কাগুজে প্রতিষ্ঠান পেল জাতীয় মৎস্য পুরস্কার by সাঈদ আহমেদ
কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৪’। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের ফটো ব্যবহৃত হচ্ছে যেনতেনভাবে সরকারি অর্থ-সম্পদ লোপাটের হাতিয়ার হিসেবে। মৎস্য উৎপাদন, বাজারজাত কিংবা আমদানি-রফতানিতে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা না থাকলেও মৎস্য অধিদফতর ভূষিত করে জাতীয় পুরস্কারে। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়তে স্বাক্ষর করে এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডাস্ট্যান্ডিং)। মৌলিক কোনো উৎপাদন কিংবা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও শুধু কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। নাম উঠেছে সিআইপির তালিকায়। মৎস্য অধিদফতরের চোখে ‘অনন্য অবদান’ রাখা এ ব্যক্তিটির নাম শাহজাহান বাবলু। ‘এসবি গ্রুপ’-এর কর্ণধার। সূফি মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক পুরস্কারসহ গোটা বিশেক পুরস্কার রয়েছে তার সংগ্রহে। কাজ নয়, কাগজে বিশ্বাসী শাহজাহান বাবলুর প্রতারণার জগতে উত্থান অনেকটা ধূমকেতুর মতোই। কেতাদুরস্ত, এ কাগুজে ‘তরুণ উদ্যোক্তা’র উত্থানে ভিরমি খাচ্ছে ব্যাংক ও সরকারি তদন্ত সংস্থা। তবে যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে খসে পড়ে শাহজাহান বাবলুর কথিত সাফল্যের পলস্তারা। ধরা পড়ে তার স্বরূপ ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়েও অভিনব স্টাইলের প্রতারণা-বৃত্তান্ত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদফতর ‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৪’ প্রদান করে। মৎস্য খাতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায়’ ৬টি ক্ষেত্রে ১৭টি পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় স্বর্ণপদক। ১৩ জনকে রৌপ্যপদক। স্বর্ণপদক লাভকারী দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান বাবলু।
‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৪’ উপলক্ষে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার বিবরণীতে শাহজাহান বাবলুর জাতীয় পুরস্কার লাভের ‘ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/সমবায় সমিতি/মৎস্যসংক্রান্ত সমাজভিত্তিক সংগঠনের অবদান/সমগ্র কর্মজীবনের অবদান।’
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপরোক্ত কোনো ক্ষেত্রে ‘অনবদ্য অবদান’-তো দূরের কথা শাহজাহান বাবলুর সঙ্গে মৎস্য খাতের উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতাই নেই। মূলত ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যবহার করেছেন কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান। বাগিয়ে নেন মৎস্য অধিদফতরের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি। এ চুক্তির আওতায় শাহজাহান বাবলু উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য ছাড়ার নামে এর মধ্যেই অন্তত ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলাধীন কাজীর জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফের ছেলে মো. শাহজাহান বাবলু (৪৪)। কয়েক বছরে তিনি হয়ে যান আঙুল ফুলে বটগাছ।
