ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
বাংলাদেশ
জুড়ে অপ্রশম্য অবরোধে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি, শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন। ৬ই জানুয়ারি
অবরোধ-কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন। এদের অনেকে
হয়েছেন জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ। আর ভয়াবহ অগ্নিক্ষত, জখম নিয়ে দেশের বিভিন্ন
হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন শ’ শ’ মানুষ। অর্থনীতি তার প্রাণশক্তি হারিয়ে
ফেলছে। লোকসানের অঙ্ক গিয়ে ঠেকেছে ৪ হাজার কোটি সৌদি রিয়ালে। ১৫ লাখ
শিক্ষার্থীর ভাগ্যের ওপর অনিশ্চয়তার ঘনঘটা। তাদের মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষা
সংশয়ে দোদুল্যমান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের প্রচেষ্টা করার পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছর ওই দিনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ওই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দেয়। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে।
বাস, কার আর অন্যান্য যানবাহনে অবাধে যখন পেট্রলবোমা মারা হচ্ছে তখন অবরোধের ধকল সামলাতে হচ্ছে নিরপরাধ মানুষকে। পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে লম্বা রুটের একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা; যেখানে ৭ জন নিহত হন। বিভীষিকাময় ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনাম হয়ে ওঠে।
দেশটির অর্থনীতি এখন নাজুক। এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে ইতিমধ্যে ১৫০০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে। এরপর ৮০০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে খুচরা খাতে।
কৃষকদের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। পচনশীল পণ্য যেমন- ফল, শাকশবজি, পোল্ট্রি এবং মাছ প্রধান শহরগুলোর ভোক্তাদের হাতে পৌঁছতে না পারার কারণে ক্ষেত-খামারেই পচে যাচ্ছে। এতে প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এফবিসিসিআই-এর অনুমান অনুযায়ী দেশের কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি সৌদি রিয়ালের বেশি। বাংলাদেশের কৃষকরা ১৬ কোটি মানুষের এ দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে আর রাজনীতিবিদরা তাদের হাতেই দংশন করছে যে হাত তাদের পেটে অন্ন জোগায়। শুধু যে কৃষকদের হাত দগ্ধ হচ্ছে তা নয় দিনমজুর, যোগাযোগ খাতের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন। তারা খাদ্য আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সঙ্কটে ভুগছেন। এফবিসিসিআই এর অনুমান মতে, যোগাযোগ খাতে আনুমানিক ২১০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে যোগাযোগ খাতের কর্মীরা বাধ্য হয়ে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার গুলশান দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। অবরোধ-কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার পর ৬ই জানুয়ারি থেকে সেখানে তিনি অবরুদ্ধ আছেন।
দেশ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন এ দুর্দশার দায় কার? সরকারকে দায়ী করার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো- তারা বিরোধীদের রাজপথে প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার পালনের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে তারা খারাপ বা অনিশ্চিত কিছু হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে যা প্রতিহত করা যায় না। এরপর আছে বিরোধী দলের হাজারো সমর্থককে ঢালাও গ্রেপ্তার, অপ্রত্যাশিত ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা। উদাহরণস্বরূপ দুটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল মালিক আবদুস সালাম (ইটিভি চেয়ারম্যান) ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোসাদ্দেক আলি ফালুকে (এনটিভি চেয়ারম্যান) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার লন্ডন প্রবাসী ছেলের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই ক্ষমতাধর নেত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলানোর একটি সুযোগ করে দিয়েছিল যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ফেরত আসতে হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ধকল সামলানোর সামর্থ্য নেই। অমূল্য মানব প্রাণ বিলীন হচ্ছে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর দেশের তৈরী পোশাক থেকে সরে যাচ্ছেন বিদেশীরা। অবিলম্বে যা প্রয়োজন তা হলো, শেখ হাসিনা ও তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার মধ্যে একটি অর্থবহ সংলাপ। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রাথমিকভাবে সংলাপ শুরু হতে পারে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।
