কোন পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ : বার কাউন্সিলের নাকি এলএলবির? by জয়দেব দাশ
আমাদের আইন পেশায় আসার মূল উদ্দেশ্য আইনের জ্ঞান দ্বারা সাধারণ মানুষকে আইনি সাহায্য-সহযোগিতা করা। বাংলাদেশে কোনো ছেলেমেয়ে আইন বিষয় পাস করার পর যে দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে পড়ছে, তারই বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট আদেশ নং-৪৬/১৯৭২ বলে 'The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972' গঠিত হয়। এটা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থা বাংলাদেশের আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি, আচরণবিধি, শাস্তিসহ সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে ৪৬টি অনুচ্ছেদ ও ১০১টি বিধি আছে। আইনজীবীদের আচরণবিধি সম্পর্কে চারটি অধ্যায় রয়েছে। এই চারটি অধ্যায়ে ৪২টি বিধি আছে।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করা হয় ২০১২ সালে। ২০১২ সালেই প্রথম চালু হয় এমসিকিউ টাইপ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বিসিএস পদ্ধতির মতো নেগেটিভ মার্কিং ব্যবস্থায়। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ৫০০টি প্রশ্ন পড়ে উত্তর দিতে হয় ১০০টি প্রশ্নের। পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা। এই এক ঘণ্টার মধ্যে খাতা সইসহ অন্যান্য কাজ করতে প্রায় ১০ মিনিট সময় লেগে যায়। বাকি ৫০ মিনিটে ৫০০টি প্রশ্ন পড়ে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া কোনো পরীক্ষার্থীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
বর্তমানে আইন পেশার সনদ পেতে হলে প্রথমেই ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা দিয়ে ৫০ নম্বর পেতে হবে। পরীক্ষার্থী যদি ৫০ নম্বর পান, তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষায় ৫০ নম্বর পেলেই মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। অতঃপর যদি মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তবেই তিনি আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়ানোর অনুমতি পাবেন।
এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করে গত দুই বছরে সরকার বা দেশের কি কোনো উপকার হয়েছে? আমি মনে করি সরকারের আরও ক্ষতি হয়েছে। বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় শুধু লিখিত পরীক্ষা চালু থাকলে অনেক ছেলেমেয়েই পাস করে যেত। বেশি ছাত্রছাত্রী পাস করলে দেশের বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। এতে সরকার বা দেশের উপকারই হতো।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আদেশ ৪৬/১৯৭২-এর কোথাও নির্দিষ্ট করে বলা নেই যে, পাস করার কতদিনের মধ্যে তালিকাভুক্তির পরীক্ষা হতে হবে। বর্তমানেও যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার বিধান কোনো আর্টিকেল বা বিধি এবং আচরণবিধিতে নেই।
আগে আইনশাস্ত্র পাস করা ছাত্রছাত্রীকে তালিকাভুক্তির জন্য বছরে দুবার সুযোগ দেয়া হতো। সেই নিয়ম বাতিল করে বছরে একবার পরীক্ষার মাধ্যমে আইনজীবী তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। আর বর্তমানে অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তি কমিটি নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে ঠিক করেছে, একটা পরীক্ষার শেষের পরে পরবর্তী পরীক্ষা হবে। বর্তমানে কমিটি সেই নীতিই অনুসরণ করে চলেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রী আইন শাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন করেও বার কাউন্সিল থেকে সনদ না পাওয়া পর্যন্ত আইন পেশা শুরু করতে পারছেন না।
সর্বশেষ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। সেই পরীক্ষায় প্রায় আঠারো হাজার ছাত্রছাত্রী আবেদন করেন। তার মধ্য থেকে প্রথম পর্যায় এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করা ছয় হাজারের মতো ছাত্রছাত্রী লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। লিখিত পরীক্ষায় ফল কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র তিন হাজার ৬০০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কয়েকদিন আগে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে, কৃতকার্য হয়েছেন ২ হাজার ৯০০ জন।
দেখা যাচ্ছে এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে ছাত্রছাত্রীদের সনদ পেতে এখন প্রায় দুই বছর সময় লেগে যাচ্ছে। আগে বছরে দুবার তালিকাভুক্তি হতো। আর এখন এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে সেখানে দুই বছরে একবার তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পদ্ধতির ফলে আইনশাস্ত্রে পাস করা ৬ ভাগের এক ভাগ ছাত্রছাত্রী যোগ্য বলে বিবেচিত। এর ফলে বর্তমানে পনেরো হাজার পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়ে আছেন। আর তাদের এই বেকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পনেরো হাজার পরিবার। এই পরিবারগুলোর দুশ্চিন্তার কথা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে কি?
