অবরোধের বিভীষিকা- 'আমি বাঁচতে চাই আমারে বাঁচান' by নাহিদ তন্ময়
রশিদ
মোল্লা (৩৫)। পেশায় রিকশাচালক। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার সময় কাটে
যাত্রী বহন করে। ২০ বছর ধরে এভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই টানা অবরোধ
কর্মসূচি তার এ রুটিন পাল্টে দেয়। গ্যারেজ মালিক রিকশা বাইরে বের করতে দেন
না_ কখন নাশকতাকারীরা রিকশা পুড়িয়ে দেয় এ শঙ্কায়। কয়েক দিন ধরে তার অলস সময়
কাটছে। ছয়জনের সংসারের প্রতিদিনের খাবার খরচ জোগাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে
পড়েন তিনি। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এখন আর টাকা ধার চেয়েও পান না। অসহায়
রশিদ ছুটে যান তার ছোট বোন লুৎফার মানিকগঞ্জের বাসায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে
দেখেন বোনজামাই অসুস্থ। এ অবস্থায় টাকা চাইবেন কী করে? চক্ষুলজ্জা ফেলে
বোনের কাছে নিজের অভাবের কথা জানান। অল্প কিছু টাকা নিয়েই গাজীপুরের
কালিয়াকৈরে নিজের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু তার বাসায় ফেরা হয় না।
তার আগেই মাঝপথে পেট্রোল বোমার আগুনে ঝলসে যায় তার মুখমণ্ডল, দুই হাতসহ
শরীরের বিভিন্ন অংশ। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের
আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আর পাশে বসে চোখের পানি ফেলছেন স্ত্রী
রাশেদা আক্তার। বলছেন, 'না খেয়ে থাকতাম সেই তো ভালো ছিল। এখন আমার সব গেল।
এই লোকটার কিছু হয়ে গেলে বাকি জীবন কীভাবে কাটবে?'
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গাজীপুরের বড়াইতলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ওই বাসের যাত্রী ছিলেন রশিদ মোল্লা। বাসটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর জানালা ভেঙে দ্রুত নামার চেষ্টা করেন। তার আগেই রশিদের শরীরে আগুন ধরে যায়। লাফিয়ে পড়ে ভাঙেন পায়ের গোড়ালি। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল সমকালকে বলেন, 'রশিদের শরীরের ৩৯ ভাগ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত_ এমন কথা এখনই বলা যাচ্ছে না।'
গতকাল বিকেলে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ শরীর নিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন রশিদ। একটু পর পরই অস্পষ্ট স্বরে বলছেন_ 'আমি বাঁচতে চাই। আমারে বাঁচান...। শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে। একটু ঠাণ্ডা করেন। শরীরে একটু ঠাণ্ডা পানি দেন। আমি আর কষ্ট সইতে পারি না।' ডিউটি নার্স এগিয়ে গিয়ে সান্ত্বনা দেন_ 'বাবা একটু সহ্য করেন। ওষুধ লাগিয়েছি।' কিন্তু নার্সের এসব কথায় ভরসা পান না রশিদ। বলেন_ 'এই এক কথা তো কতবারই বলেছেন। কই আপনার ওষুধে তো কোন কাজ হয় না। আরও ভালো ডাক্তার ডাইকা আনেন...।'
নিজের ব্যান্ডেজ করা দুই হাত দেখিয়ে রশিদ মোল্লা বলেন, গত ২০ বছর ধরে এই দুই হাত দিয়া রিকশার হ্যান্ডেল ধরছি। পাও দিয়া প্যাডেল চাপছি। এই দুইডা হাত আমার পুইড়া গেছে। পায়ের গোড়ালিও ভাইঙা গেছে। গরুর মতো খাটতাম। সকাল থেকে রাইত পর্যন্ত রিকশা চালাইয়া সংসারের খরচ জোগাইতাম। এখন আমার এ সংসার কে দেখব? কে জোগাইব বউ-পোলাপানের খাওনের খরচ?'
রশিদ মোল্লার স্ত্রী রাশেদা আক্তার বলেন, 'নিজের এক টুকরো জমিও নেই। কালিয়াকৈরের চন্দা এলাকার নাজিমুদ্দিন মাস্টারের বাড়ির এক কোণায় বাঁশখড় দিয়া একটা ঘর তুইলা কোনো রকম বাঁইচা আছি। অন্যের জায়গায় থাকলেও স্বামী-পোলাপান নিয়া সুখেই ছিলাম। আমার এই সুখটাও কাইড়া নিল।'
সব স্বপ্ন পুইড়া ছাই হইয়া গেল :রশিদ মোল্লার সঙ্গে একই বাসের যাত্রী ছিলেন দুই কলেজ ছাত্র রাজীব কর্মকার এবং পৃথীরাজ চক্রবর্তী। রাজীব রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। পৃথীরাজ চলতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্সে ভর্তি হবেন। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাসা হাজারীবাগ নিলাম্বর সাহা রোডে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনার্সে ভর্তির শেষ সময়। তাই অবরোধের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাতে বোনের বাসায় থেকে সকালে এইচএসসি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। বন্ধু একা যেতে ভয় পাচ্ছে_ তাই সঙ্গে রওনা হন রাজীব। তারা দু'জনই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পৃথীরাজের মা ঝর্ণা চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, 'দুই মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছি। একমাত্র ছেলেকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলের বাবা চন্দন চক্রবর্তী একটি কসমেটিকসের দোকানের কর্মচারী। অভাবের সংসারে তিন বেলা খাবার খেতে না পারলেও ছেলের পড়াশোনা চালিয়েছি। এখন ছেলের দুই হাত পুড়ে গেছে। ছেলের এই দুই হাতের সঙ্গে তো আমার সব স্বপ্ন পুইড়া গেল। আমি এখন কার কাছে যাব? কার কাছে গেলে এর বিচার পাব?'
