দগ্ধদের নিয়ে বাণিজ্য! by মেহেদী হাসান
(ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের এইচডিইউতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু এভাবেই সেখানে অবাধে ঢুকে পড়ছেন দর্শক, সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যানরা। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অনেকটা বাধ্য করছেন ছবির জন্য পোজ দিতে : সংগৃহীত) আগুনে
পোড়া রোগীদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে মিউজিক ভিডিও! হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে
মৃত্যুর সাথে লড়ে যাওয়া রোগীদের বানানো হচ্ছে মডেল। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা
মানুষগুলোকে ভিডিও ক্যামেরার সামনে বাধ্য করা হচ্ছে পোজ দিতে। ক্যামেরা,
সানগানের তীব্র আলো, মডেল (নায়িকা), মেকাপম্যান, পরিচালক আর সহযোগীদের ভিড়ে
কিছু সময়ের জন্য বার্ন ইউনিট হয়ে উঠছে আউটডোর শুটিং স্পট। আর এভাবেই
রাজনৈতিক নৃশংসতার আগুনে পোড়া ক্ষতবিক্ষত মানুষদের নিয়ে ব্যবসায় মেতে
উঠেছে একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানী। তারা হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতর
রোগীদের পোড়া-ঝলসানো চেহারা নানাভাবে ভিডিও করে ও ছবি তুলে ব্যবহারের সুযোগ
দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঘটেছে এ ধরনের সীমাহীন অমানবিক ঘটনা। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে বেরিয়ে এসেছে এহেন ভয়াবহ চিত্র। রোগীদের স্বজনদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, হরতাল- অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমায় দগ্ধ অসহায় রোগীদের নিয়ে রীতিমতো মিউজিক ভিডিওর শুটিং করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর অসুস্থ একজন রোগীর দুই হাত ওপরে তুলে দাঁড়ানো অবস্থায় পেছনে কালো পর্দা ধরে ছবি তোলার দৃশ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যাক টিভি ক্যামেরার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইনের অসংখ্য সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনদের ভিড় পোহাতে হচ্ছে যন্ত্রণাকিষ্ট পোড়া রোগীদের। ক্রমাগত ভিডিও এবং ফটো তোলার ঘটনায় অতিষ্ঠ রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজনেরা। তাদের কারণে রোগীরা নির্ধারিত বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে পারছেন না। তার ওপর দগ্ধ রোগীদের নিয়ে একশ্রেণীর লোকের ব্যবসার ঘটনায় বিমর্ষ বার্ন ইউনিটের কোনো কোনো রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন।
গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের পর্যবেক্ষণ কক্ষে আগুনে পোড়া এক রোগীর পাশে একজন নারী মডেলকে দাঁড় করিয়ে একটি মিউজিক ভিডিওর দৃশ্য ধারণ করা হয়। হাইহিল পরিহিত শহুরে এক সুন্দরী মডেলকন্যা আগুনে পোড়া রোগীর মাথায় হাত রেখে ভিডিও দৃশ্য করেন। এর আগে সেখানেই তাকে গ্রামীণ ঢঙয়ে একটি চেক শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। এলোচুলে পোড়া রোগীকে দেখে কান্নার ভিডিও দৃশ্য ধারণ করার সময় মডেল কোনোভাবেই চোখে পানি আনতে পারছিলেন না। তখন পরিচালকের নির্দেশে পাশ থেকে এক সহযোগী মডেলের চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে দেয়। আবার শুটিং শুরু হয়। এ সময় আশপাশ থেকে অনেক লোক জড়ো হয় শুটিং দেখার জন্য। কেউ কেউ গিয়ে দাঁড়ায় ক্যামেরার সামনে নিজেদের চেহারা ভিডিও দৃশ্যে ধারণ করার জন্য। ততক্ষণে গোটা বার্ন ইউনিটের রোগীদের অবস্থা কাহিল।