দাবি করছেন ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র মালিক বলে। প্রচারণা অনুযায়ী, এসবি জুট স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ক্রপস কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড, এসবি বিল্ডার্স অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড, সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড, পুন্ন এক্সিম প্রা. লিমিটেড (ইন্ডিয়া), এসবি এক্সিম বাংলাদেশ, বিসমিল্লাহ, ফিশ প্রডাকশন, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স, মেসার্স শাহজাহান বাবলু (সরকার অনুমোদিত) জুট ডিলার এবং এসবি ফুড প্রডাক্ট’ এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজেরই প্রতিষ্ঠান। ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘বিসমিল্লাহ মৎস্য হ্যাচারি, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’ এবং ‘ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড’কে মৎস্যসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান মনে হলেও মৎস্য অধিদফতর জাতীয় পুরস্কার দেয় পুরো ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’কে। ২০১৪ সালের ২ জুলাই শাহজাহান বাবলুর হাতে যখন জাতীয় মৎস্য পুরস্কার তুলে দেয়া হয় তখন তার বিসমিল্লাহ হ্যাচারিতে ছিল খড়ের স্তূপ, আবর্জনার ভাগাড়। পুকুরেও ছিল না মাছের আনাগোনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথের ৩০ শতাংশ জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ‘এসবি ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ’ সবেমাত্র লাইসেন্স পেয়েছে। পায়নি কোনো বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। জাতীয় মৎস্য পুরস্কার প্রদান নীতিমালায় জেলা কমিটি কর্তৃক কারিগরি কমিটি/বাছাই কমিটির কাছে পুরস্কারের মনোনয়ন প্রস্তাব পাঠানোর সময়সীমা ছিল ১৫ মার্চ ২০১৪।
অনুসন্ধানমতে, শাহজাহান বাবলু বিসমিল্লাহ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স দেখিয়ে ৩ কোটি টাকা মূলধনী ঋণ নেন কৃষি ব্যাংক থেকে। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৬২২তম সভায় ঋণ নবায়ন মঞ্জুরির তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবে উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে শাজহাজান বাবলুর ‘বিসমিল্লাহ মৎস্য হ্যাচারি, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’-এ ‘ঋণের ব্যবহার’ সম্পর্কে বলা হয়, ‘প্রকল্পটির বিভিন্ন খাতে ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে মাত্র ৬৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে জমা করা হয়েছে যা সন্তোষজনক নয়।’ প্রকল্পের ‘অবস্থা’ সম্পর্কে বলা হয়, ‘মৎস্য হ্যাচারি ইউনিটের ১৩টি পুকুর (ব্রুড ফিস পুকুর, নার্সারি পুকুর ও মৎস্য চাষ পুকুর) একীভূত করে ২টি পুকুরে রূপান্তর করত আনুমানিক ৪.৫২ একর পুকুরে শুধু মৎস্য চাষ ছাড়া অন্যসব ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ আছে।’ কৃষি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংককে এ প্রতিবেদন দেয়। সে ক্ষেত্রে হ্যাচারি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য রিপোর্টে নেই।
শাহজাহান বাবলুর মৎস্য চাষের অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংক এ তথ্য দিলেও মৎস্য অধিদফতর এ অবস্থাকে ‘অনবদ্য অবদান’ উল্লেখ করে তার হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার গ্রহণের পর সেই ফটো ছড়িয়ে পড়ে শাহজাহান বাবলুর পরিচিত বলয়ে। কিন্তু মৎস্য খাতে তার ‘অনবদ্য অবদান’ চোখে পড়েনি প্রকল্পগুলোর সরেজমিন পরিদর্শনে। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের দাবি, এসবি গ্রুপের অনেক ফিশারিজ প্রজেক্ট আছে। কোল্ডস্টোরেজ, ফ্রিজিং, এক্সপোর্ট, হ্যাচারি...। গত ১৮ জানুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর মাতুয়াইলে অবস্থিত ‘এসবি ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ’ পরিদর্শনে দেখা গেল বাস্তব চিত্র। সড়ক ও জনপথের জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী ইমারত, যা এসবি গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের ‘প্রধান কার্যালয়’ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। হোল্ডিং নম্বর নেই। ভবনের অর্ধনির্মিত ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার গ্রহণের বিশাল ডিজিটাল ব্যানার। বাইরে থেমে থাকা এসবি গ্রুপের ফ্রিজিং ভ্যান। সচল কি বিকল বোঝার জো নেই। উত্তরে লাগোয়া আধা পাকা আরেকটি ভবন। গেটে দায়িত্বরত আনসার জহির জানালেন, ওটা কোল্ডস্টোরেজ, শাকসবজি রাখা হয়। মাছ রাখা হয় কিনা- দোতলায় উঠে জানতে চাইলে কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার পরিচয়ে এগিয়ে আসেন মামুন। ফ্রিজিং ক্যাপাসিটি কত, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, খাতাপত্র দেখে বলতে হবে। খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কয়েক মাস হয় এসেছি। মহিউদ্দিন সাহেব দায়িত্বে আছেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন।
ভবনটি ১১টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হলেও চোখে পড়ল না তেমন জনমানব। শূন্য পড়ে আছে কক্ষগুলো। মজুরিভিত্তিক ১৫ শ্রমিকসহ ‘কর্মরত’ দেখা গেল ২০-২৫ জন জনবল। এসবি গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার পাভেল বলেন, শাহজাহান বাবলু মাঝেমধ্যেই এখানে আসেন। আমার সঙ্গে মাত্র দু’বার দেখা হয়েছে তার। কোন ঠিকানায় তাকে পাওয়া যাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। কীভাবে সাক্ষাৎ করা যাবে পিএস টু চেয়ারম্যান সোহেল বলতে পারবেন।
৪ জানুয়ারি কুমিল্লা নাঙ্গলকোর্ট কাজীর জোড়পুকুরিয়া পরিদর্শনে দেখা মিলল এসবি গ্রুপের আরেক খণ্ডচিত্র। বিশাল বাড়ি। তিনতলা ভবনে ঝুলে আছে ক’দিন আগে ঘুরে যাওয়া এক মন্ত্রীর ছবি। বাড়ির ভেতর অফিস কক্ষ। জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ, স্পিকার, মন্ত্রী ও গুণীজনদের সঙ্গে শাহজাহান বাবলুর সম্পর্কের স্মারক হয়ে ঝুলছে অসংখ্য ফটো। কম্পাউন্ডের ভেতরেই কথিত এক মৎস্য হ্যাচারি। কোনো সাইনবোর্ড নেই। টিন শেডের নিচে পাকা জলাধার। তাতে স্তূপ করে রাখা আছে গাছের ডালপালা, খড়। হাউসে পানি নেই। প্লাস্টিক পিপাগুলোও ব্যবহৃত হয় না বহুদিন। সংলগ্ন দুটি পুকুর। কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করলেও তাতে কোনো মাছের নড়াচড়া চোখে পড়েনি। শাহজাহান বাবলুর বড় ভাই আবুল কাশেম মেম্বার জানালেন, এক সময় এ হ্যাচারিতেই পোনা উৎপাদন হতো। পুকুর দুটিতেও মাছ ছিল। কিছু জাতি মাছ এখনও রয়েছে। গত শ্রাবণে পোনা ছাড়া হয়েছে। শীতকাল হওয়ায় এখন মাছ লাফাচ্ছে না! একই গ্রামের আক্কাস আলী জানালেন, পুকুরে মাছ ছাড়া হয়নি ম্যালা দিন। ব্যাংকের লোক দেখতে এলে আগে থেকে কিছু মাছ কিনে ছেড়ে রাখা হয়। শুনছি বহু টাকা ব্যাংক তার কাছ থেকে পায়।
যে ‘বিসমিল্লাহ, ফিশ প্রডাকশন, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’ দেখিয়ে তিনি প্রথম কৃষি ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন চোখে পড়ল সেটিতেও। টিনের লাগোয়া দুটি শেড। ভেতরে গরুর বাথান, খা খা করছে। খড়ের গাদা। হাড্ডিসার তিনটি গরু জাবর কাটছে। সঙ্গে দুটি বাছুর। আবুল কাশেম জানালেন, গত কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নতুন গরু উঠানো হয়নি। ‘মৎস্য খাতে অবদানের জন্য শাহজাহান বাবলু যে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সেই মৎস্য কোথায় উৎপাদন করা হয়?’ জানতে চাইলে অপ্রস্তুত কাশেম বলেন, আরও কিছু পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
