বর্তমান প্রজন্ম কি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে by কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

এটা এখন বড় প্রশ্ন যে, দেশে যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকে এবং সময় সময় সহিংসতা ও জানমালের ওপর হামলা হয়, প্রাথমিক থেকে উচ্চস্তরের শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় এবং অর্থনীতি ও সমাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়_ এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ কর্মকাণ্ড ঘটতে থাকে, তাহলে বর্তমানে যারা শিক্ষার্থী বা সদ্য স্নাতক তারা কি তাদের অভীষ্টে পেঁৗছতে পথচলায় মনোনিবেশ করতে পারবেন? চলাফেরা যেখানে ঝুঁকির মুখে, জীবন যেখানে অনিশ্চয়তায় আক্রান্ত, সেখানে নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে, দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে তারা কেমন করে আগ্রহী হবেন এবং কঠোর পরিশ্রম করবেন? এই বাস্তবতা দেশের সব পেশার মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ওই রকম বৈরী পরিবেশে কৃষি, কৃষক, কৃষি শ্রমিক যে তিনে মিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত তা বিপন্ন হয়ে ওঠে। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয় যাতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার পণ্যসামগ্রী পরিবহন বাধাগ্রস্ত ও এ কাজে নিয়োজিতদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, কৃষক উচিত মূল্য পান না, তার আয়ে ধস নামে। কৃষি খাত হয় ক্ষতিগ্রস্ত এবং কৃষি শ্রমিকরা হন কর্মহীন। জীবনযুদ্ধে জর্জরিত বিভিন্ন খাতে অন্যান্য স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মানুষ (যথা_ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক উৎপাদক, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মাছচাষি, দিনমজুর, রিকশাচালক) আর্থিক মহাসংকটে পড়েন_ জীবন চালাতে, ছেলেমেয়েদের বর্তমান রক্ষা করতে ও ভবিষ্যৎ গড়তে। অস্থিতিশীল ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পণ্য পরিবহন বিঘি্নত হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে এবং রফতানি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে জনজীবন হয় বিপর্যস্ত এবং দেশের আর্থ-সামাজিক আকাশ হয় কালো মেঘে আচ্ছন্ন। ঠিক এ রকমই পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিকে ঘিরে অর্থাৎ ২০১৫-এর ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে।
সহিংসতায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিল চলল, স্বজনহারাদের আহাজারি আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগল, অর্থনীতি হলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, রফতানি খাত ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ল, চলাফেরা বিশেষ করে দূরপাল্লার যাত্রায় জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি হলো। ২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি। ২০১০ সালের সহিংসতার উৎস আপাত রাজনৈতিক মনে হলেও তা ছিল মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর লক্ষ্যে। এবারও তাই। এটি রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার স্তর ছাড়িয়ে ঘটনাপ্রবাহ সন্ত্রাসে রূপ নিয়েছে। যাদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে, পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, সাধারণ মানুষ। সহিংসতা, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে-গাড়িতে আগুন দেওয়া, অর্থনীতির ক্ষতি করা বা অবকাঠামো ধ্বংস করা রাজনীতির ভাষা হতে পারে না।
বাংলাদেশের ললাটে দুটি জ্বলজ্বলে কলঙ্ক ছিল। একটির অবসান হলেও অপরটি জ্বলছে এখনও, নেভেনি। দেশের মানুষ, দেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর থেকে বিধ্বংসী আঘাত হানছে। একটি কলঙ্ক ছিল বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকারীদের বিচারের বদলে সম্মানদান। স্বস্তির বিষয়, এদের বিচার হয়েছে এবং কয়েকজনের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে রায় কার্যকর করার লক্ষ্যে জোরদার কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। তাদের বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
অপরটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করা। এমনকি তাদের কয়েকজন এ দেশে মন্ত্রিত্ব করেছেন, গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। তবে গত ৫ বছরে একজনের ক্ষেত্রে রায় কার্যকর হলেও অন্যদের ক্ষেত্রে সে রকমটি এখনও ঘটেনি। বিচার চলছে, রায় দেওয়া হচ্ছে, আপিল করা হচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে বিচারের বিরুদ্ধে সহিংস, সশস্ত্র কার্যকলাপের।
