অর্থনীতির উল্টো পথে যাত্রা by সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
‘২০১৪-১৫
অর্থবছরের জন্য আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির ল্যমাত্রা স্থির করেছি ৭.৩ শতাংশ।
আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আমি অনেক বেশি আশাবাদী।
শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক।
২০১২-১৩ অর্থবছরে জিডিপির অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ ভোগ, বিনিয়োগ, সরকারি
ব্যয়, আমদানি ও রফতানির প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৫.১৬, -১.২৩, ১৭.১৩, ৩.৪৯
এবং ১.৩১ শতাংশ। বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। তা সত্ত্বেও
জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.০৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য অভ্যন্তরীণ
ভোগ ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ এবং সরকারি
ব্যয় প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে যা অনায়াসে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
অর্জনে সহায়তা করবে। ’
গেল বছরের (২০১৪) জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে এই অতি উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কারণ তখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভালো। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল শান্ত। বাজেট বক্তৃতায় তার সুরও লক্ষ করা গেছে, তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনোত্তর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।’ কিন্তু আদতে এর বেশির ভাগই বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০ বছর পেরিয়ে যাওয়া অর্থমন্ত্রী তখন হয়তো ‘ঘুণাক্ষর’ও আন্দাজ করতে পারেননি পরবর্তী ২০১৫ সাল তার জন্য কী বার্তা বয়ে আনছে। তা হলে হয়তো তিনি প্রবৃদ্ধির সূচক কিছুটা নিচের দিকে নামিয়ে আনতেন। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বিরোধীদলীয় জোটের টানা অবরোধ। এর সাথে নিয়মিত বিরতিতে যুক্ত হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৬ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল। অর্থমন্ত্রীর নিজের ভাষায়, ‘এই অবরোধের কারণে পুরো রাজধানী ঢাকা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের কৃষকেরা। তারা এখন পথে বসে গেছেন।’ এই যখন দেশের অবস্থা তখন অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ক্রমে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। শুরু হয়েছে অর্থনীতির উল্টো পথে যাত্রা! এ যাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নির্ভর করছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কত দিন চলে তার ওপর।
রফতানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে : ধরা যাক রফতানি বাণিজ্যের কথাই। এ খাতে প্রবৃদ্ধির অবস্থা বেশ খারাপ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। মাসিক ভিত্তিতেও রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ। গত বছরের জানুুয়ারিতে যা ছিল ৮ শতাংশ।
ধাক্কা খাচ্ছে রাজস্ব আদায় : সে সময় কিন্তু অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়নি। কিন্তু তারপরও জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় কাক্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে আদায় সম্ভব হয়েছে ৫৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এ অর্থবছর এনবিআরের আওতায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বছর শেষে এই আদায় নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী এবং অর্জন হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছিল, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায়ের ঘাটতি থাকবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন দেড় মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তাতে এই ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি আরো বাড়তে পারে যদি অবরোধ-হরতালের বিস্তৃতি দীর্ঘমেয়াদি হয়।
বিনিয়োগ নেই, কিন্তু বাড়ছে আমদানি : দেশে বড় কোনো বিনিয়োগ নেই। সেটি দেশী হোক বা বিদেশী। কিন্তু তারপরও বেড়ে চলেছে আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, দেশে দৃশ্যমান কোনো বড় বিনিয়োগ না হওয়া সত্ত্বেও আমদানি বেড়ে যাওয়া রহস্যময়। আমদানির নামে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশী সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
কমছে রেমিট্যান্স : বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে আসছে। গত ডিসেম্বরে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৭ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে জানুয়ারি মাসে এসেছে ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রেমিট্যান্স কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে : চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে যেখানে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেখানে জানুয়ারিতে এসে তা বেড়ে হয় ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মূল্যস্ফীতি যে আরো বাড়বে তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে না : চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এটি যে অর্জন করা যাচ্ছে না তা অর্থমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। অন্য দিকে বিশ্বব্যাংকের হিসাব ৬.২%, আইএমএফ-৬.২%, এবং এডিবির হিসাব-৬.৪%।