তবে নাঙ্গলকোর্ট থেকে ফিরতি পথে চোখে পড়ল এসবি গ্রুপের সেই ‘লিজ নেয়া পুকুর’। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ এলাকার হাইওয়ের পশ্চিমে লাগোয়া দুটি জলাশয়। এসবি গ্রুপের নুয়ে পড়া, ছেঁড়া-ফাড়া দুটি ব্যানার। পাড়ে ছোট্ট একটি ডেরা। তাতে জনমানবের সাড়া পাওয়া গেল না। সড়ক ও জনপথের জমি একসনা লিজ নিয়ে করা হয়েছে জলাশয়। স্থানীয় যুবক আকমল হোসেন বললেন, এখানে মাছের চাষ হয়েছে বলে দেখিনি।
কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার নেয়ার বিষয়ে শাহজাহান বাবলুর বক্তব্য নিতে ২ মাস ধরে চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কথা হয় শাহজাহান বাবলুর সঙ্গে। জাতীয় মৎস্য পুরস্কার লাভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এ কারণেই মৎস্য অধিদফতর এ পুরস্কার দিয়েছে। কীভাবে আমাকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে এটি তাদের জিজ্ঞেস করুন।
কোনো অবদান না রাখলেও কাগুজে প্রতিষ্ঠান কীভাবে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার পেল, জানতে চাইলে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (অ.দা.) সৈয়দ আরিফ আজাদ এ প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, এত প্রতিষ্ঠান থাকতে এসবি গ্রুপের পেছনে লাগলেন কেন? ‘যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বললেন, আপনি কি সরেজমিন এগুলো কখনও দেখেছেন। এগুলো কি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান মনে হয়েছে আপনার কাছে?’-এ প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, হাঁ, দেখেছি, আপনার কাছে কি সেটির জবাবদিহি করতে হবে? এ জন্য টেকনিক্যাল কমিটি ছিল। ‘জাতীয় পুরস্কার লাভের যে ক্রাইটেরিয়া ও মানদণ্ড, তা কি শাহজাহান বাবলু পূরণ করেছেন?’ প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ পুরস্কার তার হাতে তুলে দিয়েছেন। নীতিমালা শতভাগ পূরণ করেই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সবকিছু এ মুহূর্তে মুখস্থ নেই। ‘এত প্রতিষ্ঠান থাকতে এসবি গ্রুপের সঙ্গেই কেন এমওইউ সম্পাদন করা হল?’ এর জবাবে বলেন, এ বিষয়ে ডিডি গুলজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন। ‘অভিযোগ রয়েছে, এসবি গ্রুপ নিছক একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। অর্থের বিনিময়ে আপনি এ পুরস্কার বিক্রি করেছেন।’ জবাবে সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, এটি শূন্যভাগ সত্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদফতর ‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৪’ প্রদান করে। মৎস্য খাতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায়’ ৬টি ক্ষেত্রে ১৭টি পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় স্বর্ণপদক। ১৩ জনকে রৌপ্যপদক। স্বর্ণপদক লাভকারী দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান বাবলু।
‘জাতীয় মৎস্য পুরস্কার-২০১৪’ উপলক্ষে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার বিবরণীতে শাহজাহান বাবলুর জাতীয় পুরস্কার লাভের ‘ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/সমবায় সমিতি/মৎস্যসংক্রান্ত সমাজভিত্তিক সংগঠনের অবদান/সমগ্র কর্মজীবনের অবদান।’