১৯৭২ সালে জারিকৃত রাষ্ট্রপতি আদেশের মধ্যে যে পদ্ধতি নেই, সেটাকে নতুন করে বিন্যাস করে দেশের কী লাভ হচ্ছে? আইনশাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বেকার বসে আছে। এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে যদি কেউ বার কাউন্সিলের সনদপত্র না পান, তাহলে তিনি আদালতের দোরগোড়ায় যেতে পারবেন না। এতে করে ক্ষতি হবে দেশ ও জাতির।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আইনশাস্ত্র পাস করা একজন ছাত্র বা ছাত্রী আইনশাস্ত্রের সনদ জমা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করেন সনদের জন্য। ছয় মাসের মধ্যেই ওই ছাত্রছাত্রী পশ্চিমবঙ্গে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করার জন্য সনদপ্রাপ্ত হন। ওই আইনজীবী যদি সর্বভারতীয় আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করতে চান, তাহলে তাকে All India Bar Examination Rules-এর অধীনে পরীক্ষায় বসতে হবে। শুধু তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের দেশে দেওয়ানি ও ফৌজদারি প্রায় সব আইনই ভারতীয় আইনি নিয়মে চলছে। যখন কোনো জটিল মামলার বিচার করা হয়, তখন নজির হিসেবে ভারতীয় বিভিন্ন উচ্চ আদালতের উদাহরণ দেয়ার রেওয়াজ আছে।
কিছুদিন আগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যে এমসিকিউ পদ্ধতি চালু আছে, তা পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। কমিটি মনে করে, বিসিএস পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেয়া উচিত। সরকার যেখানে সরাসরি গেজেটেড অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করেছে, সেখানে আইনশাস্ত্রে পাস করা ছেলেমেয়েদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে প্র্যাকটিস করার জন্য সনদ নিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি একটি অপ্রয়োজনীয় এবং সময় নষ্টের ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই পদ্ধতির ফলে প্রায় দুই বছর লাগছে তালিকাভুক্ত হতে। তাই দয়া করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
নির্দিষ্ট সময়ে ৫০০ প্রশ্নের মধ্য থেকে ১০০ প্রশ্নের এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে
গণ্য হন, তা কোনোমতেই ঠিক নয়। ভালো আইনজীবী হতে হলে দরকার আইন বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আইন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান।
একজন ডাক্তার নির্দিষ্ট সময়েই ইন্টার্নশিপ শেষ করে তার কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে সনদ নিয়ে তিনি স্বাধীনভাবে জনসাধারণের সেবা করতে পারেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে স্বাধীনভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করতে পারেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আইনশাস্ত্রে যারা গ্রাজুয়েশনপ্রাপ্ত হন, তারা তাদের ইন্টিমেশন শেষ করে তাদের পেশায় স্বাধীনভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এলএলবি সনদের চেয়ে বার কাউন্সিলের সনদের মূল্য যদি বেশি হয়, তাহলে এলএলবি বাদ দিয়ে শুধু বার কাউন্সিলের সনদের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করাই শ্রেয়।
সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ- দয়া করে এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করে ২০১২-এর আগে যে নিয়ম চালু ছিল, সেই নিয়মেই আমাদের দেশে আইনশাস্ত্রে পাস করা ছেলেমেয়েদের বার কাউন্সিলের সনদ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এতে আপনার এবং আপনার সরকারের প্রতি দেশের সব আইনশাস্ত্র পাস করা ছাত্রছাত্রী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
জয়দেব দাশ : আইনশাস্ত্র শিক্ষার্থী
আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট আদেশ নং-৪৬/১৯৭২ বলে 'The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order 1972' গঠিত হয়। এটা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থা বাংলাদেশের আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি, আচরণবিধি, শাস্তিসহ সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনে ৪৬টি অনুচ্ছেদ ও ১০১টি বিধি আছে। আইনজীবীদের আচরণবিধি সম্পর্কে চারটি অধ্যায় রয়েছে। এই চারটি অধ্যায়ে ৪২টি বিধি আছে।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করা হয় ২০১২ সালে। ২০১২ সালেই প্রথম চালু হয় এমসিকিউ টাইপ পরীক্ষা। এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বিসিএস পদ্ধতির মতো নেগেটিভ মার্কিং ব্যবস্থায়। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ৫০০টি প্রশ্ন পড়ে উত্তর দিতে হয় ১০০টি প্রশ্নের। পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা। এই এক ঘণ্টার মধ্যে খাতা সইসহ অন্যান্য কাজ করতে প্রায় ১০ মিনিট সময় লেগে যায়। বাকি ৫০ মিনিটে ৫০০টি প্রশ্ন পড়ে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া কোনো পরীক্ষার্থীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
বর্তমানে আইন পেশার সনদ পেতে হলে প্রথমেই ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা দিয়ে ৫০ নম্বর পেতে হবে। পরীক্ষার্থী যদি ৫০ নম্বর পান, তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষায় ৫০ নম্বর পেলেই মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। অতঃপর যদি মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তবেই তিনি আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়ানোর অনুমতি পাবেন।
এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করে গত দুই বছরে সরকার বা দেশের কি কোনো উপকার হয়েছে? আমি মনে করি সরকারের আরও ক্ষতি হয়েছে। বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় শুধু লিখিত পরীক্ষা চালু থাকলে অনেক ছেলেমেয়েই পাস করে যেত। বেশি ছাত্রছাত্রী পাস করলে দেশের বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। এতে সরকার বা দেশের উপকারই হতো।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আদেশ ৪৬/১৯৭২-এর কোথাও নির্দিষ্ট করে বলা নেই যে, পাস করার কতদিনের মধ্যে তালিকাভুক্তির পরীক্ষা হতে হবে। বর্তমানেও যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার বিধান কোনো আর্টিকেল বা বিধি এবং আচরণবিধিতে নেই।
আগে আইনশাস্ত্র পাস করা ছাত্রছাত্রীকে তালিকাভুক্তির জন্য বছরে দুবার সুযোগ দেয়া হতো। সেই নিয়ম বাতিল করে বছরে একবার পরীক্ষার মাধ্যমে আইনজীবী তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। আর বর্তমানে অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তি কমিটি নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে ঠিক করেছে, একটা পরীক্ষার শেষের পরে পরবর্তী পরীক্ষা হবে। বর্তমানে কমিটি সেই নীতিই অনুসরণ করে চলেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রী আইন শাস্ত্রে গ্রাজুয়েশন করেও বার কাউন্সিল থেকে সনদ না পাওয়া পর্যন্ত আইন পেশা শুরু করতে পারছেন না।
সর্বশেষ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। সেই পরীক্ষায় প্রায় আঠারো হাজার ছাত্রছাত্রী আবেদন করেন। তার মধ্য থেকে প্রথম পর্যায় এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস করা ছয় হাজারের মতো ছাত্রছাত্রী লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। লিখিত পরীক্ষায় ফল কয়েক দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র তিন হাজার ৬০০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কয়েকদিন আগে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে, কৃতকার্য হয়েছেন ২ হাজার ৯০০ জন।
দেখা যাচ্ছে এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে ছাত্রছাত্রীদের সনদ পেতে এখন প্রায় দুই বছর সময় লেগে যাচ্ছে। আগে বছরে দুবার তালিকাভুক্তি হতো। আর এখন এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে সেখানে দুই বছরে একবার তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পদ্ধতির ফলে আইনশাস্ত্রে পাস করা ৬ ভাগের এক ভাগ ছাত্রছাত্রী যোগ্য বলে বিবেচিত। এর ফলে বর্তমানে পনেরো হাজার পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়ে আছেন। আর তাদের এই বেকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পনেরো হাজার পরিবার। এই পরিবারগুলোর দুশ্চিন্তার কথা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে কি?
