নতুন স্বপ্ন, নতুন বিশ্ব গড়ে দেবে সামাজিক ব্যবসা -মেক্সিকো সম্মেলনে প্রফেসর ইউনূস by মতিউর রহমান চৌধুরী
নতুন স্বপ্ন, নতুন বিশ্ব- এই হোক আজকের সামাজিক ব্যবসার মূল চেতনা। জানালেন এ ব্যবসার মূল উদ্যোক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আজকের পৃথিবী নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দারিদ্র্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করতে পারলে বিশ্ব থমকে যাবে। তাই সামাজিক ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে হবে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ষষ্ঠ বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনে ৫০টি দেশের ৭৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন রাজনীতিক, একাডেমিশিয়ান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। যারা বিশ্বকে বদলাতে চান। সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চান। যাদের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন নয়, তারা চান সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে নতুন এক বিশ্ব তৈরি করতে। যেখানে বৈষম্য থাকবে না। হিংসা, হানাহানি থাকবে না। মানুষে মানুষে ফারাক থাকবে না। এ সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি এ প্রতিনিধিকে বললেন, ভাবা যায় ২০০৯ থেকে যে ব্যবসা শুরু হয়েছিল এর মধ্যেই এ ব্যবসার গতি পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে, চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে তামাম দুনিয়ায়। আজকের সম্মেলনে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা শুধু অংশই নেননি তারা সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন। তারা ভাবছেন একক মুনাফা নয়, সাধারণ জনমানুষকেও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাতে। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আশাবাদী সামাজিক ব্যবসা একদিন বিশ্বে পরিবর্তন আনবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের আরেক প্রতিনিধি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদ বললেন, মেক্সিকো এসে দেখলাম সামাজিক ব্যবসা কত দূর এগিয়েছে। আমার ধারণার বাইরে ছিল, এসে দেখলাম এ ব্যবসাটি কত সম্প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় ড. ইউনূস বলেন, যিনি ব্যবসা করেন তিনি নিজে আনন্দ পান। সামাজিক ব্যবসা তার ঠিক উল্টো। এ ব্যবসা সবার কাছে আনন্দ এনে দেয়। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা বন্ধুত্ব চাই। এ বন্ধুত্ব হোক সবার সঙ্গে। সামাজিক ব্যবসা এর নেতৃত্ব দিক এটাই আমাদের কামনা। তিনি আরও বলেন, এ ব্যবসাটাকে আরও এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন কমিটমেন্টের। আর সেই কমিটমেন্ট হচ্ছে দারিদ্র্য দূর করা। সবার অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করা। আনন্দের সঙ্গে এ ব্যবসা করা। উল্লেখ্য, প্রফেসর ইউনূস আগেই জানিয়েছেন, পুঁজিবাদের কট্টর প্রবক্তাদের কাছে এটা রীতিমতো অবমাননাকর হতে পারে, মুনাফা ছাড়া ব্যবসা! কারণ, এ ধারাণাটা পুঁজিবাদের ধর্মতত্ত্বে নেই। আজকের দুনিয়ায় বহু সংগঠন সামাজিক সুবিধা সৃষ্টিতে নিয়োজিত। বেশির ভাগই তাদের কর্মসূচি থেকে কোন আয় করেন না। মুনাফাবিহীন এবং আয়বিহীন প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগত বা দাতা সংস্থার ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু সামাজিক ব্যবসা এ রকম নয়। সামাজিক ব্যবসার মূল কথা হলো- কোন রকম লোকসান না দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা। নিজের সঙ্গে জনসাধারণ ও গোটা পৃথিবীর সেবা করা। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে এ সেবা পৌঁছে দেয়া।
