বাংলাদেশে অচলাবস্থা by তাহমিমা আনাম
বাংলাদেশের
জন্য গত মাসটি ছিল হতাশাব্যঞ্জক। ৫ই জানুয়ারি গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের
বর্ষপূর্তিতে বিরোধী জোট ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি- অবরোধ শুরু করে। এতে
যা এখনও অব্যাহত আছে। ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর তা কার্যত
দেশকে স্থবির অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ আর যত্রতত্র
সহিংসতা হচ্ছে নিত্যদিন। স্কুল আর কারখানাগুলো বন্ধ। ব্যবসায় ধস নামছে। আর
রাজধানীতে শহরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়ার সহজ কাজটা বিপজ্জনক
হয়ে উঠেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট বাসে পেট্রলবোমা
হামলার শিকার ব্যক্তিদের দিয়ে পূর্ণ।
বিরোধীদের দাবি নতুন একটি নির্বাচন। গত বছরের নির্বাচন বর্জনের ঠিক এক বছর পর তাদের এ দাবি সরকারের কঠোর জবাবের মুখোমুখি হয়েছে। বিরোধী অনেক নেতা কারাগারে। এর ফল হলো রাজনৈতিক অচলাবস্থা। নির্মম এ সংবাদের মধ্যে, ক্ষীণ একটি আশার আলো রয়েছে। সেটা হলো প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিয়োগ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তিনিই প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি (মোট হিন্দু জনসংখ্যা আনুমানিক ১০ শতাংশ)। বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়ে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে- প্রধান বিচারপতি যখন অবসরে যান স্বাভাবিকভাবে আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি এ পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন কিন্তু ১৯৭৭ সালে সর্বশেষ যখন অ্যাপিলেট ডিভিশনের সব থেকে সিনিয়র বিচারক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা জিয়াউর রহমানের (তার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে বিরোধী দলের চেয়ারপারসন) নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার অবসর গ্রহণের বয়স কমিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য্য ওই পদের জন্য অযোগ্য হয়ে যান। এবারে এসে, বিচারপতি সিনহার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতে বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধিকতর সংকল্পের বিষয়টি ফুটে ওঠে।
বিচারপতি সিনহা ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে চান। ১৮ই জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর তার প্রথম ভাষণে তিনি উপনিবেশ আমলের আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে আদালতের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে স্থিতিশীল প্রচেষ্টার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়াও তিনি বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান, অধিকতর স্বচ্ছতা এবং অধিকতর গণতান্ত্রিক পন্থায় নিজেদের আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করার জন্য, কঠোরতর পরিশ্রম করার জন্য।
এক যুগ আগে যখন আমার নিজের বাড়িতে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছিল তখন যদি বিচারপতি সিনহা থাকতেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আমার পিতাকে ৩০টিরও বেশি আদালত অবমাননা ও মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি সংবাদপত্রের একজন স্পষ্টবাদী সম্পাদক। মিসেস জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের ক্রোধ উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। অসংখ্য নাগরিককে দিয়ে অভিযোগ দাখিল করিয়ে কর্তৃপক্ষ আমার পিতাকে হয়রানি করে। পুরো দেশজুড়ে বিভিন্ন আদালতে এসব মামলা দায়ের করা হয়। কাজেই মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে সফরের পেছনে বেশকিছু সময় ব্যয় করেন তিনি। একবার ঢাকা হাইকোর্টে আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া একজনের পিতার দায়ের করা অবমাননা অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েছিলেন। আমার বাবা তখন দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশক ছিলেন। তিনি হাইকোর্টে ১৯ বিচারকের নিয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। একবারে এতো বেশি সংখ্যক বিচারকের নিয়োগের বিষয়টা তখন ছিল নজিরবিহীন। সংবাদপত্র এর তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন বিচারকদের পূর্বযোগ্যতা যাচাই করতে গিয়ে প্রথম আলোর এক রিপোর্টার জানতে পারেন যে, একজন বিচারক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল জাল করেছিলেন। একটি অংশে তিনি অকৃতকার্য হলেও সেখানে পাস দেখিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত পরিচালনা করেছিল; আর পত্রিকা স্রেফ তা ছাপিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ওই বিচারকের পিতা আমার পিতার বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ আনেন।