আরব নিউজে প্রকাশিত শামসুল হুদার ‘বাংলাদেশ ক্যান্ট অ্যাফোর্ড ইনডেফিনিট ব্লকেড’ প্রতিবেদন থেকে অনূদিত
অনুবাদ: হাসনাইন মেহেদী
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের প্রচেষ্টা করার পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছর ওই দিনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ওই দিনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দেয়। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে।
বাস, কার আর অন্যান্য যানবাহনে অবাধে যখন পেট্রলবোমা মারা হচ্ছে তখন অবরোধের ধকল সামলাতে হচ্ছে নিরপরাধ মানুষকে। পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে লম্বা রুটের একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা; যেখানে ৭ জন নিহত হন। বিভীষিকাময় ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনাম হয়ে ওঠে।
দেশটির অর্থনীতি এখন নাজুক। এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে ইতিমধ্যে ১৫০০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে। এরপর ৮০০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে খুচরা খাতে।
কৃষকদের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। পচনশীল পণ্য যেমন- ফল, শাকশবজি, পোল্ট্রি এবং মাছ প্রধান শহরগুলোর ভোক্তাদের হাতে পৌঁছতে না পারার কারণে ক্ষেত-খামারেই পচে যাচ্ছে। এতে প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এফবিসিসিআই-এর অনুমান অনুযায়ী দেশের কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি সৌদি রিয়ালের বেশি। বাংলাদেশের কৃষকরা ১৬ কোটি মানুষের এ দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে আর রাজনীতিবিদরা তাদের হাতেই দংশন করছে যে হাত তাদের পেটে অন্ন জোগায়। শুধু যে কৃষকদের হাত দগ্ধ হচ্ছে তা নয় দিনমজুর, যোগাযোগ খাতের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন। তারা খাদ্য আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সঙ্কটে ভুগছেন। এফবিসিসিআই এর অনুমান মতে, যোগাযোগ খাতে আনুমানিক ২১০ কোটি সৌদি রিয়াল ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে যোগাযোগ খাতের কর্মীরা বাধ্য হয়ে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার গুলশান দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। অবরোধ-কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার পর ৬ই জানুয়ারি থেকে সেখানে তিনি অবরুদ্ধ আছেন।
দেশ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন এ দুর্দশার দায় কার? সরকারকে দায়ী করার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো- তারা বিরোধীদের রাজপথে প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার পালনের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে তারা খারাপ বা অনিশ্চিত কিছু হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে যা প্রতিহত করা যায় না। এরপর আছে বিরোধী দলের হাজারো সমর্থককে ঢালাও গ্রেপ্তার, অপ্রত্যাশিত ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা। উদাহরণস্বরূপ দুটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল মালিক আবদুস সালাম (ইটিভি চেয়ারম্যান) ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোসাদ্দেক আলি ফালুকে (এনটিভি চেয়ারম্যান) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খালেদা জিয়ার লন্ডন প্রবাসী ছেলের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই ক্ষমতাধর নেত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলানোর একটি সুযোগ করে দিয়েছিল যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ফেরত আসতে হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ধকল সামলানোর সামর্থ্য নেই। অমূল্য মানব প্রাণ বিলীন হচ্ছে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর দেশের তৈরী পোশাক থেকে সরে যাচ্ছেন বিদেশীরা। অবিলম্বে যা প্রয়োজন তা হলো, শেখ হাসিনা ও তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার মধ্যে একটি অর্থবহ সংলাপ। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রাথমিকভাবে সংলাপ শুরু হতে পারে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।
আরব নিউজে প্রকাশিত শামসুল হুদার ‘বাংলাদেশ ক্যান্ট অ্যাফোর্ড ইনডেফিনিট ব্লকেড’ প্রতিবেদন থেকে অনূদিত
অনুবাদ: হাসনাইন মেহেদী
No comments