জার্মানি থেকে মেক্সিকো। ২০০৭ সালে সামাজিক ব্যবসার যে বিশ্ব সম্মেলন হয়েছিল মাত্র কয়েক বছরের মাথায় দেখা গেছে পৃথিবীর দেশে দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এ ব্যবসা। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবসাবিদ্যার কারিকুলামেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সামাজিক ব্যবসা। বহু দেশে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সামাজিক ব্যবসা গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রফেসর ইউনূস বিশ্বকে নতুন কি দিতে চান জানতে চাইলে বললেন, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন আরও কিছু ধারণা সংযোজিত করতে হবে। তবে তিনি আশাবাদী। সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সংযুক্তি একে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো জেগে উঠবে নতুন এক আশা নিয়ে। বৃহস্পতিবার দিনভর বিভিন্ন সেমিনারে একই আওয়াজ উঠেছে। আমাদের একটাই কমিটমেন্ট- প্রফেসর ইউনূস আর সামাজিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রতিনিধিরা গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার সমালোচনা করেন। কেউ কেউ প্রকাশ করেন ক্ষোভ।
২০০৯ সালে গ্লোবাল সোশাল বিজনেস সামিটের প্রথম আসর বসে জার্মানির অটোস্টাড ভোলসবুর্গে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও তার ক্রিয়েটিভ এডভাইজর হানস রাইৎসের উদ্যোগ ছিল এটা। শুরুতে সম্মেলনটির নাম ছিল গ্লোবাল গ্রামীণ মিটিং। প্রতিপাদ্য ছিল ‘ক্রিয়েটিভ রেসপনসিবিলি টুডে’। পরবর্তী বছর গ্লোবাল বিজনেস সামিট নামে সম্মেলনের দ্বিতীয় আসর বসে। এবারেও আয়োজক ছিল জার্মানির অটোস্টাড ভোলসবুর্গ। প্রথম আসরের ২৫০ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিতীয় আসরে উন্নীত হয় ৩৫০-এ। ক্রমে জমে উঠতে থাকে বিশ্বের সামাজিক ব্যবসা সম্প্রদায়ের অনন্য এক মঞ্চ। এ আসরের প্রতিপাদ্য ছিল- বিল্ডিং সোশাল বিজনেস: নিউ ক্যাপিটালিজম সার্ভস মোস্ট প্রেসিং নিডস। সফল এ আয়োজনের পর ২০১১ ও ২০১২ সালে সম্মেলনের তৃতীয় ও চতুর্থ সামিট হয় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। ২০১১-তে প্রতিপাদ্য ছিল- বিল্ডিং সোশাল বিজনেস: পাইওনিয়ারিং ফর রেজাল্টস। ৫০০ অংশগ্রহণকারীর মিলনমেলায় সফলতা আর প্রগতির দিক-নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করে বিশ্বের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা আর বিজ্ঞজনেরা। ২০১১’র সম্মেলন নিয়ে একটি টেড-এক্স ইভেন্ট হয়- সেখানে যোগ দিয়েছিলেন প্রফেসর ইউনূস, হানস রাইৎসসহ বিশ্বের অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা। ২০১২ সালে ‘পাওয়ার অব ইনভেনশন- টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনের চতুর্থ আসরে অংগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫০-এ। ২০১৩ সালে ‘সোশাল বিজনেস টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড বাই চেঞ্জিং ইন্ডিভিজ্যুয়ালস, কমিউনিটিজ, ভিলেজ, সিটিস অ্যান্ড কান্ট্রিস’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে সামিটের পঞ্চম আসর প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এশিয়াতে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ৫৮০ জন যোগ দিয়েছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় ড. ইউনূস বলেন, যিনি ব্যবসা করেন তিনি নিজে আনন্দ পান। সামাজিক ব্যবসা তার ঠিক উল্টো। এ ব্যবসা সবার কাছে আনন্দ এনে দেয়। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা বন্ধুত্ব চাই। এ বন্ধুত্ব হোক সবার সঙ্গে। সামাজিক ব্যবসা এর নেতৃত্ব দিক এটাই আমাদের কামনা। তিনি আরও বলেন, এ ব্যবসাটাকে আরও এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন কমিটমেন্টের। আর সেই কমিটমেন্ট হচ্ছে দারিদ্র্য দূর করা। সবার অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করা। আনন্দের সঙ্গে এ ব্যবসা করা। উল্লেখ্য, প্রফেসর ইউনূস আগেই জানিয়েছেন, পুঁজিবাদের কট্টর প্রবক্তাদের কাছে এটা রীতিমতো অবমাননাকর হতে পারে, মুনাফা ছাড়া ব্যবসা! কারণ, এ ধারাণাটা পুঁজিবাদের ধর্মতত্ত্বে নেই। আজকের দুনিয়ায় বহু সংগঠন সামাজিক সুবিধা সৃষ্টিতে নিয়োজিত। বেশির ভাগই তাদের কর্মসূচি থেকে কোন আয় করেন না। মুনাফাবিহীন এবং আয়বিহীন প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগত বা দাতা সংস্থার ওপর নির্ভর করেন। কিন্তু সামাজিক ব্যবসা এ রকম নয়। সামাজিক ব্যবসার মূল কথা হলো- কোন রকম লোকসান না দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা। নিজের সঙ্গে জনসাধারণ ও গোটা পৃথিবীর সেবা করা। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে এ সেবা পৌঁছে দেয়া।
জার্মানি থেকে মেক্সিকো। ২০০৭ সালে সামাজিক ব্যবসার যে বিশ্ব সম্মেলন হয়েছিল মাত্র কয়েক বছরের মাথায় দেখা গেছে পৃথিবীর দেশে দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এ ব্যবসা। ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবসাবিদ্যার কারিকুলামেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সামাজিক ব্যবসা। বহু দেশে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সামাজিক ব্যবসা গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রফেসর ইউনূস বিশ্বকে নতুন কি দিতে চান জানতে চাইলে বললেন, সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন আরও কিছু ধারণা সংযোজিত করতে হবে। তবে তিনি আশাবাদী। সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সংযুক্তি একে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো জেগে উঠবে নতুন এক আশা নিয়ে। বৃহস্পতিবার দিনভর বিভিন্ন সেমিনারে একই আওয়াজ উঠেছে। আমাদের একটাই কমিটমেন্ট- প্রফেসর ইউনূস আর সামাজিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রতিনিধিরা গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার সমালোচনা করেন। কেউ কেউ প্রকাশ করেন ক্ষোভ।
২০০৯ সালে গ্লোবাল সোশাল বিজনেস সামিটের প্রথম আসর বসে জার্মানির অটোস্টাড ভোলসবুর্গে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও তার ক্রিয়েটিভ এডভাইজর হানস রাইৎসের উদ্যোগ ছিল এটা। শুরুতে সম্মেলনটির নাম ছিল গ্লোবাল গ্রামীণ মিটিং। প্রতিপাদ্য ছিল ‘ক্রিয়েটিভ রেসপনসিবিলি টুডে’। পরবর্তী বছর গ্লোবাল বিজনেস সামিট নামে সম্মেলনের দ্বিতীয় আসর বসে। এবারেও আয়োজক ছিল জার্মানির অটোস্টাড ভোলসবুর্গ। প্রথম আসরের ২৫০ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দ্বিতীয় আসরে উন্নীত হয় ৩৫০-এ। ক্রমে জমে উঠতে থাকে বিশ্বের সামাজিক ব্যবসা সম্প্রদায়ের অনন্য এক মঞ্চ। এ আসরের প্রতিপাদ্য ছিল- বিল্ডিং সোশাল বিজনেস: নিউ ক্যাপিটালিজম সার্ভস মোস্ট প্রেসিং নিডস। সফল এ আয়োজনের পর ২০১১ ও ২০১২ সালে সম্মেলনের তৃতীয় ও চতুর্থ সামিট হয় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। ২০১১-তে প্রতিপাদ্য ছিল- বিল্ডিং সোশাল বিজনেস: পাইওনিয়ারিং ফর রেজাল্টস। ৫০০ অংশগ্রহণকারীর মিলনমেলায় সফলতা আর প্রগতির দিক-নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করে বিশ্বের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা আর বিজ্ঞজনেরা। ২০১১’র সম্মেলন নিয়ে একটি টেড-এক্স ইভেন্ট হয়- সেখানে যোগ দিয়েছিলেন প্রফেসর ইউনূস, হানস রাইৎসসহ বিশ্বের অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা। ২০১২ সালে ‘পাওয়ার অব ইনভেনশন- টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনের চতুর্থ আসরে অংগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫০-এ। ২০১৩ সালে ‘সোশাল বিজনেস টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড বাই চেঞ্জিং ইন্ডিভিজ্যুয়ালস, কমিউনিটিজ, ভিলেজ, সিটিস অ্যান্ড কান্ট্রিস’-এ প্রতিপাদ্য নিয়ে সামিটের পঞ্চম আসর প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এশিয়াতে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ৫৮০ জন যোগ দিয়েছিলেন।
No comments