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তা কিভাবে তার কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাকি ১ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হয়নি। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কারণে তাদের ক্ষতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই ধাক্কাটি দেশের অর্থনীতি কিভাবে সামাল দেবে তা এখন দেখার বিষয় বলে মতপ্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গেল বছরের (২০১৪) জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে এই অতি উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কারণ তখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভালো। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল শান্ত। বাজেট বক্তৃতায় তার সুরও লক্ষ করা গেছে, তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনোত্তর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে।’ কিন্তু আদতে এর বেশির ভাগই বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০ বছর পেরিয়ে যাওয়া অর্থমন্ত্রী তখন হয়তো ‘ঘুণাক্ষর’ও আন্দাজ করতে পারেননি পরবর্তী ২০১৫ সাল তার জন্য কী বার্তা বয়ে আনছে। তা হলে হয়তো তিনি প্রবৃদ্ধির সূচক কিছুটা নিচের দিকে নামিয়ে আনতেন। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বিরোধীদলীয় জোটের টানা অবরোধ। এর সাথে নিয়মিত বিরতিতে যুক্ত হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৬ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল। অর্থমন্ত্রীর নিজের ভাষায়, ‘এই অবরোধের কারণে পুরো রাজধানী ঢাকা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর এতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের কৃষকেরা। তারা এখন পথে বসে গেছেন।’ এই যখন দেশের অবস্থা তখন অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ক্রমে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। শুরু হয়েছে অর্থনীতির উল্টো পথে যাত্রা! এ যাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নির্ভর করছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কত দিন চলে তার ওপর।
রফতানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে : ধরা যাক রফতানি বাণিজ্যের কথাই। এ খাতে প্রবৃদ্ধির অবস্থা বেশ খারাপ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। মাসিক ভিত্তিতেও রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ শতাংশ। গত বছরের জানুুয়ারিতে যা ছিল ৮ শতাংশ।
ধাক্কা খাচ্ছে রাজস্ব আদায় : সে সময় কিন্তু অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়নি। কিন্তু তারপরও জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় কাক্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে আদায় সম্ভব হয়েছে ৫৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এ অর্থবছর এনবিআরের আওতায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বছর শেষে এই আদায় নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী এবং অর্জন হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছিল, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায়ের ঘাটতি থাকবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন দেড় মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তাতে এই ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি আরো বাড়তে পারে যদি অবরোধ-হরতালের বিস্তৃতি দীর্ঘমেয়াদি হয়।
বিনিয়োগ নেই, কিন্তু বাড়ছে আমদানি : দেশে বড় কোনো বিনিয়োগ নেই। সেটি দেশী হোক বা বিদেশী। কিন্তু তারপরও বেড়ে চলেছে আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, দেশে দৃশ্যমান কোনো বড় বিনিয়োগ না হওয়া সত্ত্বেও আমদানি বেড়ে যাওয়া রহস্যময়। আমদানির নামে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশী সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
কমছে রেমিট্যান্স : বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে আসছে। গত ডিসেম্বরে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৭ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে জানুয়ারি মাসে এসেছে ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রেমিট্যান্স কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে : চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে যেখানে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেখানে জানুয়ারিতে এসে তা বেড়ে হয় ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মূল্যস্ফীতি যে আরো বাড়বে তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে না : চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এটি যে অর্জন করা যাচ্ছে না তা অর্থমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। অন্য দিকে বিশ্বব্যাংকের হিসাব ৬.২%, আইএমএফ-৬.২%, এবং এডিবির হিসাব-৬.৪%।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তা কিভাবে তার কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা ছিল ১৪ শতাংশ। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। বাকি ১ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হয়নি। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কারণে তাদের ক্ষতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই ধাক্কাটি দেশের অর্থনীতি কিভাবে সামাল দেবে তা এখন দেখার বিষয় বলে মতপ্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
No comments