রোগীদের স্বজনেরা জানান, প্রায় সর্বক্ষণই কোনো না কোনো টিভির পক্ষ থেকে বার্ন ইউনিটে ভিডিও করার ঘটনা ঘটে। বার্ন ইউনিটের মধ্যে এ ধরনের মিউজিক ভিডিওর ঘটনা দেখে সেখানে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকেরা মিউজিক ভিডিওর ক্যামেরাম্যানকে চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। তার নাম রফিক্লু ইসলাম। কোন টিভির সাংবাদিক জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি গানের ভিডিও সরবরাহ করার জন্য তিনি এ ভিডিও তৈরি করছেন। বিটিভির কথা বলাতে কেউ আর উচ্চবাচ্য না করলেও এ ধরনের কাণ্ডে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি কারো নজর এড়ায়নি।
সেই ঘটনার পর গত শনিবার বার্ন ইউনিটের পর্যবেক্ষণ ইউনিটে একজন নারীসহ ছয়জনের একটি শুটিং দল সেখানে প্রবেশ করে পোড়া রোগীদের দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করে। তখন রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়।
বার্ন ইউনিটের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) মারাত্মক পোড়া রোগীদের রাখা হয়। গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায় বেডে শুয়ে আছেন কুমিল্লা থেকে আসা খোকন নামের এক আগুনে পোড়া রোগী। তার মুখমণ্ডল এমনভাবে দগ্ধ হয়েছে যে, তার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এই খোকনকেই দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার ঘটনা ছবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সে ছবিতে দেখা যায় খোকন তার পোড়া দুই হাত ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় ওপরে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে বড় একটি কালো পর্দা টানানো। আর খোকনের সামনে দাঁড়িয়ে একজন লোক ছবি তুলছে।
যে চিত্রগ্রাহক খোকনকে এভাবে দাঁড় করিয়ে কালো পর্দা লাগিয়ে ছবি তুলেছে তাকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা চলছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের নামে এ ধরনের কাজ কেউ করতে পারে কি নাÑ এ জাতীয় নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে।
পোড়া রোগীর পাশে মডেল দাঁড় করিয়ে শুটিং করা বিষয়ে মোবাইলে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার সম্পর্কে মিডিয়ায় যা লেখা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি কোনো মডেল নিয়ে সেখানে যাইনি। আমার সাথে মাত্র দুইজন লোক ছিল। শুটিং করার সময় আশপাশের অনেক কৌতূহলী লোক সেখানে ভিড় জমায়।
রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয় ছবিতে রোগীর পাশে খোলা চুলে গায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি তাহলে কে। তিনি বলেন, আমি তা জানি না। সেখানে উপস্থিত কেউ একজন এভাবে দাঁড়িয়েছে। সেখানে আরো ১০-১৫ জন ক্যামেরাম্যান শুটিং করছিল। অনেক লোকের ভিড় ছিল। শুটিং করার সময় কান্নার চেহারা দেখানোর জন্য চোখে গ্লিসারিন লাগানোর ঘটনাও কি মিথ্যা?
এ প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, বার্ন ইউনিটে অনেক প্রকৃত কান্নার দৃশ্য পাওয়া যায়। গ্লিসারিন লাগাতে হবে কেন? পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে সে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
বার্ন ইউনিটে শুটিং দিয়ে তিনি কী করবেন জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রয়ারি শহীদ মিনারে হরতাল-অবরোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করবে। সেখানে তিনি তার এ ভিডিও প্রদর্শন করবেন বলে জানান।
রফিকুল ইসলাম জানান, মিউজিক ভিডিওর জন্য তিনি একটি গান লিখেছেন যার প্রথম লাইনগুলো এরকমÑ ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বার্ন ইউনিট হয় ঠিকানা/অসহায় মানুষেরা বিপন্ন আজ সভ্য জগৎ পেছনে চেয়ে দেখে না।