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপরোক্ত কোনো ক্ষেত্রে ‘অনবদ্য অবদান’-তো দূরের কথা শাহজাহান বাবলুর সঙ্গে মৎস্য খাতের উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতাই নেই। মূলত ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যবহার করেছেন কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান। বাগিয়ে নেন মৎস্য অধিদফতরের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি। এ চুক্তির আওতায় শাহজাহান বাবলু উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য ছাড়ার নামে এর মধ্যেই অন্তত ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলাধীন কাজীর জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফের ছেলে মো. শাহজাহান বাবলু (৪৪)। কয়েক বছরে তিনি হয়ে যান আঙুল ফুলে বটগাছ।
দাবি করছেন ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র মালিক বলে। প্রচারণা অনুযায়ী, এসবি জুট স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ক্রপস কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড, এসবি বিল্ডার্স অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড, সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড, পুন্ন এক্সিম প্রা. লিমিটেড (ইন্ডিয়া), এসবি এক্সিম বাংলাদেশ, বিসমিল্লাহ, ফিশ প্রডাকশন, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স, মেসার্স শাহজাহান বাবলু (সরকার অনুমোদিত) জুট ডিলার এবং এসবি ফুড প্রডাক্ট’ এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজেরই প্রতিষ্ঠান। ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘বিসমিল্লাহ মৎস্য হ্যাচারি, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’ এবং ‘ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড’কে মৎস্যসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান মনে হলেও মৎস্য অধিদফতর জাতীয় পুরস্কার দেয় পুরো ‘এসবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’কে। ২০১৪ সালের ২ জুলাই শাহজাহান বাবলুর হাতে যখন জাতীয় মৎস্য পুরস্কার তুলে দেয়া হয় তখন তার বিসমিল্লাহ হ্যাচারিতে ছিল খড়ের স্তূপ, আবর্জনার ভাগাড়। পুকুরেও ছিল না মাছের আনাগোনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথের ৩০ শতাংশ জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ‘এসবি ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ’ সবেমাত্র লাইসেন্স পেয়েছে। পায়নি কোনো বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও। জাতীয় মৎস্য পুরস্কার প্রদান নীতিমালায় জেলা কমিটি কর্তৃক কারিগরি কমিটি/বাছাই কমিটির কাছে পুরস্কারের মনোনয়ন প্রস্তাব পাঠানোর সময়সীমা ছিল ১৫ মার্চ ২০১৪।
অনুসন্ধানমতে, শাহজাহান বাবলু বিসমিল্লাহ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স দেখিয়ে ৩ কোটি টাকা মূলধনী ঋণ নেন কৃষি ব্যাংক থেকে। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৬২২তম সভায় ঋণ নবায়ন মঞ্জুরির তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবে উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে শাজহাজান বাবলুর ‘বিসমিল্লাহ মৎস্য হ্যাচারি, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’-এ ‘ঋণের ব্যবহার’ সম্পর্কে বলা হয়, ‘প্রকল্পটির বিভিন্ন খাতে ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে মাত্র ৬৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে জমা করা হয়েছে যা সন্তোষজনক নয়।’ প্রকল্পের ‘অবস্থা’ সম্পর্কে বলা হয়, ‘মৎস্য হ্যাচারি ইউনিটের ১৩টি পুকুর (ব্রুড ফিস পুকুর, নার্সারি পুকুর ও মৎস্য চাষ পুকুর) একীভূত করে ২টি পুকুরে রূপান্তর করত আনুমানিক ৪.৫২ একর পুকুরে শুধু মৎস্য চাষ ছাড়া অন্যসব ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ আছে।’ কৃষি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংককে এ প্রতিবেদন দেয়। সে ক্ষেত্রে হ্যাচারি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য রিপোর্টে নেই।
