সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি- মানবতা জেগে উঠুক
দেশ
বাঁচাতে হবে, অর্থনীতি বাঁচাতে হবে_ ব্যবসায়ীদের এ দাবির সঙ্গে আমরা একমত।
গতকাল রোববার তারা রাজপথে নেমে এসে অস্থিরতা থেকে মুক্তি চেয়েছেন। তাদের
হিসাবে ইতিমধ্যে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির। এর অবসান
হতেই হবে। আমরা জানি যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক
কর্মকাণ্ড এখন পুরোপুরি সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে জননিরাপত্তা
মূল্যহীন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা পায় না। এমনকি প্রায় ১৫ লাখ
শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক পরীক্ষা কিংবা বিশ্ব ইজতেমার মতো সর্বজনীয় ধর্মীয়
অনুষ্ঠানের জন্য অবরোধ-হরতাল শিথিল করতেও তারা সম্মত হয় না। তাদের আন্দোলনে
রাজপথে মিছিল-সমাবেশ নেই। পিকেটিং নেই। তাদের অস্ত্র কেবল চোরাগোপ্তা
পেট্রোল বোমা হামলা। যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাক তাদের হামলার
লক্ষ্যবস্তু। গতকাল দুর্বৃত্তরা পাবনার ঈশ্বরদীর কাছে কলকাতা থেকে ঢাকাগামী
যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেসে একাধিক পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে।
স্বস্তির খবর যে, এতে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক ট্রেনে এ
ধরনের হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট_ বিশ্ববাসীর কাছে এটা তুলে ধরা যে বাংলাদেশে
অশান্তি-অস্থিরতা চলছে। কিন্তু এভাবে সহিংসতার মাধ্যমে সরকার পতনের
রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন কি সম্ভব? বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক লক্ষ্য অর্জনের
জন্য অনেক আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। অর্থনৈতিক দাবি আদায়েও
হরতাল-অবরোধ-ধর্মঘট কম হয়নি। কোনো আন্দোলন সফল করার জন্যই বর্তমানের মতো
হিংসার আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি। এ ভ্রান্ত পথ থেকে তাদের সরে আসতেই হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ কাজে সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে চাই পরিকল্পিত
অশান্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয়তা। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের
রাজপথে অবস্থান এ ধরনেরই একটি উদ্যোগ। এফবিসিসিআইর আহ্বানে ব্যবসায়ীরা
মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য পতাকা হাতে পথে নেমেছিলেন। কিন্তু তাদের বার্তা
স্পষ্ট_ সবার ওপরে দেশ। এ দেশে রাজনীতি থাকবে, প্রতিবাদ থাকবে। কিন্তু
সহিংসতা থাকবে না। একই দিনে সন্ত্রাস-নাশকতার প্রতিবাদে ১৪ দলের নেতারা
রাজধানী ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ
এবং তাদের মিত্রদের এ কর্মসূচিতে মানবতার শক্তিকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান
জানানো হয়। আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশের
শহর-বন্দর-গ্রাম সর্বত্র গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান আন্দোলনে
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার এই সাধারণ মানুষ। তাদের জীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত।
একটি মহল আন্দোলনের নামে যা করছে সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তারা
রাজনৈতিক দাবি তুলছে। এটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা-সংলাপ হতেই পারে।
সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও সংলাপের দাবি তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেটা হওয়ার মতো
পরিবেশ কার্যত অনুপস্থিত বলেই অনেকে মনে করেন। সরকারপক্ষ জোরের সঙ্গে বলছে_
পেট্রোল বোমানির্ভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। আমরাও মনে
করি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবশ্যই দেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে
হবে। গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়েছে। দারিদ্র্য কমছে।
শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা চিত্রের উন্নতি ঘটছে। তাহলে কেন এ গতি থামিয়ে দেওয়ার
আয়োজন? কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এটা সমর্থন করতে পারে না। নৈরাজ্য ও
হানাহানির পথ থেকে সরে এলে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের এবং সমাজের বিভিন্ন
অংশের প্রতিনিধিদের যে কোনো ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। তবে বর্তমান অবস্থায়
এর পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব পুরোপুরি নির্ভর করে ২০ দলীয় জোটের ওপর।
No comments