রফিকুল ইসলাম জানান, ‘উন্নয়নের ধারা বইছেরে বইছে, জননেত্রী হাল ধরেছে’ নামে তার লেখা একটি গান বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষেও তার একটি গান বিটিভিতে প্রচার হয়েছে। রফিকুল ইসলাম জানান, দৈনিক এই বাংলাদেশ নামে একটি পত্রিকার তিনি বার্তা সম্পাদক। তার ভিজিংটিং কার্ডে সাপ্তাহিক দুর্নীতি রিপোর্ট নামে একটি ম্যাগাজিনের নামও লেখা রয়েছে। রফিকুল ইসলামের প্রধান পরিচয় এবং পেশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি এবং লেখকই তার প্রধান পরিচয়।
পোড়া রোগীর পেছনে পর্দা লাগিয়ে ছবি তোলা বিষয়ে কথা হয় ফটোগ্রাফার সাইফুল হক অমির সাথে। সাইফুল হক বলেন, আমার ছবি তোলার বিষয়ে পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে এবং তার যে বিবরণ দেয়া হয়েছে সেভাবে যদি সত্যিই কেউ ছবি তুলে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমি এ ধরনের কোনো অপরাধ করিনি। এভাবে কোনো রোগীর ছবি আমি তুলিনি। আমাকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি ছবি তোলার সময় কোনো রোগীকে এক সেকেন্ডের জন্যও বিরক্ত করিনি, এক ইঞ্চিও কাউকে তার জায়গা থেকে সরতে বলিনি। ছবির জন্য কাউকে পোজ দিতে বলিনি। হাত তুলে দাঁড় করানোর তো প্রশ্নই আসে না।
তাহলে পত্রিকায় হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক রোগীর ছবিটি আসলে কিভাবে তৈরি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তৈরি করা ছবিতে কখনোই বিশ্বাসী নই, যা যেভাবে আছে সেভাবেই আমি তা তুলে ধরতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেদিন ওখানে যেসব রোগী ছিল তারা অনেকেই এমন পজিশনে ছিল যে, তা ছবি তোলায় তেমন সহায়ক ছিল না। কারণ আমি পত্রিকার জন্য ছবি তুলি না। আমি মুক্ত ফটোগ্রাফার। আমার ছবি একটু ভিন্ন হতে হয়। তাই আমি অপেক্ষা করছিলাম ভালো ছবি পাওয়ার জন্য। আমি তখন খোকন নামে ওই রোগীর পাশে ছিলাম। এক সময় খোকন কাশি দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল এবং যন্ত্রণা থেকে রক্ষার জন্য হাত নাড়াচাড়ার চেষ্টা করল। তার হাত পুড়ে যাওয়ার কারণে সে সবসময় হাত ওপরে তুলে রাখে। নিচে নামাতে পারে না। খোকন যখন নিজের প্রয়োজনে নিজের ইচ্ছাতেই দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমি তার অনুমতি নিয়ে একটি ছবি তুলি। এরপর তাকে তার জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও না সরিয়ে আমি আমার সহকর্মীকে দিয়ে খোকনের অনুমতি দিয়ে পেছনে একটি কালো কাপড় তুলে ধরতে বলি এবং ছবি তুলি।
পোড়া রোগীদের ছবি দিয়ে তিনি কী করবেন জানতে চাইলে সাইফুল হক অমি জানান, ‘হিরোজ নেভার ডাই-টেলস অব পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ ইন ২০০৬’ নামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তিনি এখনো পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স (রাজনৈতিক সহিংসতা) বিষয়ে ছবি তোলেন এবং সে জন্যই তিনি বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার অসহায় পোড়া রোগীদের ছবি তুলতে।
ছবি তোলা নিয়ে বিড়ম্বনা বিষয়ে এইচডিইউতে মারাত্মক পোড়া রোগীর একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, আমরা খুব অসহায়। যে যেভাবে পারছে ছবি নিচ্ছে, ভিডিও করছে। আমরা বাধা দিতে পারি না। অনেকে না করলেও বুঝতে চায় না। তারা বলে, এটা নাকি তাদের কাজ। টিভিতে দেখাবে। তাই আমাদের সবার কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি জানান, একে তো পোড়া রোগী নিয়ে কষ্টে আছি, তার ওপর দেশের অবস্থা ভালো নয়। আর বেশি কিছু বলতে চাই না। কী বলে আবার কোন বিপদ ডেকে আনি জানি না। আরেকজন রোগীর এক আত্মীয় জানান, বার্ন ইউনিট যেন এখন শুটিংজোন।