আমার বাবার আইনজীবী আর বিচারক যেভাবে মামলাটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তাতে আমি বিস্মিত হই। তারা অবমাননা আইন নিয়ে প্রাণবন্ত আর বন্ধুসুলভ আলোচনা শুরু করেন। পরিশেষে, যদিও বিচারক আমার বাবাকে দণ্ডিত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আইন যেভাবে লেখা আছে, ‘সত্য আত্মপক্ষ সমর্থনের উপকরণ নয়’। অন্য কথায়, ওই রিপোর্ট সত্যি কি মিথ্যা সেটা যায় আসে না। একজন বিচারককে নিয়ে নেতিবাচক গল্প ছাপা হয়েছে সেটাই বিষয়। কুখ্যাত অস্পষ্ট এ আইন যে সময় লেখা হয়েছে তখন বিচারকেরা ছিলেন ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপক। আর অভিযুক্তরা ছিল তাদের অধীনস্থ বা প্রজা। অন্যান্য ঔপনিবেশিক আইন যেমন ধর্ষণ মামলা পরিচালনা আইনের সংস্কার করা ভীষণ প্রয়োজন। ভারতে দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি জে.এস ভার্মার নেতৃত্বে একটি কমিশন ধর্ষণের আইনি বিধান পর্যালোচনা করে এ অপরাধের নতুন ও বৃহত্তর এক সংজ্ঞার সুপারিশ করেছেন। বাংলাদেশে একইরকম সংস্কারের শক্তিশালী প্রভাব পড়বে যেখানে অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে দোষারোপ আর ধর্ষণ মামলায় সামান্যই দণ্ডিত হবার সংস্কৃতি বিদ্যমান। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার শুধুমাত্র সেকেলে আইনে আটকে রয়েছে তা নয়, ‘ওভারওয়ার্কড’ এক পদ্ধতির দ্বারাও এটা থমকে আছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে অমীমাংসিত মামলা রয়েছে ৩ লাখেরও বেশি। আর জেলা আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা ২৪ লাখ।
বিচারপতি সিনহা বিচারকদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি আদালতের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আরও স্বয়ংক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আইন কোন প্রাচীন বস্তুর মতো নয় যে, তা নামিয়ে এনে, তাতে মুগ্ধ হয়ে আবার বইয়ের তাকে উঠিয়ে রাখা যাবে।’ তিনি চান তার আদালত ‘সকল জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা’ উপভোগ করুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে, উদযাপনের উপলক্ষ খুঁজে বের করা কঠিন। এমনও নয় যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণ মৌলিকভাবে পাল্টেছে। আদিবাসীদের বৃহৎ একটি জনসংখ্যার নিবাস পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও ব্যাপকভাবে উগ্রপন্থার শিকার, নিয়মিতই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আইনি প্রক্রিয়ায় দমন-পীড়নেরও একটি সংস্কৃতি রয়েছে যা উদ্বেগজনক। আর বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব সহজ কোন কাজ নয়; আমাদের আদালতের শুদ্ধতা ও এর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা জোরদার করা। বিচারপতি সিনহার নিয়োগ যাবতীয় সঙ্কট মোচনের কোন উপায় নয়। কিন্তু তিনি যদি তার প্রথম মন্তব্যগুলোতে অটল থাকেন, তাহলে বিচারপতি সিনহা হতে পারেন সেই নেতা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনুদিত
লেখক পরিচিতি: তাহমিমা আনান, একজন লেখক ও নৃতত্ত্ববিদ, ‘এ গোল্ডেন এজ’ উপন্যাসের রচয়িতা।
বিরোধীদের দাবি নতুন একটি নির্বাচন। গত বছরের নির্বাচন বর্জনের ঠিক এক বছর পর তাদের এ দাবি সরকারের কঠোর জবাবের মুখোমুখি হয়েছে। বিরোধী অনেক নেতা কারাগারে। এর ফল হলো রাজনৈতিক অচলাবস্থা। নির্মম এ সংবাদের মধ্যে, ক্ষীণ একটি আশার আলো রয়েছে। সেটা হলো প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিয়োগ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তিনিই প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি (মোট হিন্দু জনসংখ্যা আনুমানিক ১০ শতাংশ)। বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়ে থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে- প্রধান বিচারপতি যখন অবসরে যান স্বাভাবিকভাবে আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি এ পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন কিন্তু ১৯৭৭ সালে সর্বশেষ যখন অ্যাপিলেট ডিভিশনের সব থেকে সিনিয়র বিচারক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা জিয়াউর রহমানের (তার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে বিরোধী দলের চেয়ারপারসন) নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার অবসর গ্রহণের বয়স কমিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য্য ওই পদের জন্য অযোগ্য হয়ে যান। এবারে এসে, বিচারপতি সিনহার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতে বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধিকতর সংকল্পের বিষয়টি ফুটে ওঠে।
বিচারপতি সিনহা ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে চান। ১৮ই জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর তার প্রথম ভাষণে তিনি উপনিবেশ আমলের আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে আদালতের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে স্থিতিশীল প্রচেষ্টার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়াও তিনি বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান, অধিকতর স্বচ্ছতা এবং অধিকতর গণতান্ত্রিক পন্থায় নিজেদের আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করার জন্য, কঠোরতর পরিশ্রম করার জন্য।