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গাজীপুরের বড়াইতলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ওই বাসের যাত্রী ছিলেন রশিদ মোল্লা। বাসটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর জানালা ভেঙে দ্রুত নামার চেষ্টা করেন। তার আগেই রশিদের শরীরে আগুন ধরে যায়। লাফিয়ে পড়ে ভাঙেন পায়ের গোড়ালি। বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল সমকালকে বলেন, 'রশিদের শরীরের ৩৯ ভাগ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত_ এমন কথা এখনই বলা যাচ্ছে না।'
গতকাল বিকেলে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ শরীর নিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন রশিদ। একটু পর পরই অস্পষ্ট স্বরে বলছেন_ 'আমি বাঁচতে চাই। আমারে বাঁচান...। শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে। একটু ঠাণ্ডা করেন। শরীরে একটু ঠাণ্ডা পানি দেন। আমি আর কষ্ট সইতে পারি না।' ডিউটি নার্স এগিয়ে গিয়ে সান্ত্বনা দেন_ 'বাবা একটু সহ্য করেন। ওষুধ লাগিয়েছি।' কিন্তু নার্সের এসব কথায় ভরসা পান না রশিদ। বলেন_ 'এই এক কথা তো কতবারই বলেছেন। কই আপনার ওষুধে তো কোন কাজ হয় না। আরও ভালো ডাক্তার ডাইকা আনেন...।'
নিজের ব্যান্ডেজ করা দুই হাত দেখিয়ে রশিদ মোল্লা বলেন, গত ২০ বছর ধরে এই দুই হাত দিয়া রিকশার হ্যান্ডেল ধরছি। পাও দিয়া প্যাডেল চাপছি। এই দুইডা হাত আমার পুইড়া গেছে। পায়ের গোড়ালিও ভাইঙা গেছে। গরুর মতো খাটতাম। সকাল থেকে রাইত পর্যন্ত রিকশা চালাইয়া সংসারের খরচ জোগাইতাম। এখন আমার এ সংসার কে দেখব? কে জোগাইব বউ-পোলাপানের খাওনের খরচ?'
রশিদ মোল্লার স্ত্রী রাশেদা আক্তার বলেন, 'নিজের এক টুকরো জমিও নেই। কালিয়াকৈরের চন্দা এলাকার নাজিমুদ্দিন মাস্টারের বাড়ির এক কোণায় বাঁশখড় দিয়া একটা ঘর তুইলা কোনো রকম বাঁইচা আছি। অন্যের জায়গায় থাকলেও স্বামী-পোলাপান নিয়া সুখেই ছিলাম। আমার এই সুখটাও কাইড়া নিল।'
সব স্বপ্ন পুইড়া ছাই হইয়া গেল :রশিদ মোল্লার সঙ্গে একই বাসের যাত্রী ছিলেন দুই কলেজ ছাত্র রাজীব কর্মকার এবং পৃথীরাজ চক্রবর্তী। রাজীব রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। পৃথীরাজ চলতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্সে ভর্তি হবেন। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাসা হাজারীবাগ নিলাম্বর সাহা রোডে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনার্সে ভর্তির শেষ সময়। তাই অবরোধের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাতে বোনের বাসায় থেকে সকালে এইচএসসি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। বন্ধু একা যেতে ভয় পাচ্ছে_ তাই সঙ্গে রওনা হন রাজীব। তারা দু'জনই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পৃথীরাজের মা ঝর্ণা চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, 'দুই মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছি। একমাত্র ছেলেকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলের বাবা চন্দন চক্রবর্তী একটি কসমেটিকসের দোকানের কর্মচারী। অভাবের সংসারে তিন বেলা খাবার খেতে না পারলেও ছেলের পড়াশোনা চালিয়েছি। এখন ছেলের দুই হাত পুড়ে গেছে। ছেলের এই দুই হাতের সঙ্গে তো আমার সব স্বপ্ন পুইড়া গেল। আমি এখন কার কাছে যাব? কার কাছে গেলে এর বিচার পাব?'
No comments