সৈয়দ সাইফুল আলম শোভনের পরিচিত এক পোড়া রোগী অবরোধের প্রথম দিকে ভর্তি হন বার্ন ইউনিটে। টিভি সাংবাদিকদের বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শোভন বলেন, টিভি সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান আর ফটোগ্রাফারদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলাম আমরা। ছবি তোলার সময় একবার বলে ডানে ফেরেন, আবার বলে বামে ফেরেন। আর সাক্ষাৎকার দিতে দিতে জান যায় রোগীদের। শোভন বলেন, তার আত্মীয়ের কণ্ঠনালী পর্যন্ত পোড়ায় ক্ষত হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাকে রেহাই দেয়া হয়নি সাক্ষাৎকার থেকে। টিভি সাংবাদিকেরা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। শোভনের মতে, এভাবে গণহারে লোকজন প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়। একটা কিছু নিয়মনীতি থাকা উচিত সাংবাকিদদের জন্যও। কেননা এসব পোড়ারোগীর বেশির ভাগই মারা যায় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে, যা বহিরাগতদের মাধ্যমে আসে।
রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরা জানান, রোগীর চেয়ে সাংবাদিক আর দর্শনার্থী বেশি। টিভি সাংবাদিকদের ভিড় তো আছেই তার ওপর আরো নানা শ্রেণীর লোকজন আসে এখানে। কোনো নতুন রোগী এলেই টিভি সাংবাদিকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
পোড়া রোগীদের সাহায্যে মিউজিক ভিডিও এবং শুটিংয়ের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনার মুখে পড়েছে ঢাকা মেড্যিকালের বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষও। এভাবে অবাধে যেকোনো লোকজনের যখন-তখন রোগীদের কক্ষে প্রবেশাধিকার থাকায় কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজকর্মী জানান, হরতাল-অবরোধ শুরুর পর কোনো কোনো গণমাধ্যমের বিশেষ করে টিভির একমাত্র গন্তব্য হয়ে গেছে বার্ন ইউনিট। বার্ন ইউনিটই এখন অনেক টিভির প্রধান খোরাক। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের ইচ্ছাতেই পোড়া রোগীদের বেশি বেশি করে টিভির পর্দায় দেখানোর কৌশল হিসেবেই বার্ন ইউনিটটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যে নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
বার্ন ইউনিটে শুটিং বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, এটা অত্যন্ত জঘন্য একটি কাজ। যারা এ কাজ করেছে তাদের বিবেক বলতে কিছু নেই। আমরা কেউ ভাবতে পারিনি এ ধরনের একটা কাজ এখানে হবে। আমরা এটা জানতাম না। সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে দিতে হয়। কিন্তু এরই ফাঁকে এটা হয়ে গেল। তিনি বলেন, একটি রেজিস্ট্রেশন বই মেনটেইন করা হবে এখন থেকে। যারাই আসবে তাদের নাম-পরিচয় এবং ঠিকানা লিখে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঘটেছে এ ধরনের সীমাহীন অমানবিক ঘটনা। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে বেরিয়ে এসেছে এহেন ভয়াবহ চিত্র। রোগীদের স্বজনদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, হরতাল- অবরোধ চলাকালে পেট্রলবোমায় দগ্ধ অসহায় রোগীদের নিয়ে রীতিমতো মিউজিক ভিডিওর শুটিং করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর অসুস্থ একজন রোগীর দুই হাত ওপরে তুলে দাঁড়ানো অবস্থায় পেছনে কালো পর্দা ধরে ছবি তোলার দৃশ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যাক টিভি ক্যামেরার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইনের অসংখ্য সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনদের ভিড় পোহাতে হচ্ছে যন্ত্রণাকিষ্ট পোড়া রোগীদের। ক্রমাগত ভিডিও এবং ফটো তোলার ঘটনায় অতিষ্ঠ রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজনেরা। তাদের কারণে রোগীরা নির্ধারিত বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে পারছেন না। তার ওপর দগ্ধ রোগীদের নিয়ে একশ্রেণীর লোকের ব্যবসার ঘটনায় বিমর্ষ বার্ন ইউনিটের কোনো কোনো রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন।
গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের পর্যবেক্ষণ কক্ষে আগুনে পোড়া এক রোগীর পাশে একজন নারী মডেলকে দাঁড় করিয়ে একটি মিউজিক ভিডিওর দৃশ্য ধারণ করা হয়। হাইহিল পরিহিত শহুরে এক সুন্দরী মডেলকন্যা আগুনে পোড়া রোগীর মাথায় হাত রেখে ভিডিও দৃশ্য করেন। এর আগে সেখানেই তাকে গ্রামীণ ঢঙয়ে একটি চেক শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। এলোচুলে পোড়া রোগীকে দেখে কান্নার ভিডিও দৃশ্য ধারণ করার সময় মডেল কোনোভাবেই চোখে পানি আনতে পারছিলেন না। তখন পরিচালকের নির্দেশে পাশ থেকে এক সহযোগী মডেলের চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে দেয়। আবার শুটিং শুরু হয়। এ সময় আশপাশ থেকে অনেক লোক জড়ো হয় শুটিং দেখার জন্য। কেউ কেউ গিয়ে দাঁড়ায় ক্যামেরার সামনে নিজেদের চেহারা ভিডিও দৃশ্যে ধারণ করার জন্য। ততক্ষণে গোটা বার্ন ইউনিটের রোগীদের অবস্থা কাহিল।
রোগীদের স্বজনেরা জানান, প্রায় সর্বক্ষণই কোনো না কোনো টিভির পক্ষ থেকে বার্ন ইউনিটে ভিডিও করার ঘটনা ঘটে। বার্ন ইউনিটের মধ্যে এ ধরনের মিউজিক ভিডিওর ঘটনা দেখে সেখানে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকেরা মিউজিক ভিডিওর ক্যামেরাম্যানকে চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। তার নাম রফিক্লু ইসলাম। কোন টিভির সাংবাদিক জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি গানের ভিডিও সরবরাহ করার জন্য তিনি এ ভিডিও তৈরি করছেন। বিটিভির কথা বলাতে কেউ আর উচ্চবাচ্য না করলেও এ ধরনের কাণ্ডে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি কারো নজর এড়ায়নি।
সেই ঘটনার পর গত শনিবার বার্ন ইউনিটের পর্যবেক্ষণ ইউনিটে একজন নারীসহ ছয়জনের একটি শুটিং দল সেখানে প্রবেশ করে পোড়া রোগীদের দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করে। তখন রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়।
বার্ন ইউনিটের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) মারাত্মক পোড়া রোগীদের রাখা হয়। গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায় বেডে শুয়ে আছেন কুমিল্লা থেকে আসা খোকন নামের এক আগুনে পোড়া রোগী। তার মুখমণ্ডল এমনভাবে দগ্ধ হয়েছে যে, তার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এই খোকনকেই দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার ঘটনা ছবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সে ছবিতে দেখা যায় খোকন তার পোড়া দুই হাত ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় ওপরে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে বড় একটি কালো পর্দা টানানো। আর খোকনের সামনে দাঁড়িয়ে একজন লোক ছবি তুলছে।
যে চিত্রগ্রাহক খোকনকে এভাবে দাঁড় করিয়ে কালো পর্দা লাগিয়ে ছবি তুলেছে তাকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা চলছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের নামে এ ধরনের কাজ কেউ করতে পারে কি নাÑ এ জাতীয় নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে।
পোড়া রোগীর পাশে মডেল দাঁড় করিয়ে শুটিং করা বিষয়ে মোবাইলে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার সম্পর্কে মিডিয়ায় যা লেখা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি কোনো মডেল নিয়ে সেখানে যাইনি। আমার সাথে মাত্র দুইজন লোক ছিল। শুটিং করার সময় আশপাশের অনেক কৌতূহলী লোক সেখানে ভিড় জমায়।
রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয় ছবিতে রোগীর পাশে খোলা চুলে গায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি তাহলে কে। তিনি বলেন, আমি তা জানি না। সেখানে উপস্থিত কেউ একজন এভাবে দাঁড়িয়েছে। সেখানে আরো ১০-১৫ জন ক্যামেরাম্যান শুটিং করছিল। অনেক লোকের ভিড় ছিল। শুটিং করার সময় কান্নার চেহারা দেখানোর জন্য চোখে গ্লিসারিন লাগানোর ঘটনাও কি মিথ্যা?
এ প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, বার্ন ইউনিটে অনেক প্রকৃত কান্নার দৃশ্য পাওয়া যায়। গ্লিসারিন লাগাতে হবে কেন? পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে সে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
বার্ন ইউনিটে শুটিং দিয়ে তিনি কী করবেন জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রয়ারি শহীদ মিনারে হরতাল-অবরোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করবে। সেখানে তিনি তার এ ভিডিও প্রদর্শন করবেন বলে জানান।
রফিকুল ইসলাম জানান, মিউজিক ভিডিওর জন্য তিনি একটি গান লিখেছেন যার প্রথম লাইনগুলো এরকমÑ ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বার্ন ইউনিট হয় ঠিকানা/অসহায় মানুষেরা বিপন্ন আজ সভ্য জগৎ পেছনে চেয়ে দেখে না।
রফিকুল ইসলাম জানান, ‘উন্নয়নের ধারা বইছেরে বইছে, জননেত্রী হাল ধরেছে’ নামে তার লেখা একটি গান বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষেও তার একটি গান বিটিভিতে প্রচার হয়েছে। রফিকুল ইসলাম জানান, দৈনিক এই বাংলাদেশ নামে একটি পত্রিকার তিনি বার্তা সম্পাদক। তার ভিজিংটিং কার্ডে সাপ্তাহিক দুর্নীতি রিপোর্ট নামে একটি ম্যাগাজিনের নামও লেখা রয়েছে। রফিকুল ইসলামের প্রধান পরিচয় এবং পেশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি এবং লেখকই তার প্রধান পরিচয়।
পোড়া রোগীর পেছনে পর্দা লাগিয়ে ছবি তোলা বিষয়ে কথা হয় ফটোগ্রাফার সাইফুল হক অমির সাথে। সাইফুল হক বলেন, আমার ছবি তোলার বিষয়ে পত্রিকায় যে ছবি ছাপা হয়েছে এবং তার যে বিবরণ দেয়া হয়েছে সেভাবে যদি সত্যিই কেউ ছবি তুলে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমি এ ধরনের কোনো অপরাধ করিনি। এভাবে কোনো রোগীর ছবি আমি তুলিনি। আমাকে সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি ছবি তোলার সময় কোনো রোগীকে এক সেকেন্ডের জন্যও বিরক্ত করিনি, এক ইঞ্চিও কাউকে তার জায়গা থেকে সরতে বলিনি। ছবির জন্য কাউকে পোজ দিতে বলিনি। হাত তুলে দাঁড় করানোর তো প্রশ্নই আসে না।
তাহলে পত্রিকায় হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এক রোগীর ছবিটি আসলে কিভাবে তৈরি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তৈরি করা ছবিতে কখনোই বিশ্বাসী নই, যা যেভাবে আছে সেভাবেই আমি তা তুলে ধরতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেদিন ওখানে যেসব রোগী ছিল তারা অনেকেই এমন পজিশনে ছিল যে, তা ছবি তোলায় তেমন সহায়ক ছিল না। কারণ আমি পত্রিকার জন্য ছবি তুলি না। আমি মুক্ত ফটোগ্রাফার। আমার ছবি একটু ভিন্ন হতে হয়। তাই আমি অপেক্ষা করছিলাম ভালো ছবি পাওয়ার জন্য। আমি তখন খোকন নামে ওই রোগীর পাশে ছিলাম। এক সময় খোকন কাশি দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল এবং যন্ত্রণা থেকে রক্ষার জন্য হাত নাড়াচাড়ার চেষ্টা করল। তার হাত পুড়ে যাওয়ার কারণে সে সবসময় হাত ওপরে তুলে রাখে। নিচে নামাতে পারে না। খোকন যখন নিজের প্রয়োজনে নিজের ইচ্ছাতেই দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল তখন আমি তার অনুমতি নিয়ে একটি ছবি তুলি। এরপর তাকে তার জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও না সরিয়ে আমি আমার সহকর্মীকে দিয়ে খোকনের অনুমতি দিয়ে পেছনে একটি কালো কাপড় তুলে ধরতে বলি এবং ছবি তুলি।
পোড়া রোগীদের ছবি দিয়ে তিনি কী করবেন জানতে চাইলে সাইফুল হক অমি জানান, ‘হিরোজ নেভার ডাই-টেলস অব পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ ইন ২০০৬’ নামে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তিনি এখনো পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স (রাজনৈতিক সহিংসতা) বিষয়ে ছবি তোলেন এবং সে জন্যই তিনি বার্ন ইউনিটে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার অসহায় পোড়া রোগীদের ছবি তুলতে।
