ঋণের কিস্তি রেখেই পরপারে
গতকাল বিকেলে মারা যান শহীদুল ইসলাম |
সপ্তাহে
ঋণের কিস্তি ছিল ৭০০ টাকা। বাধ্য হয়ে ট্রাকে উঠেছিলেন। পেট্রলবোমায়
পুড়ে আট দিন পড়ে ছিলেন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায়
গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। তাঁর নাম শহীদুল ইসলাম (৩৮)। বাড়ি পবা
উপজেলার মুন্না ডায়িং এলাকায়। তিনি ট্রাকচালক সাইদুল ইসলামের সহকারী
ছিলেন। সাইদুল ইসলাম এখনো বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। ২ ফেব্রুয়ারি রাত
আটটার দিকে রাজশাহী নগরের মোল্লাপাড়া এলাকার লিলি সিনেমা হলের পাশে তাঁদের
ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলা হয়। তাঁরা পদ্মা নদী থেকে বালু তুলে এক ক্রেতার
বাড়িতে ঢেলে দিয়ে খালি গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পেট্রলবোমায়
শহীদুলের মুখসহ শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাঁকে দেখে চেনার উপায় ছিল
না। ঘটনার পরের দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এমনভাবে পড়ে আছেন,
বোঝার উপায় নেই জীবিত না মৃত। তাঁর স্ত্রী মঞ্জুরা বেগম পাশে নির্বাক
বসেছিলেন। এই অবরোধের মধ্যে ভাড়া নিয়ে গিয়েছিলেন কেন—জানতে চাইলে তিনি
বলেছিলেন, নিজের ঘর নেই। তাই কয়েকখানা টিন কিনে একটা ঘর তুলেছেন। এ কাজ
করতে গিয়ে একটি সংস্থা থেকে ১ হাজার ৫০০, আরেকটি থেকে নয় হাজার টাকা ঋণ
নিয়েছিলেন। সপ্তাহে ৭০০ টাকা করে কিস্তি টানতে হয়। অবরোধ শুরুর পর থেকে
আর ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। এদিকে বাড়িতেও নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হওয়ার
উপক্রম হয়েছিল। কোনো উপায় না দেখে সাইদুল ইসলামের সঙ্গে ট্রাকে উঠেছিলেন।
তখন মঞ্জুরা বলেন, সুস্থ মানুষটা পঙ্গু হয়ে গেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁদের
মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। গতকাল বিকেলে শহীদুল মারা গেলে তাঁর
শোকাতুর স্ত্রীকে সামলানো যাচ্ছিল না। শহীদুলের লাশ মর্গে রেখে মঞ্জুরাকে
বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শহীদুলের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় (১৬) বলে, তার
বাবাকে পেট্রলবোমা মেরে যারা হত্যা করেছে, সে তাদের ফাঁসি চায়। রাজশাহী
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন,
শহীদুলের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার চেয়ে ভয়াবহ
ব্যাপার হচ্ছে তাঁর ফুসফুস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে তাঁকে যথাযথ
চিকিৎসা দেওয়া হলেও কোনো কাজে আসছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো গেল
না।
No comments