলাকা নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সব সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে চাই। সবার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে একটি ভ্রাম্যমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
No comments