শাহজাহান বাবলুর মৎস্য চাষের অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংক এ তথ্য দিলেও মৎস্য অধিদফতর এ অবস্থাকে ‘অনবদ্য অবদান’ উল্লেখ করে তার হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার গ্রহণের পর সেই ফটো ছড়িয়ে পড়ে শাহজাহান বাবলুর পরিচিত বলয়ে। কিন্তু মৎস্য খাতে তার ‘অনবদ্য অবদান’ চোখে পড়েনি প্রকল্পগুলোর সরেজমিন পরিদর্শনে। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের দাবি, এসবি গ্রুপের অনেক ফিশারিজ প্রজেক্ট আছে। কোল্ডস্টোরেজ, ফ্রিজিং, এক্সপোর্ট, হ্যাচারি...। গত ১৮ জানুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর মাতুয়াইলে অবস্থিত ‘এসবি ফ্রিজিং কোল্ডস্টোরেজ’ পরিদর্শনে দেখা গেল বাস্তব চিত্র। সড়ক ও জনপথের জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী ইমারত, যা এসবি গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের ‘প্রধান কার্যালয়’ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। হোল্ডিং নম্বর নেই। ভবনের অর্ধনির্মিত ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার গ্রহণের বিশাল ডিজিটাল ব্যানার। বাইরে থেমে থাকা এসবি গ্রুপের ফ্রিজিং ভ্যান। সচল কি বিকল বোঝার জো নেই। উত্তরে লাগোয়া আধা পাকা আরেকটি ভবন। গেটে দায়িত্বরত আনসার জহির জানালেন, ওটা কোল্ডস্টোরেজ, শাকসবজি রাখা হয়। মাছ রাখা হয় কিনা- দোতলায় উঠে জানতে চাইলে কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার পরিচয়ে এগিয়ে আসেন মামুন। ফ্রিজিং ক্যাপাসিটি কত, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, খাতাপত্র দেখে বলতে হবে। খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কয়েক মাস হয় এসেছি। মহিউদ্দিন সাহেব দায়িত্বে আছেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন।
ভবনটি ১১টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হলেও চোখে পড়ল না তেমন জনমানব। শূন্য পড়ে আছে কক্ষগুলো। মজুরিভিত্তিক ১৫ শ্রমিকসহ ‘কর্মরত’ দেখা গেল ২০-২৫ জন জনবল। এসবি গ্রুপের সহকারী ম্যানেজার পাভেল বলেন, শাহজাহান বাবলু মাঝেমধ্যেই এখানে আসেন। আমার সঙ্গে মাত্র দু’বার দেখা হয়েছে তার। কোন ঠিকানায় তাকে পাওয়া যাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। কীভাবে সাক্ষাৎ করা যাবে পিএস টু চেয়ারম্যান সোহেল বলতে পারবেন।
৪ জানুয়ারি কুমিল্লা নাঙ্গলকোর্ট কাজীর জোড়পুকুরিয়া পরিদর্শনে দেখা মিলল এসবি গ্রুপের আরেক খণ্ডচিত্র। বিশাল বাড়ি। তিনতলা ভবনে ঝুলে আছে ক’দিন আগে ঘুরে যাওয়া এক মন্ত্রীর ছবি। বাড়ির ভেতর অফিস কক্ষ। জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ, স্পিকার, মন্ত্রী ও গুণীজনদের সঙ্গে শাহজাহান বাবলুর সম্পর্কের স্মারক হয়ে ঝুলছে অসংখ্য ফটো। কম্পাউন্ডের ভেতরেই কথিত এক মৎস্য হ্যাচারি। কোনো সাইনবোর্ড নেই। টিন শেডের নিচে পাকা জলাধার। তাতে স্তূপ করে রাখা আছে গাছের ডালপালা, খড়। হাউসে পানি নেই। প্লাস্টিক পিপাগুলোও ব্যবহৃত হয় না বহুদিন। সংলগ্ন দুটি পুকুর। কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করলেও তাতে কোনো মাছের নড়াচড়া চোখে পড়েনি। শাহজাহান বাবলুর বড় ভাই আবুল কাশেম মেম্বার জানালেন, এক সময় এ হ্যাচারিতেই পোনা উৎপাদন হতো। পুকুর দুটিতেও মাছ ছিল। কিছু জাতি মাছ এখনও রয়েছে। গত শ্রাবণে পোনা ছাড়া হয়েছে। শীতকাল হওয়ায় এখন মাছ লাফাচ্ছে না! একই গ্রামের আক্কাস আলী জানালেন, পুকুরে মাছ ছাড়া হয়নি ম্যালা দিন। ব্যাংকের লোক দেখতে এলে আগে থেকে কিছু মাছ কিনে ছেড়ে রাখা হয়। শুনছি বহু টাকা ব্যাংক তার কাছ থেকে পায়।
