ছাত্রলীগকে ঘিরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতের আশঙ্কা by দীন ইসলাম
ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতের শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদন দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সুযোগে ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ অন্যান্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন ও স্বার্থান্বেষী মহল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টের অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নিতে পারে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত ও সাতজন আহত হওয়া সংক্রান্ত একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানাতে চিঠি দিতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মর্ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ২০শে নভেম্বর শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন পার্থ গ্রুপ এবং সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় ও উত্তম কুমার দাস গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে গুলিবিনিময় ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ ৪০/৫০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে শাবিপ্রবি’র প্রক্টর ড. হিমাদ্রি শেখর রায়সহ আটজন গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন। জখমিদের সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র সুমন মারা যান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন ঘটনা আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে। কারণে ছাত্রলীগের ঐতিহ্যবাহী সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এদিকে দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিংয়ে জর্জরিত ছাত্রলীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছায়ায় গড়ে উঠেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। এ অবস্থায় সংগঠনবিরোধী ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, ব্যবস্থা নিতে গেলে উপর মহল থেকে আসে ফোন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হলেও ওই আদেশ কার্যকর করা যায়নি। তাদের তালিকা স্থানীয় পুলিশকে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি অনুরোধও করে থাকে। কিন্তু ছাত্রলীগের কিছু সাবেক নেতা সন্ত্রাসী গ্রুপকে লালন-পালন করে থাকেন। দলীয় কোন নিয়ম-কানুন তারা মানে না। তারা প্রকৃত অর্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নন। তারা সাবেক নেতাদের ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যক্তিগত কর্মী বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিশ্বজিৎকে আঘাত করার সময় সে হিন্দু ও কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয় বলে পরিচয় দেয়। প্রকৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে বিশ্বজিৎ নিজের হিন্দু পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতো। অথচ ঘটেছে তার উল্টো। ফলে এর দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই নিতে হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
No comments