দুই অধিনায়কের দুরকম রাত by উৎপল শুভ্র
স্বপ্নযাত্রা থেমে গেল শেষ আটে, আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে হেরে গেল বাংলাদেশ। মাশরাফি, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে সব |
একজন
ওয়ানডেতে জয়ের ‘সেঞ্চুরি’ করে ফেললেন। আরেকজনের জুটল এই বিশ্বকাপে দলের
সবচেয়ে বড় পরাজয়। সেই ক্ষতে নুন ছিটাতে আবার এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।
প্রথমজন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্বিতীয়জন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই অধিনায়কের জন্য কী বিপরীত চিত্রনাট্যই না লিখে রেখেছিল এমসিজির এই রাত!
তবে ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে একটা জায়গায় মিলে গেলেন দুজন। একটি মাত্র উইকেটই বদলে দিতে পারত এই ম্যাচের রং—একটু আগে মাশরাফির বলে যাওয়া কথাটারই যেন প্রতিধ্বনি করলেন ধোনিও। ২৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১১৫ রানে যখন ধুঁকছে ভারত, দ্রুত আরেকটি উইকেট তুলে নিলে এই বিশ্বকাপে ভারতের সাতে সাত হতো কি না সন্দেহ।
উল্টো রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়নার ১২২ রানের জুটি। আলিম দারের ইশারায় ইয়ান গোল্ড ওই বিতর্কিত নো বল না ডাকলে ৪১ রান কম হয় ওই জুটিতে। ধোনির আশঙ্কা তখন সত্যি হয়েও যেতে পারত। ভারতীয় অধিনায়ক যে তখন ২৬০ রানকেই অনেক ভাবতে শুরু করেছিলেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে স্লো ওভাররেটের শাস্তি শুধু জরিমানাতেই শেষ হলেও তা মাশরাফির মাথার ওপর একটি খড়্গ ঝুলিয়ে রেখেছিল। আরেকটি ম্যাচে এমন হলেই নিষেধাজ্ঞা। পাছে কোয়ার্টার ফাইনাল মিস করে ফেলেন, এ কারণেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি। কাল সেই ‘অপরাধের’ পুনরাবৃত্তি হওয়ায় জরিমানার সঙ্গে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হলেন। নির্ধারিত সময়ে ২ ওভার কম করার পেছনে কোনো ‘অজুহাত’ দেখানোরও সুযোগ ছিল না বলে মাশরাফি বিনাবাক্যে তা মেনে নিয়েছেন। ম্যাচ রেফারি রোশান মহানামাকে তাই আর শুনানির ঝামেলায় যেতে হয়নি।
বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৬৯ রান, প্রশ্নবিদ্ধ অধিনায়কত্ব, দলের বড় পরাজয় এবং শেষে এই শাস্তি—সব মিলিয়ে মাশরাফির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি দুঃস্বপ্নের রূপ পেল। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিনটি জয়ের দুটিতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতে। এই ম্যাচটা মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখিয়ে দিল মাশরাফিকে।
ভারতের বিপক্ষে খেলা হলে অদৃশ্য আরও অনেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়তে হয়—এমন একটা ভয় বাংলাদেশ দলে আগে থেকেই ছিল। বিতর্কিত আম্পায়ারিং সেটিকে সত্যি বলে দাবি করার সুযোগও করে দিচ্ছে। তবে তাতে এই সত্যিটাকে আড়াল করা যাচ্ছে না যে, এই ম্যাচের প্রথম ৩০ ওভারের পর থেকে বাংলাদেশ খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছে।
মাঠে একটু পর পরই মেজাজ হারাতে দেখা গেছে মাশরাফিকে। মিস ফিল্ডিংয়ে চার হয়েছে। ত্রিশগজি বৃত্তের মধ্যে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিল্ডার না থাকার শিশুতোষ ভুলের কারণে নো বল। শর্ট বলে সুরেশ রায়নার দুর্বলতার কথা পুরো বিশ্বের জানা থাকার পরও মাশরাফির রুবেলকে আক্রমণে না আনাটাও একই রকম বিস্ময়ের। রায়না প্রথম বাউন্সার পেলেন কিনা ৪২ বল খেলে ফেলার পর!
