রাজনৈতিক অস্থিরতা- মুখ থুবড়ে পড়েছে ডিসিসির নাগরিক সেবা by আহমেদ জামাল
দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ব্যাহত হচ্ছে নাগরিকদের জন্ম, মৃত্যু ও ওয়ারিশন সনদ প্রদান। বন্ধ হয়ে গেছে নগরীর রাস্তাঘাটের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান। কমে গেছে রাজস্ব আদায়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে বকেয়া পড়ে আছে ২১৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল। অচিরেই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ দুই সেবা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়াও বন্ধ হয়ে যাবে- এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিরোধী জোটের লাগাতার অবরোধের সঙ্গে দফায় দফায় হরতালের কবলে পড়ে স্বায়ত্তশাসিত এ সংস্থার অবস্থা একেবারেই নাজুক। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদ প্রদান, হোল্ডিং ট্যাক্স, বাজার সেলামি, দোকান বরাদ্দ, সম্পত্তি হস্তান্তর, ট্রেড লাইসেন্স ফি, বিজ্ঞাপন ফি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, পশুর হাট ইজারা, সড়ক খনন ফি ও যন্ত্রপাতি ভাড়া থেকে আসা আয় একেবারেই কমে গেছে। নগরভবনে সেবা গ্রহীতাদের যাতায়াতও আগের মতো তেমন চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সরকার ঘোষিত নতুন পে-স্কেলে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে আগামী জুন মাস থেকে সাড়ে ৯ কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। এ বাড়তি টাকা কোন খাত থেকে আসবে জানেন না কেউ।
বিষয়টি স্বীকার করে ডিএসসিসির হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ হয়। এ টাকা জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে করপোরেশনকে। এর মধ্যে আবার চলতি বছরের জুন মাসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল চালু হলে তখন এ খাতে খরচ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণে এ সিটি করপোরেশনের আয় সত্যিকার অর্থেই কমে গেছে। কিন্তু বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় ঠিকই আছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের পাস হওয়া বকেয়া বিলের পরিমাণ ২১৬ কোটি টাকা, যা অর্থের অভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে ডিএসসিসির সামাজিক অনুষ্ঠানস্থল কমিউনিটি সেন্টারগুলোতেও। এ সময় এ খাতটি থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা আয় হতো। চলমান আন্দোলনের কারণে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে কোন বুকিং হচ্ছে না। আর যারা আগে বুকিং দিয়েছিলেন তাও বাতিল করে নিচ্ছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কেউ এখন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিচ্ছেন না। অথচ অন্যান্য বছরের এ সময় করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিংয়ের হিড়িক পড়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ে দু-একটি বুকিং হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা আবার বাতিল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আয় না হলেও এ খাতে সিটি করপোরেশনকে ব্যয় করতে হচ্ছে। কারণ, ভাড়া না হলেও কমিউনিটি সেন্টারের দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লোক ঠিকই আছে। এদিকে সম্প্রতি প্রায় ২০ দিন ধরে দুই সিটি করপোরেশনের অতিগুরুত্বপূর্ণ সেবা জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সফটওয়্যার এবং সার্ভারে ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল যুগে আইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এ সিটি করপেরেশনে এ সেক্টরে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। আমি নগর পরিকল্পনাবিদ। সারাদিন বসে থাকা ছাড়া নগর নিয়ে আমার কোন কাজ নেই। মাঝেমধ্যে সংসদে বা কোন সেমিনারে প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী-এমপি কিংবা কর্মকর্তাদের বলার জন্য কিছু তথ্য-উপাত্ত তৈরি করি। সুতরাং আমাকে দিয়ে আইটি সেক্টর সচল রাখার চেষ্টা করা হলে যা হওয়ার তাই হবে। করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জন্মনিবন্ধন সনদ অন্তত ১৬ রকমের নাগরিক সেবার জন্য দরকার পড়ে। একইভাবে মৃত্যুনিবন্ধন সনদও দরকার পড়ে অনেক কাজে। কিন্তু সেগুলো বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। সফটওয়্যার সমস্যার কারণে এ সঙ্কট এখনও পুরোপুরি কাটেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চলমান আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন ছোট-বড় মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও অনেটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের জন্য মাঠে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে নাজেহালের শিকার হতে হচ্ছে। রাজস্বদাতারা নানা অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা অজুহাতের কথা তুলে ধরেন। ওদিকে রাজপথে আন্দোলন ঠেকানোর কাজে পুলিশ বাহিনী ব্যস্ত থাকায় করপোরেশনের নিয়মিত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল স্থান ও স্থাপনা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, গত দেড় মাসে পুলিশের অভাবে উল্লেখযোগ্য কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। মুখ রক্ষার খাতিরে নামমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। একইভাবে নগরীর নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম এবং বর্জ্য অপসারণের মতো সেবামূলক অনেক কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। এ নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
বিষয়টি স্বীকার করে ডিএসসিসির হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ হয়। এ টাকা জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে করপোরেশনকে। এর মধ্যে আবার চলতি বছরের জুন মাসে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল চালু হলে তখন এ খাতে খরচ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণে এ সিটি করপোরেশনের আয় সত্যিকার অর্থেই কমে গেছে। কিন্তু বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় ঠিকই আছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের পাস হওয়া বকেয়া বিলের পরিমাণ ২১৬ কোটি টাকা, যা অর্থের অভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে ডিএসসিসির সামাজিক অনুষ্ঠানস্থল কমিউনিটি সেন্টারগুলোতেও। এ সময় এ খাতটি থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা আয় হতো। চলমান আন্দোলনের কারণে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে কোন বুকিং হচ্ছে না। আর যারা আগে বুকিং দিয়েছিলেন তাও বাতিল করে নিচ্ছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কেউ এখন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিচ্ছেন না। অথচ অন্যান্য বছরের এ সময় করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিংয়ের হিড়িক পড়তো। কিন্তু বর্তমান সময়ে দু-একটি বুকিং হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা আবার বাতিল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আয় না হলেও এ খাতে সিটি করপোরেশনকে ব্যয় করতে হচ্ছে। কারণ, ভাড়া না হলেও কমিউনিটি সেন্টারের দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লোক ঠিকই আছে। এদিকে সম্প্রতি প্রায় ২০ দিন ধরে দুই সিটি করপোরেশনের অতিগুরুত্বপূর্ণ সেবা জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সফটওয়্যার এবং সার্ভারে ত্রুটির কারণে এমনটা হয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল যুগে আইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এ সিটি করপেরেশনে এ সেক্টরে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। আমি নগর পরিকল্পনাবিদ। সারাদিন বসে থাকা ছাড়া নগর নিয়ে আমার কোন কাজ নেই। মাঝেমধ্যে সংসদে বা কোন সেমিনারে প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী-এমপি কিংবা কর্মকর্তাদের বলার জন্য কিছু তথ্য-উপাত্ত তৈরি করি। সুতরাং আমাকে দিয়ে আইটি সেক্টর সচল রাখার চেষ্টা করা হলে যা হওয়ার তাই হবে। করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জন্মনিবন্ধন সনদ অন্তত ১৬ রকমের নাগরিক সেবার জন্য দরকার পড়ে। একইভাবে মৃত্যুনিবন্ধন সনদও দরকার পড়ে অনেক কাজে। কিন্তু সেগুলো বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। সফটওয়্যার সমস্যার কারণে এ সঙ্কট এখনও পুরোপুরি কাটেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চলমান আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন ছোট-বড় মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও অনেটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের জন্য মাঠে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে নাজেহালের শিকার হতে হচ্ছে। রাজস্বদাতারা নানা অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা অজুহাতের কথা তুলে ধরেন। ওদিকে রাজপথে আন্দোলন ঠেকানোর কাজে পুলিশ বাহিনী ব্যস্ত থাকায় করপোরেশনের নিয়মিত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল স্থান ও স্থাপনা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, গত দেড় মাসে পুলিশের অভাবে উল্লেখযোগ্য কোন উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। মুখ রক্ষার খাতিরে নামমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। একইভাবে নগরীর নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম এবং বর্জ্য অপসারণের মতো সেবামূলক অনেক কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। এ নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
No comments