যে ‘বিসমিল্লাহ, ফিশ প্রডাকশন, বিফ ফ্যাটেনিং অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স’ দেখিয়ে তিনি প্রথম কৃষি ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন চোখে পড়ল সেটিতেও। টিনের লাগোয়া দুটি শেড। ভেতরে গরুর বাথান, খা খা করছে। খড়ের গাদা। হাড্ডিসার তিনটি গরু জাবর কাটছে। সঙ্গে দুটি বাছুর। আবুল কাশেম জানালেন, গত কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নতুন গরু উঠানো হয়নি। ‘মৎস্য খাতে অবদানের জন্য শাহজাহান বাবলু যে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সেই মৎস্য কোথায় উৎপাদন করা হয়?’ জানতে চাইলে অপ্রস্তুত কাশেম বলেন, আরও কিছু পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
তবে নাঙ্গলকোর্ট থেকে ফিরতি পথে চোখে পড়ল এসবি গ্রুপের সেই ‘লিজ নেয়া পুকুর’। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ এলাকার হাইওয়ের পশ্চিমে লাগোয়া দুটি জলাশয়। এসবি গ্রুপের নুয়ে পড়া, ছেঁড়া-ফাড়া দুটি ব্যানার। পাড়ে ছোট্ট একটি ডেরা। তাতে জনমানবের সাড়া পাওয়া গেল না। সড়ক ও জনপথের জমি একসনা লিজ নিয়ে করা হয়েছে জলাশয়। স্থানীয় যুবক আকমল হোসেন বললেন, এখানে মাছের চাষ হয়েছে বলে দেখিনি।
কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার নেয়ার বিষয়ে শাহজাহান বাবলুর বক্তব্য নিতে ২ মাস ধরে চেষ্টা চলে। একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কথা হয় শাহজাহান বাবলুর সঙ্গে। জাতীয় মৎস্য পুরস্কার লাভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এ কারণেই মৎস্য অধিদফতর এ পুরস্কার দিয়েছে। কীভাবে আমাকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে এটি তাদের জিজ্ঞেস করুন।
কোনো অবদান না রাখলেও কাগুজে প্রতিষ্ঠান কীভাবে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার পেল, জানতে চাইলে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (অ.দা.) সৈয়দ আরিফ আজাদ এ প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, এত প্রতিষ্ঠান থাকতে এসবি গ্রুপের পেছনে লাগলেন কেন? ‘যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বললেন, আপনি কি সরেজমিন এগুলো কখনও দেখেছেন। এগুলো কি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান মনে হয়েছে আপনার কাছে?’-এ প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, হাঁ, দেখেছি, আপনার কাছে কি সেটির জবাবদিহি করতে হবে? এ জন্য টেকনিক্যাল কমিটি ছিল। ‘জাতীয় পুরস্কার লাভের যে ক্রাইটেরিয়া ও মানদণ্ড, তা কি শাহজাহান বাবলু পূরণ করেছেন?’ প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ পুরস্কার তার হাতে তুলে দিয়েছেন। নীতিমালা শতভাগ পূরণ করেই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সবকিছু এ মুহূর্তে মুখস্থ নেই। ‘এত প্রতিষ্ঠান থাকতে এসবি গ্রুপের সঙ্গেই কেন এমওইউ সম্পাদন করা হল?’ এর জবাবে বলেন, এ বিষয়ে ডিডি গুলজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন। ‘অভিযোগ রয়েছে, এসবি গ্রুপ নিছক একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। অর্থের বিনিময়ে আপনি এ পুরস্কার বিক্রি করেছেন।’ জবাবে সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, এটি শূন্যভাগ সত্য।
No comments