যা হতে পারত নির্বাচন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দাবির ভিত্তিতে রাজনৈতিক আন্দোলন, তা দখল করে নিয়েছে সহিংসতা, সশস্ত্র হামলা ও ধ্বংসলীলা। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান অবশ্যই খুঁজতে হবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বা সংলাপের মাধ্যমে। কিন্তু যা নিছক সহিংসতা ও ধ্বংসলীলা এবং যখন তা আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর লক্ষ্যেও, তার সমাধান রাজনৈতিক অঙ্গনে খোঁজা যাবে না। সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। তাই যারা এ ধরনের নাশকতায় লিপ্ত হয়, মানুষ পুড়িয়ে মারে অথবা পঙ্গু করে, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত করে, মানুষের জীবনযাপন হুমকির মুখে ঠেলে দেয়, তাদের শক্ত হাতে দমন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তবে একদিকে যখন এ কাজ করা হবে তখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করার লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা জরুরি। কিন্তু যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে সহিংস ও সশস্ত্র অবস্থান নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে সংলাপ জাতির বিবেক-পরিপন্থী। কাজেই বর্জনীয়।
সুস্থ, অংশীদারিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে এবং তা দীর্ঘ মেয়াদে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের সংবিধানে সমুজ্জ্বল চারটি মূলনীতির বাস্তব প্রয়োগ জরুরি। এগুলো হলো ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিষ্কার প্রতিফলন ঘটেছে এই চার মূলনীতিতে। এই মূলনীতিগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে প্রকটভাবে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের স্থলে একটি সুষম সমাজ গঠন অর্থাৎ ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোত্র, আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সবার জন্য সমসুযোগ সৃষ্টি, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং প্রত্যেকের মানবমর্যদায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। যার যার ধর্ম পালনে কোনো বাধা নেই। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। রাষ্ট্র থাকবে নিরপেক্ষ আর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ধর্মের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার একটি চলমান উৎস। সাম্প্র্রদায়িকতার সহিংস প্রকাশ ঘটে থাকে সময় সময়, স্থানে স্থানে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতেও ধর্মের দোহাই প্রধান অস্ত্র। যুদ্ধাপরাধীরা ইসলাম ধর্মের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা ও ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ন্যক্কারজনক অত্যাচার-হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল এ দেশের অগণিত নারী-পুরুষ-শিশুর ওপর। এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে ইসলাম ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে ব্যবহার করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে এবং আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত এই সাংবিধানিক মূলনীতি দেশে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
একই কারণে জাতীয়তাবাদও থেকে গেছে আক্রান্ত। ধর্মের নামে সংঘাত, সহিংসতা ও ধ্বংসলীলা, ধর্মান্ধতা, সাম্প্র্রদায়িকতা এবং নানা চক্রান্তের কারণে আমাদের জাতিসত্তার সার্বজনীনতা দুর্বল থেকে গেছে। জাতিসত্তার সর্বজনীন বিকাশ নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রকে এবং দেশের সচেতন মানুষকে জোরদারভাবে সচেষ্ট হতে হবে। আইনের ব্যবহার, প্রচারাভিযান, শিক্ষা বিস্তারসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করা এ ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। সেই চেতনায় রয়েছে দেশের সব নাগরিকের জন্য সমসুযোগ এবং সর্বজনীন মানবাধিকার ও মানবমর্যাদা নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার। আমাদের সাংবিধানিক তাগিদও তাই। ওই চেতনায় অঙ্গীকারবদ্ধ জনকেন্দ্রিক রাজনীতিই এ দেশে প্রকৃত, উদার ও কল্যাণধর্মী গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ধর্মান্ধতা, ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ, লোভ ও লালসা, অর্থ এবং পেশিশক্তি ও অস্ত্রশক্তি এ দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং উলি্লখিত পথে এ দেশে গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির মেলবন্ধন এবং মানবতার জয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ একত্রিত অভিযান জরুরি।
