পায়ে ভর করে পাঠ! by উজ্জ্বল মেহেদী
বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন |
(সিলেটের
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ডাকাতির বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন
পরিত্যক্ত। তাই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় এলাকার একটি বাড়ির উঠানে।
ডাকাতির বাড়ি গ্রাম থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো) বাড়ির
উঠানে বই হাতে শিক্ষক আর তাঁর চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে শিশুরা।
একনাগাড়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পা ব্যথা করছিল কারও কারও। সে
কথা জানাতেই শিক্ষকের নির্দেশে বসে পড়ল তারা। তবে বসতে হলো মাটিতে। কারণ,
বেঞ্চ নেই।
তারা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকার ডাকাতির বাড়ি গ্রামের ডাকাতির বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ধরায় ২০১০ সালে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে পাঠদান চলছে কখনো এর বাড়ি, কখনো ওর বাড়ির উঠানে, বারান্দায়।
পড়ানো শেষ হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জামাল আহমদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। শিশুদের দাঁড়িয়ে পড়ানো হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে জামাল আহমেদ বলেন, মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এ ব্যবস্থা। শ্রেণিকক্ষ থাকলে এমনটি করতে হতো না। তা ছাড়া অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শিশুদের পায়ে ব্যথা হয়। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা পড়াশোনা করছে, তাদের অধিকাংশই দিনমজুর পরিবারের সন্তান। হয়তো এ কারণে ভবন সংস্কার হয় না, ক্লাস রুমে বসারও জো হয় না।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরপাড়ের পাঁচটি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে ডাকাতির বাড়ি গ্রাম। বিদ্যালয়ের অবস্থান গ্রামের উত্তর দিকে।
শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। শিক্ষার্থী ২৮৮ জন, শিক্ষক চারজন। ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। নিজস্ব ৮১ শতক জায়গা আছে। এর একাংশে ১৯৯০ সালে একটি পাকা ভবন করা হয়। ২০১০ সালের শুরুতে ওই ভবনের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। বড় কোনো অঘটন ঘটতে পারে, এ আশঙ্কা থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের পাঠদান অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয় গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে প্রথম পর্যায়ে ছয় মাসের জন্য পাঠদান স্থানান্তরিত হয়। ওই বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই বিভিন্ন বাড়ির বারান্দা ও উঠানে পাঠদান শুরু হয়। ছয় মাস পর ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় পরে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। ২০১০ সালের এপ্রিলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতির বাড়িতে বিদ্যালয় চালানো হয়। এরপর আরও চারটি বাড়ি পরিবর্তন করে তারা। ২০১২ সালের এপ্রিলে বর্তমান সভাপতি মমতাজ মিয়া নিজের বাড়ির উঠান ও একটি বসতঘরের বারান্দা পাঠদানের জন্য বরাদ্দ দেন।
মমতাজ মিয়া জানান, তিনি পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। এ জন্য তাঁর বাড়ির আঙিনা ও বারান্দা বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গ্রামের কয়েকজন অভিযোগ করেন, হাওর এলাকা হওয়ায় যাতায়াত বিড়ম্বনার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এদিকে আসেন না, দেখেনও না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার অবসান হচ্ছে না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান বলেন, ‘বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাধিক আবেদন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে দিয়েছি। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরদিন্দু দাশ বলেন, ‘আমরা এবার পরিত্যক্ত ওই বিদ্যালয় ভবনের পাশে আরেকটি ঘর নির্মাণ করে তাদের কষ্ট লাঘব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এত দিন নেওয়া হয়নি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, শুরুতে ভাবা হয়েছিল পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবন সংস্কার করে পাঠদান চালানো হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া বিদ্যালয়ে আর পড়ানো সম্ভব নয়। এভাবে বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়েছে।
তারা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকার ডাকাতির বাড়ি গ্রামের ডাকাতির বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ধরায় ২০১০ সালে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে পাঠদান চলছে কখনো এর বাড়ি, কখনো ওর বাড়ির উঠানে, বারান্দায়।
পড়ানো শেষ হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জামাল আহমদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। শিশুদের দাঁড়িয়ে পড়ানো হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে জামাল আহমেদ বলেন, মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এ ব্যবস্থা। শ্রেণিকক্ষ থাকলে এমনটি করতে হতো না। তা ছাড়া অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শিশুদের পায়ে ব্যথা হয়। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা পড়াশোনা করছে, তাদের অধিকাংশই দিনমজুর পরিবারের সন্তান। হয়তো এ কারণে ভবন সংস্কার হয় না, ক্লাস রুমে বসারও জো হয় না।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরপাড়ের পাঁচটি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে ডাকাতির বাড়ি গ্রাম। বিদ্যালয়ের অবস্থান গ্রামের উত্তর দিকে।
শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। শিক্ষার্থী ২৮৮ জন, শিক্ষক চারজন। ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। নিজস্ব ৮১ শতক জায়গা আছে। এর একাংশে ১৯৯০ সালে একটি পাকা ভবন করা হয়। ২০১০ সালের শুরুতে ওই ভবনের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। বড় কোনো অঘটন ঘটতে পারে, এ আশঙ্কা থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয়ের পাঠদান অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয় গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে প্রথম পর্যায়ে ছয় মাসের জন্য পাঠদান স্থানান্তরিত হয়। ওই বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই বিভিন্ন বাড়ির বারান্দা ও উঠানে পাঠদান শুরু হয়। ছয় মাস পর ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় পরে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। ২০১০ সালের এপ্রিলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতির বাড়িতে বিদ্যালয় চালানো হয়। এরপর আরও চারটি বাড়ি পরিবর্তন করে তারা। ২০১২ সালের এপ্রিলে বর্তমান সভাপতি মমতাজ মিয়া নিজের বাড়ির উঠান ও একটি বসতঘরের বারান্দা পাঠদানের জন্য বরাদ্দ দেন।
মমতাজ মিয়া জানান, তিনি পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। এ জন্য তাঁর বাড়ির আঙিনা ও বারান্দা বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গ্রামের কয়েকজন অভিযোগ করেন, হাওর এলাকা হওয়ায় যাতায়াত বিড়ম্বনার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এদিকে আসেন না, দেখেনও না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার অবসান হচ্ছে না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান বলেন, ‘বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাধিক আবেদন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরে দিয়েছি। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরদিন্দু দাশ বলেন, ‘আমরা এবার পরিত্যক্ত ওই বিদ্যালয় ভবনের পাশে আরেকটি ঘর নির্মাণ করে তাদের কষ্ট লাঘব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এত দিন নেওয়া হয়নি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, শুরুতে ভাবা হয়েছিল পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবন সংস্কার করে পাঠদান চালানো হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া বিদ্যালয়ে আর পড়ানো সম্ভব নয়। এভাবে বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়েছে।
No comments