ছবি তোলা নিয়ে বিড়ম্বনা বিষয়ে এইচডিইউতে মারাত্মক পোড়া রোগীর একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, আমরা খুব অসহায়। যে যেভাবে পারছে ছবি নিচ্ছে, ভিডিও করছে। আমরা বাধা দিতে পারি না। অনেকে না করলেও বুঝতে চায় না। তারা বলে, এটা নাকি তাদের কাজ। টিভিতে দেখাবে। তাই আমাদের সবার কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি জানান, একে তো পোড়া রোগী নিয়ে কষ্টে আছি, তার ওপর দেশের অবস্থা ভালো নয়। আর বেশি কিছু বলতে চাই না। কী বলে আবার কোন বিপদ ডেকে আনি জানি না। আরেকজন রোগীর এক আত্মীয় জানান, বার্ন ইউনিট যেন এখন শুটিংজোন।
সৈয়দ সাইফুল আলম শোভনের পরিচিত এক পোড়া রোগী অবরোধের প্রথম দিকে ভর্তি হন বার্ন ইউনিটে। টিভি সাংবাদিকদের বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শোভন বলেন, টিভি সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যান আর ফটোগ্রাফারদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলাম আমরা। ছবি তোলার সময় একবার বলে ডানে ফেরেন, আবার বলে বামে ফেরেন। আর সাক্ষাৎকার দিতে দিতে জান যায় রোগীদের। শোভন বলেন, তার আত্মীয়ের কণ্ঠনালী পর্যন্ত পোড়ায় ক্ষত হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাকে রেহাই দেয়া হয়নি সাক্ষাৎকার থেকে। টিভি সাংবাদিকেরা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। শোভনের মতে, এভাবে গণহারে লোকজন প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়। একটা কিছু নিয়মনীতি থাকা উচিত সাংবাকিদদের জন্যও। কেননা এসব পোড়ারোগীর বেশির ভাগই মারা যায় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে, যা বহিরাগতদের মাধ্যমে আসে।
রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরা জানান, রোগীর চেয়ে সাংবাদিক আর দর্শনার্থী বেশি। টিভি সাংবাদিকদের ভিড় তো আছেই তার ওপর আরো নানা শ্রেণীর লোকজন আসে এখানে। কোনো নতুন রোগী এলেই টিভি সাংবাদিকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
পোড়া রোগীদের সাহায্যে মিউজিক ভিডিও এবং শুটিংয়ের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনার মুখে পড়েছে ঢাকা মেড্যিকালের বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষও। এভাবে অবাধে যেকোনো লোকজনের যখন-তখন রোগীদের কক্ষে প্রবেশাধিকার থাকায় কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজকর্মী জানান, হরতাল-অবরোধ শুরুর পর কোনো কোনো গণমাধ্যমের বিশেষ করে টিভির একমাত্র গন্তব্য হয়ে গেছে বার্ন ইউনিট। বার্ন ইউনিটই এখন অনেক টিভির প্রধান খোরাক। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের ইচ্ছাতেই পোড়া রোগীদের বেশি বেশি করে টিভির পর্দায় দেখানোর কৌশল হিসেবেই বার্ন ইউনিটটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যে নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
বার্ন ইউনিটে শুটিং বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, এটা অত্যন্ত জঘন্য একটি কাজ। যারা এ কাজ করেছে তাদের বিবেক বলতে কিছু নেই। আমরা কেউ ভাবতে পারিনি এ ধরনের একটা কাজ এখানে হবে। আমরা এটা জানতাম না। সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে দিতে হয়। কিন্তু এরই ফাঁকে এটা হয়ে গেল। তিনি বলেন, একটি রেজিস্ট্রেশন বই মেনটেইন করা হবে এখন থেকে। যারাই আসবে তাদের নাম-পরিচয় এবং ঠিকানা লিখে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে।
No comments