সমাজতন্ত্রের সঙ্গতভাবে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার। অর্থাৎ প্রত্যেকে তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করবেন। যথাযথ আইনের শাসন তা নিশ্চিত করবে এবং সমুন্নত রাখবে। সবার জন্য ন্যায়বিচারের মূলে রয়েছে সবার জন্য সমসুযোগ ও সেই আঙ্গিকে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করার তাগিদ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি জরুরি, তবে একই সঙ্গে তা হতে হবে ন্যায্যভাবে সুবণ্টিত। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিবর্তনে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। সবাইকে ন্যায্যভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬.২% হারে বেড়েছে বিগত ৬ বছর ধরে। বৈষম্য পরিমাপক জিআইএনআই সূচক অনুসারে আয়-বৈষম্য সার্বিকভাবে বিগত কয়েক বছরে কিছু কমেছে। তবে জাতীয় আয়ে সর্বোচ্চ ধনী ৫%-এর অংশ এখনও ২৫/২৬% আর সর্বমি্ন ৫%-এর অংশ মাত্র ০.৭৮%। সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে ৪০% থেকে বর্তমানে ২৪/২৫%-এ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১৯% থেকে ১২%-এ নেমে এসেছে। সামাজিক সূচকগুলোতেও অনেক উন্নতি ঘটেছে। খুবই উল্লেখযোগ্য অর্জন। কিন্তু সর্বনিম্নে অবস্থানকারী অতি দরিদ্র গোষ্ঠীগুলো রয়ে গেছে ব্যাপকভাবে অবহেলিত। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিবন্ধী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ভূমিহীন, কৃষি শ্রমিক, বিশেষ করে নারী কৃষি শ্রমিক, হাওরবাসী, পাহাড়বাসী, বস্তিবাসী, উপকূলীয় অতি দরিদ্র মানুষ, দেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের অতি দরিদ্র মানুষ। মানবকেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব গোষ্ঠীর দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ফরাসি অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটি তার সম্প্রতি প্রকাশিত বইয়ে (ক্যাপিটাল ইন টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি) দেখিয়েছেন, বিশ্বে আয়-বৈষম্য যত না প্রকট তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকট সম্পদ-বৈষম্য। সম্পদ বংশপরম্পরায় হস্তান্তরিত হয়ে বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর করে তোলে। অক্সফামের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সাল নাগাদ বিশ্বের ১ শতাংশ ধনীদের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ পুঞ্জীভূত হবে। বাংলাদেশে সম্পদ-বৈষম্য বিষয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্যের অভাব রয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, সম্পদ-বৈষম্য দ্রুতই বাড়ছে। সম্পদ আহরণে শুধু বৈধ নয়, অবৈধ পন্থা অনুসরণ করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। তাই ভূমিদস্যু, জলদস্যু, নদীদস্যু, বনদস্যু, ব্যাংক-দস্যুদের ব্যাপক দৌরাত্ম্য দেশে এখন ব্যাপক, যারা দখলদারিত্বের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন, শহর-গ্রাম সর্বত্রই। আর প্রচলিত বাজার অর্থনীতির কল্যাণেও ধনীদের আরও ধনী হওয়া এবং আরও সম্পদশালী হওয়ার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। অপরপক্ষে দরিদ্রদের সুযোগ খুবই সীমিত।
সম্পদ-বৈষম্য এভাবে বাড়তে থাকলে সমাজে বৈষম্য প্রকট থেকে প্রকটতর হবে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্থাৎ মানুষকে কেন্দ্র করে আর্থ-সামাজিক বিবর্তন এবং পরিবেশ সংরক্ষণসাপেক্ষে উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। লোভ-লালসা এবং যেনতেন প্রকারে নিজ স্বার্থ উদ্ধার, নিজেকে আরও ধনী, আরও সম্পদশালী, আরও ক্ষমতাবান করার প্রবণতা সম্পদশালীদের মধ্যে, বিশেষ করে উপরের ১ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে আরও বাড়বে। পিছিয়ে থাকা ব্যাপক জনগোষ্ঠী হালে পানি পাবে না, নানা বেড়াজাল ভেঙে এগোতে পারবে না। সমাজে হানাহানি দেখা দেবে। আইনের শাসন, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সুস্থ সামাজিক বিকাশ সবই পড়বে ব্যাপক হুমকির মুখে। কাজেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।
মোট কথা, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার এই চার মূলনীতি বাস্তবে কার্যকরভাবে পালিত হলে, দেশে একটি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সুস্থ, গণমুখী পরিবেশ সৃষ্টি হবে, বজায় থাকবে। ক্ষমতার হস্তান্তর হবে দেশের কোটি মানুষের ইচ্ছায়। থেকে থেকে সহিংস এবং ধ্বংসাত্মক পরিবেশে না পড়ে, দেশের সব মানুষ নিজেদের এগিয়ে নিতে, নিজেদের পেশাকে এগিয়ে নিতে এবং দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে নিরলসভাবে প্রয়াস চালাতে পারবেন।
অর্থনীতিবিদ

No comments

Powered by Blogger.