বর্তমান সঙ্কট ও একটি প্রস্তাব by আবদুর রহমান
২০১৩-এর
ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনকালে
গত ৩৩ বছরের অসুস্থ রাজনীতির শিকার গীতা সেন তার কাছে এই বলে আকুতি
জানিয়েছিলেন যে, জনগণ আর অসুস্থ রাজনীতির শিকার হতে চায় না। তিনি অসুস্থ
রাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জনগণকে নিষ্কৃতিদানের আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন।
মিডিয়ায় গীতা সেনের আকুতি ও প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ ভারাক্রান্ত মুখের
অভিব্যক্তি দেখে জনগণ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু দুখী মানুষের ‘কপালের
লিখন না যায় খণ্ডন’। গীতা সেনের আকুতি জানানোর পরও অসুস্থ রাজনীতি দ্বিগুণ
কলেবরে ফিরে এসেছে। তাই ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি
করা ছাড়াও হাসপাতালে কয়েকটি বার্ন ইউনিট খুলতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকেও ১১
ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করতে হয় এবং অগ্নিদগ্ধ এক
শিশুর বেডের পাশে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখা যায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি
জেনারেল এরশাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ১২ হাজার দিন ক্ষমতায় ছিলেন এবং হাসিনা এখনো আছেন। তন্মধ্যে বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী যত দিন যাবৎ একটানা ক্ষমতায় আছেন, তা অদ্যাবধি বাংলাদেশের
কোনো রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধানের ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু দেশের জনগণ কী
দেখতে পাচ্ছেন? তিনটি দলের তিনজন নেতা গত ৩৩ বছর শুধু দলীয় প্রধানই নন,
সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলের নেতার আসনে ছিলেন ও
আছেন। তারা সুস্থ রাজনীতির চর্চা করলে ৩৩ বছর পরও দেশের অবস্থা এমন হতো না।
কয়েকটি দল ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়াকে নিশ্চিত করতেই আম জনতাকেই রক্ত দিতে হচ্ছে কেন? এই দেশের ভোটারেরা তাদের ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাদের বিরোধীদলের আসনে বসিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে পরপর দু’বার পুনঃনির্বাচিত করেননি। একদল ২০০৭ সালে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার তৎপরতা দেখানোর কারণে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়। অপর দলটি পুরনো ও বেশি চৌকস হওয়ার কারণে বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়িক নেতাদের বৃহত্তর অংশের অন্ধানুগত্য এবং সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা লাভে সমর্থ হয়ে ৫১.৩৩ শতাংশ আসনে শূন্য ভোটে এবং ৪৮.৬৭ শতাংশ আসনে গায়েবি ভোটে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। ‘জনগণ তাদের ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ম্যানডেট দিয়েছে’ দাবি করে মুখে ফেনা তুলে ফেলার কারণেই অসুস্থ রাজনীতি বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে জনগণের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। কেউ জনগণকে দগ্ধ করছে, কেউ সাজানো বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে জনগণকে শায়েস্তা করছে। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গঠিত সরকার ও বিরোধী দলের মেয়াদ ২০১৯ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করতে সহযোগিতা করে চলেছেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ জেনারেল এরশাদ ও ৮০ বছরের বৃদ্ধা রওশন এরশাদ দম্পতি। তিনি যদি ১৪৭ জন এমপির সাথে ১৯৯৪ সালে পঞ্চম সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে তাদেরই সৃষ্ট বর্তমান সঙ্কটের কবল থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য, অসুস্থ রাজনীতির ফসল দশম সংসদ থেকে বৃদ্ধ দম্পতি কি জীবন সায়াহ্নে এসে জনগণের কল্যাণে পদত্যাগ করতে পারেন না? তারা পদত্যাগ করে দলের ১৫টি শূন্য আসনে উপনির্বাচনে ১৫ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নির্বাচিত সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে সঙ্কট সমাধান হতে পারে। এই দম্পতির বর্তমান যে বয়স, তাতে বর্তমান সংসদকে যদি ২০১৯ পর্যন্ত জীবিত রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের কী লাভ?
রাজনৈতিক সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান না করে সাময়িক সমাধানের কারণেই সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আর তার খেসারত দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে আম জনতাকেই।
কয়েকটি দল ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়াকে নিশ্চিত করতেই আম জনতাকেই রক্ত দিতে হচ্ছে কেন? এই দেশের ভোটারেরা তাদের ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাদের বিরোধীদলের আসনে বসিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে পরপর দু’বার পুনঃনির্বাচিত করেননি। একদল ২০০৭ সালে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার তৎপরতা দেখানোর কারণে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়। অপর দলটি পুরনো ও বেশি চৌকস হওয়ার কারণে বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়িক নেতাদের বৃহত্তর অংশের অন্ধানুগত্য এবং সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা লাভে সমর্থ হয়ে ৫১.৩৩ শতাংশ আসনে শূন্য ভোটে এবং ৪৮.৬৭ শতাংশ আসনে গায়েবি ভোটে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। ‘জনগণ তাদের ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ম্যানডেট দিয়েছে’ দাবি করে মুখে ফেনা তুলে ফেলার কারণেই অসুস্থ রাজনীতি বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে জনগণের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। কেউ জনগণকে দগ্ধ করছে, কেউ সাজানো বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে জনগণকে শায়েস্তা করছে। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গঠিত সরকার ও বিরোধী দলের মেয়াদ ২০১৯ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করতে সহযোগিতা করে চলেছেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ জেনারেল এরশাদ ও ৮০ বছরের বৃদ্ধা রওশন এরশাদ দম্পতি। তিনি যদি ১৪৭ জন এমপির সাথে ১৯৯৪ সালে পঞ্চম সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে তাদেরই সৃষ্ট বর্তমান সঙ্কটের কবল থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য, অসুস্থ রাজনীতির ফসল দশম সংসদ থেকে বৃদ্ধ দম্পতি কি জীবন সায়াহ্নে এসে জনগণের কল্যাণে পদত্যাগ করতে পারেন না? তারা পদত্যাগ করে দলের ১৫টি শূন্য আসনে উপনির্বাচনে ১৫ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে তাদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নির্বাচিত সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে সঙ্কট সমাধান হতে পারে। এই দম্পতির বর্তমান যে বয়স, তাতে বর্তমান সংসদকে যদি ২০১৯ পর্যন্ত জীবিত রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাদের কী লাভ?
রাজনৈতিক সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান না করে সাময়িক সমাধানের কারণেই সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আর তার খেসারত দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে আম জনতাকেই।
No comments