সরকারি অফিসে নাশকতা- সন্দেহের তীরে বিএনপি জোট সমর্থক কর্মচারীরা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে এখন হুমকির মুখে পড়েছে স্পর্শকাতর সব স্থাপনা। আর এই হুমকির জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিএনপি-জামায়াত সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকেই সন্দেহের তীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে তার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী, যারা সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সম্পৃক্ততা থাকতেই পারে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিষয়টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট সব অফিসকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। প্রায় আড়াই মাস ধরে চলে আসা বিরোধী জোটের অবরোধ ও হরতালে এখন আক্রান্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিস, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, স্থাপনা, ভূমি অফিস, শিক্ষা অফিস, মৎস্য অধিদফতর, আদালত, থানাসহ সরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনা। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব স্থাপনায় অবরোধ ও হরতাল সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। পেট্রলবোমা মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে সরকারি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক চিঠিতে সরকারি এসব গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কর্মরত ২০-দলীয় জোটের রাজনীতিকে সমর্থন করেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।সূত্র জানায়, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশব্যাপী চলা সাম্প্রতিক সহিংসতায় আক্রান্ত সরকারি দফতরগুলোর নিরাপত্তা চেয়ে কয়েক দিন ধরেই সরকারের বিভিন্ন দফতর, মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোকে নিরাপত্তার কথা জানিয়ে জবাব দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতেও বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আদালত ভবন, থানা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ভূমি অফিস, শিক্ষা অফিস-আদালতসহ সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও দফতরে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অবরোধ ও হরতাল ডেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে যেসব হামলা হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ ও সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে ওই সব দফতরে কর্মরত কর্মচারীদের জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। জড়িত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগিতায়ই অবরোধ ও হরতালকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি অফিস-আদালত ও গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে সম্প্রতি সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত ও দফতর-অধিদফতরকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ওইসব অফিস ও দফতরের সরকারবিরোধী কর্মচারীদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর যেসব স্থাপনায় হামলা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস ও দফতরের লোকজনের জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। একই তথ্য জানান ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ কর্মকর্তা বলেন, নাশকতার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আলোকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা কমিটি গঠন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজও চলছে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর পক্ষ থেকে।
No comments