১৯৭২ সালে জারিকৃত রাষ্ট্রপতি আদেশের মধ্যে যে পদ্ধতি নেই, সেটাকে নতুন করে বিন্যাস করে দেশের কী লাভ হচ্ছে? আইনশাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বেকার বসে আছে। এমসিকিউ পদ্ধতির ফলে যদি কেউ বার কাউন্সিলের সনদপত্র না পান, তাহলে তিনি আদালতের দোরগোড়ায় যেতে পারবেন না। এতে করে ক্ষতি হবে দেশ ও জাতির।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আইনশাস্ত্র পাস করা একজন ছাত্র বা ছাত্রী আইনশাস্ত্রের সনদ জমা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করেন সনদের জন্য। ছয় মাসের মধ্যেই ওই ছাত্রছাত্রী পশ্চিমবঙ্গে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করার জন্য সনদপ্রাপ্ত হন। ওই আইনজীবী যদি সর্বভারতীয় আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করতে চান, তাহলে তাকে All India Bar Examination Rules-এর অধীনে পরীক্ষায় বসতে হবে। শুধু তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের দেশে দেওয়ানি ও ফৌজদারি প্রায় সব আইনই ভারতীয় আইনি নিয়মে চলছে। যখন কোনো জটিল মামলার বিচার করা হয়, তখন নজির হিসেবে ভারতীয় বিভিন্ন উচ্চ আদালতের উদাহরণ দেয়ার রেওয়াজ আছে।
কিছুদিন আগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যে এমসিকিউ পদ্ধতি চালু আছে, তা পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। কমিটি মনে করে, বিসিএস পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেয়া উচিত। সরকার যেখানে সরাসরি গেজেটেড অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করেছে, সেখানে আইনশাস্ত্রে পাস করা ছেলেমেয়েদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে প্র্যাকটিস করার জন্য সনদ নিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি একটি অপ্রয়োজনীয় এবং সময় নষ্টের ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই পদ্ধতির ফলে প্রায় দুই বছর লাগছে তালিকাভুক্ত হতে। তাই দয়া করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
নির্দিষ্ট সময়ে ৫০০ প্রশ্নের মধ্য থেকে ১০০ প্রশ্নের এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে
গণ্য হন, তা কোনোমতেই ঠিক নয়। ভালো আইনজীবী হতে হলে দরকার আইন বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আইন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান।
একজন ডাক্তার নির্দিষ্ট সময়েই ইন্টার্নশিপ শেষ করে তার কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে সনদ নিয়ে তিনি স্বাধীনভাবে জনসাধারণের সেবা করতে পারেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে স্বাধীনভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করতে পারেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আইনশাস্ত্রে যারা গ্রাজুয়েশনপ্রাপ্ত হন, তারা তাদের ইন্টিমেশন শেষ করে তাদের পেশায় স্বাধীনভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এলএলবি সনদের চেয়ে বার কাউন্সিলের সনদের মূল্য যদি বেশি হয়, তাহলে এলএলবি বাদ দিয়ে শুধু বার কাউন্সিলের সনদের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করাই শ্রেয়।
সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ- দয়া করে এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করে ২০১২-এর আগে যে নিয়ম চালু ছিল, সেই নিয়মেই আমাদের দেশে আইনশাস্ত্রে পাস করা ছেলেমেয়েদের বার কাউন্সিলের সনদ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এতে আপনার এবং আপনার সরকারের প্রতি দেশের সব আইনশাস্ত্র পাস করা ছাত্রছাত্রী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
জয়দেব দাশ : আইনশাস্ত্র শিক্ষার্থী
No comments