এক যুগ আগে যখন আমার নিজের বাড়িতে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছিল তখন যদি বিচারপতি সিনহা থাকতেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আমার পিতাকে ৩০টিরও বেশি আদালত অবমাননা ও মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি সংবাদপত্রের একজন স্পষ্টবাদী সম্পাদক। মিসেস জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের ক্রোধ উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। অসংখ্য নাগরিককে দিয়ে অভিযোগ দাখিল করিয়ে কর্তৃপক্ষ আমার পিতাকে হয়রানি করে। পুরো দেশজুড়ে বিভিন্ন আদালতে এসব মামলা দায়ের করা হয়। কাজেই মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে সফরের পেছনে বেশকিছু সময় ব্যয় করেন তিনি। একবার ঢাকা হাইকোর্টে আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া একজনের পিতার দায়ের করা অবমাননা অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েছিলেন। আমার বাবা তখন দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশক ছিলেন। তিনি হাইকোর্টে ১৯ বিচারকের নিয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। একবারে এতো বেশি সংখ্যক বিচারকের নিয়োগের বিষয়টা তখন ছিল নজিরবিহীন। সংবাদপত্র এর তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন বিচারকদের পূর্বযোগ্যতা যাচাই করতে গিয়ে প্রথম আলোর এক রিপোর্টার জানতে পারেন যে, একজন বিচারক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল জাল করেছিলেন। একটি অংশে তিনি অকৃতকার্য হলেও সেখানে পাস দেখিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত পরিচালনা করেছিল; আর পত্রিকা স্রেফ তা ছাপিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ওই বিচারকের পিতা আমার পিতার বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ আনেন।
আমার বাবার আইনজীবী আর বিচারক যেভাবে মামলাটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তাতে আমি বিস্মিত হই। তারা অবমাননা আইন নিয়ে প্রাণবন্ত আর বন্ধুসুলভ আলোচনা শুরু করেন। পরিশেষে, যদিও বিচারক আমার বাবাকে দণ্ডিত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আইন যেভাবে লেখা আছে, ‘সত্য আত্মপক্ষ সমর্থনের উপকরণ নয়’। অন্য কথায়, ওই রিপোর্ট সত্যি কি মিথ্যা সেটা যায় আসে না। একজন বিচারককে নিয়ে নেতিবাচক গল্প ছাপা হয়েছে সেটাই বিষয়। কুখ্যাত অস্পষ্ট এ আইন যে সময় লেখা হয়েছে তখন বিচারকেরা ছিলেন ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাপক। আর অভিযুক্তরা ছিল তাদের অধীনস্থ বা প্রজা। অন্যান্য ঔপনিবেশিক আইন যেমন ধর্ষণ মামলা পরিচালনা আইনের সংস্কার করা ভীষণ প্রয়োজন। ভারতে দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি জে.এস ভার্মার নেতৃত্বে একটি কমিশন ধর্ষণের আইনি বিধান পর্যালোচনা করে এ অপরাধের নতুন ও বৃহত্তর এক সংজ্ঞার সুপারিশ করেছেন। বাংলাদেশে একইরকম সংস্কারের শক্তিশালী প্রভাব পড়বে যেখানে অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে দোষারোপ আর ধর্ষণ মামলায় সামান্যই দণ্ডিত হবার সংস্কৃতি বিদ্যমান। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার শুধুমাত্র সেকেলে আইনে আটকে রয়েছে তা নয়, ‘ওভারওয়ার্কড’ এক পদ্ধতির দ্বারাও এটা থমকে আছে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে অমীমাংসিত মামলা রয়েছে ৩ লাখেরও বেশি। আর জেলা আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা ২৪ লাখ।
বিচারপতি সিনহা বিচারকদের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি আদালতের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আরও স্বয়ংক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আইন কোন প্রাচীন বস্তুর মতো নয় যে, তা নামিয়ে এনে, তাতে মুগ্ধ হয়ে আবার বইয়ের তাকে উঠিয়ে রাখা যাবে।’ তিনি চান তার আদালত ‘সকল জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা’ উপভোগ করুক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে, উদযাপনের উপলক্ষ খুঁজে বের করা কঠিন। এমনও নয় যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণ মৌলিকভাবে পাল্টেছে। আদিবাসীদের বৃহৎ একটি জনসংখ্যার নিবাস পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও ব্যাপকভাবে উগ্রপন্থার শিকার, নিয়মিতই সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আইনি প্রক্রিয়ায় দমন-পীড়নেরও একটি সংস্কৃতি রয়েছে যা উদ্বেগজনক। আর বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব সহজ কোন কাজ নয়; আমাদের আদালতের শুদ্ধতা ও এর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা জোরদার করা। বিচারপতি সিনহার নিয়োগ যাবতীয় সঙ্কট মোচনের কোন উপায় নয়। কিন্তু তিনি যদি তার প্রথম মন্তব্যগুলোতে অটল থাকেন, তাহলে বিচারপতি সিনহা হতে পারেন সেই নেতা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনুদিত
লেখক পরিচিতি: তাহমিমা আনান, একজন লেখক ও নৃতত্ত্ববিদ, ‘এ গোল্ডেন এজ’ উপন্যাসের রচয়িতা।
No comments