খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে কী হতে পারে? by মেজর মো. আখতারুজ্জামান অব.
২৫
ফেব্রুয়ারি সকালে ফেসবুকে আমাকে কে যেন একজন প্রশ্ন করলেন, ‘ম্যাডামকে কি
গ্রেফতার করবে?’ উত্তরে তাকে লিখলাম ‘বোকা বন্ধু শত্রুর চেয়েও বেশি খারাপ।’
জবাবে তিনি আবার লিখলেন, তিনি আমার উত্তর বুঝতে পারেননি। সেদিন আমার
উত্তরটা তাকে আর বোঝাইনি। গত দুই দিনে বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে
প্রচুর আলোচনা এবং লেখালেখি হচ্ছে। বিএনপির কিছু নেতা তো ইতিমধ্যে বেগম
খালেদা জিয়া জেলে গেলে তারা কীভাবে দল চালাবেন সেই দিকনির্দেশনাও দিয়ে
দিচ্ছেন। বিজ্ঞ উকিল সাহেবরা তো সাব-জেলও বানিয়ে ফেলেছেন!!! ম্যাডাম নাকি
তার গ্রেফতারের পরে করণীয় কী- তা সব জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের টেলিফোনে
জানিয়ে দিচ্ছেন! (খবরটি কি অতি গোপনীয় হওয়ার কথা নয়?) গ্রেফতার পরবর্তী
করণীয় নিয়ে ম্যাডাম তার অফিসে তার সঙ্গে অবরুদ্ধ নেতা নজরুল ইসলাম খানের
সঙ্গে কী গোপন পরামর্শ করছেন তাও পত্রপত্রিকায় ঘটা করে জানিয়ে দেওয়া
হচ্ছে!!! পুরো বিষয়টি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বলেই অনেকের মনে হচ্ছে।
অনেক বিদগ্ধ রাজনীতিবিদের মনে প্রশ্ন, সরকার কেন খালেদা জিয়াকে এখন
গ্রেফতার করতে যাবে? সন্দেহ নেই আন্দোলন প্রলম্বিত হয়েছে কিন্তু চূড়ান্ত
আন্দোলনে বিএনপিরই জয় হবে। তার পরেও চরম বাস্তবতা হলো- আন্দোলন কিছুটা হলেও
স্তিমিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। এখন এই সরকার কী এতই বোকা যে, ম্যাডামকে
এই মুহূর্তে গ্রেফতার করে আন্দোলনের আগুনে নতুন করে পেট্রল ঢেলে দেবে?
খালেদা জিয়া তো সরকারের নিয়ন্ত্রণে জেলেই আছেন এবং সরকারের লোকেরা তার
অফিসের বাইরে ও ভিতরে থেকে সার্বক্ষণিক তাকে পাহারা দিয়ে রাখছে। সরকারবৈরী
কারও পক্ষেই তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমন কি
আÍীয়স্বজন যারা যায় তারা কোনো রাজনৈতিক তথ্যাদি আদান-প্রদান করতে পারবেন
না। দু-একজন ভিতরে গিয়ে ফেঁসে গেছে এখন বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ম্যাডামের
প্রতিটি পদক্ষেপ সরকারের নখদর্পণে। গুলশানের পুরো অফিসটি সম্পূর্ণভাবে
সরকারের শক্ত নিয়ন্ত্রণে। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিএনপি চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিনের গুলশান অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়া, জেলার ভারপ্রাপ্ত
নেতাদের কাছে টেলিফোনে নির্দেশ পাঠানো, নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে
শলাপরামর্শের খবর পত্র-পত্রিকায় সরবরাহ করা ইত্যাদি গোপনীয় তথ্যাদি
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করার পরও যদি কেউ না বুঝতে চান তাহলে কী করার
আছে? গুলশান অফিসকে সাব-জেল ঘোষণা করার আবদারও এই নীলনকশারই অংশ। সবার
মনে রাখা ভালো হবে যে, বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে গেলে আন্দোলন সফলতার দিকে
যাবে এবং এককেন্দ্রিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। এই মুহূর্তে খালেদাকে জেলে নিলে
সরকার আন্দোলনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। তাকে গ্রেফতার এবং অন্য কোনো
জেলে নিয়ে গেলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের একচ্ছত্র অধিপতি
হবেন এবং তখন তারেক রহমানের এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
খালেদা গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে দলের আপসকামী সিনিয়র নেতারা ছিটকে যাবে দল
থেকে। তৈরি হবে সাহসী ত্যাগী নতুন নেতৃত্ব, যারা সরকারের জন্য অনেক বেশি
মাথাব্যথার কারণ হবে। এই নতুন ত্যাগী নেতারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে
দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপিকে চূড়ান্ত বিজয়ে নিয়ে যাবে। ইতিহাস
তা-ই সাক্ষ্য দেয়। সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে তারেক রহমানকে পথ করে
দেওয়া, অন্তত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে ভুল করবেন না। তবে চেয়ারপারসনের
চার পাশের সব সরকারবৈরী নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করার চাপ অবশ্যই অব্যাহত
থাকবে।
মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।
মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।
No comments