ভারতকে তিন শ পার করে দেওয়ায় বিতর্কিত আম্পায়ারিং হয়তো ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু সেটিকেই পরাজয়ের কারণ দাবি করতে বাংলাদেশকে আরেকটু ভালো ব্যাটিং করতে হতো। ২৬০-৭০ করতে পারলেও চিৎকার করে বলা যেত, দেখো, শুধু আম্পায়ারের ভুলেই আজ আমরা হেরে গেলাম! যেখানে দুই শ-ও করতে না পারায় আম্পায়ারিং নিয়ে যৌক্তিক অভিযোগটাকেও অনেকে অজুহাত বলার সুযোগ পাচ্ছে।
এই ম্যাচের আগে ব্যাটিংয়ের ওপর তাঁর অগাধ আস্থার কথা জানিয়েছিলেন মাশরাফি। আগের ম্যাচগুলোর কারণে তা অকারণ বলেও মনে হয়নি। অথচ আসল ম্যাচেই কিনা সবচেয়ে করুণ চেহারায় দেখা দিল ব্যাটিং! তিন শ তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু করা উচিত, তামিম তেমনই শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২৫ বলে ২৫ রানেই তা শেষ! তখন কে জানত, এটিই বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর থেকে মাত্র ১০ রান কম হয়ে থাকবে!
ইনিংসের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ৮ ও ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানের, টপ অর্ডারের দুর্দশা বোঝাতে এটাই যথেষ্ট। সবচেয়ে বড় বিস্ময় সাকিব আল হাসান। বড় রান তাড়া করতে গেলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। তা নিতে গিয়ে অল্প রানে আউট হয়ে গেলেও একটা ব্যাখ্যা মিলত। কিন্তু সাকিবের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে ২৯.৪১ (৩৪ বলে ১০) স্ট্রাইক রেটের ইনিংসের ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে হয়রান হতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যা মিলছেও না।
শেষটা ভালো হলো না বলে আক্ষেপ থাকবেই। তবে তাতে তো আর এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জনগুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ সর্বশেষ খেলেছে সেই ২০০৮ সালে, সেটিও বিশ্বকাপের কোনো মাঠে নয়, ডারউইনে। নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ সফরও প্রায় পাঁচ বছর আগে। বিরুদ্ধ কন্ডিশন আর অজানা-অচেনা সব মাঠে খেলা—দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মাশরাফির গর্বিত বোধ করাটা তাই অবশ্যই যৌক্তিক। এই বিশ্বকাপ থেকে আগামী দিনের পাথেয় তো কিছু আসলেই জোগাড় করে নেওয়া গেছে।
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্যর্থতার কথা ভুলে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনন্দটাই নাহয় মনে রাখুন!
প্রথমজন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্বিতীয়জন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই অধিনায়কের জন্য কী বিপরীত চিত্রনাট্যই না লিখে রেখেছিল এমসিজির এই রাত!
তবে ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে একটা জায়গায় মিলে গেলেন দুজন। একটি মাত্র উইকেটই বদলে দিতে পারত এই ম্যাচের রং—একটু আগে মাশরাফির বলে যাওয়া কথাটারই যেন প্রতিধ্বনি করলেন ধোনিও। ২৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১১৫ রানে যখন ধুঁকছে ভারত, দ্রুত আরেকটি উইকেট তুলে নিলে এই বিশ্বকাপে ভারতের সাতে সাত হতো কি না সন্দেহ।
উল্টো রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়নার ১২২ রানের জুটি। আলিম দারের ইশারায় ইয়ান গোল্ড ওই বিতর্কিত নো বল না ডাকলে ৪১ রান কম হয় ওই জুটিতে। ধোনির আশঙ্কা তখন সত্যি হয়েও যেতে পারত। ভারতীয় অধিনায়ক যে তখন ২৬০ রানকেই অনেক ভাবতে শুরু করেছিলেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে স্লো ওভাররেটের শাস্তি শুধু জরিমানাতেই শেষ হলেও তা মাশরাফির মাথার ওপর একটি খড়্গ ঝুলিয়ে রেখেছিল। আরেকটি ম্যাচে এমন হলেই নিষেধাজ্ঞা। পাছে কোয়ার্টার ফাইনাল মিস করে ফেলেন, এ কারণেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি। কাল সেই ‘অপরাধের’ পুনরাবৃত্তি হওয়ায় জরিমানার সঙ্গে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও হলেন। নির্ধারিত সময়ে ২ ওভার কম করার পেছনে কোনো ‘অজুহাত’ দেখানোরও সুযোগ ছিল না বলে মাশরাফি বিনাবাক্যে তা মেনে নিয়েছেন। ম্যাচ রেফারি রোশান মহানামাকে তাই আর শুনানির ঝামেলায় যেতে হয়নি।
বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৬৯ রান, প্রশ্নবিদ্ধ অধিনায়কত্ব, দলের বড় পরাজয় এবং শেষে এই শাস্তি—সব মিলিয়ে মাশরাফির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি দুঃস্বপ্নের রূপ পেল। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিনটি জয়ের দুটিতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতে। এই ম্যাচটা মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখিয়ে দিল মাশরাফিকে।
ভারতের বিপক্ষে খেলা হলে অদৃশ্য আরও অনেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়তে হয়—এমন একটা ভয় বাংলাদেশ দলে আগে থেকেই ছিল। বিতর্কিত আম্পায়ারিং সেটিকে সত্যি বলে দাবি করার সুযোগও করে দিচ্ছে। তবে তাতে এই সত্যিটাকে আড়াল করা যাচ্ছে না যে, এই ম্যাচের প্রথম ৩০ ওভারের পর থেকে বাংলাদেশ খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছে।
মাঠে একটু পর পরই মেজাজ হারাতে দেখা গেছে মাশরাফিকে। মিস ফিল্ডিংয়ে চার হয়েছে। ত্রিশগজি বৃত্তের মধ্যে নির্দিষ্টসংখ্যক ফিল্ডার না থাকার শিশুতোষ ভুলের কারণে নো বল। শর্ট বলে সুরেশ রায়নার দুর্বলতার কথা পুরো বিশ্বের জানা থাকার পরও মাশরাফির রুবেলকে আক্রমণে না আনাটাও একই রকম বিস্ময়ের। রায়না প্রথম বাউন্সার পেলেন কিনা ৪২ বল খেলে ফেলার পর!
ভারতকে তিন শ পার করে দেওয়ায় বিতর্কিত আম্পায়ারিং হয়তো ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু সেটিকেই পরাজয়ের কারণ দাবি করতে বাংলাদেশকে আরেকটু ভালো ব্যাটিং করতে হতো। ২৬০-৭০ করতে পারলেও চিৎকার করে বলা যেত, দেখো, শুধু আম্পায়ারের ভুলেই আজ আমরা হেরে গেলাম! যেখানে দুই শ-ও করতে না পারায় আম্পায়ারিং নিয়ে যৌক্তিক অভিযোগটাকেও অনেকে অজুহাত বলার সুযোগ পাচ্ছে।
এই ম্যাচের আগে ব্যাটিংয়ের ওপর তাঁর অগাধ আস্থার কথা জানিয়েছিলেন মাশরাফি। আগের ম্যাচগুলোর কারণে তা অকারণ বলেও মনে হয়নি। অথচ আসল ম্যাচেই কিনা সবচেয়ে করুণ চেহারায় দেখা দিল ব্যাটিং! তিন শ তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু করা উচিত, তামিম তেমনই শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২৫ বলে ২৫ রানেই তা শেষ! তখন কে জানত, এটিই বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোর থেকে মাত্র ১০ রান কম হয়ে থাকবে!
ইনিংসের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ৮ ও ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানের, টপ অর্ডারের দুর্দশা বোঝাতে এটাই যথেষ্ট। সবচেয়ে বড় বিস্ময় সাকিব আল হাসান। বড় রান তাড়া করতে গেলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। তা নিতে গিয়ে অল্প রানে আউট হয়ে গেলেও একটা ব্যাখ্যা মিলত। কিন্তু সাকিবের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে ২৯.৪১ (৩৪ বলে ১০) স্ট্রাইক রেটের ইনিংসের ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে হয়রান হতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যা মিলছেও না।
শেষটা ভালো হলো না বলে আক্ষেপ থাকবেই। তবে তাতে তো আর এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জনগুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ সর্বশেষ খেলেছে সেই ২০০৮ সালে, সেটিও বিশ্বকাপের কোনো মাঠে নয়, ডারউইনে। নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ সফরও প্রায় পাঁচ বছর আগে। বিরুদ্ধ কন্ডিশন আর অজানা-অচেনা সব মাঠে খেলা—দলের পারফরম্যান্স নিয়ে মাশরাফির গর্বিত বোধ করাটা তাই অবশ্যই যৌক্তিক। এই বিশ্বকাপ থেকে আগামী দিনের পাথেয় তো কিছু আসলেই জোগাড় করে নেওয়া গেছে।
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্যর্থতার কথা ভুলে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনন্দটাই নাহয় মনে রাখুন!
No comments