প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর আকুতি
বিএনপির
যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তার স্ত্রী সাবেক
এমপি হাসিনা আহমেদ। একই সঙ্গে স্বামীকে ফিরে পেতে সর্বমহলের সহযোগিতা
চেয়েছেন তিনি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সালাহউদ্দিন
আহমেদের সন্ধান দাবিতে নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অনুরোধ
জানান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা আহমেদ বলেন, আজ প্রায় ১২ দিন হলো আমার
স্বামীর কোন খবর জানি না। তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন- সেটাও জানি না।
আমি ও আমার ছেলে-মেয়েরা অসম্ভব মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি- তা
কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না। প্রতি মুহূর্তেই মনে হয়, এই বুঝি আমার স্বামীর
খোঁজ পাবো, তিনি আমার কাছে ফিরে এসেছেন। আমরা এখন একটি খবরই জানতে চাই-
আমার স্বামী কোথায় আছেন, উনাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। তিনি বলেন, আমার
স্বামী একসময় আইনজীবী ছিলেন, প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন,
প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আপনাদের সকলের কাছে আমার আবেদন- সবাই আমাকে সহযোগিতা
করুন। আমার ছেলেমেয়েরা যেন তাদের বাবাকে ফিরে পায়। আমি যেন আমার স্বামীকে
ফিরে পাই। সাবেক এই এমপি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উত্তরার একটি
বাসা থেকে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন তাদেরই দায়িত্ব জনসম্মুখে
আমার স্বামীকে হাজির করা। সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রীকে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে হাসিনা আহমেদ বলেন,
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার বিনীতভাবে অনুরোধ করছি- তিনি যেন আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে নির্দেশ দেন, তারা যেভাবে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে ঠিক
সেভাবেই অক্ষত অবস্থায় আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়। আমার ছেলে-মেয়েরা যেন
অস্থিরতা থেকে মুক্তি পায়। তিনি বলেন, সর্বমহলের সবাই যদি আমাকে সহযোগিতা
করেন তাহলে আমি আমার স্বামীকে ফিরে পাবো। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের
ওপর আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আমার
স্বামীকে ফিরিয়ে দেবেন। সালাহউদ্দিনকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবি
জানিয়ে নাগরিক সমাজের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া। তিনি বলেন, গত ৩রা জানুয়ারি থেকে দেশ একটি
রাজনৈতিক সংকটের দিকে দ্রুত ধাবমান হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে এই সংকটের সমাধান
হওয়ার পরিবর্তে পরিস্থিতি দিনে দিনে জটিল ও অনিশ্চয়তার রূপ নিচ্ছে। নাগরিক
জীবন ও জননিরাপত্তা ভীতিকর পরিস্থিতির রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, গুপ্ত
হত্যা, অপহরণ ও গুম সমাজে কোন নতুন ঘটনা না হলেও বর্তমানে এর মাত্রা যে
পরিমাণে বেড়েছে তা রাষ্ট্রের কার্যকারিতা ও নাগরিক নিরাপত্তাকে গভীরভাবে
প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। নানা সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি মাস থেকে ১৪ই
মার্চ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছে কমপক্ষে ৩১ জন।
মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে শুধু গত ফেব্রুয়ারি মাসেই বিচারবহির্ভূত হত্যার
ঘটনায় মারা গেছে ৩৭ জন, জানুয়ারিরে ১৭ জন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আটকের
পর হাঁটু লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা পুলিশি সংস্কৃতিতে এক নিষ্ঠুর সংযোজন
যা নাগরিকদের হেফাজতে থাকাকালীন সুরক্ষা ও বিচার পাওয়ার অধিকারকে তিরেহিত
করে। শুধু জানুয়ারি মাসেই ১৪ জন মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়। যাদের মধ্যে নয়জনকে
পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং দুজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারি
মাসে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৭, তাদের মধ্যে একজনকে পুলিশের কাছে
হস্তান্তর করা হয়েছে, তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এই সময়ে আটকের সংখ্যা কম
করে হলেও ১৮ হাজার। সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া
হয়। এরপর ১২ দিন পার হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের কথা
অস্বীকার করছে এবং তার কোন হদিসও তারা দিতে পারছে না। তিনি নিখোঁজ হওয়ার
দুদিন আগে তার ড্রাইভার ও ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার হন। এমতাবস্থায়
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্রেফ অস্বীকার ও ১২ দিনেও কূল-কিনারা করতে না পারা
জনমনে বিভ্রান্তি ও বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। সরকারের উদ্দেশে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, আজ আমরা দেশের এই বিপদ সংকুল অবস্থায় সকল
নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ অনুসন্ধানে সরকারের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য নিবেদিত ও
উৎসর্গকৃত তা যেন প্রবল প্রতিহিংসার বীজতলা হয়ে দেশ, অর্থনীতি ও
জনস্বার্থের প্রধান শত্রু ও প্রতিপক্ষ হয়ে না দাঁড়ায়। আমরা আশা করি,
সালাহউদ্দিন আহমদের দ্রুত সন্ধান করে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে
সরকার এই মানবিক সংকটের শুভ পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। পাশাপাশি জনমনে আস্থা
ফিরিয়ে আনতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক
সভাপতি এড. গিয়াস উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ
সম্পাদক আক্তার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments